আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশপের গল্প (৪১ - ৪৫)

----------------------------------------------------------------
ঈশপের নীতিগল্পগুলি, যত দিন যাচ্ছে, জীবনের চলার পথে আরো বেশী করে অনুভব করছি।
প্রিয় সচলায়তনে ধরে রাখি তাদের - নিজের মত করে।
অনুবাদ ইংরেজী পাঠের অনুসারী, আক্ষরিক নয়। সাথে আমার দু-এক কথা। 

[গল্পসূত্রঃ R. Worthington (DUKE Classics)-এর বই এবং আন্তর্জাল-এ লভ্য http://www.aesop-fable.com -এ ইংরেজী অনুবাদের ঈশপের গল্পগুলি।


গল্পক্রমঃ R. Worthington-এর বইয়ে যেমন আছে]
----------------------------------------------------------------
(৪১)
The lion and the Dolphin
সিংহ আর তিমি
সমুদ্রের ধারে ধারে হাঁটছিল এক সিংহ। হাঁটতে হাঁটতে দেখে এক তিমি মাছ ঢেউ ফুঁড়ে মাথা উঁচু করে জল থেকে বের হয়ে এল। সিংহ তখন ঐ তিমিকে ডেকে তার সাথে একটা চুক্তি করতে চাইল যে আজ থেকে তারা একজোট হয়ে কাজ করবে। বলল যে সে নিজে হচ্ছে ডাঙ্গার সব জন্তুদের রাজা, আর, জলের প্রাণীদের রাজা হল তিমি। তাই এই দুজনই একে অপরের সবচেয়ে বড় বন্ধু হওয়া উচিত।

তিমি মহা খুশী হয়ে এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল। কিছুদিন-এর মধ্যেই একদিন এক বুনো ষাঁড়-এর সাথে সেই সিংহের জোর লড়াই লেগে গেল। সিংহ তখন তিমিকে ডেকে তার সাহায্য চাইল। তিমির খুব ইচ্ছে ছিল সিংহকে সাহায্য করে। কিন্তু করবে কি করে! সে তো ডাঙ্গায় উঠতেই পারে না।

সিংহ তার ফলে তিমিকে বেইমান বলে গালমম্দ করল। তিমি জবাব দিলঃ “না, না, দোস্ত, আমায় দোষ না দিয়ে বরং এই প্রকৃতিকে দোষ দাও। সে আমায় জলের রাজা বানিয়েছে বটে, কিন্তু ডাঙ্গায় বাস করার ক্ষমতাটা দেয়নি! ”
প্রাচীন বচনঃ নিজের নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকো।
আমি বলিঃ যার কাছ থেকে কোন প্রকৃত উপকার সম্ভব নয় তার সাথে পারস্পরিক সাহায্যের চুক্তি অর্থহীন বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
টীকাঃ Dolphin-এর বাংলা শুশুক।

কিন্তু এই গল্পে তিমি-ই বেশী মানাচ্ছে বিবেচনায় শুশুক-এর বদলে তিমি ব্যবহার করেছি।
(৪২)
The mice in Council
ইঁদুরদের সভায়
অনেক ইঁদুর মিলে একবার একটা সভা ডাকল। সে সভায় জোর আলোচনা চলল তাদের চরম শত্রু বিড়ালকে নিয়ে। আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল একটা উপায় বার করা যাতে আগে থাকতেই জানা যাবে কখন বিড়াল আসছে। অনেকে মিলে অনেক কথা হল।

সবচেয়ে বেশী পছন্দের রায় - বিড়ালের গলায় একটা ঘন্টা বেঁধে দিতে হবে। তা হলেই সে যখন কাছাকাছি আসবে, তার চলার সাথে সাথে ঘন্টার টুং টাং আওয়াজটা পাওয়া যাবে। আর সেই আওয়াজ শুনে বিড়াল এসে পড়ার আগেই ইঁদুরেরা তাদের গর্তে পালিয়ে যেতে পারবে। মুস্কিল ঘটল যখন তারা ঠিক করতে বসল যে ঘন্টাটা বিড়ালের গলায় বাঁধবে কে। এই কাজটা করার জন্য শেষ পর্যন্ত আর কাউকেই পাওয়া গেল না।


প্রাচীন বচনঃ প্রস্তাব যারা দিয়েছে, তাদেরই কাজটা করার সুযোগ দিয়ে দেখো।
আমি বলিঃ বড় বড় কথা বলা যত সোজা সেই কথাগুলো কাজে করে দেখান ততটাই কঠিন। বলে অনেকেই, করবার বেলা আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
(৪৩)
The Camel and the Arab
উট আর তার আরবী মালিক
এক আরবী উট-চালক উটের পিঠে মাল-পত্র চাপিয়েছে। এবার যাত্রা শুরু হবে।

শুরু করার আগে সেই লোক তার উটের কাছে জানতে চাইল যে সে কোন দিকে গেলে উটটা বেশী খুশী হবে - পাহাড়ের খাড়াই বেয়ে চড়তে না পাহাড়ের ঢালু বেয়ে নামতে। বেচারা উট! কি আর করে সে! সাধারণ যুক্তিতে মনে যে প্রশ্নটা এল সেটাই করে বসলঃ “এমন কথা জিজ্ঞেস করেন কেন আমায়? মরুভূমির ভিতর দিয়ে চড়াই-উতরাই-ছাড়া যাওয়ার যে পথটা ছিল, সেই পথটা কি এখন বন্ধ হয়ে গেছে?”
প্রাচীন বচনঃ (ঈশপ নিজে এই গল্পের আলাদা করে কোন নীতিকথা জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত নই। একটি সম্ভাব্য নীতিকথা যা পেয়েছি, তা এই রকমঃ) যে প্রশ্নের উত্তর বোঝাই যাচ্ছে সেটা করার কোন অর্থ হয়না।
আমি বলিঃ সাধারণ মানুষদের কাছে কিছু পছন্দর মধ্যে বেছে নেওয়ার ডাক দেয়ার সময় অনেক তথাকথিত বিজ্ঞজনই ব্যাখ্যা করতে ভুলে যান যে কেন আরো স্বাভাবিক পছন্দগুলিকে হিসাবের বাইরে রাখা হল।
(৪৪)
The Fighting Cocks and the Eagle
লড়াইবাজ মোরগেরা আর এক ঈগল
দুই লড়াইবাজ মোরগ ভয়ংকরভাবে একে অপরের সাথে আঁচড়ে-কামড়ে লড়ে যাচ্ছিল - তাদের লড়াইয়ের মাঠ-এর দখলদারী নিয়ে।

একজন একসময় জিতল। হেরো মোরগ মাথা নীচু করে এক নির্জন কোণায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। বিজয়ী মোরগ উড়ে গিয়ে বসল এক উঁচু দেয়ালের উপর, ডানা ঝাপটাল কয়েকবার, তারপর গলা ছেড়ে কোঁকর-কোঁ করে ডেকে উঠল প্রবল বিজয়-উল্লাসে। আকাশে উড়তে থাকা এক ঈগলের নজর পড়ল তার উপর, আর ছোঁ মেরে নেমে এসে শিকার করে নিয়ে গেল তাকে নিজের ডেরায়। হেরো মোরগ সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে এল নিজের কোণা থেকে।

এখন থেকে সে বিনা বাধায় তার রাজত্ব কায়েম করে নিল।
প্রাচীন বচনঃ অহংকার ধ্বংস ডেকে আনে।
আমি বলিঃ একটা লড়াই জেতাই সব নয়, ক্রমাগত সতর্ক থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সেই জয়কে ধরে রাখতে লাগে।
(৪৫)
The Boys and the Frogs
ছোট ছেলেরা আর কিছু ব্যাঙ
একদল ছেলে পুকুরের ধারে খেলা করছিল। পুকুরের জলে ভাসতে থাকা ব্যাঙগুলোর উপর চোখ পড়ল তাদের।

ঢিল ছুঁড়ে ছুঁড়ে সেই ব্যাঙগুলোকে ঘায়েল করার খেলায় মেতে উঠল তারা। বেশ কিছু ব্যাঙ মারা গেল তাদের হাতে। একসময় আর থাকতে না পেরে জলের উপর মাথা তুলে চিৎকার করে কেঁদে উঠল এক ব্যাঙ, “ছেলেরা, একটু দয়া করো। তোমাদের কাছে যেটা খেলা, আমাদের কাছে সেটা মৃত্যু। ”
প্রাচীন বচনঃ অনেক সময়ই আমরা যেটা খেলা খেলা করে করি অন্য কারো কাছে সেটা ভয়ানক বিপদ বয়ে আনে।


আমি বলিঃ ক্ষমতাশালীরা যখন বিবেচনাহীন হয় তখন তাদের যেমন-ইচ্ছে কাজ-এর ফলে সর্বনাশ হয়ে যায় নিরীহ অসহায় মানুষদের।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।