আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরকারের কাছে আরও অর্থ চায় হল-মার্ক!

ফন্দি-ফিকির করে ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধের খবর নেই, উল্টো সরকারের কাছে আরও অর্থ চেয়ে একের পর এক আবেদন করে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুণ্ঠনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী হল-মার্ক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে হল-মার্ক গত ছয় মাসে একই দাবিতে অন্তত তিন দফা আবেদন করেছে।
যে ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে হল-মার্ক, এমনকি সেই সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষও হল-মার্ককে আরও অর্থ দেওয়ার পক্ষে। কেন দেওয়া দরকার, সেই যুক্তি তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই সোনালী ব্যাংক একটি চিঠি দেবে বলেও জানা গেছে।
হল-মার্কের তিন আবেদনের মধ্যে দুইটি অর্থমন্ত্রীর কাছে এসেছে হল-মার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে।

আরেকটি আবেদন করেছেন হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যোগাযোগ করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কর্মসংস্থানের স্বার্থে কারখানা চালুর জন্য আরও অর্থ চেয়ে হল-মার্কের পক্ষ থেকে কয়েকটি আবেদন এসেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উপায় বের করা যায়নি। ’
মূলত গত ২৭ মার্চ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী ‘হল-মার্কের কারখানাগুলো চালু করতে এদের আরও ঋণের দরকার’—এমন বক্তব্য দেওয়ার পর থেকেই হল-মার্ক আরও অর্থ চেয়ে অর্থমন্ত্রীরই শরণাপন্ন হচ্ছে।


জানা গেছে, হল-মার্কের সব আবেদনেরই ভাষা প্রায় একই রকম। এতে বলা হচ্ছে, হল-মার্ক গ্রুপের বিভিন্ন কারখানা চালু করার জন্য তাদের আরও অর্থ দরকার। আর তা দরকার মূলত ৪০ হাজার সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকার জন্য। কারখানাগুলো চালু করা গেলে টাকা পরিশোধ তাদের জন্য কঠিন হবে না বলেও আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়।
হল-মার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর স্বামী তানভীর মাহমুদ, ব্যবস্থাপক (কমার্শিয়াল), তাঁর ভাই তুষার আহমেদ এবং কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক-কর্মকর্তাসহ মোট ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

তবে, দুদক সম্প্রতি গঠিত অভিযোগপত্রে ২৫ জনকে দায়ী করে, যাঁদের মধ্যে একজনও সরকারের নিয়োগ করা সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য নেই।
যদিও গভর্নর আতিউর রহমান গত বছর এ কেলেঙ্কারির জন্য সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যরাও দায় এড়াতে পারেন না বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনসংবলিত একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
জেসমিন ইসলামসহ মামলার কয়েকজন আসামি জেলে থাকা অবস্থায় গত ৪ আগস্ট জেসমিন ইসলামকে মাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে জামিন দেন ঢাকার দায়রা জজ জহুরুল হক। তবে, ওই আদেশের বিরুদ্ধে জেসমিন ইসলামের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করে দুদক।
পরে জামিন কেন অবৈধ হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

তার পর থেকে অর্থ পরিশোধ করা তো দূরের কথা, জেসমিন ইসলামই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
হল-মার্ক গ্রুপের ৪৮ কারখানার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে ২০টি। এগুলো সাব-কন্ট্রাক্টে চলছে বলে জানা গেছে।
সোনালী ব্যাংক সূত্র জানায়, কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর হল-মার্কের কাছ থেকে মোট ৪১০ কোটি টাকা দায়কমাতে পেরেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, হল-মার্কের দায়দেনার পরিমাণ এখনো দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।

তবে, দায়দেনার বিপরীতে সহায়ক জামানত হিসেবে সাভারের নন্দখালী, কালামপুর, বারবাড়িয়া ও চারিপাড়া মৌজায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ শতাংশ জমি বন্ধক রয়েছে। তবে এসব জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে খোদ সোনালী ব্যাংকেরই কাছে।
জানা গেছে, হল-মার্কের মোট জমি থেকে জেসমিন ইসলামের নিজের নামের জমি মাত্র ১২২ শতাংশ। এ থেকে রাজধানীর কাফরুল ও সাভারের কিছু জমি ছেলে কলেজপড়ুয়া ইরফান ইসলামের নামে তিনি হেবা (দান) করে দিয়েছেন।
গত এপ্রিলে হল-মার্কের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিলেন ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত।

এতে দায়দেনা নিয়মিত করে হল-মার্কের সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুরও সুপারিশ করা হয়েছিল।
সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত হল-মার্ক থেকে টাকা আদায়ের জন্য এ সুপারিশ করা হয়েছিল বলে প্রথম আলোকে জানান। সম্প্রতি তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে টাকা আদায়ের ব্যাপারে করণীয় জানতে চেয়ে একটি চিঠি এসেছিল। শিগগির আমরা এর জবাব দিচ্ছি। ’
অর্থমন্ত্রী এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হল-মার্কের বিভিন্ন ব্যবসা আছে, যেগুলো চালু হওয়া প্রয়োজন।

হল-মার্ক যে টাকা নিয়ে গেছে, তা জনগণের টাকা। এ টাকা উদ্ধার করতে হবে। উদ্ধারের জন্য দরকার কারখানা চালু। আর সে জন্যই ওদের দরকার আরও ঋণ।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি বর্তমানে আদালতের এখতিয়ারাধীন বলে মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে তেমন কিছু করার নেই।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.