আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আনন্দ শঙ্কর : আনন্দ শঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক

স্নো-ড্রপস অ্যান্ড ড্যাফোডিলস, বাটারফ্লাইস অ্যান্ড বী; সেইল বোটস অ্যান্ড ফিশারমেন, থিংস অভ দ্যা সী। উইশিং-ওয়েলস, ওয়েডিঙ বেলস, আর্লি মর্নিং ডিউ; অল কাইন্ডস অভ এভরিথিং রিমাইন্ডস মি অভ ইউ!
আনন্দ শঙ্কর চৌধুরী (১১ ডিসেম্বর ১৯৪২ - ২৬ মার্চ ১৯৯৯) হলেন বাংলাদেশের নড়াইলের বিশ্বখ্যাত 'শঙ্কর চৌধুরী' সাংস্কৃতিক পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের বাদ্যযন্ত্র শিল্পী ও সেরা মিউজিক কম্পোজার। পাশ্চাত্যের সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের সাথে ভারতীয় সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের ফিউশনের, (অধুনা) অতি জনপ্রিয় ধারাটির পথিকৃৎ ছিলেন আনন্দ শঙ্কর। ভারতের উত্তর প্রদেশের আলমোরায় আনন্দ শঙ্করের জন্ম। বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যনাট্যকার ও করিয়োগ্রাফার, পণ্ডিত উদয় শঙ্কর (চৌধুরী) হলেন তাঁর বাবা ও অপর সেরা নৃত্যশিল্পী, অমলা শঙ্কর, হলেন তাঁর মা।

আনন্দ শঙ্করের ছোটো কাকা হচ্ছেন, সর্বকালের অন্যতম সেরা সিতারিয়া, পণ্ডিত রবি শঙ্কর (চৌধুরী)। তাই, এক উচ্চমার্গের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ও পরিচর্যায়, আনন্দ শঙ্কর, তাঁর অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে বিকশিত হন। কৈশোরেই পণ্ডিত লালমণি মিশ্রের কাছে তিনি সিতারে তালিম নেন (দুর্ভাগ্যবশত, পণ্ডিত রবি শঙ্করের কাছে বাদন শিক্ষার সুযোগ তিনি পাননি)। তবে সেই কৈশোর থেকেই আনন্দ শঙ্কর ছিলেন বেশ ব্যতিক্রম, তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরন ছিল তাঁর পরিবারের বাকি সবার মতই, কিন্তু নৃত্য বা সঙ্গীতের ঘরানা বা সনাতন ধারা তাঁকে কখনই আকর্ষণ করেনি। তাই সিতার শিখেও, প্রচলিত উচ্চাঙ্গ সিতারের চর্চা তিনি করেননি।

তাঁর সৃষ্টিশীল মন, সর্বদাই নতুনত্ব ও সাতন্ত্র খুঁজেছে। ১৯৬০ এর দশকের মধ্যভাগেই পাশ্চাত্যে শো-বিজনেসের স্বপ্নিল জগতের সুচনা হয়, যার ছটা ভারতেও এসে পরে, ভারতীয় সিনেমায়, পাশ্চাত্যের হিপি পোশাকের প্রচলন শুরু হয়। নতুনত্বের সন্ধানী আনন্দ শঙ্কর তখন অ্যামেরিকার লস আঞ্জেলেসে চলে যান। পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সঙ্গীতের ফিউশন নিয়ে ভাবনা তাঁর আগেই ছিল, এবার তা বাস্তবে রুপ দিতে সচেষ্ট হয়েই অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়ে যান তিনি। পাশ্চাত্যের সঙ্গীতের সাথে তাঁর সিতারের মূর্ছনাময় কম্পোজিশন শোনামাত্রই লুফে নেন শ্রোতারা।

মার্কিন যুবসমাজের একটি বড় অংশ তখন এলএসডি, ম্যারিহুয়ানা ও নানাবিধ ড্রাগের বিষে আচ্ছন্ন ছিল। এলএসডি'তে নেশাচ্ছন্ন কিশোর যুবকরা তখন, 'সাইকাডেলিক রক' বা 'সাইকাডেলিক মিউজিক' নামক এক নতুন সঙ্গিতধারায় আসক্ত হয়ে পরে, যাতে কিনা নেশা ও এক ঘোরলাগা সঙ্গীত একাকার হয়ে এক শ্রোতাদের মধ্যে একধরনের উম্মাদনা সৃষ্টি করত। নেশার আসরে, আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিক পার্টিতে ও জ্যাম সেশনে সর্বত্রই ছিল এই সাইকাডেলিক মিউজিক'। তখনকার কাল্ট শিল্পীদের প্রায় সবাই ড্রাগ ও সাইকাডেলিক মিউজিকে আচ্ছন্ন ছিলেন। সাইকাডেলিক মিউজিকের সাথে আনন্দ শঙ্করের সিতার যুক্ত হতেই, যেন এক অভাবনীয় সঙ্গীত বিপ্লব শুরু হয়।

আনন্দ শঙ্করের সাইকাডেলিক কম্পোজিশনগুলো ডিজে পার্টিগুলোতে একচেটিয়া জনপ্রিয়তা পায়। এসময় তিনি ব্লুজ / রক / সাইকাডেলিক রক কিংবদন্তী জিমি হেনড্রিদ্ক্সের সংস্পর্শে আসেন, জিমি হেনড্রিদ্ক্সকে সিতার বাদন শেখান ও একসাথে পারফর্ম করেন। ১৯৭০ এ তাঁর প্রথম অ্যালবাম 'আনন্দ শঙ্কর' বের হয়, ওয়ারনার রিপ্রাইজ থেকে। অ্যালবামটিতে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ যন্ত্রসঙ্গীতের পাশাপাশি ছিল অসাধারণ সাইকাডেলিক মিউজিক কম্পোজিশন। তাছাড়া এই অ্যালবামে, দ্যা রোলিং স্টোনসের 'জাম্পিং জ্যাক ফ্ল্যাশ' এবং দ্যা ডোরসের 'লাইট মাই ফায়ার' গানদুটির সিতার-ভার্সন থাকায়, অ্যালবামটি মুহূর্তেই 'কাল্ট' মর্যাদা ও প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়।

কিন্তু আনন্দ শঙ্কর নিজে নেশাগ্রস্থ হননি কখনো, আর তাই নেশার সঙ্গীতের জগত তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। ফলে, ১৯৭০ দশকের প্রারম্ভেই মার্কিন মুল্লুকের পাট চুকিয়ে আনন্দ শঙ্কর ভারতে ফিরে এসে নানাবিধ সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ বা ফিউশন নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৭৫ এ জ্যাজ-ফাঙ্ক, সিতার, গীতার, মৃদঙ্গ, মুগ সিন্থেসাইজার ইত্যাদি নানাবিধ ধারার সঙ্গীত ও বাদ্যের কম্পোজিশন নিয়ে বের হয় তাঁর শ্রেষ্ঠ অ্যালবাম, 'আনন্দ শঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক'। এই অ্যালবামের বিশেষ করে ৩টি ট্র্যাক, স্ট্রীটস অভ ক্যালকাটা, ড্যান্সিং ড্রামস ও বিদায় (পার্টিং), সেসময়ে ক্ল্যাসিকের মর্যাদা পায়। প্রকাশের পর সব কপি বিক্রি হয়ে যাওয়ায়, ২০০৫ এ পুনপ্রকাশ পর্যন্ত, এই অ্যালবামটি, বিশ্বসঙ্গীতের ইতিহাসের সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ অ্যালবামগুলোর একটি ছিল।

আনন্দ শঙ্কর তাঁর সাংগীতিক পরীক্ষানিরীক্ষা আরও দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে অব্যাহত রাখেন। এসময় তাঁর কম্পোজিশনগুলো, সিনেমায়, নাটকে, মঞ্চে, টিভি ধারাবাহিকে ব্যবহৃত হতে থাকে (১৯৭০ / ৮০ এর দশকে বিটিভি'র নাটকে ও আবহসঙ্গীতে আনন্দ শঙ্করের বাজনার বহুল ব্যাবহার ছিল)। এছাড়া, সহধর্মিণী,তনুশ্রী শঙ্করের, সুখ্যাত নাট্যদলের কম্পোজার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৯০ এর দশকে ফিউশন মিউজিক আবার বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা ফিরে পায়, এই ধারার অগ্রপথিক হিসেবে আনন্দ শঙ্করও তাঁর ম্রিয়মাণ মর্যাদা ফিরে পান। এসময়কালে আনন্দ শঙ্কর কয়েকটি মিউজিক ট্যুর করেন ইউরোপে ও অ্যামেরিকায়।

এমনই এক ট্যুরে, লন্ডন ভিত্তিক ডিজে ' স্টেট অভ বেঙ্গল' এর সাথে তিনি একসাথে কাজ করেন। ১৯৯৯ এ অত্যন্ত আকস্মিক ভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আনন্দ শঙ্কর পরলোকগমন করেন। কিন্তু তাঁর লিগ্যাসি মুছে যাওয়ার নয়। মৃত্যুর পর প্রকাশিত তাঁর অ্যালবাম 'ওয়াকিং অন' বিপুল জনপ্রিয়তা পায়, গ্র্যান্ড থেফট অটো নামক গেম ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালে ও মুভিতে তাঁর সঙ্গীতের ব্যাবহার বেড়ে যায়। প্রবল চাহিদার কারনে, ২০০৫ এ তাঁর 'আনন্দ শঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক' অ্যালবামটি আবার প্রকাশিত হয় ও এবার 'কাল্ট' মর্যাদা লাভ করে।

আনন্দ শঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক ১ স্ট্রীটস অভ ক্যালকাটা ২ সাইরাস ৩ দ্যা লোনলি রাইডার ৪ দ্যা রিভার ৫ বিদায় (পার্টিং) ৬ ব্যাক হোম ৭ ডন ৮ রিনানসিয়েশয়ান ৯ ড্যান্সিং ড্রামস কোয়ালিটি : ২২৫ কেবিপিএস ভিবিআর এমপি৩ ফাইল সাইজ : ৬৯ মেগাবাইটস ডাউনলোড : আনন্দ শঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.