আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশপের গল্প (৩১ - ৩৫)

---------------------------------------------------------------- ঈশপের নীতিগল্পগুলি, যত দিন যাচ্ছে, জীবনের চলার পথে আরো বেশী করে অনুভব করছি।
সম্প্রতি ইচ্ছে হ’ল সে’গুলি ফিরে পড়ার, ধরে রাখার - নিজের মত করে।
অনুবাদ ইংরেজী পাঠের অনুসারী, আক্ষরিক নয়। সাথে আমার দু-এক কথা। 
 [গল্পসূত্রঃ R. Worthington (DUKE Classics)-এর বই এবং আন্তর্জাল-এ লভ্য http://www.aesop-fable.com -এ ইংরেজী অনুবাদের ঈশপের গল্পগুলি।


 গল্পক্রমঃ R. Worthington-এর বইয়ে যেমন আছে] ----------------------------------------------------------------
(৩১) The Playful Ass
এক নাচানাচি-করা গাধার গল্প
একদিন এক গাধাকে দেখা গেল খুব ফুর্তি হয়েছে তার। সোজা এক বাড়ির ছাদে গিয়ে চড়েছে। তারপর শুরু করে দিয়েছে প্রবল নাচানাচি। ছাদ ছিল টালির। নাচের চোটে গুচ্ছের টালি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো।

বাড়ির মালিক রেগে আগুন। তাড়াতাড়ি সে ছাদে উঠে গেল। তারপর লাঠি দিয়ে ভয়ানকভাবে পিটতে পিটতে গাধাটাকে নামিয়ে আনল। গাধাটা তখন বলে, “কি হল! কাল তো দেখলাম, বাঁদরটা ঠিক এই রকম-ই নাচানাচি করছিল। তখন তো আপনি প্রচুর হাসছিলেন।

তাইতো আমার মনে হল যে ছাদের উপরে নাচানাচি করতে দেখলে আপনার খুব ভাল রকম মজা লাগবে!”
প্রাচীন বচনঃ যারা নিজেরা নিজেদের জায়গাটা বোঝে না তাদের জোর করেই বুঝিয়ে দিতে লাগে।
আমি বলিঃ আহাম্মক উচ্চাকাঙ্খীদের ঘাড় ধরে বের করে দেওয়া ছাড়া শেষে আর কোন উপায় থাকে না।
(৩২) The Man and the Satyr
একজন লোক আর এক ছাগ-মানুষ-এর গল্প
একজন লোকের সাথে একবার এক ছাগ-মানুষের বন্ধুত্ব হয়েছিল। একদিন খুব শীত পড়েছে। দু’জনে মিলে গল্প করছে।

শীতের চোটে লোকটি হাতদুটো বারে বারে মুখের কাছে এনে তাতে ফুঁ দিচ্ছে। ছাগ-মানুষ লোকটির কাছে জানতে চাইল কেন সে ঐরকম ফুঁ দিচ্ছে। লোকটি তাকে বলল যে এই করে সে তার হাত গরম করছে। আরো খানিক্ষণ সময় গেল। দু’জনে খেতে বসেছে।

খাবার ভীষণ গরম। লোকটি খাবারের থালায় ফুঁ দিতে থাকল। ছাগ-মানুষ এবারো ফুঁ দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করল। লোকটি বলল যে সে ফুঁ দিয়ে খাবার ঠান্ডা করছে। ছাগ-মানুষ ক্ষেপে গিয়ে বলল, “আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব শেষ।

যে লোক ফুঁ দিয়ে গরম করে আবার সেই ফুঁ দিয়েই ঠান্ডাও করে তাকে বিশ্বাস করা যায় না। ”
প্রাচীন বচনঃ যে লোক দু’দলের হয়েই কথা বলে তাকে বিশ্বাস করা যায় না।
আমি বলিঃ ছাগ-মানুষ (Satyr) রূপকথার চরিত্র হলেও ছাগুলে বুদ্ধির মানুষ অনেক আছে। তাদের নিজেদের বোধের অক্ষমতায় তারা সব গুলিয়ে ফেলে আর দোষ দ্যায় অন্যদের।
সতর্কীকরণঃ ছাগুলে বুদ্ধি বিশিষ্ট ও ছাগু সমার্থক নয়।


(৩৩) The Oak and the Reeds
ওক গাছ ও নলখাগড়া ঘাস
একদিন একটা বড় ওক গাছ ঝড়ে উপড়ে গেল। গাছটার পাশে জলের ধারে অনেক নলখাগড়া ঘাস হয়েছিল। ওক গাছটা সেই ঘাসেদের মাঝে গিয়ে পড়ল। পড়ার পর ওক-গাছটা ঘাসেদের বলল, “অবাক লাগে আমার। তোমরা এত হাল্কা, রোগা-পাতলা, অথচ এই প্রবল ঝড়ে তোমাদের প্রায় কিছুই হয় নি!” ঘাসেরা বলল, “তুমি হাওয়ার সঙ্গে লড়াই করছিলে।

তাকে হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলে। ফলে একসময় ভেঙ্গে গিয়ে মারা পড়লে। আমরা কিন্তু, একটু হাওয়া দিলেই আমাদের মাথা নুইয়ে দিই, ফলে আমাদের আর ভেঙ্গে পড়তে হয় না। ”
প্রাচীন বচনঃ সবসময়ই জেতার চেষ্টা করাটা ঠিক নয়।
আমি বলিঃ প্রতিবাদের হাওয়া যখন প্রবল হয়, গোঁয়ার বিরোধীরা তখন উড়ে যায়।

কিন্তু সমাজের আগাছা, চতুর ধান্দাবাজেরা এই সময় সব মেনে নেওয়ার ভান করে। আর, ধীরে ধীরে মাটির কাছাকাছি থেকে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
(৩৪) The Huntsman and the Fisherman
এক শিকারী আর এক জেলে
এক শিকারী তার কুকুর আর শিকার নিয়ে বন থেকে ফিরছিল। আর, এক জেলে ঘরে ফিরছিল মাছ ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে। হঠাৎ দু’জনের দেখা হয়ে গেল।

দু’জনেরই মনে হল যার যার জিনিষ বদলে নিলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শিকারী ঘরে ফিরল মাছ নিয়ে, জেলে নিয়ে এল বন থেকে আনা শিকার।
দু’জনেই মহা খুশী। এই বদলা-বদলী তাদের এত ভাল লেগে গেল যে রোজ-ই তারা এই রকমভাবে মাছ আর শিকার বদলে নিতে থাকল।

এ’সব দেখে তাদের এক প্রতিবেশী তাদের বলল, “এত ঘন ঘন বদলা-বদলী করছ। বদলানোর মজাটা তোমরা তাড়াতাড়ি-ই নষ্ট করে ফেলবে। তখন আবার তোমরা যার যার জিনিষ-এই ফিরে যেতে চাইবে। ”
প্রাচীন বচনঃ সংযম আনন্দ বাড়ায়।
আমি বলিঃ অল্প কিছু সম্ভাবনার মধ্যে বারে বারে বদলে বেশীদিন চলে না।

একঘেয়েমী কাটাতে গেলে ক্রমাগত সম্ভাবনার সংখ্যাও বাড়িয়ে যেতে লাগে।
(৩৫) The Mother and the Wolf
বাচ্চার মা আর নেকড়ে
এক বাড়িতে এক মা তার বাচ্চার কান্না থামাতে চেষ্টা করছিল। এক নেকড়ে সেই সময় সেই এলাকায় খাবারের খোঁজে ঘোরাঘুরি করছিল। বাড়িটার পাশ দিয়ে যাবার সময় নেকড়ে শুনতে পেল, বাচ্চার মা বলছে, “চুপ করো, নইলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেব আর নেকড়ে তোমায় ধরে খেয়ে ফেলবে। ” নেকড়ে সেই শুনে সারা দিন দরজার বাইরে বসে রইল।

সন্ধ্যাবেলায় সে শোনে বাচ্চার মা বলছে, “কেমন শান্ত হয়ে আছে আমার সোনা। এখন নেকড়ে এলে, আমরা সেটাকে মেরে ফেলব। ” নেকড়ে সেই শুনে ক্ষিধে আর শীতে হু-হু করে কাঁপতে কাঁপতে নিজের বাড়ি চলে গেল।
প্রাচীন বচনঃ রাগ করে কি বিশেষ না ভেবে কেউ কিছু বললে সেটাকেই বিশ্বাস করে বসার কোন অর্থ হয় না।
আমি বলিঃ রাগ করা কি ক্ষোভের কথা বলা মানেই মানেই ভোট-টা অন্য দলের দিকে চলে যাওয়া নয়।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।