আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে?

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। কয়েকদিন পর পর সংঘাত, সংঘর্ষ আর আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর মুখ থুবড়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। উচ্চ শিক্ষার আধার প্রায় সবকয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবাজ ভিসিদের নিয়োগ দেওয়ায় তারা দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ আর নিয়োগবাণিজ্যে মেতে উঠে। এসব দুর্নীতি, দলীয়করণ আর নিয়োগবাণিজ্য যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন দলবাজ ভিসিদের বিরুদ্ধে জেগে উঠে সচেতন ছাত্রসমাজ। ভিসিপন্থী ও ভিসিবিরোধী- দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে শিক্ষকবৃন্দ।

ফলশ্রুতিতে ভিসি-বিরোধী ও ভিসি-সমর্থনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় শিক্ষাব্যবস্থায়। এই অচলাবস্থায় নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে প্রশাসনিক মদদে পুষ্ট সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন, কখনো শিক্ষকদেরকে লাঞ্চিত করে, শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে আবার কখনো বা শিক্ষকদের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বত্র। দিনের পর দিন বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা, সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় বেশকিছু মূল্যবান সময়। সরকার পরিবর্তন হলেও এই অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। একসময় এদেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ছিল।

এই বিদ্যাপীঠ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবিরা। অথচ এই শীর্ষ বিদ্যাপীঠটির স্থানও বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা না হয় নাই বললাম। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বসে আমাদের শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণ করতেন আর সেই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উঠে আসত দেশের খ্যতিমান সাহিত্যিক, কথাশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আর এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসে শিক্ষকরা রাজনীতি চর্চায় ব্যস্ত সময় কাটান যার ফলে এখন আর আগের মত বরেন্য শিল্পী সাহিত্যিকদের আমরা খুঁজে পাইনা।

শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ আর বিদ্যালয়কে বলা হয় মানুষ গড়ার আঙ্গিনা। সেই মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় যদি জাতির ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে দলবাজ ভিসি আর শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় তাহলে জাতি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে কিভাবে? আমার মনে হয়, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে জাতির কর্ণধারদের এই বিষয়টা গভীরভাবে ভাবা উচিত যে মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় ভিসিদের নিয়োগ দিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় এর ভবিষ্যত পরিণতি কি হতে পারে? কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মান? অতিশীঘ্রই এ ব্যাপারে আমাদের রাজনীতিবিদদের একটা মতৈক্যে পৌঁছা উচিত যে, দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাই অন্ততঃ মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষকদের দলবাজিও বন্ধ হবে এবং তারা ক্লাস পরীক্ষার দিকে মনোযোগী হবে। তাছাড়া এতে শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ ও নিয়োগবাণিজ্যও বন্ধ হবে এবং প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হবে। এতে করে শিক্ষার মানও উন্নত হবে।

আমরা যদি আমাদের দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি, দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে না চায় তাহলে অতিসত্ত্বর দলমতের উর্ধ্বে উঠে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন অধঃপতনের হাত থেকে অতিসত্ত্বর রক্ষা করা সম্ভব না হলে সেদিনও হয়তো আর বেশি দূরে নয় যেদিন ছাত্ররা পাশ করার জন্য পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখারও প্রয়োজনবোধ করবেনা, পাশ করার জন্য তখন তারা রাজনীতিবিদদের পিছনে ধর্ণা দেওয়াটাকেই অগ্রাধিকার দেবে। এখনও যার কিছু নজির দেখা যায় কিছুদিন আগে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটউট বন্ধের ঘটনা থেকে। সেখানে ফেল করা দুই ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায় যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানটি এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। এমন ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো দুএকটি প্রতিষ্ঠানে ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তবে এখনও তা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন দলবাজি ও নৈরাজ্য চলতে থাকলে একসময় এটাই হয়তো অবধারিত নিয়মে পরিণত হতে পারে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও এমনটা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না। তাই জাতির কর্ণধারদের আমরা আহবান জানাবো অবিলম্বে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আশু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করুন যাতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা কোন দলীয় বিবেচনার সুযোগ না থাকে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.