আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একাত্তরে সাকাকে মারতে গিয়েছিলেন তারা

১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চালানো ওই হামলায় মুসলিম লীগ নেতার ছেলে সালাউদ্দিন কাদের বেঁচে গেলেও মারা যান তার গাড়িচালক।
চার সদস্যের মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলের সদস্য কাজী নুরুল আবছার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছেন, যে আদালত মঙ্গলবার দেয়া রায়ে সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
ওই ব্যর্থ অভিযানের ‘দুঃখ’ এখনো রয়েছে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মনে। তাদের আক্ষেপ, সেদিন ‘সফল’ হলে স্বাধীন দেশে এই যুদ্ধাপরাধীর মন্ত্রী হওয়া দেখতে হত না।
মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলের নেতা এস এম মাহাবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুক্তিবাহিনীর হাইকমান্ডের নির্দেশেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল।


“এর আগে আরো দুটি গ্রুপ হামলা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। সবশেষ আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। ”
ওই দলের অন্য তিন সদস্য হলেন- ফজলুল হক ভুঁইয়া, সুরেন্দ্র নাথ সেন ও কাজী নুরুল আবছার।
নগরীর চন্দনপুরার মনু মিজ্জি লেইনে পারিবারিক বন্ধু ডা. সমিউদ্দিনের বাসা থেকে ফেরার সময় সালাউদ্দিন কাদেরের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে মামলার দশম সাক্ষী নুরুল আবছার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ডা. সমিউদ্দিনের ছেলে আজিজ উদ্দিনের কাছ থেকে কৌশলে ওই দাওয়াতে সাকা চৌধুরীর আসার বিষয়টি নিশ্চিত হই।


“রাত পৌনে ৮টার দিকে গাড়ি চালিয়ে ওই বাড়িতে আসে সে। এরপর বৃষ্টি শুরু হয়। অন্ধকার রাত। লাইটপোস্টেও আলো ছিল না। ”
মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ওই দলের সম্বল ছিল একটি এসএমজি, তিনটি গ্রেনেড ও দুটি রিভলবার।


“রাত সাড়ে ৯টার পর ওই বাড়ি থেকে বের হয় সাকার গাড়ি। ডা. সমিউদ্দিনের বাড়ির উল্টো পাশের ড্রেনের স্ল্যাবের নিচে ছিল ফজলুল হক ও সুরেন্দ্র নাথ। কাছের পেঁচু মিয়ার বাড়ির সামনে মাহাবুবুল ও মূল সড়কে আমি। ”
ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই প্রাইভেটকারে সালাউদ্দিন কাদেররা তিন ভাই এবং তাদের এক ভগ্নিপতি ছিল।
“গাড়িচালকের পাশের সিটে ছিল সাকা।

অন্ধকারে আমরা সেটা দেখতে পাইনি। ”
চালকের আসন লক্ষ্য করে ছয়-সাত গজ দূর থেকে গুলি ছুড়েছিলেন ফজলুল হক। গুলিবিদ্ধ হন চালক। অন্ধকারে ছোড়া গ্রেনেড ফাটে গাড়ির পেছনে।
“গুলি ও স্প্লিন্টারে সাকা আহত হন।

আমাদের ধারণা ছিল, সে মারা গেছে। তাই আমরা ঘটনাস্থলে থেকে চলে যাই। পরদিন সকালে পত্রিকা পড়ে জানতে পারি, সে মরেনি, গাড়িচালক মারা গেছে। ”
মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের একাত্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর ফজলুল কাদের কারা অন্তরীণ অবস্থায় মারা যান।


তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া সালাউদ্দিন কাদের বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এনডিপি থেকে ছয় বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এইচ এম এরশাদের সরকারে মন্ত্রী ছিলেন তিনি, মন্ত্রীর মর্যাদায় উপদেষ্টা ছিলেন খালেদা জিয়ার।
মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলের প্রধান মাহাবুবুল আলম বলেন, “ওই রাতে অল্পের জন্য আমরা ব্যর্থ হই। ওই রাতে যদি সফল হতাম তবে স্বাধীনতার পর এত দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তার বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হত না। ”
একই আক্ষেপ ফজলুল হকেরও- “আমরা সফল হলে স্বাধীন দেশে সে মন্ত্রী হতে পারত না।

তার আস্ফালনও আমাদের দেখতে হত না। ”

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.