আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রক্তাক্ত দরবার, রক্তাক্তবিডিআর

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। কেবল হত্যাই নয়, অনেকের লাশ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল। গণকবর, লাশ ম্যানহোল ও নর্দমায়ও ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনা ঘটেছিল। একাত্তরের পর দেশের ইতিহাসে এরচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর কখনো ঘটেনি।

ঐদিন সকালে বিডিআরের বাত্সরিক দরবার শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হয় বিদ্রোহী জওয়ানদের তাণ্ডব। আর সেই তান্ডব পরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
কিভাবে শুরু হয়েছিল সেই ঘটনা? এর বর্ণনা উঠে এসেছে সেনা তদন্ত আদালতের (কোর্ট অব ইনকোয়ারি) প্রতিবেদনে। ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনীর তত্কালীন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত আদালত সে বছরের ১১ মে প্রতিবেদন জমা দেন সেনাপ্রধানের কাছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সেদিনের দরবার হলের ঘটনা সংক্ষেপ ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছিল।


সেই প্রতিবেদনটি আবারও হুবহু প্রকাশ করা হলো:

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি: দরবার শুরুর নির্ধারিত সময় সকাল নয়টা। এর আগেই সবাই এসে পৌঁছায়। মঞ্চের পশ্চিমে হাবিলদার ও নিম্ন পদবির সব বিডিআর সদস্যরা মেঝেতে ম্যাটের ওপরে বসে। তাদের উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে দুই সারিতে চেয়ারে বসে কর্মকর্তারা (সেনা ও বিভাগীয় এবং বিডিআর হাসপাতালের বেসামরিক ডাক্তার), তাদের পেছনে তৃতীয় সারিতে বিভিন্ন ইউনিট থেকে পুরস্কার গ্রহণের জন্য আসা কর্মকর্তা, জেসিও (জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার) ও অন্যান্য পদবির সৈনিকেরা এবং মেঝেতে সৈনিকদের দক্ষিণ পাশে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বিভাবে জেসিও ও সমপর্যায়ের সদস্যরা। মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও উপমহাপরিচালক (ডিডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ বারীর বসার ব্যবস্থা করা হয় মঞ্চে।

দরবার শুরু
সকাল নয়টা পাঁচ মিনিট। ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল দরবার হলে প্রবেশ করেন। তাঁর কাছে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিবুল হক প্যারেড হস্তান্তর করেন। এরপর ডিজি ও ডিডিজি মঞ্চে নির্দিষ্ট আসনে বসেন। বিডিআরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম সিদ্দিকুর রহমানের (যিনি ২৫ ফেব্রুয়ারির আট-নয় দিন পর হূদরোগে মারা যান) কোরআন তিলাওয়াতের পর দরবারে সবাইকে সম্ভাষণ জানিয়ে বক্তৃতা করেন মেজর জেনারেল শাকিল।

তিনি আগের দিনের প্যারেডের প্রশংসা করেন। এরপর তিনি ‘অপারেশন ডালভাত’ কার্যক্রম প্রসঙ্গ তোলেন এবং ডালভাতের ডিএ (দৈনিক ভাতা) সৈনিকেরা ঠিকভাবে পেয়েছে কি না, তা জানতে চান। কিন্তু সৈনিকদের জবাব ছিল ক্ষীণ। দরবারে সাধারণত সৈনিকদের যে ধরনের তাত্ক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত ইতিবাচক প্রত্যুত্তর থাকে, এ ক্ষেত্রে তেমনটা ছিল না। ডিজি ডালভাতের কিছু হিসাব, সৈনিকদের ডিএ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে আপনাদের শৃঙ্খলা ভালো ছিল না। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ’

দুই বিদ্রোহীর প্রবেশ
আনুমানিক সকাল সাড়ে নয়টা, তখনো ডিজি বক্তৃতা করছিলেন। এমন সময় এক সিপাহি (মাঈন, ১৩ ব্যাটালিয়ন) আকস্মিকভাবে মঞ্চে উঠেই ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে হট্টগোল শুরু হয়।

ওই সময় ডিজি মাথা ঘুরিয়ে তাকালে ওই সৈনিক প্রায় অজ্ঞানের মতো হয়ে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ডিডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারী ও কর্নেল আনিস ওই সৈনিককে ধরে ফেলেন। প্রায় একই সময় আরেক সিপাহি (কাজল, ৪৪ ব্যাটালিয়ন) একই দিক থেকে এসে মঞ্চে উঠলেও, তিনি কোথাও না থেমে মঞ্চের দক্ষিণ পাশের জানালার কাচ ভেঙে বাইরে চলে যান। তখন একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। দরবার হলে প্রায় তিন হাজার সৈনিক এবং জেসিও ছিল, মুহূর্তের মধ্যে সবাই যে যেভাবে পেরেছে, জানালা বা দরজা দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে।

অনেক কর্মকর্তাও ওই সময় বেরিয়ে যান। ডিজি, ডিডিজি, সব সেক্টর কমান্ডার, সব পরিচালক, তিনজন মহিলা ডাক্তার, সাত-আটজন লে. কর্নেল, ১৫-১৬ জন মেজর, দুজন ক্যাপ্টেন, কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর, আরপি জেসিও, এনএসএ, ডিএডি ফসিউদ্দীন, বিডিআর মসজিদের দুই ইমাম, তিন-চারজন সিপাহিসহ ৪৫-৫০ জন দরবার হলে থেকে যান। ১৫-২০ মিনিট পর দরবার হলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণ থেকে গুলির আওয়াজ, একই সঙ্গে ‘ধর, ধর’ শব্দ শোনা যায়। ওই সময় দরবার হলের ভেতর সামনের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে বের হয়ে যায়।
এদিকে সিপাহি মাঈনকে কয়েকজন কর্মকর্তা তাঁদের জুতার ফিতা দিয়ে বেঁধে ফেলেন, তিনি মঞ্চের ওপর অজ্ঞানের মতো পড়ে থাকেন।

ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল কর্মকর্তাদের বলেন, সবাইকে যেন আবার দরবার হলের ভেতর ডেকে আনা হয়, দরবার আবার শুরু হবে।

বিদ্রোহীরা দরবার হল ঘিরে ফেলে
নয়টা ৪০ মিনিটের দিকে দরবার হলের বাইরে থেকে কয়েকটি গুলির শব্দ হয়। তখন ডিজি শাকিল বলেন, ‘কে ফায়ার ওপেন করেছে? তাদের ফায়ার করতে নিষেধ করো। সিচুয়েশন ট্যাকল হয়েছে। ’
এর মধ্যে দেখা গেল লাল-সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে নাক-মুখ বাঁধা বিডিআর সৈনিকেরা দরবার হল ঘিরে কিছুক্ষণ পর পর গুলি করছে।

তখন দরবার হলের জানালা খুলে কর্নেল গুলজার, কর্নেল এমদাদ, লে. কর্নেল এনশাদ এবং লে. কর্নেল কামরুজ্জামান চিত্কার করে বলেন, ‘তোমরা ফায়ার কোরো না, তোমরা ফেরত যাও। ’ এসময় দেখা যায়, অনেক সৈনিক দৌড়ে এসে এই সব সৈনিককে গুলি সরবরাহ করছে। একটি পিকআপ এ সময় (সম্ভবত সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নের) রাস্তা দিয়ে দরবার হলে পাশের মাঠে এসে দাঁড়ায়। ততক্ষণে কাচ ভেঙে গুলি দরবার হলের ভেতর ঢুকছিল। কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে কেউ দেয়াল ঘেঁষে, কেউ পিলারের আড়ালে আশ্রয় নেন।

দরবার হলের দিকে গুলি হচ্ছে দেখে মেজর মো. মাকসুদুল হক ক্রলিং করে দরবার হলের পূর্ব দিকে পোর্চের (গাড়ি থামার বারান্দা) নিচে পৌঁছে যান। সেখানে ৮-১০ জন সৈনিক ও ধর্মীয় শিক্ষক গুলি থেকে বাঁচতে শুয়ে ছিলেন। সেখান থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে, অর্থাত্ ৫ নম্বর ফটকের দিক থেকে মাথায় লাল কাপড় বাঁধা একজন সিপাহি পোর্চের দিকে গুলি করতে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষকের সঙ্গে শুয়ে থাকা সৈনিকদের একজন তখন ‘আমরা সিপাহি’ বলে চিত্কার করে। জবাবে গুলি বর্ষণকারী চিত্কার করে বলে, ‘সিপাহিরা, সব মাথার ওপর হাত তুলে দৌড়ে এলাকা ত্যাগ করো।

’ তখন এসব সিপাহিদের সঙ্গে মেজর মাকসুদও মাথার ওপর হাত তুলে দৌড় দেন এবং সামনের আবাসিক কোয়ার্টারের পেছনের দেয়াল টপকে বাইরে চলে যান।
এ সময় ডিজি শাকিল কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর (এসএম) নুরুল ইসলামকে বলেন, ‘আপনি তো কোনো দিন সৈনিকদের এ রকম ক্ষোভ আছে একবারও বলেননি!’ তখন কেউ একজন ডিজিকে বললেন, ‘স্যার, গাড়ি লাগানো আছে, আপনি চলে যান। ’ ডিজি বলেন, ‘আমি কোথায় যাব এবং কেন যাব?’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঢাকা সেক্টর কমান্ডার এবং ঢাকার অধিনায়কদের উদ্দেশে বললেন, ‘ইউ অল রাশ টু দ্য ইউনিট অ্যান্ড গেট ব্যাক ইউর পিপল এবং সবার সঙ্গে কথা বলো অ্যান্ড ট্রাই টু মটিভেট দেম। ’ এরপর ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও অধিনায়কেরা দরবার হল থেকে নিজ নিজ ইউনিটের উদ্দেশে রওনা হন।
ডিজি মাইকে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার ও ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক এবং সুবেদার মেজরদের নিজ নিজ ব্যাটালিয়নে কোতের (অস্ত্রাগার) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করার নির্দেশ দেন।

এ সময় ঢাকার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মুজিব, ৩৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এনায়েত ও ১৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল বদরুল নিজ নিজ ইউনিটের দিকে রওনা দেন। এর মধ্যে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা চারদিক থেকে দরবার হলের দিকে গুলি করতে থাকে। তখন দরবার হল থেকে কিছু কর্মকর্তা ও বিডিআর সদস্য বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে বের হতে থাকেন।
এরপর দরবার হলে ডিজি, ডিডিজি, সব সেক্টর কমান্ডার, পরিচালক, সদর দপ্তর ও বিডিআর হাসপাতালের কর্মকর্তা এবং ডালভাত কর্মসূচি ও প্যারেড উপলক্ষে সংযুক্ত কর্মকর্তারা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

সাহায্য চেয়ে একের পর এক ফোন
তখন ডিজি, কর্নেল গুলজার, কর্নেল এমদাদসহ দরবার হলের ভেতর থাকা প্রায় সব কর্মকর্তা মোবাইলে ফোনে কথা বলছিলেন।

নয়টা ৪৫ মিনিটের দিকে কর্নেল গুলজার র্যাবের ডিজিকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্যার, আধঘণ্টার মধ্যে ফোর্স পাঠান, নইলে আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে, আমরা নিরস্ত্র। ’ মেজর জায়েদী মোবাইল ফোনে মেজর জেনারেল তারেককে (যিনি আগে মেজর জায়েদীর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন) ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন এবং সাহায্য চান। এরপর জায়েদী ফোনটি মেজর জেনারেল শাকিলের হাতে দেন মেজর জেনারেল তারেকের সঙ্গে কথা বলার জন্য।

হলের ভেতর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে
গোলাগুলি বাড়তে থাকলে কর্মকর্তারা পর্দার পেছনে মঞ্চের দুই পাশে আশ্রয় নেন। একপাশে দক্ষিণ দিকে তিন মহিলা কর্মকর্তা এবং লে. কর্নেল লুত্ফর রহমান খান, লে. কর্নেল রবি, লে. কর্নেল বদরুল হুদা, মেজর জাহিদসহ আরও কয়েকজন; অন্যপাশে ডিজি, ডিডিজি, লে. কর্নেল কামরুজ্জামান ও আরও কয়েকজন ছিলেন।

মেজর জায়েদী কিছুক্ষণ উত্তর পাশে, পরে দক্ষিণ পাশে অবস্থান করেন। মঞ্চের পর্দার ভেতরে যাওয়ার সময় কর্নেল আনিস ও লে. কর্নেল কামরুজ্জামান বেঁধে রাখা সৈনিক মাঈনকে টেনে পর্দার ভেতরে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া অনেকে হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের টয়লেটের দিকে বিভিন্ন আড়ালে আশ্রয় নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কর্নেল রেজা, কর্নেল আফতাব, কর্নেল আরেফিন, কর্নেল এমদাদ, লে. কর্নেল সাজ্জাদ, মেজর ইকবাল, মেজর মনির, মেজর মাকসুমসহ আরও অনেকে।
মেজর সালেহ, মেজর জায়েদী, কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর, নায়েব সুবেদার অ্যাডজুট্যান্ট ও কর্নেল আনিস (ডিওটি) পর পর মাইকে কথা বলে উত্তেজিত সৈনিকদের শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন।

তাঁরা বলছিলেন, ‘তোমাদের সব দাবি মানা হবে, তোমরা ফায়ার বন্ধ করো। ’

প্রধানমন্ত্রীকে ফোন
তদন্ত আদালতের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকাল নয়টা ৪৮ মিনিটের দিকে ডিজি শাকিল আহমেদ ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। সবাই যার যার মোবাইল ফোনে বাইরে যোগাযোগ করছিলেন। তখন জেনারেল শাকিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে সবাই চুপ করে থাকেন। শাকিল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একদল উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক আপনার সরকারকে হেয় করার জন্য বিদ্রোহ করেছে।

আমি ওদের সাথে নাই। আমরা আপনার সাথে আছি। আপনি আমাদেরকে সাহায্য পাঠান। আপনি আমাদেরকে বাঁচান। ’ এর পরই ডিজি অন্য কাউকে (সম্ভবত তাঁর স্ত্রী) ফোনে বলেন, ‘ভয় পেয়ো না।

বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে রাখো। ’

সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের প্রতীক্ষায়
তদন্ত আদালততে কামরুজ্জামান জানান, এর আগে ডিজি কথা বলেছেন সেনাপ্রধান ও র্যাবের ডিজির সঙ্গে। সবাই জানিয়েছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনী ও র্যাব চলে আসবে। লে. কর্নেল ইয়াসমীনও লক্ষ করেন, তখন ডিজি বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল ফোনে সাহায্যের জন্য সেনাবাহিনী পাঠাতে অনুরোধ করছিলেন।
ওই সময় লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামানের মোবাইল সেটে ফোন করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়া (পরিচালক, মিলিটারি অপারেশন) জানতে চান, ভেতরে কী অবস্থা।

উত্তরে অবস্থা খারাপ শুনে তিনি বলেন, ‘চিন্তা কোরো না, ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড থেকে দুইটা ব্যাটালিয়ন মুভ করেছে। ’ তখন পাশ থেকে ডিওটি কর্নেল আনিস ফোন নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।

কর্মকর্তাদের মেসে হানা ও অস্ত্রাগার লুট
তখন দরবার হলে আটকে পড়া আরপি (রেজিমেন্টাল পুলিশ) জেসিও আস্তে আস্তে ওয়াকিটকি শুনছিলেন। লে. কর্নেল কামরুজ্জামান ওয়াকিটকির সাউন্ড বাড়িয়ে দিতে বললে তাতে শোনা যায়, অপর পাশ থেকে বলা হচ্ছে, ‘অফিসার মেসে অফিসারদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিডিআরের সব গেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা এবং কোত ভেঙে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যাচ্ছে।

’ এর মধ্যে দেখা যায় এডিসি ক্যাপ্টেন মাজহার কেঁদে কেঁদে কারও সঙ্গে মোবাইলে ফোনে কথা বলছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করাতে জবাব দিলেন, ‘রাইফেল ভবনে বিদ্রোহী বিডিআররা ঢুকেছে। হাউস গার্ড অনেক আগে চলে গেছে। ম্যাডাম বলছেন, দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। ’ ডিজি শাকিল এ কথা শুনে মাজহারকে বললেন, ‘ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে থাকতে বলো।


সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ দিকের টয়লেটে লুকিয়ে থাকা মেজর মাকসুম স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারেন যে বিদ্রোহীরা তাঁর স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেজর মাকসুমের পাশে বসা মেজর মনিরও তা জানতে পারেন।

বিদ্রোহীরা দরবার হলের ভেতরে
গুলির শব্দ তখন আরও কাছে মনে হচ্ছিল। তখন মঞ্চের সব আলো নিভিয়ে ফেলতে বলেন ডিজি শাকিল। কর্নেল আনিস একটি লম্বা কাঠ দিয়ে সব বাল্ব ভেঙে ফেলেন।

ডিজি মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘তোমরা গুলি থামাও। তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। ’ এ সময় একজন সৈনিক দৌড়ে পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওর হাতে বা কাঁধে গুলি লেগেছিল।

ভেতরে থাকা একজন ধর্মীয় শিক্ষক তাঁর পাগড়ির কাপড় দিয়ে ওই সৈনিকের ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এ সময় কিছুসংখ্যক বিডিআর সদস্য (সিপাহি সেলিম, কাজল, হাবিব, আতাউর, ওবায়েদসহ আরও কয়েকজন) গুলি করতে করতে দরবার হলে প্রবেশ করেন এবং পর্দার পেছনে লুকিয়ে থাকা কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসতে বলেন। কর্মকর্তারা তখন কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজরকে (এসএম) বলেন, ‘আপনি ওদের থামতে বলেন। ’ সুবেদার মেজর পর্দার বাইরে গিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। সঙ্গে মেজর জায়েদীও যান।

দুজনকেই সৈনিকেরা ধরে ফেলে।

আরও পড়ুন... <a href="http://www.prothom-alo.com/bangl ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।