আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হ্যাটট্রিকের যত গল্প

জিমি ম্যাথুসের কবজিতে সেদিন কী ভর করেছিল কে জানে! বল তো নয়, যেন একেকটা দুর্বোধ্য ধাঁধা ছুড়ে দিচ্ছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশে। আর সেই ধাঁধার ধন্দে পড়ে যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকানরা। প্রথম ইনিংসে হ্যাটট্রিক। ম্যাথুস হ্যাটট্রিক করে ফেললেন দ্বিতীয় ইনিংসেও!
টেস্ট চার ইনিংসের খেলা। তবে একজন বোলার সর্বোচ্চ দুই ইনিংসেই বল করার সুযোগ পান।

তিন ইনিংসে সুযোগ পেলে কী হতো বলা মুশকিল। সেই টেস্টে যেভাবে হ্যাটট্রিকের নেশা পেয়ে বসেছিল, ম্যাথুস হয়তো হ্যাটট্রিকের হ্যাটট্রিক করেই তবে থামতেন!
টেস্ট ক্রিকেটে দুই ইনিংসেই হ্যাটট্রিক করার একমাত্র কৃতিত্বটি ম্যাথুসের। দুটো হ্যাটট্রিকই তিনি পূর্ণ করেছিলেন টমি ওয়ার্ডকে আউট করে। মানে দুবারই ওয়ার্ড ছিলেন তাঁর তৃতীয় শিকার।
এত অবিশ্বাস্য যাঁর কীর্তি, সেই তিনি পুরো ক্যারিয়ারে কতগুলো উইকেট পেয়েছেন জানেন? মাত্র ১৬টি! আট টেস্টেই যে শেষ হয়ে গিয়েছিল এই লেগ স্পিনারেরর ক্যারিয়ার।

আরও স্পষ্ট করে বললে, ১৯১২ সালে শুরু হয়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল ওই বছরেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুলনামূলক তরুণ থাকলেও ক্রিকেটে আর ফেরেননি।

হয়তো ফেরার প্রয়োজনও মনে করেননি। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে যা করেছেন, সেটাই তো ছিল যথেষ্ট! ক্রিকেট আজীবন মনে রাখবে তাঁকে।

ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আরেকজন—ফ্রেড স্পোফোর্থ।

প্রথম হ্যাটট্রিকটি যে তাঁরই! সেটিও ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় টেস্টে। ১৮৭৯ সালে মেলবোর্নের এমসিজিতে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কেন তাঁর ডাকনাম ‘দ্য ডেমন বোলার’।

পর পর দুই ইনিংসে না হলেও টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করার একমাত্র কৃতিত্ব ওয়াসিম আকরামের। আকরামের এই কৃতিত্বের সাক্ষী হয়ে আছে বাংলাদেশও। না, দল হিসেবে নয়, ভেন্যু হিসেবে।

সেবার এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালটা ঢাকাতেই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। লাহোরে হ্যাটট্রিক করার পর ঢাকাতেও হ্যাটট্রিক করেন আকরাম।

টেস্ট ক্রিকেটে একের বেশি হ্যাটট্রিক আর একজনেরই আছে। অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার হিউ ট্রাম্বলের।

দু বছরের ব্যবধানে একই দলের বিপক্ষে (ইংল্যান্ড) একই মাঠে (এমসিজি) হ্যাটট্রিক করেন ট্রাম্বল।

অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করার করার কৃতিত্ব আছে তিনজনের। ইংলিশ মিডিয়াম পেসার মরিস অ্যালম (১৯৩০, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড), কিউই স্পিনার পিটার প্যাথেরিক (১৯৭৬, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান) এবং অস্ট্রেলীয় পেসার ডেমিয়েন ফ্লেমিং (১৯৯৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান)।

নিজের জন্মদিনে হ্যাটট্রিক করে নিজেকেই সবচেয়ে বড় উপহারটি দিয়েছিলেন পিটার সিডল। ২০১০ অ্যাশেজে ব্রিসবেন টেস্টে এভাবেই ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু মি’ গেয়েছিলেন তিনি।

দিনটা ছিল ২৫ নভেম্বর।

সব মিলিয়ে টেস্টে ৪০টি হ্যাটট্রিক হয়েছে। হ্যাটট্রিক করেছেন ৩৭ জন। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগা দক্ষিণ আফ্রিকার জিওফ গ্রিফিন। হ্যাটট্রিকের পর ক্যারিয়ারই শেষ হয়েছিল তাঁর! চাকিং যে করতেন! মাত্র দুটো টেস্টের ক্যারিয়ার, উইকেট আটটি।

হ্যাটট্রিককারীদের মধ্যে সবচেয়ে কম উইকেট তাঁরই।  

নাহ, দুর্ভাগা বোধ হয় আরেকজন আছেন। বাংলাদেশের সাবেক কোচ এডি বারলো। অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে ১৯৭০ সালের হেডিংলিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। সে সময় ম্যাচটি টেস্টের মর্যাদাই পেয়েছিল।

কিন্তু পরে এই রেকর্ডটি মুছে ফেলা হয়।

টেস্ট ক্রিকেটে ১০টি দলের বোলারই হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়েছে। ভারতের হ্যাটট্রিক খরা ঘুচিয়েছিলেন হরভজন সিং, ২০০১ সালে। সর্বোচ্চ ১২টি হ্যাটট্রিক করেছেন ইংলিশ বোলারা, ১১টি হ্যাটট্রিক অস্ট্রেলীয়দের নামে। মোট হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশ কিন্তু আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলঙ্কারও ওপরে।

বাংলাদেশের হ্যাটট্রিক যে হয়ে গেল দুটি!

এর মধ্যে আজ সোহাগ গাজী হ্যাটট্রিকের এই তালিকায় পেলেন অনন্য গৌরব। বাকি ৩৬ জনের তো আর একই ম্যাচে সেঞ্চুরিও নেই!

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.