আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুফাঁদ মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার

রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮০টি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গাড়িতে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় সোয়া দুই লাখ সিএনজিচালিত যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী সিলিন্ডারের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি।

এগুলোর ৮০ ভাগই পুনঃ পরীক্ষা করা হয়নি। সিএনজি নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর রিটেস্টের বিধান রয়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে দেশে সিএনজিচালিত গাড়িগুলোর ৮০ শতাংশ সিলিন্ডার রিটেস্ট করা হয়নি। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার নিয়েই হাজার হাজার যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে। তারই ফলশ্রুতিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।

সূত্র জানায়, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩ হাজার পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তায় চলাচলকারী এক একটি গাড়ি যেন চলমান বোমা হয়ে ওঠে। গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাসও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডার যথাযথ না হলে বড় রকমের অঘটন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। জানা গেছে, বড় বাস-ট্রাকের বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

কারণ, বাস-ট্রাকগুলোতে ছয় থেকে আটটি সিলিন্ডার সংযোজন করা থাকে। সর্বশেষ গত সোমবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিন নারীসহ চারজন নিহত ও আটজন আহত হন। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামপুরে একটি দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চার শ্রমিক আহত হন। গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড এলাকায় বেলুনে গ্যাস দেওয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রফিকুল আলম (৩৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সিএনজিচালিত গাড়ি আছে প্রায় এক লাখ।

এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা ৪ হাজার ৪৬৬টি, টেম্পো ২ হাজার ২৭৯টি, কার ২৪ হাজার ৮৮টি, জিপ ১ হাজার ৯৫৭টি, মাইক্রোবাস ১০ হাজার ৬০৪টি, পিকআপ ৪ হাজার ৬৭৪টি, বাস ২ হাজার ৭৫৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২০৯টি। প্রতি ৫ বছর অন্তর সিএনজিচালিত যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃ পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হলেও নিয়ম মানে না কেউ। নাভানা সিএনজির এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সিএনজি রিটেস্ট করাতে আসা গাড়ির সংখ্যা এখনো অনেক কম। সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। সিএনজিচালিত গাড়ির মালিকদের জানমালের স্বার্থেই সিলিন্ডার রিটেস্ট করা উচিত।

তিনি বলেন, আমরা বাস-ট্রাক নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ, এগুলোর প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮টি করে সিলিন্ডার সংযোজিত। তারা রিটেস্ট না করালে ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, রিটেস্টের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া প্রায় দেড় লাখের বেশি গাড়ি এখন বিপজ্জনকভাবে রাস্তায় চলছে। যদি বিআরটিএর ফিটনেস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার রিটেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা যায় তাহলে রিটেস্টে আগ্রহ বাড়বে।

বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে সারা দেশে ৫৮৭টি সিএনজি স্টেশনের মধ্যে ১০-১২টি প্রতিষ্ঠানে রিটেস্ট করার ইউনিট রয়েছে। গাড়িগুলোর ফিটনেস নেওয়ার সময় বিআরটিএতে তা পরীক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। জানা যায়, প্রায় ৩ হাজার পিএসআই (প্রেসার পার স্কয়ার ইঞ্চি) চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন সিলিন্ডারের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। তাই গ্যাস সিলিন্ডার বেশ পুরু ইস্পাত দিয়ে তৈরি না হলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ জন্য প্রতি পাঁচ বছর পরপর সিলিল্ডার রিটেস্ট করা বাধ্যতামূলক। চট্টগ্রাম মহানগর অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন, নগরে প্রাইভেট ও বাণিজ্যিক মিলে ১৪ হাজার অটোরিকশা আছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের গ্যাস সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু এগুলো পুনঃস্থাপন করার দায়িত্ব মালিকের হলেও তারা তা করে না।

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।