আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ ভারতের বাঙালি, আত্মত্যাগী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার



১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ। কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারনে সেদিনের ঐ পরিকল্পনা সফল করা যায়নি। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ছাড়া এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ ঐ ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না।

ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল “ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড”। সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের জন্য নুতনভাবে পরিকল্পনা শুরু করে। চট্টগ্রাম শহরের কাছে দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে ঐ ক্লাবেরই একজন বেয়ারা যোগেশ মজুমদারের বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পেলেন। ১৯৩২ এর ১০ এপ্রিল ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন ধার্য করা হয়।

শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল সেদিন ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। এই ব্যর্থতার আত্নগ্লানিতে শৈলেশ্বর চক্রবর্তী কাট্টলী সমুদ্রসৈকতে রিভলবারের গুলিতে আত্নহত্যা করেন। মাষ্টারদা ১৯৩২ এর সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাবে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের উপর দেবেন বলেন মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু সাতদিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পরে গেলে আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর।

২৪ সেপ্টেম্বর এ আক্রমণে প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী, চুল ঢাকা দেবার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতা। আক্রমণে অংশ নেয়া কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন এর। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার (বিপ্লবীদের দেয়া তাঁর গোপন নাম ছিল জয়দ্রথ) ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল।

তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেবার পরেই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার কারনে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল।

ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল। তাঁরা পাল্টা আক্রমণ করল। একজন মিলিটারী অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। কিন্তু শেষে আর চলতে না পেরে পড়ে যান মাটিতে।

বিপ্লবী দলটি তার কাছে এলে তিনি কালীকিংকর দে'র কাছে তার রিভলবারটি ফেরত দিয়ে তাদের নির্ধারিত জায়গায় চলে যাবার নির্দেশ দেন। কিছুক্ষণ পর যখন দেখতে পান ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে এবং তিনি ধরা পড়ে যাবেন তখন তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড মুখে ঢেলে দেন। দেশমাতৃকার জন্য ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এভাবেই আত্নহুতি দিলেন চট্টলার রাণী, বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার। বীরকন্যা প্রীতিলতা'র ৮১ তম আত্নাহুতি দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা। (ফেসবুক থেকে কাটপেস্ট)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.