আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজেকে খুজি

এমনিতে আজ প্রচণ্ড গরম। তার উপর আবার সকাল থেকে বাসায় পানি নেই। বার দুয়েক তাগাদা দিয়েও জানা যায়নি পানি কখন আসবে। কেয়ারটেকার রহিমের এক কথা, মালিক আজমত আলি না আসা পর্যন্ত পানির সমস্যার কোন সমাধান হবেনা। এতে যদি আরেকটি কারবালাও হয় এতে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

আজমত আলির বাড়ির কন্ডিশন ভালো না হলেও বাড়ির পজিশন ভালো। একেবারে রাস্তার সাথে,বারান্দাগুলো দক্ষিণমুখি। যে কারনে কোন মাস তার বাড়ি খালি পড়ে থাকেনা। আর তাই ভাড়াটিয়ারাও একটু উচু গলায় কিছু বলবে সেই সাহস নেই। পাছে আবার বাড়ি ছাড়তে হয়।


ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটের পূর্ব তেজতুরি বাজারে আজমত আলির বাড়ি। তিন তলা বাড়ির প্রতিটি ফ্লোরে দুইটি করে ইউনিট ,ছাদের উপর আবার টিন শেডের দুই রুম। সেই রুমে অধ্যাপক আবুল মনসুর তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। মনসুর সাহেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্র ছিলেন ,ছাত্রজীবনে বিতর্ক করতেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিতর্ক সংগঠন DUDS(Dhaka university debating society)এর প্রতিষ্ঠাকালীন উপ-সেক্রেটারি ছিলেন। এখন অবশ্য তিনি একটি কলেজে গণিত পড়ান,কারন তার বিশ্বাস গণিত হচ্ছে সকল দর্শনের মূল এবং তার স্বপ্ন তার ছেলেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগে পড়াবেন।

ছেলে ঈশানের অবশ্য এ ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই। বাবার মত সেও যুক্তির মাঝে মুক্তি খোঁজে।
আর মেয়ে রেবেকা হয়েছে ঠিক তার মায়ের মত। শান্ত,নম্র আর গুছানো। অগোছালো কোন কিছু দেখতেই পারেনা।

সব মিলে অধ্যাপক সাহেবের পরিবারে সুখের ফল্গুধারা প্রবাহমান। যদিও মাসের শেষে একটু আর্থিক কষ্টে পড়তে হয়,কিন্তু এই নিয়ে মনসুর সাহেবের স্ত্রীর অবশ্য কোন অভিযোগ নেই। কারন তার স্বামীকে নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই,তার স্বামী দুই দুই বার ঢাকা বিভাগের সেরা কলেজ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটা সনদপত্রও আছে। ড্রয়িং রুমের দেয়ালে লেমিনেটিং করে তা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

গরিব-মেধাবী ছাত্রদের বিনা বেতনে তার কলেজে পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। নানান সময় অর্থের অভাব হলে তার স্ত্রী যখন তাকে বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতে বলেন,তখন মনসুর সাহেব বলেন, “আমাকে সরকার টাকা দেয় কলেজে ভালোভাবে পড়ানোর জন্য আর আমি যদি বাসায় প্রাইভেট পড়াই তাহলে আমি কলেজে ঠিকমত পড়াতে পারবনা। এতে সরকারের সাথে বেইমানি করা হবে,আমি বেঈমান হতে পারবনা”।
ছুটির দিন দেখে অধ্যাপক সাহেব আজ বাসাতেই ছিলেন। মেয়ে রেবেকার তরমুজ খাবার আবদার মেটাতে সেই যে বাহিরে গেছে আর ফেরার নাম নেই।

রেবেকা অধৈর্য হয়না। তার কাছে তার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দার্শনিক,আর দার্শনিকরা চিন্তাশীল হয়,তার বাবাও হয়ত কোন বিষয় নিয়ে চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে আছেন। বাসাতে ফেরার সময় ঠিকই হাতে তরমুজ নিয়ে হাসতে হাসতে বলবে,দেখিস মা আর কোনদিন এমন হবেনা আসলে হঠাৎ করে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম তো তাই ভুলে গিয়েছিলাম।
ঈশান আবার বাবার তর্কের মেধা পেয়েছে,তাই অযৌক্তিক কোন বিষয় নিয়ে কোন কথা ঈশান শুনতে পারেনা। একটি বিষয় নিয়ে সেই যে সকাল থেকে মা ছেলে তর্ক করছে কিন্তু এখনও কোন সমাধানে আসতে পারেনি।

আজ অবশ্য তেমন কোন কথা কেউ তাকে বলেনি। কিন্তু ইশানের মায়ের অভিযোগ,সবাইকে ঈশান যুক্তির মাধ্যমে কথা বলার উপদেশ দিলেও সেই নাকি আজকে অযৌক্তিক কথা বলেছে। ঈশান অবশ্য তার কথার স্বপক্ষে যুক্তি দিতে চেষ্টা করছে কিন্তু তার মা যেন আজ কিছুতেই তার কথা শুনতে চাচ্ছেনা। মা-ছেলের এই অবিরাম তর্ক রেবেকা অবশ্য বেশ উপভোগ করছে,কারন প্রতিদিন যখন সে আর ঈশান তর্ক করে তখন তার মা এসে তাদের দুজনকে থামিয়ে দেয়। কিন্তু আজ যখন তার মা ঈশানের সাথে তর্কে যুদ্ধে নেমেছে তখন আসলে বসে বসে উপভোগ করা ছাড়া আর কোন উপায় সে বের করতে পারছেনা।


অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মা-ছেলে দুইজনই এখন যে যার মত কথা বলছে কিন্তু কেউ কারও কথা শুনছে না। এরই মাঝে অধ্যাপক সাহেব তরমুজ নিয়ে হাজির। তরমুজ দেখে দুজনের কথা বন্ধ হয়ে গেল,কিন্তু তরমুজ খেয়েই মা-ছেলে যে আবার তর্ক শুরু করে দেবে এটা বাপ-মেয়ে ভাবতেই পারেনি। মনসুর সাহেব অবস্থা বেগতিক দেখে মডারেটর এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন,প্রথমেই ঈশানকে বলল দুই মিনিটে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য।
ঈশান বলতে লাগল,
এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুনের অধিকারী ,প্রত্যেকের উচিত তার সেই গুনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা এবং তার পেছনে ছোটা।

নিজেকে শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা এবং প্রতিযোগিতা করা নিজের সাথে। (মনসুর সাহেব ছেলের কথা শুনছিলেন আর ভাবছিলেন মানুষ সম্পর্কে তো ঈশান বেশ সুন্দর ধারনা রাখে)
উদাহরন দিয়ে গিয়ে বলল,ধরুন কোন গণিত পরীক্ষায় ক ৮৫ পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করল। আর খ ৭০ পেয়ে ২য় স্থান অধিকার করল,আর গ ৫৫ নম্বর পেল। আমরা এটাই ভাবব যে,ক হয়ত খুব খুশি কারন সে খ এর চেয়ে ১৫ নাম্বার বেশি পেয়ে প্রথম হয়েছে। কিন্তু আসলে ক মোটেই খুশি নয়।

সে মন খারাপ করে ক্লাসের এক কোনে বসে আছে। কারন ক জানে তার সামর্থ্য আছে গণিতে ৯০ পাবার,কারন গণিত তার খুব ভাল লাগে। কত নাম্বার বেশি পেয়ে প্রথম হয়েছে এটা তার কাছে কোন বড় বিষয় নয় বরং তার কাছে বড় বিষয় হচ্ছে তার আসলে কত পাবার সামর্থ্য আছে। কারন “ক” তার নিজের শক্তি সম্পর্কে বেশ ভালো ধারনা রাখে,ঠিক তেমনি গ এর সামর্থ্য আছে ৫৫ পাবার কিন্তু তাকে ৯০ পাবার জন্য সারাজীবন উৎসাহ দিলেও লাভ হবেনা,কারন গ এর পছন্দ রসায়ন বিজ্ঞান। আর তাইত আমাদের সবার উচিত নিজেকে ভালোভাবে জানা,নিজের শক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিজের সাথে প্রতিযোগিতা করা।

ঈশান তার নিজের বক্তব্য শেষ করল।
মনসুর সাহেব তার স্ত্রীকে দুই মিনিটে তার বক্তব্য উপস্থাপন করার কথা বললেন। কিন্তু স্ত্রী নির্বিকার। কারন এতক্ষন সে তার সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন,তার কাছে মনে হয়ে তার ছেলে আসলে যুক্তিপূর্ণ কথাই বলেছে। অধ্যাপক সাহেব কিছু বলতে যাবেন কিন্তু বাথরুমে পানির শব্দ শুনে সবাই পানি ধরার জন্য দ্রুত ছুটে গেলেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.