আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুজি নিজেকে

i told u m nothing but awsm অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম যে নিজেকে নিয়ে একটু লেখা উচিৎ, নিজের জন্নই লেখা উচিৎ। নিজের মনের শান্তি আরকি। যদিও আমি জানি মনের শান্তি টা আমার ওভাবে কোনদিনই আসবে না, তারপরও। এখন আমি যা এটা হল অনেক পরিবরতন এর পর আমি, এর মধ্যে অনেক আমিই আমি না, কিন্তু এখন এটাই আমি। ভালই বলা যাই এই পরিবর্তিত আমি।

সেই কবে জানি মা-বাবা হারালাম ২২/২৩ বছর আগে মনে হয়( মনে আছে, কিন্তু বলতে ইছা করছে না), তারপর থেকেই ভাইবোন দের কাছে মানুষ, ভাইবোন তার এই ছোট ভাই টিকে নিজের সন্তান এর মতই মানুষ করার চেষ্টা করলেন, সফল ও হলেন আপাত দৃষ্টিতে। আজ আমি মোটামুটি ভালই প্রতিষ্ঠিত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া একজন মানুষ। কিন্ত মনের ভিতর একটা ভয়ংকর খালি মাঠ। সেই মাঠে আমি একা একাই খেলা ধুলা করি, করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাই, কাউকে পাই না। ১৯৯৫ এর দিকে আমি তখন আমি আমার ২ বছর এর প্রেম আর আমার প্রেমিকা কে নিয়ে অনেক ব্যস্ত,সদ্য কলেজ ধরেছি কিন্তু ওর মধ্যেও কোথাই জানি আমার একটা শুন্যতা, বুঝতাম না।

একটা আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা, যেটা আমি আমার প্রেমিকার মধ্যে পেতাম না, কিন্তু মন প্রান উজার করে ভালবাসতাম। আমার বড় ভাই আমার জন্য একজন গৃহ শিক্ষক ঠিক করলেন, বসে আছি সন্ধ্যা বেলাই আসবে নতুন শিক্ষক; আসলেন। দেখেই মনটা ভরে গেল আমার, একজন নাতিদীর্ঘ গোঁফ ওয়ালা গভীর চোখের মানুষ সদ্য বুয়েট থেকে পাশ করা। আমার ভাই বললেন, তোমরা কথা বল আমি যাই। স্যার এর ছাত্র কে প্রথম প্রশ্ন, নাম কি তোমার! আমি নাম বললাম এবং আমি অনুভব করলাম একটা অদ্ভুত ভাল লাগা, যেটা আমি সেই প্রথম অনুভব করলাম আমার ১৭ বছর বয়েসে।

এরপর সে আমাকে পরাতে আসা শুরু করল আমিও দিন দুনিয়া ভুলে তার জন্য অপেক্ষা করা শুরু করলাম , কখন সে আসবে পরাতে কতখন থাকবে, কি যে অদ্ভুত ভাললাগা, বোঝাতে পারব না। আমার শিক্ষক ও আমাকে নিয়ে খুশি ছিলেন,এতো মনযোগী ছাত্র কইজন পায়। কইদিন পর আমার এইচএসসি পরীক্ষা এর মধ্যে সে বলল যে সে আর পারবে না, তার চাকরি হয়ে গিয়েছে সে আরেকজন কে দিয়ে যাবে, আমি কি বলব বুঝে পেলাম না, নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এক সপ্তাহ পর সে নতুন একজন শিক্ষক এনে দিয়ে চলে গেলেন, যাওয়ার সময় আমি তার দিকে আমার টলটলে পানি ভরা দুই চোখ দিয়ে শুধু তাকিয়ে রইলাম, উনি অদ্ভুত ভাবে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি বুঝলেন কে যানে; চলে গেলেন আর বলে গেলেন তোমার সাথে আমার যোগাযোগ থাকবে। এটুকুই অনেক ছিল আমার জন্য।

যাইহোক সে তার কথা রেখেছিল, মাঝেই মাঝেই ফোনে কথা হতো আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন আসছে, আমি অনেক বেশি মনযোগী আমার শিক্ষক এর প্রতি যেটা হওয়া উচিৎ ছিল আমার প্রেমিকার প্রতি আমার। আমার এহেন আচরণ এর কারনে আমার আড়াই বছর এর সম্পর্কের ইতি ঘটল। এতে আমার অনেক দুঃখ হল, মন খারাপ হল কিন্তু চলেও গেল খুব তারাতারি। কারন সামনে পরীক্ষা। পরীক্ষার ঠিক কিছু দিন আগেই আমি তের পেলাম যে আমি আমার আগের গৃহ শিক্ষক এর প্রেমে পড়েছি।

ছাত্রি শিক্ষক এর প্রেমে পরে নতুন নয়, কিন্তু ছাত্র যখন শিক্ষক এর প্রেমে পরে তখন এটা কি বলা যাবে! এটা নিষিদ্ধ, এটা সমকামিতা , এটা হতে পারে না। কিন্তু এতাই হল, আমি পাগলের মতো ভালবাসতে শুরু করলাম গভীর চোখের ওই মানুষ টিকে। আমার অন্তর আত্মা জুরে খালি সেই ছিল, এবং এটা সেও আস্তে আস্তে স্বীকার করল, কিছুটা আমার নিজের কারনেও। আমি এতো আবেগি ছিলাম, তারপর মা-বাবা ছাড়া সে ভাবল যে এটা হইত কেতে যাবে, কিন্তু হল উলটো আমি আরও বেশি আটকে ফেললাম, এক দিন ও না দেখলে ভাল লাগে না, এক দিন ও না ছুলে ভাল লাগে না। কি ভয়ংকর কষ্ট হতো আমাকে যদি একদিন আদর করে কথা না বলতো।

এভাবেই আমাদের প্রেম এর ৭ বছর পার হল, এর মধ্যে আমি আমার স্নাতক এর শেষে পৌঁছলাম ঠিক তখনই সে আমাকে বলল এভাবে আর কতদিন আমরা থাকব, আমার অবুঝ মন আর আবেগি আমি বলে উঠলাম চল আমরা বিদেশ চলে যাই, সে আমার দিকে একটা দুঃখী হাসি দিয়ে বলল “ আরে বাচা টা বলে কি” আমি ওকে জোরে আমার নিজের দুই হাত দিয়ে জড়াই ধরে বলি “ তোমাকের ছাড়া আমি বাঁচব কিভাবে”। সে আমার দিকে করুন চোখে তাকাই বলল “ দেখি কি হয়”। আমি তখনও জানি না যে আর দুই মাশের মধ্যে আমার জীবনে কি ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। ঈদ এর সময় ও সব সময় ওর দেশ এর বাড়ি চলে জেত, যেটা আমার একদম এ পছন্দ ছিল না। তারপরও কিছুই বলার নাই।

পরিবারের এক মাত্র বড় ছেলে, এবং খুবই একটা সাধারণ মানের পরিবার ছিল ওদের। ওর আয়ে চলতো ওদের সংসার, আমি এতটাই ওর ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলাম, যে আমার ভাইবোন বাদ দিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলাম যে আমি চাকরি নিয়ে ওর সংসার এ টাকা দেওয়া শুরু করব, কিন্তু সে সব কিছুই হয় নি। ঈদ শেষ হল এবং সে যখন ফেরত আসল ঢাকাই সে তখন আরেকজনের সাথে নিজের বিয়ে সেরে ফেরত এসেছে। এখনও আমি দেখতে পাই কি ভীষণ কষ্ট আমার, কি ভয়ংকর কান্না আমার। রাত নাই, দিন নাই ঘুমাতাম না, কি করতাম নিজেও জানি না।

খালি মনে আছে, প্রচুর মদ খেতাম আর কোথায় কোথায় গিয়ে থাকতাম, কজনের সাথে থাকতাম তাও মনে নাই। যখন সকালে ঘুম থেকে উঠতাম তখন নিজেকে পেতাম কয়েক জন উলঙ্গ নারী পুরুষের মধ্যে, নিজেও ওরকমই অবস্থাই পরে আছি। কোনভাবে গায়ে কাপর দিয়ে গারিতে উঠে বাসাই এশেই পরে জেতাম বিছানাই। বাসাই বুঝত সবাই, কিন্তু কেউ কিছু বলতো না, কি বলবে তাদের একমাত্র ছোট ভাই আদরের নীলমণি। এভাবেই গেল আমার ২ বছর, হটাত একদিন আমার গাড়ি নেই সাথে সেদিন আমি একটা সিএনজি তে বসে আছি বুয়েট এর মোড়ে।

সারা মুখ আমার চোখের পানিতে ভেসে যাছে, আর ভাবছি কই গিয়ে একটু হেরোইন পাওয়া যাবে, কষ্ট আমার কষ্ট তা কমানো জরুরী, ঠিক তখনই একটা মেয়ে ১৫/১৬ বছর বয়স এসে আমাকে বলে ভাইয়া একটা টাকা দিবেন, আমার কাছে কোন ভাংতি ছিল না, ১০ টাকা বের করে দিলাম, তখন বলে ভাইয়া আমার এই পকেট এ দেন দেখি একটা চটের একটা ব্যাগ বুকের কাছে বাধা ওটাতে টাকা দিতে বলল। আমি ওকে বললাম যে তুমি নিজে নিছ না কেন, ও বলল ভাইয়া আমার তো হাত নাইক্কা, আমি তখন দেখলাম যে ওর কোন হাত নাই, এবং আমি অনুধাবন করলাম পৃথিবীতে আমার চেও অনেক অনেক মানুষ আছে যারা আমার যে ১০০গুন বেশি কষ্টে থাকে। এই মেয়ে কে কইজন কবার ধর্ষণ করেছে তার কোন হিশাব আছে বলে মনে হয় না,তারপরও হাসি মুখে ভিক্ষা করে যাছে। আমি হেরোইন খোঁজা বাদ দিয়ে বাসাই আসলাম এবং ঠিক করলাম যা চলে গেসে, তা আমি আর পাব না তার চে কি করা যাই তাই ভাবা উচিৎ। এবং আমি ঠিক করলাম আমি দেশ এর বাইরে চলে যাব, তাই করলাম।

কিন্তু যেটা হল সেটা হল, পড়ালেখা হল, টাকাও হল কিন্তু ভালবাসা টা আর হল না। আপনারা আমাকে আনুষ্ঠানিক সমকামী ধরে নিয়েন না কিন্তু ভাল আমি বেসেছি একজন কেই। এখন আর ভালবাসা আসে না কেউ ভালবাশার কথা বললে হাসি পাই। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি শিখলাম শরীর এর জন্য মন লাগে না; শরীর এর জন্য খালি শরীর,আর মনের জন্য মন। তবে হ্যাঁ আমি এখনও ওর ভাল চাই আর আমি ওকে দোষ ও দেই না।

সে এখন এক সন্তান এর জনক এবং আমি খুব খুশি। এখনও তার সাথে আমার যোগাযোগ হয় কিন্তু আমি আর কিছুই অনুভব করি না কারন এই মানুষ আর আমার ওই মানুষ এক না, আমি ওকে একদম হারিয়ে ফেলেছি। কোথাও খুঁজে পাই না। আর পাবও না। শুধু অপেক্ষা আর অনেক কাজ, আমাকে তো অনেক বড় হতে হবে ওটাই তো আমার প্রাপ্তি তাই না! রবি ঠাকুর এর এই লাইন তা এখনও গাই মাঝে মাঝেই... দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি।

তাই চমকিত মন, চকিত শ্রবণও ,তৃষিত আকুল আঁখি............... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।