আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর ওপারে -২

জগৎ টা অনেক রহস্যময়, তার চেয়ে বড় রহস্যময় আমরা নিজেরা। সেই রহস্য বাহ্যিক রহস্যকেও হার মানায়। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেছে। দুই দিন এর মত আমি অচেতন ছিলাম । আসলে আমি অচেতন ছিলাম না।

আমি দেখছিলাম ডাঃ রা আমাকে আই সি ইউ তে নিয়ে বুকে সক দিচ্ছিল। আমাকে বাচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা করছিল। আমি আমার নিজের নিথর দেহ টা কে দেখলাম। কত নিস্পাপ মনে হচ্ছিল। আমার নিজের তখন মনে হতে লাগল আমি বোধ হয় মারা গেছি।

এও মনে হলনা যে স্বপ্ন দেখছি। অনেক সময় স্বপ্ন দেখলে মনে হয় স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমার তেমন কিছু ই মনে হল না। আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম তার কথা গুলো। তিনি বলতে লাগল আমার মধ্যে তখন খারাপ লাগার অনুভুতিগুলো ছিল না। শুধু একটু আশ্চর্য লাগছিল।

কিন্তু তাও সাময়িক সময়ের জন্য। পরে ভাবতে লাগলাম যে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মনে হচ্ছিল যা ঘটছে এটাই স্বাভাবিক। আমি নিজেকে ওজনহীন অনুভব করলাম। দেখতে লাগলাম আমি শূন্যে ভাসছি ।

নিচে খেয়াল করলাম আমার ভাই ডাঃ এর সাথে কথা বলছে। স্পষ্ট শুনলাম লাইফ সাপোর্ট রাখবে কি রাখবে না তা নিয়ে কথা বলছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই তো আপনি তাদের সাথে কথা বলতে চান নি? জাফর ভাই বলল, না। আমি বললাম না। মনে হচ্ছিল সব স্বাভাবিক ভাবে চলছে।

আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রন ও আধো আধো। যতটুক মনে আছে আমি বোধহয় নিজেকে নিয়ন্ত্রনও করতে চাই নি। ভাবছিলাম যা হচ্ছিল সব স্বাভাবিক ভাবে হচ্ছে। আমি তার কথা শুনছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম তার মনে হয় মাথাটা আসলেই পুরা গেছে। সে বলল।

আমি বুঝতে পারছি তুমি মনে হয় আমার কথা বিশ্বাস করছ না। যাই হোক বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। তবে একটা সত্যি কথা কি জানো? ওর পর থেকে এখন আর আমার মধ্যে কোন মৃত্যু ভয় নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? তিনি বললেন আমি তখন যে শান্তি পেয়েছি তুমি কল্পনাও করতে। ওই শান্তির সাথে জাগতিক কোন শান্তির তুলনা হয় না।

এই জন্যই তো বললাম আমি ফিরে না আসলেই ভাল ছিলাম। যাই হোক তার পর দেখতে লাগলাম একটা টানেল এর মত কিছু একটা। আমি রোবটের মত ওদিকে ভেসে যেতে লাগলাম। আমি যে ভেসে ভেসে যাচ্ছিলাম সে অনুভূতিটা এখন ও আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমি মনে মনে হাসছিলাম আর জিজ্ঞেস করলাম তারপর? তিনি বললেন, তার পর অনুভূতিটা ছিল এমন যেন আমি অনেক দ্রুত গতিতে ভেসে যাচ্ছি।

দূর থেকে দুরান্তরে সেই টানেল টার মধ্য দিয়ে। অন্ধকার টানেল। গাঢ় সেই অন্ধকার। কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না শুধু অনুভূতিটা হচ্ছিল এমন যে অনেক দ্রুত ভেসে যাচ্ছি। হঠাত দেখতে পেলাম একটুকরো আলো।

অনেক উজ্জ্বল সে আলো। ধীরে ধীরে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছিল । এত উজ্জ্বল যে মনে হল চোখ ঝলসে যাবে। কিন্তু না আমার কাছে আরও ভাল লাগছিল আলোটাকে। ধিরে ধিরে আলোটা আমার কাছে চলে আসল।

আসলে বুঝতে পারছিলাম না আমি আলোর কাছে গেলাম না আলো টা আমার কাছে আসল। পরে খেয়াল করলাম এটা মানুষের আকৃতি ধারন করছে। সব কেমন জাদুর মত ঘঠছিল। কিন্তু আমি আশ্চর্য হলাম না। ওই যে বলেছিলাম না সবকিছু ই স্বাভাবিক মনে হতে লাগল।

দেখলাম ঘন মেঘ না কি জানো এমন একটা যায়গায় চলে এসেছি আমি। এ যেন এক নতুন শহর। স্পষ্ট শুনতে পেলাম আলোর মত ওই প্রাণীটি আমাকে বলল স্বাগতম। সাথে সাথে হাজার হাজার অমন প্রানি দেখতে পেলাম এক সাথে আমাকে সাগতম জানাচ্ছে। আমি ও ধন্যবাদ জানালাম।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম অপূর্ব সৌন্দর্য। অপার্থিব সেই সৌন্দর্য। আমি ভাসতে লাগলাম। আমার পৃথিবীর কথা আমার আপনজনদের কারও কথা তখন মনে পরছিল না। ওখানে আরও অনেক কিছু দেখলাম কিন্তু সব মনে নেই।

হঠাত শূনতে পেলাম কে যেন আমাকে বলছে তোমাকে যেতে হবে। আমি লক্ষ করলাম আমি পরে যাচ্ছি। অনেক উপর থেকে পরলে যেমন অনুভুতি হয় তেমন অনুভুতি হচ্ছিল। তার পর আর কিছু মনে নেই। পরে তাকিয়ে দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।

আমি বললাম আপনি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছেন। ভাই বলল, হুম আমি ও সেটা ভেবেছিলাম কিন্তু সবকিছু খুব ই বাস্তব মনে হচ্ছিল। আমি বললাম থাক ভাই এ বেপার নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকার নেই। এখন সুস্থ আছেন আল্লাহর কাছে সুকরিয়া করেন। পরে দুপুরে খেয়ে দেয়ে আমি জাফর ভাইর বাসা থেকে বের হলাম।

তার কথা গুলো মোটেও আমলে নিলাম না। পথে দেখা হল জাফর ভাইয়ের ছোট ভাইর সাথে। আমি রিক্সা বিদায় দিয়ে তার সাথে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। গল্প শুরু করলাম চা খেতে খেতে। বললাম তোমাদের বাসা থেকেই এমাত্র আসলাম ।

জাফর ভাইর সাথে গল্প করলাম এতক্ষন। সে বলল, তোমাকেও নিশ্চয়ই শুনিয়েছে তার লোমহর্ষক কাহিনী? আমি বললাম ,হুম। ও বলল , আর বল না যাকে পায় তাকেই শুনায়। মনে হয় সাইকোলজিকাল কোন প্রবলেম হইছে অপারেশন এর পর। আমি বললাম, আচ্ছা ফরিদ তুমি ওদিন হাসপাতালে ডাঃ এর সাথে লাইফ সাপোর্ট নিয়ে কি কোন কথা বলেছিলে? ফরিদ বলল ,হ্যা।

ডাঃ তো লাইফ সাপোর্ট সরিয়েই নিতে চাইছিল। আমি নিষেধ করছিলাম। আচ্ছা এই কথা কি তোমার ভাইয়া জানে?আমি বললাম। না তো। একথা বলতে ভুলে গেছিলাম।

আমার নিজের ই মনে ছিলনা। তুমি জিজ্ঞেস করাতে মনে পড়ল। তখন তো মনের অবস্থা বোঝ ই। দু দিন কারো সাথে কথা বলিনি এতটাই ভেঙ্গে পরছিলাম। (চলবে) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.