আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুফাঁদ (রোমাঞ্চগল্প, দ্বিতীয়পর্ব)

timursblog@yahoo.com

'তাহলে,' ভাবল মেরি । 'আমি ওকে খুন করে ফেলেছি । ' কীভাবে এত দ্রুত ওর মন পরিষ্কার হয়ে গেল তা এক আশ্চর্য ব্যাপার । দ্রুত চিন্তা করতে লাগলো ও । একজন ডিকেটটিভের বউ হিসেবে শাস্তি কী হবে জানা আছে তার ।

তাতে কিছু আসে যায় না, বরং সেটাকে একধরনের মুক্তি হিসেবেই দেখবে ও । কিন্তু পেটের বাচ্চাটার কী হবে ? খুনী মায়েদের না জন্মানো বাচ্চাদের সম্বন্ধে আইন কী বলেছে ? মা আর বাচ্চা দুটোই কী ঝুলবে ? না কি ওরা দশমাস অপেক্ষা করবে ? কী শাস্তি দেবে ওরা ? মেরি ম্যালোনি জানে না । তবে কোন ঝুঁকি নিতে যাচ্ছে না ও । ভেড়ার রানটা কিচেনে নিয়ে একটা প্যানে রেখে আভেনে রেখে তন্দুরের আঁচটা বাড়িয়ে দিল মেরি । তারপর হাত ধুয়ে উপরতলার বেডরুমে ছুটল ও ।

আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করলো, সামান্য মেক আপ ছোঁয়াল । একবার হাসার চেষ্টা করে দেখল, অদ্ভুত দেখাচ্ছে । আবার হাসল ও । 'হ্যালো স্যাম,' হাসিখুশি গলায় জোরে জোরে বলল ও । গলাটাও অদ্ভুত শোনাচ্ছে ।

'কিছু আলু দরকার আমার । হ্যাঁ, একক্যান মটরশুঁটিও চাই । ' এবার হাসি আর গলার আওয়াজ দুটো ই ভাল আসছে । দুয়েকবার রিহার্সাল দিয়ে এক দৌড়ে নীচে নেমে কোটটা গায়ে দিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাগান পার হয়ে হয়ে রাস্তায় নামল মেরি । এখন প্রায় ছয়টা বাজে ।

গ্রোসারি শপে এখনো আলো জ্বলছে । 'হ্যালো স্যাম,' হেসে কাউন্টারের পিছনের লোকটাকে ডাকলো মেরি । 'গুড ইভনিং মিসেস ম্যালোনি, কী করতে পারি আপনার জন্য?' 'কিছু আলু দরকার আমার । হ্যাঁ, একক্যান মটরশুঁটিও চাই । ' তাক থেকে মটরশুঁটি পাড়ার জন্য মেরির দিকে পিছনে ফিরল স্যাম ।

'প্যাট্রিক আজ বাইরে খাবে না ঠিক করেছে, আমরা সাধারনত বিষ্যুদবার দিন বাইরে কোথাও খেয়ে আসি,' জানাল মেরি । 'আর বাসায়ও কোন সব্জি নেই । ' 'তাহলে মাংস নিলে কেমন হয় মিসেস ম্যালোনি ?' 'নাহ, আমার ফ্রিজারে একটা আস্ত ভেড়ার রান আছে । ' 'আমি ফ্রোজেন মাংস রান্না করে দেখিনি কখনো স্যাম । আপনার মনে হয় সব ঠিক মত হবে ?' 'আমি মনে করি না,' বলল দোকানদার ।

'এতে কিছু ফারাক বোঝা যাবে । আপনাকে আইডাহো আলু দেবো ?' 'চমৎকার । দুটো দিন । ' 'আর কিছু ?' মাথা একদিকে কাত করল স্যাম । 'খাবার পরে খাওয়ার জন্য কিছু লাগবে ?' 'আপনার সাজেশন কী স্যাম?' 'চিজকেকের একটা বড় স্লাইস নিলে কেমন হয়? আমি জানি ও এটা পছন্দ করে ।

' 'পার্ফেক্ট,' বলল মেরি । 'ওর ভারী পছন্দ চিজকেক । ' সবকিছু প্যাকেটে মোড়ানো হয়ে গেলে জিনিসের দাম দিয়ে সবচেয়ে মধুর হাসিটা উপহার দিল মেরি । 'থ্যাংকইউ স্যাম, গুডনাইট । ' 'গুডনাইট মিসেস ম্যালোনি, থ্যাংকইউ ।

' দ্রুত পায়ে ফিরে চলল মেরি, এখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছে । সে বাড়ি যাচ্ছে আর তার স্বামী রাতের কাবারের অপেক্ষায় আছে । সে রাতের খাবার খুব যত্ন নিয়ে রাঁধতে যাচ্ছে । এখন যদি সে বাড়ি ফিরে কোন অদ্ভুত বা ট্র্যাজিক কিছু দেখেতো সে শকে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হতেই পারে । আসলে এরকম কিছু যে ঘটবে সে জানেই না ! এইভাবেই করতে হবে গোটা ব্যাপারটা, মনে মনে বলল ও ।

সবকিছূ যেন স্বাভাবিক আর প্রাণবন্ত হয় । কোন অভিনয়ের দরকারই আর হবে না । তাই হাসতে হাসতে একটা গানের কলি যখন কিচেনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকলো মেরি । 'প্যাট্রিক!' জোরে ডাকলো ও । 'প্যাট্রিক ডার্লিং! কোথায় তুমি ?' ঠোঙ্গাটা টেবিলে রেখে লিভিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল ও ।

ওখানেই পড়ে আছে প্যাট্রিক, পা গুলো বাঁকা হয়ে আছে, আর একটা হাত চাপা পড়েছে শরীরের নীচে । দৃশ্যটা দেখে সত্যিই শক পেল মেরি । সমস্ত পুরনো প্রেম আর স্মৃতি উথলে উঠছে তার । দৌড়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলো ও । কোন অভিনয়ের দরকার হল না ।

কয়েক মিনিট পরে উঠে পুলিশ স্টেশনে ফোন করল ও । নাম্বার জানাই আছেই ওর, আরেক প্রান্তের লোকটা ধরতেই বলল মেরি, 'প্যাট্রিক মারা গেছে !' 'কে বলছেন?' 'ম্যালোনি, মিসেস প্যাট্রিক ম্যালোনি । ' 'আপনি বলতে চাইছেন প্যাট্রিক ম্যালোনি মারা গেছেন । ' 'আমার তাই মনে হয়,' ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল ও । 'মেঝের উপর পড়ে আছে ও ।

' আমার ধারনা ও মারা গেছে । ' 'এক্ষুনি আসছি আমরা,' বলে ফোন কেটে দিল পুলিশ লোকটা । খুব দ্রুত চলে এল পুলিশের গাড়ি, যখন মেরি দরজা খুলল দুজন পুলিশ ঢুকল বাড়ির ভিতর । ওদেরকে চেনে মেরি, আসলে থানার প্রাব সবাইকেই চেনে সে । ধপাস করে একট আচেয়ারে বসে পড়ল ও ।

তারপর প্যাট্রিকের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা লোকটা, যার নাম ও'ম্যালি, পাশে গিয়ে দাঁড়াল । 'ও কী মারা গেছে?' চিৎকার করে জানতে চাইল মেরি । 'আমি দুঃখিত, ব্যাপার তাই । কী করে ঘটল এটা?' অল্প কথায় মেরি জানালো কী ভাবে গ্রোসারের দোকান থেকে ফিরে এসে প্যাট্রিককে এইভাবে পড়ে থাকতে দেখেছে সে । ও যখন কাঁদছে, কথা বলছে কাঁদছে, নুনান নামে অন্য লোকটা মৃত লোকটার মাথার পিছনে জমাট বাঁধা রক্তের ছোপ দেখতে পেল ।

ও'ম্যালিকে দেখাতেই সে ফোনের দিকে এগিয়ে গেল ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।