আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা (১৪)

[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।

জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইনশাআল্লাহ। ১৪তম পর্ব আমি তাকে উপদেশ দিলাম “যখন তুমি শিয়াদের মধ্যে থাকবে, তাকিয়া করবে। কিন্তু তাদের বলবে না যে তুমি একজন সুন্নী। পাছে তারা তোমার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাড়াবে। তাদের দেশ এবং পা-িত্যকে কাজে লাগাবে।

তাদের ঐতিহ্য এবং সংষ্কৃতি শিখে নেবেন। কারণ তারা হচ্ছে মুর্খ এবং একগুয়ে প্রকৃতির লোক। আমি চলে আসার সময় তাকে কিছু যাকাতের পয়সা দিলাম। যাকাত হচ্ছে ইসলামের কর যা গরীবদের দেয়া হয়। অতিরিক্ত উপহার হিসেবে তাকে কিছু ভারবাহী পশু দিলাম।

আমার চলে আসার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ফলে আমি অস্বস্তি অনুভব করতে থাকি। অবশ্য বিদায়কালে আমরা ঠিক করেছিলাম, আমরা উভয়েই বসরায় ফিরে আসবো। যে প্রথমে ফিরবে, ফিরে অন্যকে না দেখলে দ্বিতীয় জনকে চিঠি লিখবে এবং চিঠি আব্দুর রিদার নিকট রেখে যাবে। বাগদাদে কয়েকদিন কাটালাম।

তারপর লন্ডনে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ পেয়ে লন্ডন চলে গেলাম। লন্ডনে গিয়ে সচিব এবং উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললাম। আমার দীর্ঘদিনের কার্যকলাপ, অভিজ্ঞতা তাদের অবহিত করলাম। ইরাক সম্মন্ধে যে তথ্য পেলাম তাতে তারা বেশ আনন্দ পেয়েছিলো। বললো, তারা বেশ খুশী।

ওদিকে নজদের মুহম্মদের মেয়ে বন্ধু সুফিয়া যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল তাতেও আমার কথার প্রতিফলন ছিল। আমার মিশন চলাকালীন সময়ে একজন লোক সবসময় আমাকে অনুস্মরণ করে গেছে। সেছিল মন্ত্রণালয়ের নিয়োজিত একজন গোয়েন্দা। সেও যেসব রিপোর্ট পাঠিয়েছিল দেখলাম আমার দেয়া রিপোর্টের সঙ্গে বেশ মিল রয়েছে। সচিব আমাকে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

মন্ত্রীর সঙ্গে যখন দেখা হলো তিনি আমার প্রতি এমন ব্যবহার করলেন যে তিনি যেন আমার আসার অপেক্ষাতেই ছিলেন। বুঝলাম তার হৃদয়ের একটা স্থান করে নিয়েছিলাম। নজদের মুহম্মদকে বশ করতে পেরেছি জেনে মন্ত্রী ভারী খুশি হলেন। মন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের জন্য সে একটি শক্তিশালী অস্ত্র এবং আমরা এমনটাই খুজছিলাম। [আমাদের মন্ত্রণালয়ের গুপ্তচরের সঙ্গে তার ইস্পাহানে দেখা হয়েছিল এবং গুপ্তচর জানিয়েছে যে সে এখনও মত পাল্টায়নি।

] তাকে সব ধরনের প্রতিশ্রুতি দাও। ভালো হয় যদি তোমার পুরো সময়টা তাকে আমাদের আদর্শে গড়তে ব্যয় কর। ” বললাম, আমি অবশ্য নজদের মুহম্মদকে নিয়ে চিন্তিত আছি। হয়তো সে তার মত পাল্টে ফেলতে পারে। তিনি বললেন ভয়ের কিছু নেই।

তুমি চলে আসার পর থেকে তোমার দেয়া ধারণা থেকে সে এখনও সরে আসেনি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের গুপ্তচরের সঙ্গে তার ইস্পাহানে দেখা হয়েছিল এবং গুপ্তচর জানিয়েছে সে এখনও মত পাল্টায়নি। মনে মনে বললাম, অপরিচিত লোকের কাছে কি করে নজদের মুহম্মদ মনের কথা বললো? অবশ্য আমি মন্ত্রীকে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করিনি। যাই হোক, পরে যখন নজদের মুহম্মদের সঙ্গে দেখা হয়, তখন জানতে পারলাম, ইস্পাহানে করিম নামে একজনের দেখা হয়েছিল। সেই তার মনের কথা কৌশলে বের করে নেয়।

সে বলেছিল আমি শায়খ মুহম্মদের (অর্থাৎ আমি) ভাই। সে আপনার সম্পর্কে যা জানে সব বলেছে। নজদের মুহম্মদ বললো, সুফিয়া তার সাথে ইস্পাহানেও গিয়েছিল। সেখানে আরো দু’মাসের জন্য মুতা বিবাহ করেছিল। আব্দুল করিমও শিরাজ পর্যন্ত আমার সাথে ছিল সেখানে আমার জন্যে আয়েশা নামের এক মেয়ের সন্ধান দেয়।

আয়েশা সুফিয়ার চাইতেও সুন্দরী ও আকর্ষণীয় ছিল। তাকেও আমি মুতা বিবাহের আওতায় এনেছিলাম। পরে জানতে পারি, আব্দুল করিম আসলে খ্রিষ্টান এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইস্পাহানে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছিল। আয়েশাও মন্ত্রণালয়ের অপর এজেন্ট, সে সিরাজের অধিবাসী এবং ইহুদী। আমরা চারজনে মিলে নজদের মুহম্মদকে প্রশিক্ষণ দিতে থাকি।

আমাদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে আমরা যেভাবে চাবো সেভাবে কাজ করবে। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি যখন সকল ঘটনা বর্ণনা করছিলাম তখন সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের আরও দুজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন যাদের সাথে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। মন্ত্রী আমাকে বললেন “মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাবার যোগ্য তুমি। ” মন্ত্রণালয়ের সকল গুরুত্ত্বপূর্ণ গুপ্তচরদের মধ্যে তুমি সবার সেরা। সচিব তোমাকে দেশের কিছু গোপন তথ্য দেবে যা তোমার মিশনে তোমাকে সাহায্য করবে।

সে সময় আমাকে ১০ দিনের ছুটি দেয়া হল যাতে আমি আমার পরিবারের সাথে দেখা করতে পারি। সুতরাং সেই সময়েই আমি বাড়ী রওয়ানা হলাম এবং আমার বেশ কিছু মধুর সময় আমার ছেলের সাথে কাটালাম। আমার ছেলে ছিল অনেকটা আমার মতই দেখতে। সে দু চারটা শব্দ বলতে শিখেছিল এবং সে বেশ স্বাচ্ছন্দে এমনভাবে হাটতো মনে হতো সে যেন আমার শরীরের একটা অংশ। এই দশটি দিন আমি খুব সুখে এবং আনন্দের সাথে কাটালাম।

আমার এমন মনে হয়েছিল আমি যেন আনন্দে আকাশে উড়ছিলাম। ঘরে ফিরে আসা এবং পরিবারের কাছে আসা একটা দারুন আনন্দের বিষয়। এ দশদিনের ছুটিতে আমি আমার ফুফুর সঙ্গে দেখা করলাম যিনি আমাকে খুব ভালবাসতেন। আমার ফুফুর সঙ্গে দেখা করে ভালই করেছিলাম। কেননা আমার তৃতীয় মিশনের যাত্রার পরেই আমার ফুফু মারা গিয়েছিল।

তার মৃত্যুতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। এই দশটি দিন যেন এক ঘন্টা সময়ের মত পার হয়ে গেল। এভাবেই আনন্দের দিনগুলো ঘন্টার মত খুব দ্রুত কেটে যায় আর বেদনার দিনগুলো কেটে যেতে শতাব্দী লেগে যায়। নাজাফে আমার অসুস্থতার দিনগুলো মনে হলো। সেই কয়েকটি দিন আমার কাছে মনে হয়েছিল কয়েক বছর।

যখন নতুন নির্দেশ আনতে আমি মন্ত্রণালয়ে গেলাম সচিব অত্যন্ত আনন্দ এবং মর্যাদার সাথে আমাকে গ্রহণ করলেন। তিনি আমার সঙ্গে এমনভাবে হাত মেলালেন যে তার সেই আন্তরিকতা ভোলার নয়। তিনি আমাকে বললেন, আমাদের মন্ত্রী এবং উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের কমিটি প্রধানের নির্দেশে তোমাকে দেশের দুটো গোপন তথ্য দিবো। এই দুটো গোপন তথ্য থেকে পরবর্তীতে তুমি যথেষ্ট উপকার পাবে। খুব অল্প সংখ্যক দু-চারজন লোক ব্যতীত এ গোপন তথ্য কেউ জানে না।

আমি বললাম, প্রিয় শিক্ষক! ‘ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা যে বাতিল’- এ ব্যাপারে কি আপনার কোন মতামত পেতে পারি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ তারা বাতিল। তিনি আরও বললেন, তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। ” আমি যখন কারণ জানতে চাইলাম, তিনি উত্তর দিলেন, “এটা অপমানের প্রতিশোধ নেবার মানসেই করা হয়ে থাকে। তবে তারা আমাদেরকে অবিশ্বাসীর চোখে দেখে এবং আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করে। যে কারণে আমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করি।

” আমি তাকে বললাম, “পরিচ্ছন্নতা কি ঈমানের অঙ্গ নয়? অথচ দেখুন, শান-ই-শরীফ (হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাযার শরীফ) এলাকার রাস্তা-ঘাট সব নোংরা এবং অপরিষ্কার। এমনকি মাদ্রাসা যাকে বিদ্যাপীঠ বলা হয় তাও পরিষ্কার বলে ধরা যায় না। ” উত্তরে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’ একথা সত্যি। পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ, তবে কিছু করার নেই কেননা শিয়ারা পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খুব একটা গা করে না। ” নজফের শিয়া পন্ডিতের কাছ থেকে আমি যে উত্তর পেয়েছিলাম মন্ত্রণালয়ের এই লোকের সঙ্গে তার বেশ মিল ছিল।

নজফের সেই প-িতের সাথে এই লোকের মিল দেখে আমি সত্যি অবাক হলাম। উপরন্তু সেই লোকটিও ফার্সীতে কথা বলছে। সচিব বললেন, তুমি যদি বাকী চার জনের সেখানকার আসল লোকগুলির সাথে কথাবার্তা বলে থাকো, তাহলে এই নকল ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করলেই বোঝা যাবে আসল নকলে কি অদ্ভূত মিল। আমি বললাম, আমি জানি ‘শায়খুল ইসলাম’ কি চিন্তা করেন। কেননা ইস্তাম্বুলে থাকা অবস্থায় আমার শিক্ষক আহমেদ আফিন্দি আমাকে শায়খুল ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

সচিব তখন বললেন, তবে যাও শায়খুল ইসলামের সেই মডেলের সাথে আলাপ করতে থাকো। আমি শায়খুল ইসলামের মডেলের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলাম, “খলীফাকে অনুসরণ করা কি ফরয?” উত্তরে সে বললো, ‘হ্যাঁ’ এটা ওয়াজিব। সে আরও বললো, এটা এ কারণে ওয়াজিব যেহেতু আল্লাহ পাক ও তাঁর রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানা ফরয। ” যখন আমি তাকে বললাম, “এর স্বপক্ষে তিনি কি দলীল দিতে পারেন?” উত্তরে তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ পাক-এর এই আয়াত শোননি?- “আল্লাহ পাক, নবী এবং তোমাদের মধ্যকার উলীল আমরকে মান্য কর। ” আমি বললাম, “এই আয়াত শরীফ কি তাই বলে যে, ইয়াজীদকে আমাদের মানতে হবে? ইয়াজীদ তার সৈন্যদল দিয়ে মদীনা শরীফ লুণ্ঠন করেছিল, যে আমাদের নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৌহিত্র হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করেছে।

মান্য করতে হবে ওয়ালীদকে, যে শরাব পান করতো?” তার উত্তর ছিল, “বৎস! ইয়াজীদ আল্লাহ পাক-এর অনুমতিক্রমে খলীফা হয়েছিলেন। সে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করার হুকুম দেননি। সুতরাং শিয়াদের মিথ্যা প্রচারে ভুল করো না। ভাল করে কিতাব পড়বে। আসলে সে ভুল করেছিল।

এজন্যে সে তওবা করেছিল (সে ছিল অনুতপ্ত এবং এ জন্যে আল্লাহ পাক-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও অনুকম্পা চেয়েছে)। ” [এ বর্ণনা সম্পূর্ণ ভুল। শুদ্ধ বর্ণনা হচ্ছে, “হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে শহীদ করার ক্ষেত্রে ইয়াজীদ অবশ্যই দায়ী। যার কারণে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আম ফতওয়া মতে, ইয়াজীদ চরম ফাসিক আর খাছ ফতওয়া মতে সে কাফির। ”] (ইনশাআল্লাহ চলবে) এথান থেকে পরুন পর্ব- এক এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন এথান থেকে পরুন পর্ব- চার এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ এথান থেকে পরুন পর্ব- ছয় এথান থেকে পরুন পর্ব- সাত এথান থেকে পরুন পর্ব- আট এথান থেকে পরুন পর্ব- নয় এথান থেকে পরুন পর্ব- দশ এথান থেকে পরুন পর্ব- এগার এথান থেকে পরুন পর্ব- বারো এথান থেকে পরুন পর্ব- তেরো  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.