আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বকালের সেরা ১০ সাংবাদিক

অন্যায় এর প্রতিবাদ ১/ তাকে বলা হয় আধুনিক সাংবাদিকদের দাদু বা গ্র্যান্ডফাদার অব দ্য জার্নালিস্ট। তাকে সর্বকালের সবচেয়ে সেরা সাংবাদিক বলে মানা হয়। অনুসন্ধানী ও সৃজনশীল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি মানা হয় তাকে। তিনি 'সেন্ট লুইস পোস্ট ডিসপ্যাচ' এবং 'নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড'-এর প্রকাশক ও এর মাধ্যমে নতুন এক ধরনের সাংবাদিকতার সূচনা করেন। তবে তিনি কেবল সাংবাদিক হিসেবেই সফল নন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেও চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছিলেন।

ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন মূলত একজন হাঙ্গেরিয়ান আমেরিকার সংবাদপত্র প্রকাশক, যে কিনা সংবাদপত্রের সব ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন। তার জন্ম ১৮৪৭ সালের ১০ এপ্রিল হাঙ্গেরির মাকুতে। ৬৪ বছর বয়সে ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর সাউথ ক্যারোলিনায় এই মহান সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। সাংবাদিকতার ওপর বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পুরস্কারটি এই মহান সাংবাদিকের নামানুসারেই প্রচলিত রয়েছে।

২/কেবল একটি ঘটনা ফাঁস করেই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলে দেন বব উডওয়ার্ড। তবে এই ঘটনা যে সে ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, একেবারে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। বব উডওয়ার্ড আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিঙ্নের বিরুদ্ধে 'ওয়াটার গেট' কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস করে দেন। আর তার এ খবরের বোমা রিচার্ড নিঙ্নকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। 'দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট' এর হয়ে বব উডওয়ার্ড তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।

মজার ব্যাপার হলো, তিনি তার পড়াশোনা শেষ করেন ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাসে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তাকে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে তুলে এনেছে। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৬ মার্চ জেনেভায়। ৩/ জন পুলিৎজারের অনুপ্রেরণায় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হন উইলিয়াম র‌্যাডলফ হার্স্ট। তার বাবা জর্জ হার্স্ট ছিলেন আরেক বিখ্যাত সাংবাদিক।

তবে উইলিয়াম র‌্যাডলফ হার্স্ট খ্যাতি ও সাফল্যের দিক থেকে তার বাবাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। তিনি সাংবাদিকতার পরিসরকে বাড়িয়ে তোলা ও সংবাদ বিক্রি করার আধুনিকতা প্রথমবারের মতো নিয়ে আসেন মানুষের সামনে। তাকে ইয়েলো জার্নালিজমের আবিষ্কর্তাদের একজন মানা হয়। তার জন্ম ১৮৬৩ সালের ২৯ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ায়। ১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট ৮৮ বছর বয়সে ব্যাভারলি হিলসে তার মৃত্যু হয়।

৪/ সর্বকালের সেরা সাংবাদিকদের তালিকায় উইলফ্রেড ব্রুচেটের অবস্থান চতুর্থ। মজার ব্যাপার হলো, দুনিয়া কাঁপানো এই সাংবাদিক তার প্রথম জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন। এমনকি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ও সেলসম্যানের কাজ করেছেন। 'ডেইলি এঙ্প্রেস' ছিল তার জীবনের প্রথম পত্রিকা, যেটির মাধ্যমে তিনি তার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রথম সাংবাদিক হিসেবে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র কভার করেন ব্রুচেট।

বিশ্বজুড়ে তার এই কাজ দারুণ সাড়া ফেলে। ব্রুচেটের জন্ম ১৯১১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ায়। ১৯৮৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এই মহান সাংবাদিক দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। ৫/ নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় সাংবাদিকের নাম পিটার অর্নেট। তিনি ছিলেন মূলত একজন ফটোসাংবাদিক।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি মৃত্যুভয়কে পেছনে ঠেলে অসাধারণ সব ছবি তুলে আনেন। কাজের ক্ষেত্রে তার অসীম সাহসিকতা সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। বিরল মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় তুলে আনার ক্ষেত্রে তিনি অদম্য মেধা ও সাহসের পরিচয় দেন। প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও তিনি সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে তার ব্যতিক্রমী কাজের জন্য তিনি ১৯৬৬ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন।

তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৩ নভেম্বর নিউজিল্যান্ডের এভারটনে। ৬/ তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন একরোখা, অভিমান, আবেগী ও বর্ণিল চরিত্রের একজন সাংবাদিক হিসেবে। 'নিউইয়র্ক ডেইলি মিরর'-এর সাংবাদিক হিসেবে তিনি যেমন তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন, ঠিক তেমনি রেডিও ভাষ্যকার হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা ছিল দারুণ। তিনি ছিলেন কমিউনিজমের ঘোরবিরোধী একজন মানুষ। তিনি ছিলেন প্রথম আমেরিকান সাংবাদিক যিনি রেডিওতে হিটলারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।

এই বর্ণিল মানুষটির জন্ম ১৮৯৭ সালের ১৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে। ৭৪ বছর বয়সে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে তার মৃত্যু হয়। ৭/তিনি ছিলেন তার সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাংবাদিক। আর তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন মূলত নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নরের সমালোচনা করে। তখন তিনি 'নিউইয়র্ক উইকলি জার্নাল' নামের একটি সাপ্তাহিকে কাজ করতেন।

মুক্তভাবে মত প্রকাশের কারণে ১৭৩৪ সালে তাকে কারবন্দী হতে হয়। একাধারে একজন মুদ্রাকর, প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিক জন পিটারের জন্ম ১৬৯৭ সালের ২৬ অক্টোবর এবং মৃত্যু ১৭৪৬ সালের ২৮ জুলাই। ৮/তিনি ছিলেন পাঁচটি যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাঙ্গেরিয়ান ফটোসাংবাদিক। ক্যামেরা প্রসঙ্গে তার বিখ্যাত দর্শন ছিল 'You have to get closer to the thing you are trying to capture in your camera.' ইতিহাসের কিংবদন্তিতুল্য এই সাংবাদিক স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় তোলা তার আয়রনিক ছবির কারণে সবার কাছে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার জন্ম ১৯১৩ সালের ২২ অক্টোবর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে।

৪০ বছর বয়সে ভিয়েতনামের থাই বিনে ১৯৫৪ সালের ২৫ মে তার মৃত্যু ঘটে। ৯/ তিনি ছিলেন আধুনিক সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম অপঘাতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে তাকে শহীদ হতে হয়। এলিজা প্যারিস লভজয় ছিলেন দাসপ্রথাবিরোধী একজন মানুষ। তার লেখনিতে তিনি দাসপ্রথার বিরুদ্ধে দুর্বার বিপ্লবের আওয়াজ তোলেন।

১৮২৬ সালে ওয়াটারভিলে কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন লভজয়। দাসপ্রথার বিরুদ্ধে তার সোচ্চার মতামত তাকে একটি জ্যাকসনবিরোধী সংবাদপত্রের সম্পাদক বানিয়ে দেয়। ১৮০২ সালের ৯ নভেম্বর মাইনেতে জন্মগ্রহণকারী লভজয় বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৪ বছর। দাসপ্রথার বিরুদ্ধে তার আন্দোলনের সাফল্য দেখার আগেই ১৮৩৭ সালের ৭ নভেম্বর আততায়ীরা তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১০/ মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট তালিকায় দশ নম্বরে তার অবস্থান হলেও তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী নারী হিসেবে।

তার আগ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহের জন্য কেবল পুরুষদেরই যোগ্য মনে করা হতো। কিন্তু মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট মানুষের সেই বদ্ধমূল ধারণা গুঁড়িয়ে দেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বিদেশি ফটোগ্রাফার, যাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরকার ছবি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই আমেরিকান ফটোসাংবাদিক আরেকটি কারণে বিখ্যাত। পৃথিবীর ইতিহাসে যে ক'জন সাংবাদিক এ উপমহাদেশ বিভাজনের সময়টুকুতে খবর ও ছবি সংগ্রহের কাজে যুক্ত ছিলেন, হোয়াইট তাদের অন্যতম।

বিশেষ করে পাক-ভারত বিভাজনের সময় তার তোলা অনেক বিখ্যাত ছবি রয়েছে। ১৪ জুন, ১৯০৪ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী হোয়াইট ৬৭ বছর বয়সে ২৭ আগস্ট ১৯৭১ সালে স্ট্যামফোর্ডে মৃত্যুবরণ করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.