আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এফএম রেডিও : পর্ব1

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

জনপ্রিয়তায় এফএম রেডিও মহানগরী ঢাকার প্রাত্যহিক জীবনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। গত কয়েক মাসে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গাড়িগুলোতে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান বাজছে না। কিন্তু রেডিওতে ঠিকই গান বেজে চলছে। আবার তরুণ-তরুণীদের একটি ফ্যাশন তো লক্ষ্য করার মতো।

সর্বদাই হেড ফোন লাগিয়ে কি যেন শুনছে। সারাক্ষণই কি কল আসছে। বিষয়টি পরিষ্কার করে বলতে গেলে তারা আদতে রেডিওতে গান শুনছে। ঢাকা শহরে বর্তমানে রেডিও ক্রেজ তৈরি হয়ে গেছে। আর এটি শুরু হয়েছে বেশিদিন হয়নি।

বেসরকারি খাতে পরপর দুটি এফএম রেডিও চ্যানেল চালু হওয়ার পর থেকে নগরীর মানুষের জীবনযাত্রার এ পরিবর্তন। ইওরোপ-আমেরিকায় প্রচুর এফএম রেডিও চ্যানেল রয়েছে। এমনকি আমাদের পাশর্্ববর্তী দেশ ইনডিয়ায় রয়েছে বেশ কিছু এফএম রেডিও চ্যানেল। চ্যানেলগুলো 24 ঘণ্টাব্যাপী নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করে। শ্রোতারা এন্টারটেইনমেন্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুনতে পারে।

কিন্তু বাংলাদেশের লোকজন 24 ঘণ্টার কোনো রেডিও চ্যানেলের অভাব বোধ করছিল খুব। সিটিসেল লেটস মুভ-এর উপস্থাপিকা ফারজানা ব্রাউনিয়ার কথাই ধরা যাক। ফারজানা দু'এক বছর আগে গিয়েছিলেন দুবাইয়ে। সেখানে গিয়ে শুনতে পান 24 ঘণ্টার এফএম রেডিও চ্যানেল। ফারজানা ব্রাউনিয়ার তখন বারবার মনে হয়েছিল বাংলাদেশে এমন রেডিও চ্যানেল চালু হয় না কেন? তার সেই আক্ষেপের অবসান হয়েছে 24 ঘণ্টার এফএম রেডিও চালু হওয়ার পর থেকেই।

এ দেশে প্রথম এফএম রেডিও চ্যানেল রেডিও টুডে। তারপরই সম্প্রচার শুরু করে রেডিও ফুর্তি। এছাড়া শিগগিরই হয়তো আরো কিছু এফএম রেডিও চ্যানেল চালু হতে যাচ্ছে। এফএম রেডিওগুলো মানসম্মত নানা ধরনের অনুষ্ঠান করছে। এর ফলে সহজেই এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

আশা-নিরাশা, সুখ-দুঃখ, কর্মব্যস্ততা নিয়েই নগরের মানুষগুলোর প্রাত্যহিক জীবন। এ প্রাত্যহিক জীবনে মানুষগুলোকে এন্টারটেইন করতে এফএম রেডিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিভিন্ন ধরনের ইন্টারঅ্যাকশনমূলক অনুষ্ঠান রেডিও চ্যানেলগুলোর সঙ্গে জনসাধারণের যোগাযোগকে দৃঢ় করে। তাই এতো তাড়াতাড়ি দুটি চ্যানেলই জনসাধারণের কাছে পৌছতে পেরেছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে রেডিও অন্যান্য মিডিয়ার চেয়ে সহজলভ্য।

শতকরা 60 ভাগ মানুষ নিয়মিত রেডিও শুনতে পারছে। রেডিওতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে মিউজিক, নিউজ, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, বিজনেস, কালচার, ড্রামা, রিলিজিয়াস প্রোগ্রাম, টক শো ইত্যাদি। জনসাধারণের কাছে সংবাদ ও মিউজিক সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। বর্তমানে যে দুটি এফএম রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান আমরা শুনতে পাচ্ছি দুটিই মিউজিকনির্ভর চ্যানেল।

রেডিও টুডে ও রেডিও ফুর্তি দুটি চ্যানেলই অন্তরে নবীন শ্রোতাদের লক্ষ্য করে অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে। 24 ঘণ্টাব্যাপী প্রচারিত অনুষ্ঠানে গানই প্রচারিত হয় বেশি। এফএম চ্যানেলগুলোর মিউজিকের সাউন্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো হয়। আর এ সুযোগটিই গ্রহণ করেছে দুটি চ্যানেল। ভালো মানের মিউজিক দিয়ে জয় করে নিয়েছে শ্রোতাদের মন।

মাস ও কাস উভয় শ্রেণীকে লক্ষ্য করে এ চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো নির্মিত হচ্ছে। 2005 সাল থেকে এফএম রেডিও চ্যানেল চালু করার পরিকল্পনা শুরু করে রেডিও টুডে কম্পানি। নগরকেন্দ্রিক এ চ্যানেলটিতে মিউজিকের দিকে প্রথম থেকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। ঢাকার আশপাশে এ চ্যানেলটির কভারেজ এরিয়া 100 কিলোমিটার পর্যন্ত। এর মধ্যে 70 কিলোমিটার পর্যন্ত স্টেরিও সাউন্ড এবং 30 কিলোমিটার মনো সাউন্ড।

মোট 15টি জেলা এবং 76টি থানা রেডিও টুডের কভারেজ এলাকায় রয়েছে। এ এলাকায় মোট জনসংখ্যা দুই কোটি 23 লাখ 86 হাজার 470 জন। এর মধ্যে রেডিও শ্রোতা রয়েছে মোট দুই কোটি তিন লাখ 51 হাজার 908 জন। শ্রোতাদের বিরাট একটি অংশ বর্তমানে রেডিও টুডে শুনছে। রেডিও টুডের বর্তমান অনুষ্ঠানধারায় ইনফোটেইনমেন্টকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ইনফরমেশন প্রদানের ক্ষেত্রে দুটি ধারা রয়েছে চ্যানেলটির। একটি লাইট ইনফরমেশন ও অন্যটি কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। রেডিও টুডে 24 ঘণ্টা সম্প্রচার শুরু করে 2006 সালের 23 সেপ্টেম্বর। কমার্শিয়াল সম্প্রচার শুরু হয় 15 অক্টোবর। তবে চ্যানেলটির টেস্ট ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছিল 6 মে।

সম্প্রচার শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন পর থেকে রেডিও টুডে সংবাদ প্রচার শুরু করে। বাংলাদেশে রেডিও সংবাদের একটা ধারা ছিল। রেডিও টুডের সংবাদ সেই চিরাচরিত ধারাকে বদলে দিতে পেরেছে। তাই এখন অনেকেই বিশ্বাস করে রেডিও টুডের সংবাদ শুনছে। সংবাদ এবং মিউজিকের পাশাপাশি রেডিও টুডে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ামূলক অনুষ্ঠানের দিকে নজর দিয়েছে।

এ জন্যই নানা সময় নানা ধরনের লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে। এসএমএসের মাধ্যমে এসব অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় এফএম রেডিও হিসেবে যাত্রা শুরু করে রেডিও ফুর্তি। নামের সঙ্গেই লেগে আছে ফুর্তি শব্দটি। বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রোতাদের ফুর্তি দিতে চান চ্যানেল সংশ্লিষ্টরা।

সে জন্যই সে ঘরানার অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় চ্যানেলটি থেকে। রেডিও ফুর্তি তাদের অনুষ্ঠানের ধরনে এন্টারটেইনমেন্ট অংশটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এটি করা হচ্ছে মিউজিকের মাধ্যমে। বর্তমানে নিয়মিত বিভিন্ন রকম কুইজ কনটেস্টের পাশাপাশি লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে রেডিও ফুর্তি। রেডিও ফুর্তি এখনো সংবাদ প্রচার শুরম্ন করেনি।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সংবাদের জন্য আলাদা অংশ থাকার পরিকল্পনা নেই রেডিও ফুর্তির। তবে বর্তমানে অনুষ্ঠানের ফাকে আরজে-রা (রেডিও জকি) খবর জানিয়ে দিচ্ছে। রেডিও টুডে এবং রেডিও ফুর্তি দুটি চ্যানেলই ঢাকা মহানগর কেন্দ্রিক। তবে চ্যানেল দুটির ব্যাপক সাফল্য কর্তৃপক্ষকে আরো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। দুটি চ্যানেলেরই ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এবার বলা যাক, এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো অল্প সময়ে এতোটা জনপ্রিয়তা পেল কেন? প্রথমেই বলতে হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে রেডিও খুবই সহজলভ্য। এছাড়া রেডিও নিয়ে সহজেই চলাফেরা করা যায়। লোকজন মিউজিক শুনতে খুবই পছন্দ করে। চ্যানেল দুটি নিয়মিত ভালো মানের গান বাজাচ্ছে। সেই সঙ্গে শ্রোতাদের প্রয়োজনীয় নানা ধরনের তথ্য উপহার দিচ্ছে।

এ বিষয়গুলো খুবই গুরত্বপূর্ণ। গাড়িতেও লোকজন এফএম রেডিও দুটির অনুষ্ঠান শুনতে পাচ্ছে। এফএম রেডিও চ্যানেলের আরো একটি ইতিবাচক দিক হলো অনেক মোবাইল ফোনেই এটি শোনা যায়। এছাড়া খুব সহজেই ধরা যায় এফএম রেডিও চ্যানেল। এ কারণগুলোই চ্যানেল দুটির জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রাখেছে।

তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুটি চ্যানেলই তাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রোতাদের ব্যতিক্রমী কিছু দিতে পেরেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।