আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গন্তব্য অনিশ্চিত

সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের গন্তব্য অনিশ্চিত। শাসক আওয়ামী লীগ জোট সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে তাদের মনোনয়নপত্র বিক্রি। পার্লামেন্টারি বোর্ড ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমেছে।

২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনার মধ্য দিয়ে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষ হতে না হতেই সোমবার থেকে আবার ৬০ ঘণ্টার হরতালে নামছে বিরোধী দল। এরপর অবরোধসহ আরও কঠিন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা।

সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের মুখে সংলাপের কথা উচ্চারিত হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। দুই দলের নেতানেত্রীদের মধ্যে চলছে বাহাস। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছে পরস্পরের প্রতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে গণভবনে নৈশভোজ আলোচনায় যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তা বিরোধীদলীয় নেতা তৎক্ষণাৎ গ্রহণ না করায় এটি আদৌ আর হচ্ছে কি না, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সরকারি দলের যারা চাননি শেখ হাসিনা টেলিফোন করুন, খালেদা জিয়া এই আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ায় তাদের মুখে এখন বিজয়ের হাসি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই আমন্ত্রণ বহাল রয়েছে বলে দাবি করলেও অনেকেই চাচ্ছেন না যে এটি হোক। খালেদা জিয়াকে গণভবনের নৈশভোজে শেখ হাসিনার টেলিফোন প্রশ্নে যেসব শীর্ষ নেতা আপত্তি জানিয়েছিলেন তাদের একজন মনে করেন, ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে গণভবনে গেলে খালেদা জিয়া রাজনীতির দাবা খেলায় জিততেন। না যাওয়ায় শেখ হাসিনা জিতেছেন।

তারা চান না গণভবনের দরজা খালেদা জিয়ার জন্য আবার খুলে দেন শেখ হাসিনা। সরকার পক্ষ বলছে, এ বৈঠক করতে হলে এখন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে টেলিফোন করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তাদের নেত্রী কেন ফোন করবেন। টেলিফোনটি ফের প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে। অন্যদিকে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী দলকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় নিয়ে আসতে পশ্চিমাসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কূটনীতিকদের ঘাম ঝরানো বৈঠক চলছে।

ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে শেষ মুহূর্তেও ঢাকায় মাকির্ন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনা পর পর বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। অন্তরালে চলছে আরও অনেক বৈঠক। কিন্তু বিএনপি না এলে আওয়ামী লীগ সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনে যেতে চাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপি জোট এ নির্বাচন রুখে দাঁড়াতে মরিয়া। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচনে এসে বিরোধী দলের আসন নিতে এরশাদ রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।

তার দুই কূল যায় যায় অবস্থা। যদি একতরফা নির্বাচনে অংশ নেন, আর তা না হয় এবং পরে বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তখন তার প্রতিহিংসার ছোবল কতটা হবে, তা যেমন ভাবছেন, তেমনি আওয়ামী লীগ যদি এরতরফা নির্বাচন করেই ফেলে সেটিও ভাবছেন। এমনকি সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে, যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে আর তিনি যদি মহাজোটেই থাকেন তখন তার পরিণতি কী হবে, এটিও ভাবতে হচ্ছে। শুধু ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের অন্দরে-বাইরে নয়, আমলা, সিভিল সোসাইটি, ব্যবসায়ী সর্বত্রই রাজনীতির অনিশ্চিত গন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। অন্যদিকে, বিরোধী জোটের রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ১৮-দলীয় জোটের নেতারা তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কারণ এ মুহূর্তে সংলাপে বিএনপির আস্থাও নেই। তারা আগামী ৭ থেকে ১০ দিন হরতাল বা অবরোধের কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৭ নভেম্বরের পর নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে। এরপর টানা পাঁচ দিন হরতাল দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বিরোধী জোটের। বিএনপি জোট মনে করছে, সরকার একক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।

এ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আর তখনই অসহযোগ আন্দোলনের দিকে যাবেন তারা। সূত্র জানায়, ২৫ অক্টোবর থেকে অবরোধ দিয়ে গোটা দেশ অচল করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের। সারা দেশের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতিও ছিল সে রকম। কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় তা পরিবর্তন করে ৬০ ঘণ্টার টানা তিন দিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

তবে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি এবং তা সফল করতে দলের বিশ্বস্ত নেতাদের দিয়ে আন্দোলনের নতুন ছক তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও জোট নেতাদের বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সম্ভাবনা খুবই কম। এ ছাড়া সংলাপ হলেও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ক্ষমতাসীন দল একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই তা প্রতিহত করতে হবে।

রাজনৈতিক সমস্যা রাজপথেই সমাধান করতে হবে। এসব প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা সব সময় সংলাপ-সমঝোতায় বিশ্বাসী। কিন্তু সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে তারা সংলাপে আগ্রহী নয়। তাই তারা এ নিয়ে নানা নাটক তৈরি করছে। সংলাপ নিয়ে দেশি-বিদেশি কূটনীতিকরাও অনুরোধ জানিয়েছেন।

কিন্তু সরকার কাউকে তোয়াক্কা না করে একতরফা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের এ স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় নেই। যথাসময়েই নির্বাচন হবে এবং সব দল এতে অংশ নেবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংলাপের পক্ষে।

আজকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (গতকাল) পরীক্ষা চলাকালে হরতাল না দিতে বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও তাকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপি চাইলে সংলাপে আসতে পারে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।