আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পানির জন্য প্রাণান্ত এবং ওয়াসার অসার দাবি

আবদুল কুদ্দুস থাকেন রামকৃষ্ণ মিশন রোডের পেয়াদা পাড়ায়। তাঁর বাসায় ওয়াসার যে পানি আসে, তা খাওয়ার অনুপযোগী। গতকাল রোববার সকালে তিনি পাঁচটি জারিকেন নিয়ে বের হয়েছেন খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে। প্রথমে যান গোপীবাগ বালুর মাঠ পাম্প স্টেশনে। কিন্তু ‘কারিগরি ত্রুটি’ চলছে সেখানে, পানি মেলেনি।

এরপর যান ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের পাশের ওয়াসার পাম্পে। তারা তাঁকে পানি দেয়নি। গেট পার হতেই দেওয়া হয়নি তাঁকে। তিনি ছোটেন মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশে ওয়াসার একটি পাম্প স্টেশনে। সেখানেও ঢুকতে পারেননি তিনি।

সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় রামকৃষ্ণ মিশনে। জারিকেনে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন আর ওয়াসার গুষ্টি উদ্ধার করছেন।

রাজধানীর গোপীবাগ, রামকৃষ্ণ মিশন রোড, অভয় দাস লেন, পেয়াদা পাড়া ও আশপাশের এলাকায় পানির এই সংকট চলছে তিন-চার মাস ধরে। সংকট চলছে বৃহত্তর মিরপুরের কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর ২, ১৪, উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর—এসব এলাকায়ও।

রাজধানীতে পানির চাহিদা সর্বোচ্চ ২২৫ কোটি লিটার।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্ব চালু হওয়ার পর ১৭ কোটি লিটার পানি বেশি উৎপাদিত হচ্ছে বলে দাবি করছে ঢাকা ওয়াসা।

কিন্তু এই নয় মাসে ওয়াসা শুধু গভীর নলকূপ স্থাপন ও প্রতিস্থাপনে প্রায় ৪২ কোটি টাকা খরচ করেছে। শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্ব চালুর আগে ওয়াসার গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল ৬৩১। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আরও ১৬টি নতুন নলকূপ বসানো হয়েছে এবং প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ৩৬টি।

প্রশ্ন উঠেছে, পানি উদ্বৃত্ত থাকলে ওয়াসা আরও পানি তুলতে কেন নতুন গভীর নলকূপ বসাচ্ছে? সায়েদাবাদ শোধনাগারের দ্বিতীয় পর্ব চালুর পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ৭০টি গভীর নলকূপ ও সেগুলো থেকে পানি তোলার পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কিন্তু ৭০টি পাম্পই চলছে এবং এগুলোর পেছনে প্রতিদিন শুধু তেল বাবদ খরচ হচ্ছে সাড়ে নয় লাখ টাকা।

রমনা থানার বিপরীত দিকে ঢাকা ওয়াসার বিশাল এক বিলবোর্ডে লেখা আছে, ‘ঢাকা শহরে বর্তমানে কোনো পানির সংকট নেই’। কিন্তু বৃহত্তর মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সংকট চলছে। এখনো লাইন দিয়ে ওয়াসার বিভিন্ন মেশিনঘর থেকে বা রাস্তার পাশের খোলা টেপ থেকে পানি সংগ্রহ করছে সাধারণ মানুষ।

সায়েদাবাদ দ্বিতীয় পর্যায়ের শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহের জন্য নতুন পাইপলাইন বসানো হয় মাত্র ১০ কিলোমিটার।

এসব লাইন রয়েছে রাসেল স্কয়ার থেকে কল্যাণপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, তেজগাঁও এবং রামপুরায়। কল্যাণপুরের পাইপলাইনের সঙ্গে মিরপুর বাঙলা কলেজের পাইপলাইন যুক্ত করে দেওয়ায় এখন মিরপুর ১-এর কিছু এলাকায় পানি যাচ্ছে। কিন্তু মিরপুর ২ থেকে ১৪ নম্বর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া—কোথাও এই পানি সরবরাহ হচ্ছে না। যাচ্ছে না উত্তরায়ও। এসব এলাকায় গভীর নলকূপের পানি সরবরাহ করা হয়।

ঢাকা শহরে সরবরাহ করা মোট পানির ৭৮ ভাগ গভীর নলকূপ দিয়ে ভূগর্ভ থেকে তোলা হয়। বাকি ২২ ভাগ আসে সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট শোধনাগার থেকে।

সায়েদাবাদ দ্বিতীয় পর্ব চালুর পর ৭০টি পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াসা। বিশেষ করে সায়েদাবাদের পানি যেসব এলাকায় সরবরাহ হয়, সেসব এলাকার পাম্প বন্ধ করে খরচ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ার এলাকা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, নতুন বাজার, মিরপুর বাঙলা কলেজ এলাকা।

কিন্তু গত নয় মাসে কোথাও কোনো পাম্প বন্ধ রাখা হয়নি। উল্টো এসব এলাকায় নিয়মিত নতুন নলকূপ বসানো বা পুরোনো নলকূপের জায়গা বদল করা হচ্ছে। একটি নলকূপের পাম্প চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ২০ লিটার তেল খরচ হয়। একেকটি পাম্প দৈনিক গড়ে ১০ ঘণ্টা চলে। এতে প্রতিদিন গড়ে তেল খরচ হয় ১৩ হাজার ৬০০ টাকার।

সে হিসাবে ৭০টি পাম্পের পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে নয় লাখ ৫২ হাজার টাকা।

ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আসলেই রাজধানীতে পানির সংকট নেই। মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে পানির এত সমস্যা হচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিরপুর ১ নম্বরে পানির সমস্যা নেই। অন্য স্থানেও সব সময় সমস্যা হয় না। যে সমস্যা, তা সরবরাহ লাইন বাড়লে কেটে যাবে।

তা হলে রাজধানীতে পানির কোনো সংকট নেই বলা হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সংকট নেই বলতে ‘ঘাটতি নেই’ বোঝানো হচ্ছে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.