আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় এই কয় সপ্তাহ

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



অনেক লম্বা রুট ঘুরিয়া ক্লান্ত হইয়া যখন ঢাকায় পৌছাইলাম কাচের দেয়ালের ওপাশ হইতে পরিচিত মুখদের দেখিয়া জানে পানি আসিল। তাহার পর ঘন্টা দেড়েক উদ্্বিগ্ন হইয়া মালপত্রের প্রত্যাশায় দাঁড়াইয়া থাকিয়া, তাহা সংগ্রহ করিয়া, কাস্টমস পার হইয়া, লাখো জনতার ভিড় ঠেলিয়া যখন গাড়িতে চড়িলাম তখন বিষম অসুস্থ বোধ করিতেছিলাম। রাস্তাগুলির সংকীর্নতা দেখিয়া আমার বিষম ভয়ই বোধ হইতেছিল। মানুষ বড় সহজেই ভাল জিনিসে অভ্যস্থ হইয়া যায়! 10 ই ডিসেম্বর আমাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিল। তখন সেমিস্টার শেষ হইতেছে, উপরন্তু ঢাকায় আসিবার প্রস্তুতি চলিতেছিল।

তাই উহা তেমন আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয় নাই। কেবল রাত্র 2টায় ওয়ালমার্ট গিয়া একটি চকোলেট কেকের ধ্বংস সাধনের মাধ্যমে পালন করিয়াছিলাম। 14 ই ডিসেম্বর ঢাকায় পৌছাইয়াই আমাদের সারপ্রাইজ স্বরূপ আমাদের চিত্র সম্বলিত ম্যারেজ ডের কেক দেখিয়া আনন্দিত হইলাম। টুকটাক গল্প গুজব আর সবার জন্য নিয়া আসা উপঢৌকন আদান প্রদান করিয়া দিনটি পার করিলাম। পরের কয়েকটা দিন চলিয়া গেল জেট ল্যাগ, এমআইটি এপ্লিকেশন এই সমস্ত নিয়া।

নেট লাইনের অনেক উন্নতি হইয়াছে শুনিয়াছিলাম, হতাশ হইলাম ব্যবহার করিতে গিয়া। সকাল 8/9 নাগাদ সাইবার ক্যাফেতে গিয়া এপ্লিকেশন ফরম পুরন করিতে করিতে দেখিলাম জনৈক যুবক ভাই এই সাত সকালেই পনের্া দেখিতে দেখিতে, কিছুক্ষন বাদে বাথরুম গিয়ে ঠান্ডা হইয়া ফিরিলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ভাবিলাম, আহারে! যুবা ভাইয়েদের এখনো সাইবার ক্যাফেতে বসিয়া জ্বালা মিটাইতে হয়! তারপর আরও কিছুদিন চলিয়া গেল খালাতো ভাইয়ের বিবাহ, নিজের শ্বশুর বাড়িতে থাকা উপলক্ষ্যে সময় কাটানো। নেটের অভাবটা লাগিয়াই ছিল। দেখা হইলো রাগইমন, কৌশিক এবং অপ্রত্যাশিত ভাবে ব্রাত্য রাইসু, মাহবুব মোর্শেদ এদের সাথে।

তারপরের দিন সামহোয়ারইনে গিয়া দেখা হাসিন, তানভীর, শাহানাদের সাথে। এরমধ্যে ঈদ চলিয়া আসিল এবং চলিয়াও গেল। দেখা হইলো আরও কয়েকজন ব্লগারের সাথে। মাঝখানে কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হইয়া পড়িলাম। সাহায্য করিতেছিল আমার ছোট ভাই মঞ্জুর মুর্শেদ।

তাহার আবার মার্কেট ঘুরিবার ভীষন বাতিক। আমাকে সঙ্গে নিয়া মার্কেট ঘুরিয়া ঘুরিয়া ছ্যারাব্যারা করিয়া ফেলিল। জুতার দাম পানির মতো লাগিল আমার কাছে - এইখানে মোটামুটি ভাল জুতার দাম 60-100 ডলার। মনের আনন্দে পাঁচ জোড়া জুতা কিনিয়া ফেলিলাম। সেই সাথে অজস্র প্যান্ট।

জয় বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট জিন্দাবাদ। পুরোনো কাগজ পত্র ঘাটিয়া নিজের কিছু পুরোনো লেখা বাহির করিলাম। আর বাহির করিলাম আমার কাছে আসা অজস্র চিঠি। জানিতে পারিলাম আমি চলিয়া আসার পর আমেরিকার আরও দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার UNSW, সিংহপুরের NUS, AIT হইতে আমার জন্য স্কলারশীপের অফার আসিয়াছিল। বড়ই আফসোস হইল - সময়মত চিঠিগুলি পাইলে কতকিছুই ব্যবস্থা নিতে পারিতাম! বিবাহের প্রথম মাসেই আমেরিকা আসিয়া পড়িয়াছিলাম বিধায় বিবাহত্তোর দাওয়াতপর্ব স্থগিত রহিয়া গিয়াছিল।

এরই মাঝে সেটা চলিতেছিল পুরোদমে। আমি পুরোপুরি হাফাইয়া উঠিতেছিলাম। বন্ধুদের অনেকেই দেশে নাই, অনেকেই ঢাকায় নাই, আবার অনেকেই চাকুরী বাকুরী নিয়া ভীষন ব্যস্ত। তাই তাহাদের কারো সাথে ঢাকার বাইরে ঘুরিতে যাওয়া হইল না। মাঝে এক পুরোনো বন্ধুর সাথে লাগিয়া গেল ভীষন যুদ্ধ।

শেষটায় দেশের অচলাবস্থা কাটাইয়া উঠলে ছোট ভাইয়ের মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী পালন করিয়া যাইবার প্রস্তুতি শুরু করিলাম। ইতোমধ্যে মশার কামড় খাইয়া, ঠান্ডায় রাতের পর রাত কাটাইয়া, ধুরো বালিতে ঘুরিয়া ভীষন বিরক্ত হইয়া উঠিয়াছিলাম। উপরন্তু বাবা-মায়ের অতিরিক্ত উদ্্বিগ্ন চেহারা দেখিয়া নিজেকে ভীষন খাঁচা বন্দী লাগিতেছিল। ব্লগারদের জলসার বহু আকাঙ্খা ছিলা। সেই পিপাসা না মিটিয়াইয়াই বিদায় নিলাম শেষ পর্যন্ত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।