আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরীর ফোলা যখন রোগের উপসর্গ

শরীর ফুলে যাওয়ার প্রধান কারণ শরীরে অত্যধিক পানি জমা হওয়াকেই বুঝায়। অনেক ধরনের অসুস্থতায় শরীরে পানি জমা হয়ে থাকে, তা মধ্যে হার্ট-ফেইলুর, গর্ভাবস্থা, কিডনি ফেইলুর, রক্তশূন্যতা, লিভারের সমস্যা, বাত জাতীয় অসুস্থতা, অ্যালার্জি, থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ কিছু ওষুধের পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া ও বর্তমান সময়ে বিবেচনায় আনতে হবে যেমন- জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ, উচ্চরক্তচাপ প্রশমনের ওষুধ, স্টেরয়েড হরমোন, বাতব্যথা নিরাময়ের ওষুধ ইত্যাদি। এদের মধ্যে গর্ভাবস্থা, রক্তশূন্যতা এবং থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা হার্ট ফেইলুর সৃষ্টি করে থাকে, তাই হার্ট ফেইলুরকে শরীর ফুলে যাওয়ার একটি প্রধান ও অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। শরীরে পানি জমা হলে তার সঙ্গে পরিমিত মাত্রায় দ্রবণীয় লবণও শরীরে জমা হতে থাকে।

এ ধরনের লবণ পানির দ্রবণ শরীরের প্রতিটি অঙ্গে, প্রতিটি কলায় এবং শরীরের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় জমা হয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পানি দ্বারা সৃষ্ট চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হয়। ফুসফুসে পানি জমা হওয়ার জন্য ঘন ঘন কাশির উদ্বেগ হয়, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পেটে পানি জমা হওয়ার জন্য পেটে সব সময় ভরাভরা ভাব পরিলক্ষিত হয়, খাদ্য গ্রহণে আগ্রহ কমে যায়, হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, বদহজম দেখা দেয়।

লিভারে পানি জমে লিভার আকারে বড় হয়ে যাওয়ায় পেটের উপরিভাগে চাকা ও ব্যথা অনুভূত হয়ে ক্ষেত্র বিশেষে জন্ডিসের উৎপত্তি ঘটে থাকে। মাংসপেশিতে পানি জমে মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, অলসতা, কাজকর্মে অনীহা, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, কাজ করতে গেলে সহজে হাঁপিয়ে ওঠার মতো উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। হাত-পায়ে অত্যধিক পানি জমার জন্য চামড়া চকচকে হয়ে তাতে ফাটল দেখা দেয় এবং তা থেকে পানি নির্গত হতে দেখা যায়। খুব সহজে রোগী ঠাণ্ডা সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। কোনো কারণে যদি হৃৎপিণ্ড কমজোর হয়ে যায় তখন সে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব মানে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হয়।

এ অবস্থাকে ডাক্তারি পরিভাষায় হার্ট ফেইলুর বলা হয়ে থাকে। হার্ট ফেইলুরের ফলে শরীরে রক্ত প্রবাহের স্থবিরতার সৃষ্টি হয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্য প্রতিটি অঙ্গে অঙ্েিজন ও প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তার কার্যকারিতা হারাতে থাকে। মানুষ ভীষণভাবে দুর্বলতা অনুভব করতে থাকে। মেজাজ খিটেখিটে হয়ে যাওয়া ও অমনোযোগিতার কারণ হিসেবে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ঘাটতিকে দায়ী করা হয়।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। কিডনি শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, পানি ও লবণ শরীর থেকে প্রস্রাব আকারে বের করে দেয়। তাই কিডনি ফেইলুরে শরীরে লবণ-পানি জমা হতে থাকে। শরীরে অত্যধিক লবণ-পানি জমা হওয়ার জন্যও হার্ট ফেইলুর দেখা দিতে পারে। লিভার ফেইলুরে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে রক্তে প্রোটিন জাতীয় উপাদানের ঘাটতি ঘটে, ফলশ্রুতিতে রক্তের মাধ্যমে লবণ ও পানির পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটায় শরীরে লবণ পানি জমা হয়।

ডা. এম শমশের আলী, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফোন:০১৯৭১৫৬৫৭৬১

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।