আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামপাল, রূপপুর কোন সমাধান নয়! একমাত্র সমাধান সৌর প্রকল্প

লড়াই করে জিততে চাই

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধীতা করি শুধুমাত্র সুন্দরবন রক্ষার জন্য নয়? শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়! শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করবার জন্য নয়! শুধুমাত্র রামপালের অধিগ্রহণকৃত জমি-বাড়ীর মালিকদের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য নয়? শুধুমাত্র ভারতের ১৫% বিনিয়োগ করে ৫০% মুনাফা লাভের প্রতিবাদ করতে নয়? শুধুমাত্র দলকানা চাটুকারদের মনগড়া গল্পের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নয়! রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের আমি পুরোপুরি বিরোধী! কারণ, কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বিদ্যুত ব্যবস্থার মোটেও কোন সমাধান নয়! পরিবেশ বান্ধবও নয়! ব্যয় সাশ্রয়ীও নয়! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুত ব্যবস্থার একমাত্র স্থায়ী, সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব সমাধান হচ্ছে ‘সৌর বিদ্যুত প্রকল্প’! সরকার সোলার বিদ্যুত উতপাদনে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু টাকা পাবে কোথায়?? ধরে নিলাম সরকার রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মালিকদেরকে একবছর কোন ভর্তুকী দিলো না! ঐ টাকা দিয়ে ভর্তুকী দেয়া হলো গ্রামের কৃষকদেরকে। বলা হলো, কৃষক ভাইরা? আপনারা শুধু খাদ্য উতপাদন করে দেশ চালালে হবে না! বিদ্যুত উতপাদনের দায়িত্বও আপনাদেরকে নিতে হবে! জনগণের সরকার হলে অবশ্য তাই করতো! কিন্তু জনস্বার্থ বিরোধী সরকার বলে শুধুমাত্র গত বছরেই (২০১২ সালে) বিদ্যুৎ ক্রয় ও তেলে ভর্তুকি বাবদ মহাজোট সরকার রেন্টাল-কুইকরেন্টালে গচ্চা দিয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তাতেও খায়েস মেটেনি মালিক-সরকারের! তাই অভাবনীয় মূল্যে বিদ্যুত কেনা হয়েছে তাদের কাছ রেন্টাল-কুইকরেন্টাল থেকে। আর দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পকেট কাটা হয়েছে পাবলিকের।

দেশ এনার্জি লিমিটেডের ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২০১২ সালের এপ্রিলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির ব্যয় হয়েছে ৩৭৩ টাকা ৩৯ পয়সা, যা কল্পণারও অতীত! যে কথা বলছিলাম! ধরেন সরকার হঠাত করে খুব জনদরদী হয়ে গেলো! চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, একটা ভাল কাজ অন্তত তারা করবে! রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুত মালিকদের শুধুমাত্র ২০১২ সালের ভর্তুকী দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করলো! ঐ ১৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল কিনেলো সরকার। এতে সরকার ২৫০ ওয়াট ক্ষমতার ১ কোটি সোলার প্যানেল কিনতে পারলো (বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারদর এমনই)! সরকার এই এক কোটি সোলার প্যানেল গ্রামের গরীব মানুষের মধ্যে বিলি করে দিলো। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামের প্রায় ১০টি পরিবার একটি করে সোলার প্যানেল পেলো। ২৫০ ওয়াটের একটি প্যানেলে গড়ে দিনে এক কিলোওয়াট বিদ্যুত উতপন্ন করে! সেই হিসাবে ১ কোটি সোলার প্যানেলে দৈনিক ১ কোটি কিলোওয়াট বা ১০০০০ (দশ হাজার) মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপন্ন হয়। এবং সোলার প্যানেলে সাধারণত পঁচিশ বছরের গ্যারান্টি থাকে।

তাই টানা ২৫ বছর ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হয়ে গেলো। আর অন্যদিকে ঐ এক কোটি পরিবার নিজেদের সারাদিনের বিদ্যুতের প্রয়োজন মিটিয়েও মাস শেষে ভাল একটা ইনকাম পাচ্ছে বিদ্যুত বিক্রি করে। ঐ ১ কোটি পরিবারের মধ্যে যারা একটা ব্যাটারী কিনে নিয়েছে তারা রাত্রেও নিজেদের উতপাদিত বিদ্যুত ব্যবহার করছে। ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার মেগাওয়াট খরচ করছে বিদ্যুত উতপাদক ঐ ১ কোটি পরিবার। বাকী ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সরকার খুবই কম মূল্যে কিনে নিয়ে শহরাঞ্চলে সরবরাহ করছে।

এক্ষেত্রে সরকার কম দামে বিদ্যুত কিনে বেশি দামে বিক্রি করে ভালই লাভ করছে। আর ১ কোটি পরিবারের বিশেষ মাসিক ইনকামের ব্যবস্থা করে দেয়ায় আগামীতে ভোট না চাইতেই তারা সরকারকে ভোট দিতে প্রস্তুত। তাই সরকারের বারবার ক্ষমতায় ফিরে আসার আর কোন সমস্যাই নেই। আমার নিজের চোখে দেখা অষ্ট্রেলিয়া সরকারের একটা উদাহরণ দেই। অষ্ট্রেলিয়ার সরকার তার অধিবাসীদের নিজস্ব সোলারে উতপাদিত বিদ্যুত কিনে নেয়।

পাবলিকের বাড়ীর নিজস্ব সোলার প্যানেলে উতপাদিত এই বিদ্যুত একটু কম দামেই কেনে সরকার। বেশি মূল্যে আবার পাবলিকের কাছে, কারখানা মালিকের কাছে সেই বিদ্যুত বিক্রি করে। কিন্তু তারপরও সাধারণ মানুষও সোলার প্যানেল স্থাপন করে লাভের মূখ দেখছে। সরকার সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য স্বল্প সুদে লোনও দিচ্ছে। একটি সোলার প্যানেল সারাদিন স্বাভাবিকভাবে সূর্যের আলো পেলে চারগুণ বিদ্যুত উতপাদন করতে পারে।

অর্থাত ২৫০ ওয়াটের একটি সোলার প্যানেল সাধারণত ১০০০ ওয়াট বা এক কিলোওয়াট বিদ্যুত উতপাদন করে থাকে। অষ্ট্রেলিয়ায় যাদের বাড়ীতে সোলার প্যানেল আছে তাদের দুইটা বৈদ্যুতিক মিটার থাকে। একটি মিটার ব্যবহৃত হয় বাড়ীতে মোট কতটুকু বিদ্যুত খরচ হলো সেটার পরিমাপ করতে! অন্য মিটারটি হিসাব রাখে সোলার প্যানেলে কতটুকু বিদ্যুত উতপাদন হলো তার। সোলার প্যানেলের বিদ্যুত কেউ সরাসরি নিজের কাজে লাগায় না এখানে। কারণ সোলারে উতপাদিত বিদ্যুত সরাসরি জাতীয় বিদ্যুত গ্রীডে চলে যায়।

মাস শেষে দুইটি মিটার দেখে হিসাব করা হয় বাড়ীর মালিক কতটুকু বিদ্যুত জাতীয় গ্রীড থেকে ব্যয় করলেন আর কতটুকু বিদ্যুত সোলার থেকে উতপাদিত হয়ে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হলো। যোগ-বিয়োগ করে যদি সোলারে উতপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বেশি হয় তখন বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সোলার বিদ্যুতের ক্রেতা হিসাবে বাড়ীর মালিককে তার বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করে। আর যদি বাড়ীর মালিকের বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয় তখন মালিককেই পরিশোধ করতে হয় ব্যবহৃত বাড়তি বিদ্যুতের দাম। সোলার বিদ্যুতের উতপাদন খরচ অষ্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও অনেক কম এবং সহজ। তাই অসংখ্য মানুষ পাহাড়ের উপর বা ফাঁকা জায়গায় জমি কিনে বিশাল বিশাল সোলার প্লান্ট স্থাপন করছে এবং সরকারের কাছে সোলার বিদ্যুত বিক্রি করে ভাল প্রফিটও করছে।

কুইন্সল্যান্ড রাজ্য সরকার সোলার বিদ্যুতের দাম কিছুটা বেশি দেয় বিধায় সেখানে ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শত শত সোলার বিদ্যুত উতপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ক্রমান্বয়ে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের উপর নির্ভরতাও কমে যাচ্ছে অষ্ট্রেলীয় সরকারের। দুনিয়ার দেশে দেশে অসংখ্য কয়লা-গ্যাস-তেল নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! বন্ধ হওয়ার পাইপলাইনে আছে শত শত জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভর বিদ্যুত উতপাদন কেন্দ্র! অসংখ্য পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে?? আপনার কি মনে হয় তাদের পাগলে কামড়াইছে?? তারা আসলে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে জীবাশ্ম জ্বালানীর দিন শেষ! সারা দুনিয়ায় যত তেল আছে তার অর্ধেকের বেশি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হয়েগেছে। তেল-গ্যাস-কয়লার মূল্যবৃদ্ধির সেটাও একটা প্রধান কারণ। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুত উতপাদনের দিকেই ঝুকেছে উন্নত বিশ্ব।

আমাদের দেশের মতো তীর্যক সূর্যের আলো খুব কম দেশেই আছে। বছরে কমপক্ষে ৩৪০ দিন সূর্যের আলো পাই আমরা। আর অনেক দেশে দিনের বেলায় মাসের পর মাস অন্ধকারাচ্ছন্ন বা স্বল্প আলো থাকে। আমাদের সূর্যের আলো ব্যবহার করে সৌর বিদ্যুত উতপাদনের অপার সম্ভাবনা থাকতেও সরকার মানুষ-বন-পশুপাখি-পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে। অথচ অপেক্ষাকৃত সূর্যের আলো কম পাওয়া দেশগুলোও সৌর বিদ্যুত, বায়ু চালিত বিদ্যুত উতপাদনের দিকেই বিনিয়োগ করছে।

কিন্তু না! বাংলাদেশের সরকার সেটা করবে না। অন্তত জোট-মহাজোটের সরকার তো সেটা কক্ষণই করবে না! এর মূল কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি উন্নয়নের নামে যাই করুক না কেন এর মূলে থাকে (১) কমিশন এবং (২) লুটপাট! কোন কোন সময় ভোটের কথা চিন্তা করেও কিছু উন্নয়নের চিন্তা করে তারা। কিন্তু বিনা কমিশনে, বিনা লুটপাটে শুধুমাত্র দেশের ৯০ ভাগ কৃষক, শ্রমিকের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কক্ষণই কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা তাদের মাথায় আসে না! সে কারণেই তারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বানাবে, অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র বানাবে। ভর্তুকির নামে রেন্টাল-কুইকরেন্টালে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হবে। তারপরও বছরে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পাবলিকের পকেট কাটা হবে! রেন্টাল-কুইকরেন্টালের কারণে বিদ্যুতের সরকারী খাত এখন ধ্বংসপ্রায়।

কিন্তু আবার নতুন ব্যবসা সামনে এসে হাজির হয়েছে। এবার কয়লায় ভাল ব্যবসা হবে। শুধু রামপালেই প্রতি দিন ১৩০০০ টন কয়লা লাগবে! ভারতের কয়লায় দাম বাড়বে দফায় দফায়। বিদ্যুতের দামও আবার দ্বিগুন তিনগুণ হবে। টাকা তো পাবলিকের পকেট থেকেই আসবে! সমস্যা কোথায়? তারপরও আবার ভোট দিতে হবে! আবারও নৌকা, ধানেরশীষ নিয়ে নাচা-নাচি! কবে যে জনগণ এই লুটপাট অপরাধীদের ট্রাইব্যুনালে তুলবে?? পাঠক লাল গোলদার ২৯-০৯-২০১৩


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।