আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা ছবি ও মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন: মিডিয়াকে ডেকেই কি গাড়ি ভাঙ্গা হয়?

সত্য পথের অনুসন্ধানি

এখানের ছবিটা দেখুন। ছবি আপলোড় করেও এখানে দিতে পারলাম না কেন বুঝলাম না । ভালো করে দেখুন। শক্ত সামর্থ এক যুবক একটি গাড়ি ভাঙছে। আমি গাড়িওয়ালার কষ্ট /আবেগ এ সব কিছু এনে আপনার চোখকে ঘোলাটে করতে চাই না।

সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের ছবি এত সাধারণ যে আপনি হয়ত খুব ভালো করে সেটা দেখতেও চাইবেন না। সব দলই যখন গাড়ি ভাঙ্গে তখন জানারও দরকার নেই কোন দলের কর্মী। ছবির ক্যাপশন দেখে দলের কর্মীরা একে অপরকে ব্লেইম গেম খেলতে পারে। আমার মুল প্রশ্ন এসব কিছুতে নয়। আমরা আবারো ছবিটাতে ফিরে আসি ।

আরেকটু ভালো করে দেখি। ছবির কন্টেন্ট যেহেতু খুব সাধারণ তাই এ সবের দিকে না থাকিয়ে যাচাই করে নিই কিছু প্রশ্নের উত্তর: বলার অপেক্ষা রাখে না এই ছবিটা একজন সাংবাদিকের তুলা এবং এই ছবিটা দেশের প্রথম সারির পত্রিকা প্রথম আলোর এ্যালবাম থেকে নেয়া । ছবিটি তুলেছেন সাজিদ হোসেন। আপনারা গত একবছর ধরে বেশ কিছু এক্সক্লোসিভ ছবি এবং ভিডিও দেখে আসছেন হরতাল সংক্রান্ত। কেউ পেট্রোল মারছে গাড়িতে- রাস্তায় কেউ ককটেল মারছে, কেউ গাড়িতে আগুন লাগিয়ে আস্তে অথবা জোরে হেঁটে যাচ্ছে।

কেউ অটো রিক্সটা মহিলা সহ উল্টে দিচ্ছে। এ সব ঘটনা গুলা যে সব সময় খুব দৃশ্যমান মোড়ে অথবা বড় রাস্তায় করছে এমন নয়। অস্বীকার করার কোন উপায় নাই কোন কোন সাংবাদিকের তরিৎ উপস্থিতিতি অথবা ভাগ্যে- তারা জীবনের কোননা কোন সময় এক্সক্লুসিভ কিছু ছবি অথবা ভিড়িও পেয়ে যেতে পারেন। এখন ছবি এবং ভিডিও করার প্রক্রিয়াটা একটু দেখবো। গাড়ি ভাঙ্গা এবং গাড়িতে আগুন দেয়াটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংগঠিত হয়।

কারণ অপরাধীর মধ্যে একটা তাড়াহুড়া থাকে। আমার মনে হয় না ৩০ সেকেন্ডের বেশী দরকার একটা গাড়িতে আগুনা ধরাতে। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে একজন ক্যামেরাম্যানের সেট হওয়াটা কি সম্ভব? আগে থেকে সেখানে উপস্থিত না থাকলে এবং ক্যামেরা রেড়ি না থাকলে। বলা হয়ে থাকে ল্যান্স খোলার সময়ের মধ্যেই একেকটা অপরাধ সংগঠিত হয়ে যায়। অথচ আমরা যে সব ভিডিও এবং ছবি পাই সেখানে আমাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে -সাংবাদিক বা ক্যামেরাম্যান কি আগে থেকেই জানেন যে অমুক গলিতে একটা মিছিল হবে অথবা গাড়ি ভাঙ্গা হবে? উপরের ছবিটি মতিঝিলের এবং খুব একটা বড় রাস্তায় নয় ।

সাংবাদিক আগে থেকেই ইনফর্ম না থাকলে এ ধরনের ছবি তুলা কতটা সম্ভব। ? আরো অবাক করা প্রশ্ন এই গাড়ি ভাঙ্গার ভিড়িও আছে কয়েকটা চ্যানেলের। জানা কথাই আমাদের চ্যানেল গুলার সব কটির অফিস কাওরান বাজারে। সেখান থেকে মতিঝিলে যাওয়া এবং অবস্থান নেয়াটা -সঠিক সময়ে ক্লিক করা সব কিছু নিয়ে আমার মনে বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েকজনের স্ট্যাটাস থেকে জানা যায় -এই ধরণের অকারেন্স গুলা নাকি এখন মিড়িয়াকে জানিয়েই করা হয় গোপনে এবং পরে তাদের বড় ভাইদের ফোন করে বলা হয় – বস ফানা ফানা করে দিয়েছি মতিঝিল আটাটার সংবাদে দেখবেন কাশেম টিভির নিউজে- নতুন কমিটি গঠনের সময় একটু মনে রাইখেন বস।

আর মোটর সাইকেলটা পুরান হয়ে গেছে পারলে আরেকটা মোটর সাইকেল- সাংবাদিকেরা হয়ত জানলেও পুলিশকে ইনফরম করে না – পুলিশ আসার খবর পেলে পিকেটারেরাতো অন্য গলি বেঁচে নেবে। তখন সাংবাদিক ভাইটির এক্সক্লোসিভ সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হবে না অথবা ইনফরমার ভাইদের বিশ্বাস ভঙ্গের কারণ হয়ে যাবেন তারা । পেশাগত স্কীলটা আর ফুটিয়ে তুলা সম্ভব হবে না। গাড়ি জ্বলছে জলুক -আমরাতো এক্সক্লোসিভ সংবাদটা খুব আগ্রহ ভরে দেখছি। দেখছি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠা গাড়িটি থেকে কেউ কেউ দৌড়ে নামছে , শিশু সহ কোন মহিলা বুকের ধনকে আগলে রেখে নেমে পড়ছে আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করছে এ যাত্রা বেঁচে গেলো বলে।

সেই দুঃসময়ে মায়ের অনুভুতি গুলাও আমরা সাথে সাথে দেখছি সাংবাদিক ভাইদের এক্সক্লোসিভ সংবাদ পরিবেশনায়। কত ভাগ্য আমাদের!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.