আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা (১৬)

[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।

জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইনশাআল্লাহ। ১৬তম পর্ব বইটিতে মুসলমানদের উক্ত বিশ্বস্ত অবস্থানগুলোকে আরো পঙ্গু এবং ব্যাপকভাবে দুর্বল করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং সেটা সফল করার জন্য বইটিতে পথ দেখানো হয়েছেঃ ১। বিবাদমান গোত্র সমূহের মধ্যে শত্রুতা বাড়াবে। অবিশ্বাসকে জোরদার করবে এবং বিভিন্ন সাহিত্য প্রকাশনার মাধ্যমে মতবিরোধকে জাগিয়ে তুলবে। ২।

স্কুলে শিক্ষালাভ এবং প্রকাশনায় বাধা দেবে। যেখানে সম্ভব সাহিত্য তথা বইপত্র জ্বালিয়ে দেবে। মুসলিম ছেলে মেয়েরা যাতে অজ্ঞ থেকে যায় সে জন্যে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের নিন্দাবাদ করবে যাতে মুসলিম অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে না পাঠায়। ৩-৪। তাদেরকে বেহেশতের কথা বলবে এবং বোঝাবে পৃথিবীর জন্য কাজকর্ম করার প্রয়োজন নেই।

তাছাউফের নামে বিভ্রিান্তির পরিধিকে বিস্তৃত করবে। তাদেরকে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বইপত্র পড়তে দিয়ে বিশেষত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মসনবী শরীফ, মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইপত্র পুড়ানোর নামে তাদের মধ্যে একধরনের অসচতেনতাবোধ জাগিয়ে তুলবে। (নাউজুবিল্লাহ) (গুপ্তচর হেমপারকে পড়তে দেয়া বইটিতে মূলতঃ সুক্ষ্মভাবে তাছাউফের বিরুদ্ধে বলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং মানুষকে প্রকৃত তাছাউফের শিক্ষা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদেরকে ওলীআল্লাহদের সোহবত থেকে দূরে রাখার জন্যই তাদের এ বক্তব্য। কারণ ওলীআল্লাহদের সোহবত ইখতিয়ার না করলে কারো পক্ষে হাক্বীক্বীভাবে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়ের মহব্বত ও মারেফাত ও মারেফাত এবং তায়াল্লুক ও নেছবত হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, ইসলাম কখনই শুধু বেহেশ্তের আশায় বসে থেকে কাজকর্ম করতে নিষেধ করেনি। বরং হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক পুরুষের জন্য উপার্জন করা ফরয। ” কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, “অতঃপর হালাল রুজির সন্ধ্যানে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়। ” মুলতঃ হেমপারের বইটিতে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, ইসলাম হয়তো কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে এবং বৈরাগ্যকে পছন্দ করে কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আবার সূক্ষ্মভাবে বৈরাগ্য সম্পর্কিত বই এর নাম বলতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি মসনবী শরীফ, মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বইগুলোর নাম উল্লেখ করেছে।

অথচ বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ পাক না করুন, যদি কোন কারণে পৃথিবীতে কুরআন মজীদ এবং হাদীছ শরীফের শিক্ষা না থাকে এবং শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবখানা থাকে তবে মানুষ শুধু এহইয়াউ উলূমিদ্দীন পড়ে আবার পরিপূর্ণ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। আর এহইয়াউ উলূমিদ্দীন, মসনবী শরীফে তাছাউফের যে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেই শিক্ষা মূলতঃ মানুষের চরিত্রকে সুন্দরভাবে গঠন করে, উন্নত করে, নির্মল করে। মানুষের সব অসৎ স্বভাবগুলো দূর হয়ে যায় এবং সব সুন্দর, সৎ স্বভাবগুলো অর্জিত হয়। মূলতঃ তাছাউফই হচ্ছে ইসলামের মূল। আজকের সমাজে এতসব ফিৎনা ফাসাদের মূল কারণ হচ্ছে তাছাউফ বর্জিত সব শিক্ষা।

তাছাউফের শিক্ষার ফলে মানুষের অন্তর থেকে দূর হয় অহংকার, হিংসা, ঈর্ষাপরায়ণতা, মিথ্যা, গীবত, লোভ এতসব বদ স্বভাবগুলো আর অর্জিত হয় অল্পেন্তুষ্টি, ধৈর্য্য, সত্যবাদিতা, ন্যায় পরায়ণতা, এসকল সৎস্বভাব। মানুষ যদি ইসলামের এই মূল শিক্ষা তাছাউফের শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তবে একজন মানুষ পৃথিবীর যে কোন কাজে যে কোন পদে অধিষ্ঠিত হোক না কেন সেই কাজ এবং সেই দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালিত হবে। কিন্তু তাছাউফের শিক্ষা ব্যতীত অন্য যতই শিক্ষাই থাকুক না কেন তা মানুষের চরিত্র গঠন করেনা ফলে পৃথিবীতে দেখা দেয় অশান্তি, নৈরাজ্য, ফিৎনা-ফাসাদ, মারামারি ইত্যাদি। সুতরাং তাছাউফের শিক্ষা মানুষের মধ্যে অসচেতনতা বোধ তো তৈরী করেই না বরং তৈরী করে চরম পর্যায়ের সচেতনতা বোধ। ) ৫।

সম্রাটদের নিষ্ঠুরতা আর স্বৈরাচারী মনোভাব পোষনের জন্য লেলিয়ে দিবে। তার জন্যে মিথ্যাচার করবে; যথাঃ তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ছায়া স্বরুপ। বস্তুত হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত উসমান জিন্নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সকল উমাইয়া এবং আব্বাসীয় খলীফাগণ তলোয়ার ও কেবল শক্তির বলে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং তারা প্রত্যেকেই ছিলেন একজন সর্ব ক্ষমতাধর। উদাহরণস্বরুপ বলবে, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তরবারীর সাহায্যে ক্ষমতা পান এবং এজন্যে যারা তাকে মানেনি তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেন। এর মধ্যে হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর বাড়ীও ছিল।

(নাউজুবিল্লাহ) (খুলাফায়ে রাশেদীন সম্পর্কিত উপরোক্ত বক্তব্য ও ইতিহাস শুধু অসত্যই নয় বরং কাট্টা কুফরীরও অন্তর্ভূক্ত। মূলতঃ সংক্ষিপ্ত সঠিক ইতিহাস হচ্ছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বেছাল শরীফের পর একদল আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ একত্রিত হয়ে পরামর্শ করছিলেন পরবর্তী খলীফা মনোয়নের ব্যাপারে। তাঁরা পরামর্শ করছিলেন একজন মনোনীত হবেন আনছার ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পক্ষ থেকে আর একজন মনোনীত হবেন মুহাজির ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পক্ষ থেকে। এ কথা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গোচরে আসলে তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ শরীফের উদ্বৃৃতি দেন যে,‘ খলিফা হবেন কুরাঈশদের পক্ষ থেকে’। অতঃপর আলোচনা শুরু হয় কুরাঈশ মুহাজির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের মধ্যে।

হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লহু তায়ালা আনহু প্রস্তাব করেন হযরত আবু উবায়দা ইবনুল র্জরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে খেলাফতের দাায়িত্ব গ্রহণের জন্য। কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমাদের মধ্যে হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বোত্তম। কেননা আল্লাহ পাক স্বয়ং এক আয়াত শরীফে হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর তিনটি প্রশংসা করেছেন। তিনি হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর হাত মুবারকে বায়াত গ্রহণ করলেন এবং সাথে সাথে অন্যরাও বায়াত গ্রহণ করলেন। হযরত উমর ইবনুল খত্তব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খলিফা হবার যোগ্যতা পূর্বেই হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রকাশ করেছিলেন।

তারপরেও তিনি যখন বেশ অসুস্থ তখন তিনি হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেন কাগজ কলম আনতে যেখানে তিনি লিখে যাবেন। তার পরিবর্তে কে খলিফার দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু নাম প্রকাশ করার পূর্বেই তিনি আবার বেহুঁশ হয়ে পড়লেন এবং নাম প্রকাশ করতে পারেননি। কিন্তু ইতিমধ্যে হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সে কাগজে খলিফা হিসাবে হযরত উমার ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম মুবারক লিখে ফেলেন। পরবর্তীতে যখন হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আবার কিছুটা সুস্থ হন তখন তিনি হযরত উসমান জুন্ নুরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর কাছে জানতে চান কার নাম মুবারক লিখা হয়েছে।

উত্তরে তিনি হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর নাম প্রকাশ করলে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ও হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্য দুয়া করেন এবং জানান যে, হে হযরত ওছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনি আমার অন্তরের কথাটাই লিখেছেন। এভাবে দ্বিতীয় খলিফা হিসাবে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মনোনিত হন। ) হেমপারকে দেয়া বইটিতে আরও বলাছিল যে, তোমরা মিথ্যাচার করবে যে, হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্ষমতা পান হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুপারিশক্রমে। অন্যদিকে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নির্দেশে হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা হন। আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বেলায় বিদ্রোহীরা তাঁকে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচিত করে।

মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্ষমতাপান তরবারীর জোরে। অতঃপর উমাইয়া খলীফাদের সময় সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রাপ্তির বিষয়টি পৈত্রিক ধারায় উত্তরাধিকার হিসেবে চালু হয়। একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয় আব্বাসীয়দের বেলায়। আর এভাবেই এটা সত্য বলে প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম মানে স্বৈরাচারতন্ত্র। (ইনশাআল্লাহ চলবে) এথান থেকে পরুন পর্ব- এক এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন এথান থেকে পরুন পর্ব- চার এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ এথান থেকে পরুন পর্ব- ছয় এথান থেকে পরুন পর্ব- সাত এথান থেকে পরুন পর্ব- আট এথান থেকে পরুন পর্ব- নয় এথান থেকে পরুন পর্ব- দশ এথান থেকে পরুন পর্ব- এগার এথান থেকে পরুন পর্ব- বারো এথান থেকে পরুন পর্ব- তেরো এথান থেকে পরুন পর্ব- চোদ্দ এথান থেকে পরুন পর্ব- পনেরো  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.