আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এখনো ভোর হয়নি, এখনো অনেক রাতঃ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা

Never lose hope...., Never Stop Expedition....

আজ ৪ অক্টোবর ২০১৩, রোজ শুক্রবার। আর একটু পরেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর জন্য একযোগে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হবে। সময়কাল সকাল ১০টা মনে হয়। আসলে আমার পরিচিত কেউ এবার পরীক্ষা দিচ্ছে না তো তাই আর আগেভাগে খোঁজখবর নেই নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে নিলেই ভালো হতো।

কারণ পরীক্ষার আগেই যে আরেক অঘোষিত পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। কেউ বলছে রাত তিনটা, কেউ বলছে ফজরের আগেভাগে, আবার কেউ বলছে ফজরের ঠিক পরপরই। কেউ বলছে উত্তরসহ আবার কেউবা উত্তর ছাড়া শুধু প্রশ্নপত্র। কেউ বলছে বেশী টাকা ছাড়লে শতভাগ কমন আবার কেউবা দিচ্ছে ৮০% এর গ্যারান্টি। কিন্তু আসলে কি হচ্ছে? কি বোঝাতে চাইলাম এটা দিয়ে তা কি কেউ বুঝতে পারছেন? আসলে বরাবরের মতোই কিছু ব্যক্তি উঠেপড়ে লেগে গেছে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেভাগে পেয়ে যাবার হীন প্রচেষ্টায়।

সাথে জড়িত আছে এমন কিছু ছাত্র এবং ছাত্রী যাদের সিংহভাগই পড়াশোনা না করে সব এনার্জি, শক্তি, অর্থ, মেধা, ক্ষমতা ব্যয় করছে আজকের রাতে। সদাতৎপর হয়ে আছে তারা। কর্মহীন অতীতকে পেছনে ফেলে বর্তমানের অন্ধকারে বসে তারা আলোকিত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের অন্যায্য, অন্যায় আর নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মনে আছে ২০০৬ সালের কথা? সেবার মেডিক্যাল আর ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় কি হয়েছিল? কিছু ছাত্র প্রশ্নপত্রের দিকে না তাকিয়েই ৬০ মিনিটের পরীক্ষা ২০ মিনিটে দিয়ে গটগট করে বের হয়ে আসতে আসতে বলেছে, ঢাকা মেডিক্যাল হয়েই গেলো, আর তা হলে সলিমুল্লাহ তো ১০০% নিশ্চিত। আর অন্যদিকে? কিছু ছাত্র প্রশ্নপত্র পড়তে পড়তেই এক ঘণ্টা সময় পার করে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে আসলো হল থেকে।

সারা বছর যেই ছেলেটা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতো, সিটি বাজাতো আর সময় হলে বাপের হোটেলে গিয়ে খেয়েদেয়ে আবার তার আগের কর্মস্থল ও বন্ধুবরদের কাছে ফিরে আসতো সেই ছেলে যখন বুক ফুলিয়ে গায়ে অ্যাপ্রন পরে মোটা মোটা জ্ঞানের বই পড়ে বা পড়ার ভান করে তখন সেই দৃশ্য দেখে প্রকৃত মেধাবীদের কেমন খারাপ লাগে একবার উপলব্ধি করে দেখুন। সেই অপদার্থ ডাক্তার ছেলে বা মেয়েটিই যখন পরবর্তীতে বছরের পর বছর একবার না পারিলে দেখো শতবার করতে করতে কোনোরকমে পাশ করে তখন চিন্তা করে দেখুন আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎ অবস্থা। এরকম এবারো হবে বলে অনেকেই আশংকা করছেন। আর হলে এদেশের ভবিষ্যৎ আরো গভীর অমানিশায় পতিত হবে, নিঃসন্দেহে। অন্যদিকে চিন্তা করে দেখুন তার অবস্থা যে কিনা ডাক্তার হবে (মানুষের সেবা করবে না টাকা, ডিগ্রী আর সম্মান কামাই করবে সেই আলোচনা এখানে বাদ) এই আশায় দিনের পর দিন পড়াশোনা করেছে, পড়তে পড়তে ঘেমে গিয়েছে, সেই ঘামে মাথার চুল পর্যন্ত উঠে গেছে, চোখ হয়েছে কোটরস্থিত, মুখ হয়েছে মলিন।

সেইজন যখন পরীক্ষার হলে গিয়ে শুধু প্রশ্ন পড়তে পড়তেই তার সারা জীবনের স্বপ্ন (সাথে তার মাবাবারও) মাটিচাপা দিয়ে অসহায়ের মতো পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এসেছে তাকে আপনি কিভাবে সান্ত্বনা দেবেন, বলেন? আজ (এবং এখনো) আমি আমার আশেপাশের অনেককেই দেখছি এদিকসেদিক ছোটাছুটি করতে। কেউ ছুটছে না পড়েই পরীক্ষায় চান্স পাবার নির্লজ্জ আশায় আর কেউ ছুটছে সেই অবৈধ আশার বাস্তবায়নে সহায়তার নিমিত্তে। এক্ষেত্রে এবার যারা জড়িত আছে বলে শোনা গেছে তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ছাত্রনেতা। ঠিক ২০০৬ সালে যেমন ছিল তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের লোকেরা। অনেকেই চায় না অপার সম্ভাবনাময় এই দেশটি উপরে উঠুক।

একটা জাতিকে মেধাহীন নেতৃত্ব উপহার দিতে পারলে তাকে পর্যুদস্ত করতে একটা বুলেটও খরচ করতে হয় না। এই সহজ হিসাব আমাদের শত্রুরা যেমন জানে আমরাও জানি। জেনেও আমরা চুপ করে আছি। আত্মস্বার্থ চরিতার্থের জন্য আমরা জাতিস্বার্থকে নির্লজ্জের মতো জলাঞ্জলি দিচ্ছি। নিজেদেরকে নিজেরাই মেধাহীন করে গড়ে তুলছি।

একসময় এটা মধ্যযুগীয় ইউরোপের সর্বনাশী ব্ল্যাকডেথের মতো মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে। এর সর্বনাশী থাবা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। সৎ লোকেরা হয়তো বলবে আমরা তো কখনো অন্যায় করিনি। ঠিকই, তোমরা এই গুটিকয়েক মানুষ হয়তো নিজেরা কোন অন্যায় করোনি কিন্তু একইসাথে অন্যের অন্যায়কে প্রতিরোধের কোন চেষ্টাও তো করোনি। ১৯৯৭ সালে খান আতাউর রহমান এখন অনেক রাত নামের এক মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।

মুভিটির শেষদৃশ্যে পাগল হয়ে যাওয়া ফারুক একটা কথা বলতে বলতে পাগলাগারদ থেকে বেরিয়ে যায়--- আসাদ, শাব্বির, কামাল, তোরা কোথায়? এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো ভোর হয়নি, এখনো অনেক রাত। রতন, শহীদ, আসাদ, শাব্বির, কামাল, তোরা কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেলি? এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো ভোর হয়নি, এখনো অনেক রাত। এখনো অনেক রাত। আসলেই এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি, এখনো কিছু বাকি আছে হয়তো। এখন অনেক রাত।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.