আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবারও বাংলাওয়াশ

রাজনৈতিক অস্থিরতায় উৎকণ্ঠিত পুরো জাতি। আজ থেকে আবারও ৬০ ঘণ্টা হরতাল। দেশের পরিস্থিতি কখন কোন দিকে মোড় নেয় এ নিয়ে চিন্তার শেষ নেই দেশবাসীর। এমন জটিল পরিস্থিতিতে এক পশলা বৃষ্টির পরশ বুলিয়ে দিলেন ক্রিকেটাররা। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে দীপাবলির আলোয় রাঙিয়ে দিলেন মুশফিকুর রহিমরা।

আবারও নিউজিল্যান্ডকে 'বাংলাওয়াশ' করল বাংলাদেশ। বছর তিনেক আগে একইভাবে টাইগাররা আরও একবার উৎসবের রঙে রাঙিয়েছিল পুরো দেশকে। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে গতকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে ৪ উইকেটে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারিয়েছে টাইগাররা। আগামী ৬ নভেম্বর সিরিজের একমাত্র টি-২০ ম্যাচ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে।

প্রথম টেস্টের পর ঈদুল আজহার জন্য তিন দিনের বিরতি ছিল সিরিজে।

চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে অসাধারণ ক্রিকেট খেলে ড্র করেছিল টাইগাররা। মুশফিকদের লড়াকু মেজাজ দেখে ভড়কে গিয়েছিলেন কিউই ক্রিকেটপ্রেমীরা। টাইগারদের লড়াইয়ের মানসিকতায় ভীত নিউজিল্যান্ডের হেরাল্ড পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল তখন। প্রতিবেদনের মূল কথা ছিল, ঈদে গরু-ছাগলই যেন কোরবানি হয়। নিউজিল্যান্ডকে যেন কোরবানি হতে না হয়।

টেস্ট সিরিজে কোনোরকমে মান বেঁচেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসদের। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে? তাদের ধারণা অনুযায়ী কোরবানিই হতে হলো নিউজিল্যান্ডকে! তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তিনটিতেই হেরেছে সফরকারী ব্ল্যাক ক্যাপসরা। ২৭ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ২৮৩টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় ৮০টি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ৩০০ বা ততোধিক রান তাড়া করে ম্যাচ জিতল টাইগাররা।

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে গতকাল নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া ৩০৮ রানের টার্গেট টপকে যায় মুশফিক বাহিনী চার বল হাতে রেখেই। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের ৩১২ রান টপকেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ১৯৪ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেছিলেন ক্রিস কভেন্ট্রি। টাইগারদের অবিশ্বাস্য জয় পেতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল ১৫৪ রানের ইনিংস খেলে। তলপেটের ব্যথায় কাল মাঠে নামেননি এই বাঁহাতি ওপেনার।

অবশ্য তিন শতাধিক রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার আরও একটি রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ নয়, বৃষ্টিস্নাত। এ বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি জিতেছিল টাইগাররা ডাক ওয়ার্থ লুইস (ডিএল) পদ্ধতিতে। ৩০২ রান তাড়া করে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিলেন মুশফিকরা। ১৮৭ রানের লক্ষ্য ছুঁয়েছিলেন ৭ উইকেট হারিয়ে।

এ পর্যন্ত ১৬টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে ও আইসিসির সহযোগী দেশসহ হোয়াইটওয়াশ বা ধবলধোলাই করেছে নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কেনিয়া, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে। সব মিলিয়ে সাতবার। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ড ও কেনিয়াকে দুইবার করে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে ২০১০ সালে প্রথমবার বাংলাওয়াশ করেছিল টাইগাররা।

গত তিন বছরে দলটির বিপক্ষে টানা সাত ম্যাচ জিতেছেন মুশফিকরা। সব মিলিয়ে ২৪ ম্যাচে আট জয়। ফতুল্লার উইকেটে পরে ব্যাটিং করা দলের সাফল্য নেই বললেই চলে। চলতি মৌসুমে প্রথমে ব্যাট করাদের গড় রান ১৯৭ এবং পরে ব্যাট করা দলগুলোর গড় ১৫৪। এমন সমীকরণ জেনেও টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেওয়ায় সমালোচিত হয়েছিলেন মুশফিক।

বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক রস টেলর যখন ৯৩ বলে ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এবং নিউজিল্যান্ড যখন ৫ উইকেটে ৩০৭ রান করে, তখন সমালোচনার তীর্যক বাণে প্রশ্নবিদ্ধ হতেই হয়েছে মুশফিককে। এ মাঠে আগে যে চারটি ওয়ানডে হয়েছে, এর মধ্যে সর্বোচ্চ রান ২৫০, অস্ট্রেলিয়ার। লড়াইয়ের জন্য ৩০৭ রান একটু বেশিই ছিল! এর পরও ক্রমশ 'টিম বাংলাদেশ' হয়ে ওঠা মুশফিকরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে থেকে জিতেই ছেড়েছেন মাঠ। প্রথমে ব্যাট করে উইকেটের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ফতুল্লায় সর্বোচ্চ রান করে নিউজিল্যান্ড। সফরকারীদের এ স্কোর গড়তে সাহায্য করে টেলর ও কলিন মুনরোর চতুর্থ উইকেট জুটির ১৩০ রান।

মুনরো সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই ৮৫ রান করেন মাত্র ৭৭ বলে। টেলর ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে অপরাজিত থাকেন ১০৭ রানে। কিন্তু একেবারে নিশ্ছিদ্র ছিল না ইনিংসটি। ব্যক্তিগত ১২ রানে রুবেল হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান সাবেক কিউই অধিনায়ক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি।

৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি এবং ৯১ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই শেষ পাঁচ ওভারে নিউজিল্যান্ড স্কোরবোর্ডে জমা করে ৭৩। টার্গেট ৩০৮ রান। শামসুর রহমান শুভর সঙ্গে সিরিজে প্রথমবারের মতো ওপেন করতে নামেন জিয়াউর রহমান। দুজনই আগ্রাসী ব্যাটিং করে ৭.৪ ওভারে ৬১ রানের শক্ত ভিত গড়ে দেন দলকে, যার ওপর দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন সতীর্থরা।

জিয়া ২০ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরার পর ম্যাচসেরা শামসুর রহমান শুভর সঙ্গে জুটি বাঁধেন তরুণ মমিনুল হক সৌরভ। দুজন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৬৬ বলে ৬৫। দলের যখন ১২৯ রান, ঠিক এ সময় বিদায় নেন অধিনায়ক মুশফিক। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে শামসুর ও নাঈম ইসলাম বড় ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে খেলেন ১৪.৪ ওভার। এখানে যুক্ত হয় আরও ৭৫ রান।

দলীয় ২০৪ রানে অযথা উইকেটের বাইরের বলকে চালাতে গিয়ে নার্ভাস নাইনটিজের শিকার হন শামসুর। মাত্র চার রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা ২৫ বছর বয়সী এ ওপেনার।

১০৭ বল মোকাবিলা করে ৯৬ রান করেন ৭ চার ও ৪ ছক্কায়। শামসুরসহ এযাবৎ ১০ টাইগার ক্রিকেটার শিকার হলেন নার্ভাস নাইনটিজের। শামসুরের বিদায়ের পর নাঈম ও নাসির হোসেন যোগ করেন ৫০ রান।

এই জুটিই দলকে জয়ের রেলপথে তুলে আনে। নাঈম সিরিজে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করে রান আউট হন ব্যক্তিগত ৬৩ রানে। তবে শেষ পর্যন্ত ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন নাসির। ২৮৯ রানে ষষ্ঠ উইকেটের বিদায়ের পর নাসির ও সোহাগ গাজী মাত্র ১৩ বলে ২০ রান তুলে 'বাংলাওয়াশ' নিশ্চিত করেন নিউজিল্যান্ডের। শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৩ রান দরকার ছিল স্বাগতিকদের।

প্রথম বল মিস করলেও দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দল ও দেশকে জয়োৎসবে মাতিয়ে তোলেন সোহাগ। ব্ল্যাক ক্যাপসদের টানা দ্বিতীয়বার বাংলাওয়াশ করার আনন্দে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের পতাকা হাতে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন ক্রিকেটাররা। একই সময় সোৎসাহে 'বাংলাদেশ' 'বাংলাদেশ' বলে চিৎকার করছিলেন উৎসবে মেতে থাকা ফতুল্লার ১২ হাজার দর্শক।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.