আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপনে রেকর্ড

 

ঘটনা এমন যে, একজন চর ছদ্মবেশ নিয়েছেন একজন ব্যবসায়ীর। একজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করছেন তিনি। এরই ফাঁকে আড়ালে চালু করে দিয়েছেন ক্ষুদ্র একটি রেকর্ডিং যন্ত্র, যা সেই রাজনীতিবিদের কথাবার্তা গোপনে রেকর্ড করছে। পরে এ রেকর্ড করার ঘটনাটি প্রকাশ করে দেন তিনি। ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা।


রেকর্ডিং ডিভাইসগুলোর আকার এখন এতটাই ছোট হয়ে গেছে যে, চোখে পড়া দুষ্কর। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ সম্প্রতি রেকর্ডিং যন্ত্রাংশ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সত্তর ও আশির দশকে গোপন কথাবার্তা রেকর্ড করতে কোমরের সঙ্গে টেপ রেকর্ডার ও তারযুক্ত মাইক্রোফোন বুকের সঙ্গে আঠা দিয়ে আটকে রাখা হতো। বর্তমান সময়ের তারবিহীন প্রযুক্তির সঙ্গে আগের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা জোয়াকিন গার্সিয়া বলেন, আগের দিনে কাউকে সন্দেহ করা হলে পরীক্ষার সময় তার শরীরে তার রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হতো।

এখন তারযুক্ত পণ্যের যুগ শেষ। এখন ডিজিটাল যুগ।
নিউইয়র্কের রিচার্ড জাবেল নামের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেও গোপনে রেকর্ড করার পদ্ধতি এখনো একই রকম রয়ে গেছে, বরং তারবিহীন প্রযুক্তির রেকর্ডিং পণ্য শরীরে স্থাপন করা অনেক সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও গোপনে রেকর্ডিং বিষয়ে মানুষ এখন অনেক সচেতন, তার পরও অনেক ক্ষেত্রেই রেকর্ডার খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। যন্ত্রের আকার ছোট হয়ে যাওয়ায় যেকোনো স্থানে এটি লুকিয়ে রাখা সম্ভব।


গবেষকেরা বলছেন, মাত্র দুই দশক আগেও গোপনে রেকর্ডিং করার যন্ত্র শনাক্ত করা এমন কঠিন কিছু ছিল না, কারণ সে সময় এর আকার ছিল বড়সড়। এখন এর আকার এতটাই ক্ষুদ্র হয়ে গেছে যে, তা কোথায় লুকানো থাকছে, সেটি খুঁজে বের করাই রীতিমতো কষ্টসাধ্য বিষয়।
বর্তমানে ক্ষুদ্র ক্যামেরা ও রেকর্ডিং যন্ত্রের আকার এতটাই ছোট হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এটি কলম, টাইয়ের ক্লিপ, বোতামসহ যেকোনো জায়গায় লুকিয়ে রাখা যেতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের গোপন ক্যামেরা তৈরি করছে। আর এ গোপন ক্যামেরাগুলো এমনভাবে তৈরি, যাতে সহজে চোখে না পড়ে।

খুদে এ গোপন ক্যামেরায় মোশন অ্যাক্টিভেটেড রেকর্ডিং করা যায়। এসব ক্যামেরা আবার থাকে ফিচারে ভর্তি। এ রকম কয়েকটি ক্যামেরা হচ্ছে শাওয়ার রেডিও স্পাই ক্যাম, টিস্যু বক্স স্পাই ক্যাম, লাইট সুইচ স্পাই ক্যাম, এয়ার পিউরিফায়ার স্পাই ক্যাম, পেন স্পাই ক্যাম, অ্যালার্ম ক্লক হিডেন ক্যামেরা, সিডি প্লেয়ার হিডেন ক্যামেরা, ডিজিটাল ডেস্ক ক্লক, বাইনোকুলার, ফুলদানি এবং শোপিস আকারের ক্যাম, কম্পিউটার স্পিকার, বোতাম ক্যামেরা, মিরর হিডেন ক্যাম, মনিটর, ছোটো ম্যাচ বাক্স, ক্লিপ ক্যামেরা, হ্যান্ডব্যাগ ক্যামেরা ইত্যাদি।

গোপন ডিভাইসের ভেতর কী থাকে?
প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, এখনকার তৈরি গোপন ক্যামেরা ও অডিও রেকর্ডারে উন্নত প্রযুক্তি থাকে। অনেকটাই মুঠোফোনের মতো কাজ করে এ ধরনের ডিভাইস।

রঙিন ক্যামেরা, থ্রিজি সুবিধার সিম কার্ড, মাইক্রোফোনের মতো সুবিধা থাকায় ডায়াল করা ও কথাবার্তা চালানোর মতো প্রযুক্তি থাকে এতে। অনেক সময় এ ধরনের ডিভাইস তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি থ্রিজি ব্যবহার করে স্থানান্তর করতে পারে। মাত্র ১০০ মার্কিন ডলার বা তার চেয়েও কম খরচে এ ধরনের ডিভাইস কিনতে পাওয়া যায়।

গোপন ডিভাইসে ধরা পড়া কেলেঙ্কারি
গোপনে তথ্য সংগ্রহের জন্য গোয়েন্দারা বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্য নেন। তবে সংবাদ সংগ্রহ বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করে আনার জন্য সাংবাদিকদেরও বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

সাংবাদিকেরা নিজের পরিচয় আড়াল করে ছদ্মবেশে বের করে এনেছেন নানা ঘটনা, ফাঁস করেছেন নানা কেলেঙ্কারি। তেহেলকা ডটকম, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কথা অনেকের হয়তো জানা আছে| ২০০১ সালে দলের সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে এক লাখ রুপি ঘুষ নেন ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির নেতা বঙ্গারু লক্ষ্মণ। সংবাদ পোর্টাল তেহেলকা ডটকমের এক সাংবাদিক অস্ত্র ব্যবসায়ী সেজে সামরিক বাহিনীতে সরবরাহের একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে ঘুষ দেন বঙ্গারুকে। লেনদেনের এ দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

তেহেলকা কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিতি পায় বিষয়টি।
বিশ্বের অন্যতম কেলেঙ্কারি হিসেবে বিবেচিত করা হয় ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিকে। এ কেলেঙ্কারির সূত্র ধরেই পদত্যাগ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। ওই কেলেঙ্কারি ফাঁসের মূল হোতা ছিলেন দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল বার্নস্টেইন। ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে ১৯৭২ সালে ডেমোক্র্যাটদের অফিস ছিল।

সেখানেই নির্বাচন নিয়ে তাঁদের আলোচনা ও পরিকল্পনা আগে থেকেই জেনে যাওয়ার জন্য নিক্সন তাঁর কিছু লোককে পাঠিয়ে দেন, যাঁরা আগে থেকেই ডেমোক্র্যাটদের অফিসে রেকর্ডার লুকিয়ে রেখে আসেন। সাম্প্রতিককালে গোপন ক্যামেরায় ধরা যে ঘটনাগুলো আলোড়ন তুলেছে তার মধ্যে রয়েছে ক্রিকেটের স্পট ফিক্সিংয়ের মতো ঘটনা।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।