আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচারের নামে কিছু ঐতিহাসিক অবিচার

হতেও পারে কোন ভূমিকায় যাবোনা , এই পোস্টে এমন কিছু ঐতিহাসিক বিচারের কথা তুলে ধরবো যেখানে নির্দোষ ব্যক্তিদের মিথ্যা অভিযোগে শাস্তি দেয়া হয়েছিলো । জোয়ান অফ আর্ক: পরাধীন ফ্রান্সের রূপকথাতুল্য মহীয়সী নারী , যার হাত ধরে ফ্রান্স স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে । জোয়ান কোন পড়ালেখা জানতেন না , কথিত আছে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ফ্রান্সকে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে স্বাধীন করার জন্য,তিনি দৈব বানী পান । এই কথা শোনার পরে তিনি ফ্রান্সকে স্বাধীনকে করতে বদ্ধ পরিকর হন , তার পরে তিনি ফ্রান্সের পলাতক রাজা সপ্তম চার্লসের সাথে দেখা করেন , রাজা প্রথমে তার কথা উড়িয়ে দিলেও পরবর্তীতে যাজকদের পরামর্শে জোয়ানের কথা মেনে নেন এবং তারপর জোয়ান সাদা পোশাক এবং তরবারি হাতে নিয়ে ৪০০০ সৈন্য নিয়ে অরলেয়ার নগরীতে প্রবেশ করে এবং ইংলিশদের পরাজিত করেন , এরপর জোয়ান একের পর এক শহর ইংলিশদের কাছ থেকে মুক্ত করতে থাকে , এবং ফ্রান্সের রাজাকে পুনরায় সিংহাসনে বসান । রাজা জোয়ানের পরিবারকে অভিজাতদের মর্যাদা দেন ।

এরপর ইংরেজ সমর্থিত বারগানডিয়ানসরা জোয়ানকে বন্দী করে , ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয় । ইংরেজদের দখলকৃত ফ্রান্সের নরম্যান্ডীতে তার বিচার শুরু হয় , বিচারে জোয়ানকে ডাইনি সাব্যস্ত করা হয় , এবং প্রকাশ্যে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সামনে তাকে পুরিয়ে মারা হয় জিওর্দানো ব্রুনো একজন ইতালীয় বৈজ্ঞানিক এবং বক্তা । তিনি বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণশীল , এর কোন সীমা নেই । এছাড়াও তিনি কোপারনিকাসের সূর্য কেন্দ্রিক মহাজাগতিক তত্ত্বের বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন , পরিবর্তনের কথা বলতেন , ধীরে ধীরে তিনি অনেক জনপ্রিয় হতে থাকেন , তার এধরনের কাজের জন্য তিনি ধর্মীয় যাজকদের বিরাগভাজন হন , তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করা হয় ।

তিনি জন্মস্থান নেপলস থেকে পালিয়ে যান , পরবর্তীতে রোম , প্যারিস সহ ইউরোপের অনেক যায়গায় বক্তৃতা করেন । পরবর্তীতে ১৫৯২ সালে ভেনিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় , এবং বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো হয় । সুদীর্ঘ সময় ধরে তার বিচারকার্য চলে এবং ১৬০০ সালে তাকে আগুন পুড়িয়ে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয় । কর্নেল তাহের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা , পাকিস্তানী সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । রণাঙ্গনে গোলার আঘাতে যখন তার পা উড়ে যায় , তখনও তিনি বলছিলেন “মাই হেড ইজ স্টিল হাই, গো ফাইট দি এনিমি..আমার কিছু হয়নি, তোমরা ফ্রন্টে ফিরে যাও।

” । তিনি সেনাবাহিনীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেন , তিনি স্বপ্ন দেখতেন এক শোষনহীন রাষ্ট্রের । ৭৫ এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে দেশে চলমান অস্থির অবস্থার ফলসরূপ সেনাবাহীনিতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পরে । কর্নেল তাহেরের সাহসী পদক্ষেপের ফলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন , সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে , জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসেন । কর্নেল তাহের যখন সর্বপ্রথম জিয়াউর রহমানের সাথে দেখা করেন ,তখন জিয়াউর রহমান তাকে বলেছিলেন "ইউ আর মাই ব্রাদার , ইউ আর মাই সেভার" , অথচ তার কিছুদিন পরেই তাহেরের বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচার শুরু হয় ,জিয়াউর রহমান তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনাল গঠন করেন , এবং ট্রাইব্যুনালের প্রধান করা হয় কর্নেল ইউসুফ হায়দারকে, যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকায় অবস্থান করেও মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পরিবর্তে পাকিস্তানীদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তাহের নাকি এক বৈধ সরকারকে উৎখাত করেছেন , অথচ কি আশ্চর্য ৩-৭ নভেম্বর দেশে কোন সরকার ছিলোনা । অত্যন্ত গোপনে তাহেরের বিচার কার্য সম্পাদন করা হয় , এবং তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় , ফাঁসির আগ মুহূর্তেও তিনি বলেছিলেন বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক , বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক । আরউইন রোমেল জার্মান ফীল্ডমার্শাল , আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার এক রূপকথার মহানায়ক , মরুভূমিতে যুদ্ধের ভূয়সী সাফল্যের জন্য তিনি “ডেজার্ট ফক্স” উপাধি পেয়েছিলেন । রোমেল মিত্র বাহিনীর কাছে এক আতঙ্কের নাম ছিলো । শুধু মাত্র তাকে হত্যার জন্য ব্রিটিশরা একাধিক কমান্ডো মিশন পরিচালনা করেছিলো ।

১৯৪৪ সালে ইংরেজ বিমানের গোলার আঘাতে তার গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয় , এবং তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন । এই সময় কর্নেল স্টফেনবার্গের নেতৃত্বে হিটলারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয় , কিন্তু তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায় , হিটলারের মিটিং রুমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলেও হিটলার বেচে যায় , এবং এই ঘটনার জন্য হাজার হাজার মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় । হিটলারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বলেছিলেন রোমেলও এই ঘটনার পিছনে আছেন , যদিও তিনি ছিলেন না । রোমেলের বিরুদ্ধে শুরু হয় আরেক প্রহসন হিটলার রোমেলকে আত্মহত্যা নির্দেশ দেন , এবং রোমেলের জন্য সায়ানাইড পাঠান । রোমেল সেই রায় মাথা পেতে নেন ।

যদিও এই প্রহসনের কথা অনেক পরে মানুষ জানতে পেরেছিলো , মানুষের কাছে প্রচার করা হয় রোমেলের মৃত্যু হয়েছিলো সড়ক দুর্ঘটনায় , এবং তাকে পূর্ন ফিল্ডমার্শালের মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সক্রেটিস এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে প্রভাবশালী দার্শনিক , তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই , শুধু মাত্র স্টিভ জবসের একটা উক্তি উল্লেখ করবো “I would trade all of my technology for an afternoon with Socrates.”। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তিনি যুব সমাজকে নস্ট করছেন । হেমলক বিষের পানের মাধ্যমে তার মৃত্যু দন্ড কার্যকর করা হয় । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.