আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৯ : বাবলা

যাদের জন্ম কমপক্ষে আশির দশকের শুরুতে বা তারও আগে এবং গাঁয়ে--তাঁরা নিশ্চয় ‘ক্যাচর ম্যাচর’ শব্দের সাথে পরিচিত। এই শব্দটার উৎস দুটো বস্তুতে। একটা গরুর গাড়ির চাকায় আরেকটা ভাঁড়ার ঘরে রাজত্ব করা ঢেঁকিতে। পাঠক বলুন তো, ঢেঁকি কিংবা গরুর গাড়ির চাকা কী দিয়ে তৈরি?
উত্তর একটাই, বাবলা কাঠ। ঢেঁকি প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।

কিন্তু গরুর গাড়ি আজও আছে অজপাড়াগাঁয়ে। আজও গরুর চাকা তৈরি হয় সেই বাবলা কাঠ দিয়েই।
বাবলা বহুবর্ষজীবী বুনো বৃক্ষ। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এদের দেখা যায়। ফসলের ক্ষেতের আইলে, বাঁছড়া জমিতে, নদী বা পুকুর পাড়ে বাবলা আজও চোখে পড়ে।

তবে নব্বইয়ের দশকেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে পরিমাণ বাবলা গাছ চোখে পড়ত, এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর মূল কারণ বাবলা কাঠ দিয়ে ফার্নিচার হয় না। বাবলা কাঠ অত্যন্ত শক্ত তাই ফার্নিচারের কাঠের জন্য যে পরিমাণ ফিনিশিং হওয়া দরকার সেটা বাবলা কাঠে হয় না। তবে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বাবলার জুড়ি নেই। বাবলা এতোটাই শক্ত, এই কাঠ দেখলে আমার রবিনসন ক্রুসো’য় বর্ণীত লোহাকাঠের কথা মনে আসে সবার আগে।


বাবলা গাছের কাণ্ড ছাই রংয়ের। রংয়ের পার্থক্যটুকু না থাকলে নিমের কাণ্ডের সাথে এর তেমন অমিল নেই। বাবলা কাঠের কাণ্ড শক্ত বলেই হয়তো সোজা হয় না।
অধিকাংশ গাছের কাণ্ডই বাঁকা-ট্যারা। বয়স্ক বাবলা গাছ ঠিক কতটা লম্বা হয়, এটা আমি নিশ্চয়ই করে বলতে পারব না।

তবে আমি যেগুলো দেখেছি তার মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতার গাছগুলো ৩০-৪০ ফুট তো হবেই। আমার দেখা বড় গাছগুলো কাণ্ডের বেড় ২-৩ ফুট পর্যন্ত হবে।
বাবলা গাছে ঘন ডালপালা থাকে। থাকে প্রচুর কাঁটা। বাবলার কাঁটা তার সূচাগ্র অগ্রভাগের জন্য বিখ্যাত।

কাঁটা বিষাক্ত, শরীরে ঢুকলে প্রচণ্ড যন্ত্রণাও ব্যথা হয়। সাধারণত বড় বাবলা গাছে কাঁটা হয় তুলনামূলক ছোট।
কিন্তু চারাগাছের কাঁটা অনেক বড় আর অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। মূলত কাঁটাই বাবলাকে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে সাহায্য করে। কাটার রং সাদা।

দুর্ভাগ্য ছবি ওঠানোর সময় কাঁটার কথা মনেই ছিল না। তাই পাঠকদের ভয়ংকর অস্ত্রটা দেখাতে পারলাম না।
বাবলার পাতা সবুজ রঙের। খুব ছোট ছোট, লম্বাটে। পাতা চিরল।

একটা ডাঁটায় ২০-৩০টা পাতা থাকে। পাতা দেখতে একেবারে তেঁতুল পাতার মত। কিন্তু তেঁতুল পাতার মত টক স্বাদ নেই। পাতার বড় জোর আধা ইঞ্চি লম্বা হতে পারে। পাতার প্রস্থ ০.১৫-০.২ ইঞ্চি হতে পারে।


বর্ষাকালের শেষ বিকেলে যদি বৃষ্টি নামে, তবে নদীর পাড়ে বা জংলা মাঠে একটু ঘুরতে বেরুবেন। অভাবনীয় এক দৃশ্য চোখে পড়বে তখন। বাবলা গাছের মাথায় যেন দিনের আলোয় জ্বলছে হাজার হাজার জোনাকি। হ্যাঁ বাবলা ফুলকে দিনের জোনাকিই বলা চলে, তবে মেয়েদের নাকফুলের সাথে তুলনা করলেও বোধকরি অত্যুক্তি হবে না।
ছবিঃ লোনলি ট্রাভেল অসাধারণ সুন্দর এই মেঠো ফুলগুলি আর দশটা ফুলের চেয়ে ব্যতিক্রম।

এই ফুলের পাঁপড়ি হয় না। তার বদলে ক্যাকটাস ফুলের মত শত শত তন্তু দিয়ে সাজানো এই ফুলের তন্বী দেহ। ফুলের আকার পুরোপুরি গোল, অনেকটা মার্বেলের মত। ফুলের রং সোনালি হলুদ। মঞ্জরি এক পুষ্পক।

একটা বোঁটায় একটা মাত্র ফুল থাকে। বাবলা ডালের প্রতিটা শীর্ষপ্রান্তে, প্রতিটা কাঁটার গোড়ায় দুটো করে ফুল ফোটে। সাধারণত বর্ষাকালের শেষ দিকে বাবলা গাছে ফুল আসে। বাবলা ফল দেখতে অনেকটা তেঁতুলের মত। তবে তেঁতুলের মত অতটা স্বাস্থ্যবান হয় না বাবলার ফল।

কারণ তেঁতুলের ফল বিঁচি যতটা পুরু, বাবলার বিঁচি তার দশভাগের এক ভাগও নয়। এবার যখন বাড়িতে গেছি, তখন বাবলা গাছে ফল ধরার সময় নয়। তাই বাবলার ফল বা বিঁচি কোনটারি ছবি দেখাতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
তা ছাড়া তেঁতুলের ফলের ভেতর শাঁস থাকে, বাবলা ফলে শাঁস নেই বললেই চলে। বাবলা ফল ৩-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়।

চওড়া আধা ইঞ্চি। কাঁচা ফলের রং গাঢ় সবুজ। পাঁক ফল কালচে-ধূসর। শরৎ কালে বাবলা গাছে ফল আসে। শীতকালে ফল পাকতে শুরু করে।

বাবলার ফলের ভেতর বাদামী রংয়ের ৫-৬টা দ্বিবীজপত্রি বিঁচি থাকে। বিঁচি চ্যাপ্টা। আধা ইঞ্চি লম্বা হয়। পাকা বিঁচির রং বাদামী। সাধারণত বর্ষাকালে বিঁচি থেকে চারা গজায়।

বৈজ্ঞানিক নাম: Acacia nilotica.

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.