আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চরিত্র দোষ

আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
ধর্মেণাপি পদং শর্বে কারিতে পার্বতীং প্রতি। পূর্বাপরাধভীতস্য কামস্যোচ্ছ্বসিতং মনঃ॥ --------------- কুমারসম্ভব; কালিদাস -খালু বেণু আপায় আইছিল। আপনারে না পাইয়া একটা চিঠি রাইখা গেছে। -আজুর মা তোমাকে না কতদিন বলেছি আমাকে খালু বলে ডাকবেনা।

খালু বলে ডাকলে নিজেকে খুব বুড়ো বুড়ো মনে হয় । -ভুল হইয়া গেছে। আর ডাকুম না ভাইজান। আইচ্ছা ভাইজান আপনের বয়স কত হইব ? -আমার বয়স জেনে তুমি কি করবে ? বেশি কথা না বলে কাজ কর। তোমাকে বাড়িওয়ালা আন্টি ঠিক করে দিয়েছেন কাজ করার জন্য।

আমার বয়স জানার জন্য নয়। আর শোন শাড়ির আঁচল ঠিক করে পরবে। যদি আঁচল ঠিক রাখতে না পার তাহলে শাড়ি আর পরবেনা। -ভাইজান কিন্তুক শাড়ি ছাড়া যে আমার আর অইন্য কিছুই নাই। কি করতাম কন কাম করতে গেলে আঁচলের তাল ঠিক রাখবার পারিনা।

এই আঁচলও আমার স্বামীর মতন খালি বেঈমানি করে। -আবার বেশি কথা বলছো ? তোমাকে এত কথাতো বলতে বলিনি। -আইচ্ছা ভাইজান আর কোন কথাই এই শেফালী অখন থিকা কইবনা। ভাইজান কি গোসল করবেন ? পানি গরম বহামু ? আপনে গোসল শেষ করলে আমার ছুটি। -আশ্চর্য আমার গোসলের সাথে তোমার ছুটির কি সম্পর্ক ? তোমার কাজ শেষ হলে চলে যাও।

-না মাইনে গোসলের পর আপনের কাপড়গুলান ধুইয়া থুইয়া যাইতাম। -না লাগবেনা। তুমি এখন যাও। আমি ধুয়ে নেবো। আর শোন গরম পানি করা লাগবেনা।

আমি আজ ঠাণ্ডা পানি দিয়েই গোসল করে নেবো। -সেকি কথাগো ভাইজান ঠাণ্ডা লাইগা যাইবত ! -উফ! শেফালী তুমি আজ প্রচন্ড বিরক্ত করছো। তুমি এখন যাও আর শোন আগামী এক সপ্তাহ তোমার কাজে আসা লাগবেনা। -কেন ভাইজান কুথাও বেড়াইতে যাইবেন? গেলে আমারেও সঙ্গে নিয়া যান। কতদিন বেড়াইনা।

এই সুযোগে বেড়ানোও হইব আবার আপনের কাজগুলান কইরা দেয়নও যাইব। -শেফালী তোমার কাল হতে আর কাজে আসা লাগবেনা। এই রাখ তোমার এই মাসের বেতন। যাও বিদায় হও। শেফালী টাকাটা নিয়ে কিছুটা কাঁদার ভঙ্গিতে চলে গেলো।

কিন্তু আমি নিশ্চিত যে কাল সকাল হলেই আবার চলে আসবে। যখনই টাকার প্রয়োজন হয় তখনই সরাসরি টাকা না চেয়ে এমন ভাবেই আমাকে বিরক্ত করা শুরু করে। এর আগেও এমন বহুবার সে একই কাজ করেছে। ঢাকা শহরে ব্যাচেলরদের জন্য বাসা ভাড়া পাওয়া খুব কঠিন। বাড়িওয়ালারা মনে করেন ব্যাচেলর মানেই এরা বাড়িতে উঠেই ঝামেলা পাকাবে।

সারাদিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে হৈ হুল্লোড় করে বাড়ির পরিবেশ নষ্ট করবে। এদের দ্বারা নানা ধরনের অনৈতিক কাজও সংঘটিত হতে পারে। কিন্তু চাকরীজীবী হলে অবশ্য ছাড় পাওয়া যায়। কারন এরা সারাদিন চাকরী করেই সময় পায়না হৈ হুল্লোড় করবে না। চাকরীজীবীরা সধারনত ভদ্রলোক টাইপের মানুষ হয়ে থাকে।

তাছাড়া অনেক সময় ব্যাচেলর ভাড়া দিলে এরা ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করে কিন্তু চাকরিজীবীরা আর যাই হোক সময় মতো বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করে। তবে চাকরীজীবী হিসেবে বাড়ি ভাড়া পেতে আমাকে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি। আমি যে বাড়িতে ভাড়া থাকি বাড়িওয়ালা ভদ্র মহিলাটিও বেশ চমৎকার একজন মানুষ। আমাকে খুব পছন্দ করেন। স্বামী দেশে থাকেন না।

তিনি আর তার দুই মেয়ে নিয়েই এত বড় বাড়িতে থাকেন। হয়ত আমাকে তাদের নিরাপদ বলে মনে হয়েছে এবং মাঝে মাঝে আমাকে দিয়ে এটা ওটা করিয়ে নিতে পারেন বলেই একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতে দিয়েছেন। কাজের বুয়া ঠিক করে দিয়েছেন। আমিও বেশ আগ্রহের সাথেই ওদের বাড়ি সংক্রান্ত অনেক কাজ করে দেই। ভদ্রমহিলা দেখতে আর দশটা সাধারন বাঙালি মহিলাদের মতন নন।

চেহারায় পুরোপুরি ইংরেজি সিনেমার নায়িকাদের প্রভাব রয়েছে। আর শরীরের গঠন এখনও খুব সুন্দর ভাবেই ধরে রেখেছেন। নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল বেলা হাটতে বের হন। আমি যখন প্রথম উনাকে সকালে হাটতে দেখি ভেবেছিলাম ডায়বেটিক্স আছে হয়ত কিন্তু পরে জানতে পারলাম শরীরের মেদ নিয়ন্ত্রন করতেই তিনি ব্যায়াম করেন। মাঝে মাঝে দেখি বেশ উচ্চ ভলিউমে ইংরেজি গান শুনেন।

শেফালীর মুখে একদিন শুনেছি উচু ভলিউমে গান শুনে তিনি নাচেন। এটাও নাকি এক ধরনের মেদ নিয়ন্ত্রন করার ব্যায়াম। তারপর দুপুর হলেই মুখে ডাল আর দুই চোখে শসা লাগিয়ে মেঝেতে সোজা হয়ে শুয়ে থাকেন। এমন একজন আধুনিক নারীর কাজ করে দিতে আমার বেশ ভালই লাগে। ভদ্রমহিলার কাছ থেকে শুনে যতটুকু বুঝেছি উনার স্বামী আর আমি প্রায় একই বয়সী।

হয়ত সময় মতো বিয়ে করলে আমারও এমন একজন সুন্দরী বউ থাকতো। এতদিনে ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করতাম। মাঝে মাঝে তার মেয়েদুটিকে নিয়ে আমার পড়াতে বসতে হয়। বড় মেয়ের নাম যারা, ক্লাস সিক্সে পড়ে আর ছোট মেয়েটার নাম সারা, ক্লাস থ্রিতে পড়ে। দুটি মেয়েই হয়েছে ভীষণ ভদ্র, ধীর স্থির স্বভাবের।

ঠিক যেন তাদের মায়ের বিপরীত স্বভাবের। হয়ত ওদের বাবার মতন হয়েছে ওরা। একবার চা খেতে খেতে কথা হচ্ছিলো ভদ্রমহিলার সাথে। উনার স্বামী নাকি ভীষণ চুপচাপ আর লাজুক প্রকৃতির একজন মানুষ। এমনই লাজুক যে নিজের স্ত্রীকে পর্যন্ত নাম ধরে ডাকতে লজ্জা পেতেন।

পরে নাকি উনি অনেক লজ্জা দিতে দিতে ভদ্রলোকটিকে বহু কষ্টে সেলিনা বলে ডাকা শিখিয়েছেন। বাহ ! এই যুগে এমন পুরুষ মানুষ আছে বলে জানা ছিলোনা। সেলিনা হলো ভদ্রমহিলার ডাক নাম। পুরো নাম মিসেস সেলিনা। আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম মিসেস কি করে নামের অংশ হয় ? ভালো নাম জানতে চাইলে আমাকে বলেন এটাই নাকি তার ভালো নাম।

তবে একদিন কৌশলে যারার কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম ওর মায়ের পুরো নাম হলো সেলিনা বেগম চম্পা। আমার আর বুঝতে বাকি থাকলনা নাম গোপনের পেছনে যে অন্তর্নিহিত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেটা গাঁয়ের একজন সাধারন মেয়ের অতি আধুনিক শহুরে মেয়ে হয়ে ওঠাই প্রধান কারন। টেবিলের উপর বেণুর রেখে যাওয়া চিঠিটি পড়তে ইচ্ছে করছেনা। আমাকে না পেলে দুই লাইনের একটি গদবাধা চিঠি লিখে রেখে যাবে। এটাই ওর স্বভাব।

তাই নতুন কিছু যে চিঠিতে পাবোনা এটা নিশ্চিত। বেণুর চিঠিতে লেখা থাকে, সাবিত, তোমার কাছে এসেছিলাম কিন্তু তোমাকে না পেয়ে অবশেষে এই চিঠিটি লিখে রেখে চলে যাচ্ছি। তুমি কাল সময় করে একবার আমার সাথে দেখা করবে। তোমার অপেক্ষায় থাকবো। ইতি তোমার বেণু কিন্তু কখনই পরদিন আমার আর ওর সাথে দেখা করতে যাওয়া হয়না।

কারন আমি দেখা না করলেও আমার সাথে দেখা করতে বেণু নিজ থেকে ঠিকই চলে আসে। মেয়েটি আমাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসে অথচ কেন যেন আমি বেণুকে ভালোবাসতে পারিনা ওর মত করে। ভাবছি একদিন বেণুকে বলেই দেবো যে আমি ওকে ভালোবাসি না। কিন্তু তারপর কি হবে সেটা ভেবে আর সাহস পাইনা। এই কথা যদি কোন দিন বেণু শুনতে পায় আমার কাছ থেকে তাহলে নির্ঘাত আত্মহত্যা করবে।

কিন্তু আমি ওকে কি করে বোঝাই যে আমি কি চাই ? বিকেলে অনির্বাণ এলো ওর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। বেশ সুন্দর একটি বউ জুটেছে বেচারার কপালে। কিন্তু তবু মনে হলো অনির্বাণের সাথে মানায়নি। তবে ভালোলাগা একটি আপেক্ষিক বিষয়। সেটা নির্ধারণ করা নিজ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

ঠিক যেমন অনির্বাণের স্ত্রী ফ্লোরার ক্ষেত্রে ঘটেছে। এমন একটি আধুনিক মেয়ে কি করে অনির্বাণের মত আদিকেলে একটি ছেলেকে বিয়ে করল আমি হিসাব করে মিলাতে পারলাম না। সে যাই হোক যখন বহুদিন এই অভাগা বন্ধুটির কোন খোঁজ খবর কেউ রাখেনি, তখন আজ অনির্বাণ এসেছে অন্তত বন্ধুকে যে ভুলে যায়নি সেজন্য আমি ধন্য। অথচ একটা সময় ছিলো যখন রাত দিন ভুলে গিয়ে শুধু আড্ডাই জমত অনির্বাণদের বাড়ির পেছনের পুকুর পাড়ে। সেসব এখন শুধুই স্মৃতি।

আমি আর অনির্বাণ একসাথে গ্রাম ছেড়ে পড়াশোনার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। একসাথে দুই বন্ধু মিলে ঢাকায় একটি মেসে উঠেছিলাম। তারপর জীবনের অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। পেছনে কত সুখ দুঃখ স্মৃতি হয়ে গত হয়েছে। তারপর একদিন হঠাত করেই অনির্বাণ বিয়ে করলো।

বিয়ের পর থেকে আর আড্ডা দেয়া হয়না। এমনকি যোগাযোগ পর্যন্ত হয়না। তবে ওকে দেখে মনে হলো সাংসারিক জীবনে ভীষণ সুখেই আছে ওরা। বিয়ে করলে হয়তবা এতদিনে আমারও এমনই একটি সুখের সংসার হতো। হঠাত ফ্লোরার খোঁপায় কৃষ্ণচূড়া দেখে মনটা বিষাদে ভরে উঠল।

কতদিন হলো কৃষ্ণচূড়া দেখা হয়না আমার। দেখার সাধকেও মাটি চাপা দিয়েছি। অথচ কতইনা স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে আমার এই কৃষ্ণচূড়ার সাথে। কৃষ্ণচূড়া খুব পছন্দের ফুল ছিলো রোদেলার। আমাদের মেসের সামনেই ছিলো ওদের বাড়ি।

আমাকে রোদেলা প্রায়ই বলতো চলনা আমাকে কিছু কৃষ্ণচূড়া এনে দেবে। আমি মানা করলে জেদ করত খুব আর ভীষণ জেদি প্রকৃতির মেয়েছিলো। আমিও ওর জেদের কাছে হেরে যেতাম। ওকে নিয়ে বেড়িয়ে পরতাম কৃষ্ণচূড়ার খোঁজে। রক্তাক্ত লাল ফুল গুলো দেখলে সে কি খুশির ঝিলিক ফুটে উঠত ওর চোখে।

তখন ওর চোখের দিকে তাকালে আমি আমার ঈশ্বরকে খুঁজে পেতাম। মনে হতো যেন ওর চোখ দিয়ে ঈশ্বর আমাকে দেখছেন। হঠাত করে মাথার সেই পুরানো রোগটা আজকে আবার জেগে উঠল। প্রচন্ড রকম মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। এক্ষুনি ঘুমের ইনজেকশন নিয়ে ঘুমাতে হবে নতুবা আজ আবার ঘরের সব কিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করবে।

এমন হলে মনে হয় বাসার ছাঁদে গিয়ে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করে ফেলি। আমার অবস্থার শোচনীয়তা বুঝতে পেরে অনির্বাণ চলে গেলো। এই সমস্যার কারনে এখন আর আমাকে কেউ দেখতে আসেনা। কেউ সময় করে আমার সাথে দুটো ভাল মন্দ কথাও বলেনা। কিন্তু আমি কি করে বুঝাই ওদের ? ওদের কাছে আমার কথাগুলো বলাটা কতটা জরুরী।

আমি একটা সময় ছিলো যখন লেখালিখি করতাম। কত যে কবিতা আর কত যে গল্প লিখেছি সবই রোদেলাকে নিয়ে। সেগুলো সব আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছে শুধু ওকে ভুলে থাকাটা খুব বেশী জরুরী বলেই। কিন্তু এও কি সম্ভব ? কখনও নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাওয়া যায় না। তাহলে মৃত্যুরা পরিহাস করবে আমাকে নিয়ে।

কিন্তু আজ আর কিছুতেই লিখতে পারিনা। আমার লেখার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন ঈশ্বর আমার কাছ থেকে। আমি আমার কথাগুলো লিখে তার মধ্যে আমার নিজের প্রতিবিম্ব খুঁজে পেতে চাই। যেন আর কাউকে আমার কথাগুলো বলে চোখের পানি ফেলতে না হয়। বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টগুলো বের করে দিয়ে আমি চিরদিনের জন্য বোঝা মুক্ত হতে চাই।

আমি ঈশ্বরকে বলেছি কতবার যেন আমার কথাগুলো রোদেলার কাছে পৌঁছে দেন। হয়ত রোদেলা এই কথাগুলো শোনার জন্য আজো পথ চেয়ে বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটির ছায়ায়। যেখানে রক্তাক্ত ফুলগুলো ঝরে পরে রোদেলাকে যেন নতুন বউয়ের সাঁজে সজ্জিত করে রেখেছে। রোদেলার সাথে আমার বয়সের ব্যবধান ছিলো দশ বছরের। আমাকে একবার রোদেলা বলেছিলো আমার বন্ধু হবে ? আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম।

এতটুকু মেয়ে আবার আমার বন্ধু হয় কি করে ? রোদেলা সেদিন খুব কেঁদেছিলো। আমি সেই কান্না থামাতে পারিনি। আমার উপর রাগ করে দৌড়ে চলে গেলো ওদের বাড়ির ভেতর। আমি রাস্তায় দাড়িয়ে ওর চলে যাওয়া পথের দিকে অনেক ক্ষন তাকিয়ে ছিলাম। হঠাত মনে হলো যেন অজানা হতে কোন মায়ার বন্ধন আমার কাছ থেকে ছিঁড়ে গেলো মুহূর্তেই।

আমি ভেতরে ভেতরে এক চাঁপা কান্না অনুভব করলাম। তারপর রোদেলার জন্য বালিশে মাথা গুঁজে দিয়ে কতযে কেঁদেছি কিন্তু সেদিনের পর থেকে আর ওর কোন দেখা আমি পাইনি। এর মাঝে পড়াশোনার জন্য আমাকে চলে যেতে হলো বিদেশে। দীর্ঘ ছয়টি বছর পর যখন দেশে ফিরলাম রোদেলা আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে গিয়েছিলো। আমার সেই ছোট্ট রোদেলা যেন একদম পরিনত একজন নারীতে রূপ নিয়েছে।

আমাকে নিয়ে ফেরার পথে সেই প্রশ্নটি আমাকে আবার করল ও। তুমি আমার বন্ধু হবে ? আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি যে সেই ছোট্ট রোদেলাটিই রয়েগেছো আমার কাছে। আমি টের পেলাম রোদেলা কাঁদছে নীরবে। কিন্তু চোখের নোনতা পানিগুলো আজ শুকিয়ে গেছে। কলিং বেলের শব্দ।

-স্লামুয়ালাইকুম। -এই শোন তুমি আজ হতে আমাকে দেখলে আর সালাম দেবেনা কেমন ? -তা কি করে হয় ? -হয় খুব হয়। আমাকে মিসেস সেলিনা বলবে। আমি এখনও অত বুড়ো হয়নি যে আমাকে দেখলেই তোমার সালাম দিতে হবে। আর তা ছাড়া তোমার আর আমার বয়স প্রায় কাছাকাছিই হবে।

এখন সুন্দর ভাবে লক্ষী ছেলের মত তৈরি হয়ে নাও। আমার সাথে একটু মার্কেটে যাবে। আমি কিছু শপিং করবো তুমি আমার সাথে থাকবে। -আচ্ছা আপনি বসুন আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। -আবার ভুল করলে ! আপনি নয় বলো সেলিনা।

-আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে তাহলে তোমাকে সেলিনা বলেই ডাকবো। -হুম ! আজ সন্ধায় ওরা কারা এসেছিলো তোমার কাছে ? -ওহ ! আমার ছোট বেলার এক বন্ধু এসেছিলো ওর স্ত্রীকে নিয়ে। -এই তুমি কি এখন ইনজেকশন নিয়েছো ? তোমাকে কেমন যেন বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। -হ্যা হঠাত করেই মাথায় সেই যন্ত্রণাটা আবার শুরু হয়েছিলো। -কি বলছো ? তাহলে রেস্ট নাও।

এখন আর আমার সাথে বের হতে হবেনা। দেখি বিছানায় শুয়ে পর। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। -না ! না ! কোন সমস্যা নেই। আমি এখন একদম সুস্থ আছি।

চলো বরং তোমার সাথে ঘুরে আসলে কিছুটা ভালো লাগবে। -যেটা বলছি চুপ করে শোনো। লক্ষী ছেলের মত ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। অনেকদিন পর মনে হলো যেন রোদেলার মত করে কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে।

অল্পক্ষণের মাঝেই দুচোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। মাঝ রাতের দিকে ঘুম ভেঙে গেলো। মোবাইলটি হাতে নিয়ে রোদেলাকে ফোন করছি। কিন্তু রোদেলা ফোন ধরছেনা। বার বার একটি নারী কণ্ঠ ফোন দিলেই বলছে এই নাম্বারটি এই মুহূর্তে বন্ধ আছে, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।

প্রতিদিন মাঝ রাতে পুরানো অভ্যাস বসত আমি ঘুম থেকে জেগে উঠে রোদেলাকে ফোন দেই। তারপর কিছুক্ষণ পরেই আমার ভুল ভাঙে। রোদেলাকে আর কখনওই মাঝ রাতে এভাবে ফোনে পাওয়া যাবেনা। এই চিরন্তন সত্যটি জেনেও একই ভুল আমি বার বার করে আসছি। এই ভুলটিকেই আমি আমার ভালোবাসা বলে জানি।

আমার ভালোবাসার শেষ পরিনতি হিসেবে মানি। একদিন রোদেলাকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকের ধারে দাড়িয়ে আছি। হঠাত রোদেলা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও সেদিন কেন যেন ওকে বাঁধা দিতে পারলাম না। ওই বিকেলের পর থেকে আমার ভেতর ওর প্রতি এক ধরনের মায়া জন্মালো।

প্রতিদিন মাঝ রাতে ফোন দিয়ে ওর সাথে ভোর পর্যন্ত কথা বলতাম। কত কিছু নিয়ে যে রাতভর আমাদের মাঝে বিরতিহীন কথা চলতো ! তারপর সারাদিন রোদেলা আমাকে ফোন দিয়ে আমার খোঁজ খবর নিতো। আমি খেয়েছি কিনা ? আমি যেন দেখে শুনে রাস্তা পার হই ? আমি কি করছি ? মাঝে মাঝে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে যেতো। আমি তখন একা থাকি একটি মেসে। অনির্বাণ তখন বিদেশে থেকে যায়।

আমি আর অনির্বাণ একসাথে বিদেশ পড়তে যাই। কিন্তু আমি ফিরে এলেও ও আমার অনেক পরে দেশে ফিরে আসে। রোদেলার আমার প্রতি এমন যত্ন নেয়া আমাকে ধীরে ধীরে ওর প্রতি মানসিক ভাবে দুর্বল করে ফেলতে থাকে। একদিন একটি চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাবো। রোদেলাও আমার সাথে যেয়ে বসে থাকল।

চাকরীটা আমার হয়েও যায়। হয়ত রোদেলার দোয়া ভীষণ ভাবে কাজ করেছিলো আমার জন্য। চাকরীটা পেলে রোদেলা একদিন আমাকে বলল ওর জন্মদিনে আমি যেন ওকে একটি লাল রঙের শাড়ি কিনে দেই। ঠিক যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল জড়িয়ে থাকবে ওর পুরো শরীরে। দুহাত ভর্তি থাকবে লাল রঙের কাঁচের রেশমি চুড়িতে।

ওর জন্মদিনের দিন আমার কিনে দেয়া শাড়িটি পরে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমি কৃষ্ণচূড়া ফুল আর একটি শূন্য আংটির বক্স নিয়ে ওর কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। মনে মনে ঠিক করলাম কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ওর খোঁপায় গেঁথে দিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে শূন্য আংটির বক্সটি দেখিয়ে বলবো আমাকে তোমার স্বামী হিসেবে গ্রহন কর, যেদিন আমার অনেক টাকা হবে সেদিন সবচেয়ে দামী একটি আংটি কিনে তোমার এই শূন্য বক্সটি পূর্ণ করে দিবো। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে সেই আংটির বক্সটি পূর্ণ করে দেয়ার সাধটি অপূর্ণ করে দিলেন চিরদিনের জন্য। আমি রোদেলাকে কয়েন হিসেবে উপরে ছুড়ে দিয়েছিলাম, যে কয়েনটির যে পিঠই নেমে আসুক না কেন রোদেলাই হবে আমার ভালোবাসার শেষ পরিনতি।

হ্যা ঈশ্বর, আমার ভাগ্যের সঠিক টসটিই আপনি করে দিলেন। কয়েনটি আমার হাতের মুঠোয় ফিরে এলেও রোদেলা আমার জীবনে আর কখনোই ফিরে এলোনা। চলে গেলো শূন্য করে আমাকে একাকী নিঃসঙ্গ জীবনের অন্ধকারে হারিয়ে দিয়ে। আমি ওদের বাড়িতে পৌঁছে দেখি বাড়িতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে। সবাই যেন কেমন গুরুগম্ভীর মুখ করে দাড়িয়ে রয়েছে।

বাইরে একটি এ্যাম্বুলেন্স দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম। মেঝেতে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে রোদেলাকে। পাশে বসে ওর বাবা-মা নীরব দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে থাকা তাদের একমাত্র মেয়ের দিকে। বাথরুমে পা পিছলে পরে গিয়ে রোদেলার মাথা ফেটে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয়। আমি রোদেলার পাশে গিয়ে দাড়াতেই আমার হাত থেকে কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো ওর ঘুমন্ত শরীরের উপর ছড়িয়ে পরে।

উফ ! মাথার ভেতর আবার সেই ব্যথার যন্ত্রণাটা বেড়েছে। এখনই ইনজেকশন নিতে হবে। এভাবে আর কতদিন হে ঈশ্বর ! আমাকেও একটিবার এমন ইনজেকশন নিতে দাও যেন চিরদিনের জন্য আমিও ঘুমিয়ে পরি। আর যেন কখনও কোন দিন সেই ঘুমের মায়া ছেড়ে আমাকে জাগতে না হয়। সকাল বেলা শেফালী এসেছে।

-ভাইজান এহনও ঘুমান ? আইজ অফিসে যাইবেন না ? -না শরীরটা ভালো নেই। আজ আর অফিসে যাবো না। -তাইলে ভাইজান আপনার মাথায় একটু তেল মালিশ কইরা দেই। আরাম পাইবেন। -আচ্ছা দাও।

শেফালী খুব আনন্দ নিয়ে তেল মালিশ করার কাজটি করছে। যেন সে নিজেই তার মাথায় ভীষণ আরাম বোধ করছে। আমার মাথায় তেল মালিশ করতে দেয়াতে চোখে মুখে তার তৃপ্তির হাসি ফুটেছে । আমি একটি সিগারেট ধরিয়ে তাতে খুব আয়েশ করে টান দিচ্ছি আর শেফালী আমার মাথায় ভীষণ যত্ন নিয়ে তেল মালিশ করে যাচ্ছে। যতক্ষণ আমি নিজ থেকে বাঁধা না দেবো ততক্ষন সে এভাবে তেল মালিশ করেই যাবে।

-ভাইজান জানেন আমার জীবনের কত শখ, এমুন কইরা আমার স্বামীর মাথায় তেল মালিশ করুম। আর হেয় ঠিক এইভাবে আপনের মত কইরা বইসা বইসা বিড়ি খাইব। কিন্তু সবই কপালগো বুঝলেন ভাইজান, সবই কপাল ! -কেন তোমার স্বামী কি তোমাকে মাথায় তেল মালিশ করতে দেয়না ? -কি কইলেন হেয় দিবো হের মাথা ছুইত্যে, তাও আমারে! হেয় বস্তির মাগীগুলার কাছ থিকা ফুরসত পাইলে না আমার কাছে আইবো। -কি বলছো এসব ? -তাইলে আর কি কই ভাইজান। খালি আমার পুলাটার দিকে চাইয়া দাঁতে দাঁত কামড়াইয়া ধইরা এহনও ওই পিশাচটার লগে ঘর করতাছি।

শেফালী উঠে গিয়ে ঝাড়ু হাতে নিয়ে ঘর ঝাড়ু দেয়ায় মনোনিবেশ করল। শেফালীর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে। -শেফালী আমিনা তোমাকে কতদিন বলেছি শাড়ির আঁচল ঠিক করে পরবে। যদি আঁচল ঠিক রাখতে না পার তাহলে শাড়ি আর পরবেনা। -এত আঁচল ঠিক কইরা কাম করতে পারুম না।

কামের সময় অত কিছু খেয়াল থাকেনা। আপনের যদি খুব লজ্জা করে তাইলে চোখ দুইটা বন্ধ কইরা রাখলেই পারেন। আমার দিকে আপনার এমুন নজর দেয়ার দরকারটা কি ? বলেই মুচকি একটা হাসি দিলো শেফালী। মুহূর্তেই আমার নিজের প্রতি ভীষণ ঘৃণা জন্মালো। মনে হলো সামান্য এই কাজের মেয়েটির কাছে আজ আমার সন্মান যেন মুহূর্তেই ধুলোয় মিশে গেলো।

আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে আসলাম। আজকে একটু বেণুর সাথে দেখা করতে হবে। বহুদিন ধরে মেয়েটিকে আমি ফাঁকি দিয়ে আসছি। কাজটি মোটেও ঠিক হচ্ছেনা।

অন্তত এই মুহূর্তে বেণুর সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে মনের ভেতর জন্মানো সব গ্লানী দূর হয়ে যাবে। বেণুকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। লাল রঙের একটি শাড়ি পরেছে। বেণুকে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সন্ধানে বের হোলাম। ভাগ্যক্রমে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছের সন্ধান পেয়েও যাই।

দুজনে দাড়িয়ে রয়েছি কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়। দুজনের মুখেই কোন কথা নেই। আমাদের নীরবতা ভেঙে দিয়ে হঠাত বৃষ্টি নেমে এলো। কৃষ্ণচূড়ার ধোয়া বৃষ্টির পানি বেণুকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বেণুর দিকে তাকিয়ে আজ খুব রোদেলার কথা মনে পরছে।

বেণুর মাঝে যেন আমি রোদেলাকে দেখতে পাচ্ছি। বেণু আমাকে জড়িয়ে ধরল ঠিক যেভাবে রোদেলা ওর দুহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকের ভেতর মাথা গুঁজে দিয়ে লুকানোর চেষ্টা করত ঠিক সেইভাবে। আমার কণ্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বের হয়ে এলো রোদেলা ? -হুম ! -তোমাকে আজ আমার অনেক ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। বেণু আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল না ! সাবিত তুমি আজ হতে আমাকে ভুলে যাবে কথা দাও। আমি তোমার হতে পারব না।

আমি যেন মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মত বোবা হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। বেণু বলে চলেছে তার বোনের কথা। দুই দিন হলো তার বড় বোন ফ্লোরার বিয়ে ভেঙে গেছে। স্বামীর সাথে অনেকদিন ধরেই ঝামেলা চলে আসছিলো। স্বামীর সাথে মনের মিল না হওয়াতে শুধু কম্প্রোমাইজ করে সংসার টিকিয়ে রাখতে পারছিলোনা ফ্লোরা।

আমি বেণুর কাছে জানতে চাইলাম তার বোনের স্বামীর নাম। বেণু আমাকে জানাল ছেলেটির নাম অনির্বাণ। বেণুর কণ্ঠে অনির্বাণের নাম শুনে ভীষণ মায়া হলো অনির্বাণের জন্য। বেণু ঠিক করেছে কখনও সে বিয়ে করবেনা। অন্তত তার বড় বোনের মত ভুল করে জীবনে কষ্ট পেতে চায়না বেণু।

বেণুর কথাগুলো শুনে মনে হলো ঈশ্বর হয়ত যা করেন তা তার বান্দার ভালোর জন্যই করে থাকেন। এই আমি রোদেলার স্মৃতি নিয়ে বেশ সুখেই আছি তাহলে। আজ রাতে রোদেলাকে একবার ফোন দিয়ে বলবো রোদেলা আমাকে ক্ষমা করো, আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু সেটা বুঝতে অনেক দেরী করে ফেলেছি। হয়ত আরও আগে বুঝতে পারলে আজ তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যেতে পারতেনা। আমি বেণুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।

বৃষ্টিতে ভিজে একাকার অবস্থা। বাড়িতে ফিরে দেখি মিসেস সেলিনা আমার জন্য বারান্দায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমাকে নিয়ে শপিং করতে বের হবে বলে বেশ সেজেগুজে তৈরি হয়েছে। একটি লাল রঙের শাড়ি পরেছে। শাড়ির পুরো জমিনে কৃষ্ণচূড়া ফুলের বুনন।

দুহাত ভর্তি লাল রঙের কাঁচের রেশমি চুড়ি। মাথার ব্যথাটা হঠাত আবার তীব্র আকার ধারন করেছে। ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বোধ হয় জ্বর আসছে। আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম।

সেলিনা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, মনে হলো যেন রোদেলার মত করে কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছে। অল্পক্ষণের মাঝেই দুচোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো। উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার এহসান সাবির মৃদু এ মৃগদেহে মেরো না শর। আগুন দেবে কে হে ফুলের ‘পর। কোথা হে মহারাজ, মৃগের প্রাণ, কোথায় যেন বাজ তোমার বাণ।

অধর কিসলয়-রাঙিমা-আঁকা, যুগল বাহু যেন কোমল শাখা, হৃদয়লোভনীয় কুসুম-হেন তনুতে যৌবন ফুটেছে যেন। ওগো সন্নিহিত তপোবন-তরুগণ – তোমাদের জল না করি দান যে আগে জল না করিত পান, সাধ ছিল যার সাজিতে, তবু স্নেহে পাতাটি না ছিঁড়িত কভু, তোমাদের ফুল ফুটিত যবে যে জন মাতিত মহোৎসবে, পতিগৃহে সেই বালিকা যায়, তোমরা সকলে দেহ বিদায়। মৃগের গলি' পড়ে মুখের তৃণ, ময়ূর নাচে না যে আর, খসিয়া পড়ে পাতা লতিকা হতে যেন সে আঁখিজলধার। ইঙ্গুদির তৈল দিতে স্নেহসহকারে কুশক্ষত হলে মুখ যার, শ্যামাধান্যমুষ্টি দিয়ে পালিয়াছ যারে এই মৃগ পুত্র সে তোমার। নবমধুলোভী ওগো মধুকর, চুতমঞ্জরী চুমি' কমলনিবাসে যে প্রীতি পেয়েছ কেমনে ভুলিলে তুমি? --------------------- শকুন্তলা; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।