আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুফাঁদ (রোমাঞ্চ গল্প, শেষ পর্ব)

timursblog@yahoo.com

খুব শিগগিরই আরো অনেক মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেল বাসায় । প্রথমে একজন ডাক্তার এল, তারপর দুই ডিটেকটিভ, একজনকে মেরি নাম ধরে চেনে । তারপর এল একজন পুলিশের ফটোগ্রাফার আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ । অনেক ফিসফাস আলাপ হলো লাশের পাশে । গোয়েন্দারা সব প্রশ্ন করে চলল, যদিও মেরির প্রতি খুবই ভদ্র ব্যাবহার করছিল ওরা ।

পুরনো গল্পটা আবার বলল, প্যাট্রিক আসার সময় সেলাই করছিল ও, প্যাট্রিক ক্লান্ত ছিল, এত ক্লান্ত ছিল যে বাইরে যাবার শক্তিই ছিল না তার । মেরি তাই আভেনে মাংস চাপিয়ে দোকানে গেছিল সব্জি কিনতে । ফিরে এসে দেখে এই অবস্থা । কোন দোকানে? দুই ডিটেকটিভের একজনের প্রশ্ন । বলল মেরি ।

শুনে সে আরেক গোয়েন্দার কানে কানে কী যেন বলতেই সে ঘর ছেড়ে বাইরে গেল । পনেরো মিনিট পরে সে ফিরে এল এক তাড়া নোট নিয়ে । ফোঁপানির মধ্যেই মেরি ডিটেকটিভদের ফিসফাস শুনতে পেল '....একেবার স্বাভাবিক আচরণ করেছে....ভারী হাসি খুশি ছিল....ভাল একটা কিছু রান্নার চেষ্টায় ছিল...চিজকেক, মটরশুঁটি...না, এ অসম্ভব যে ও.... । ' একটু পরে ফটোগ্রাফার আর ডাক্তার লোকটা চলে গেল । আরো দু'জন লোক এসে স্ট্রেচারে করে লাশটা নিয়ে গেল ।

তারপরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ওয়ালা চলে গেল । দুজন ডিটেকটিভ রয়ে গেল, আরো দুজন পুলিশ । জ্যাক নুনান খুব মোলায়েমভাবে জানতে চাইল রাতটা ও অন্য কোথাও থাকতে চায় কি না? ওর বোনের বাসায় বা দরকার হলে নুনানদের বাসাতেও সে থাকতে পারে । না, জানাল মেরি । এখন এক গজ নড়বারও ক্ষমতা নেই ওর ।

পরে যখন ভাল বোধ করবে, এখন সে একেবারেই ভাল বোধ করছে না । অতএব ওকে রেখে ওরা ওদের বাড়ি তল্লাশির কাজ চালিয়ে গেল । অনেকক্ষণ পরপর ডিটেকটিভরা ওকে এক আধটা প্রশ্ন করছে । জ্যাক নুনান এসে জানাল, ওদের ধারনা তার স্বামী মাথার পিছনে কোন ভারী ধাতব জিনিসের আঘাতে মারা গেছে । ওরা অস্ত্রটা খুঁজছে ।

হতে পারে খুনী লোকটা তার সঙ্গে করেই জিনিসটা নিয়ে কেটে পড়েছে । কিংবা হতে পারে সে জিনিসটা বাড়ির আশপাশেই ফেলে গেছ এবা লুকিয়ে রেখে গেছে । 'এটা অনেক পুরনো গল্প,' বলল জ্যাক । 'অস্ত্র পেলেই অপরাধীর হদিস পাওয়া অনেক সহজ । ' বেশ খানিকক্ষন পরে একজন ডিটেকটিভ এসে ওর পাশে এসে বসল ।

এমন কিছু আছ এবাড়িতে যেটা অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা যায় ? মেটালের তৈরি ভেস? বড় কোন স্প্যানার? না, জানাল মেরি । কোন মেটাল ভেস নেই । 'কোন বড় স্প্যানার?' তার মনে হয় না কোন বড় স্প্যানার আছে । কিন্তু ওদের গ্যারেজে থাকতে পারে । তল্লাশি চলল ।

বাড়ির চারপাশে বাগানেও খুঁজছে ওরা । পর্দার ফাঁক দিয়ে টর্চের আলো এসে পড়ছে । ন'টার দিকে মেরি ম্যান্টলপিসের উপর রাখা ঘড়িটার দিকে তাকাল । তল্লাশীদলও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে । 'জ্যাক,' সার্জেন্ট নুনানকে বলল ও ।

'আমাকে একটা ড্রিংক দেবে ?' 'শিওর, তুমি এই হুইস্কি খাবে ?' 'প্লিজ, ছোট একটা দাও । খেলে ভাল লাগবে আশা করি । ' গ্লাস বাড়িয়ে ধরল নুনান । 'তুমি নিজেও একটা নাও না কেন?' বলল মেরি । 'তুমি নিশ্চয়ই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছ ।

তোমরা সবাই আমার সাথে খুব ভাল ব্যাবহার করেছো আজ । ' 'এটা নিয়মে নেই,' বলল জ্যাক । 'তবে একটু নিতে পারি ক্লান্তি দূর করার জন্য । ' একেক করে সবাই এল । তাদেরকে এক চুমুক করে হুইস্কি পান করতে রাজী করানো গেল ।

গ্লাসহাতে সবাই আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িবে রইল । ওকে কী বলে স্বান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না কেউ । কী ভেবে সার্জেন্ট নুনান কিচেনে ঢুকল । 'মিসেস ম্যালোনি, আভেনটা এখনো চালু আছে । ভিতরে মাংস সহ ।

' 'কী সাংঘাতিক!' বলে উঠল মেরি । 'আমি এটা বন্ধ করে দেই ?' 'তাই করো জ্যাক, ধন্যবাদ । ' দ্বিতীয়বার সার্জেন্ট আসতেই বড় বড় পানিভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মেরি বলল । 'তোমরা আমার একটা উপকার করতে পারবে । ' 'আমরা নিশ্চয়ই চেষ্টা করে দেখব ।

' 'তোমরা সবাই প্যাট্রিকের বন্ধু, প্যাট্রিকের খুনীকে বের করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছো । তোমাদের নিশ্চয়ই ভীষণ খিদে পেয়েছে এত দেরী হওয়াতে । প্যাট্রিকের আত্মা, তার উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষিত হোক, আমাকে ক্ষমা করবে না যদি তোমাদের আমি না খেয়ে যেতে দেই । তোমরা আভেনে রান্না মাংসটা খেয়ে ফেল । ' 'তা হতেই পারে না !' বলল সার্জেন্ট নুনান ।

'প্লিজ, ' অনুরোধ করল মেরি ম্যালোন । 'প্লিজ ওটা খেয়ে ফেল । আমি একন কিছুই মুখে তুলতে পারবো না । খেয়ে তারপর তোমরা তোমাদের কাজে যাও । ' বেশ কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করল চার পুলিশ ।

কিন্তু ওদের পেটে খিদের আগুন জ্বলছিল নিঃসন্দেহে । শেষ পর্যন্ত ওদের কিচেনে পাঠাতে রাজি করাতে পারল মেরি । চেয়ারে বসে থেকেই ওদের কথা শুনতে পাচ্ছে ও । মুখভর্তি খাবার থাকায় কথা জড়িয়ে যাচ্ছে ওদের । 'আরো নাও চার্লি?' 'না, আর নেয়া ঠিক হবে না ।

' 'আরে ও আমাদের এটা শেষ করতে বলেছে । আমরা একটা উপকার করছি মেয়েটার । ' 'ঠিক আছে । আরেকটু দাও তাইলে । ' 'বেচারা প্যাট্রিকে রমাথায় নিশ্চয়ই একটা বিরাট সাইজের লাঠি পড়েছিল ।

ডাক্তার বলেছে, ওর খুলি এমনভাবে গুঁড়িয়ে গেছে যেন কামারের পেল্লাই মুগুর পড়েছে মাথায় । ' 'সেজন্যই এটা খুঁজে পাওয়া সহজ হবে । ' 'আমিও তাই বলি । ' 'যেই এটা করে থাকুক, নিশ্চয়ই সে অস্ত্রটা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে না । ' ওদের একজন ঢেঁকুর তুলল ।

'আমার মনে হয় এটা এই বাড়িতেই আছে । ' 'হতে পারে আমাদের নাকের ডগাতেই আছে । কী বল জ্যাক ?' পাশের ঘর থেকে মেরি ম্যালোনি খিলখিল করে হাসতে শুরু করল শেষঃ-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।