আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানতে হবে বলতে হবে শুধু সহিহ হাদিসঃ

এ জগতে মানুষ কারা

মাঝে মাঝে একটা ব্যাপারে আমি চিন্তা করি যে, আমাদের হিতাহিত জ্ঞান কি লোপ পেল নাকি আমরা স্বীয় ইচ্ছায় সহীহ হাদিসকে পাশ কাটিয়ে যাই। মূল প্রসংগে যাওয়ার আগে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস শুনুন যেটা এখানে প্রাসাংগিগ বলে মনে করছিঃ রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেন "তোমরা দুইটি জিনিষকে যতদিন আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট গোমড়া হবে না। একঃ আল কুরআনুল কারিম, দুইঃ সুন্নাতে রাসুল। " অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর হাদিস। এখানে উল্লেখ্য যে, শুধু হাদিস হলে হবে না, সেটা খাঁটির মানদন্ডে সহীহ হতে হবে।

যেমন আগে মধু সব সময় মধুই ছিল, কিন্তু যখন এর মধ্যে ভেজাল মিশানো শুরু হল, তখন মধুর নামের আগে একটি খাঁটি শব্দ যোগ করা হল, মানে খাঁটি মধু। তেমনি শুধু হাদিস হলে হবে না, সেটা হতে হবে সহীহ। ঠিক এই ব্যাপারটিই আমি আপনাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। আপনি আমি এই বয়সে অগণিত হাদিস শুনেছি মসজিদে, জুমার খোৎবায়, ওয়াজ মাহফিলে, মিলাদে, মিডিয়াতে আরো কত ইসলামি অনুষ্ঠানে। অনেক আলেম, ওলামা, হুজুর, ইমাম যারা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে হাদিসের দরস বা বয়ান দিচ্ছেন।

কিন্তু আপনার মন কি কখনো এই প্রশ্ন করেছে যে ইমাম বা হুজুর সাহেব যা বললেন তা কি সঠিক না তাতে খুঁত বা ভেজাল আছে, না তার মনগড়া? আপনি একটু খেয়াল করেন, এদেশে বাজারে, দোকানে, মসজিদে, লাইব্রেরীতে যেখানেই ইসলামের বই দেখবেন তাতে হাদিস লিখা থাকে কিন্তু তাতে হাদিসের উৎস নেই। যেটা থাকা বাধ্যতামুলক। এ প্রসংগে "রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এমন কথা বলল বা প্রচার করল যা আমার দিক নির্দেশ করে, অথচ সেটা আমার কথা নয়, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয়। " একটু ভাবলে গা শিউরে উঠে, কত বড় সতর্কবানী। অথচ ঘুস, মদ, জেনা এসমাজে কতই না নিকৃষ্ট কাজ বলে আমরা জানি এবং এগুলির কথা মহাপাপ বলে কোরআনুল কারিম ও সহীহ হাদিসে এসেছে, কিন্তু এগুলো করলে সরাসরি জাহান্নামে যাবে একথা বলা হয়নি।

যেভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর নামে মিথ্যা হাদিস বলাকে সরাসরি জাহান্নামের যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় একটা কথা আপনাকে জানতেই হবে যে, ইসলাম চলে শুধু আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'য়ালার নাযিলকৃত কুরআনুল কারিম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর সহীহ হাদিস দ্বারা। এর বাইরে তৃতীয় কোনো পন্থা নেই। সব কিছু নিতে হবে এই দুই উৎস থেকে (এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার যে দুনিয়াবি অনেক বিষয় আছে যা নিত্য নতুনভাবে আমাদের সমাজে যোগ হচ্ছে যা নিত্যান্তই দুনিয়ার কাজের ফয়সালার জন্য, যাতে প্রত্যক্ষ ইবাদাতের বিশেষ করে ফরয ইবাদাতের বিষয় নয়। সেটার ফায়সালা বা ফা্তুয়া যেটা ইজমা ও কিয়াস করে নেয়া হয় সেটাও নিতে হবে এই দুই উৎস থেকে)।

কিন্তু আপনি আমি সবাই ধরে নিচ্ছি যে, হুজুর যা বলল তার পুরোটাই ইসলাম এবং সেটাই ধর্ম। এটা ভাবা ঠিক নয়। আপনি যদি সত্যিকারভাবে মুসলিম হতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই সত্য- মিথ্যা, জাল-ভেজাল, সহিহ-মউযু বাছ বিছার করতে হবে। হুজুরের যে কোনো কথা সেটা যদি দ্বীন বা ধর্মের কোনো বিষয় হয় তা অবশ্যই উপরোক্ত উৎস থেকে প্রমাণ থাকতে হবে। অন্যথায় তা গ্রহণ করা যাবে না।

আর যদি হুজুর কোরআন ও সহীহ হাদিস থেকে উদৃত্তি দেন সেটা অবশ্যই বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনেকেই বলতে পারেন আমরা কি ভাবে বুঝব যে ইমাম যা বলছেন তা সহীহ না ভেজাল? এখানেই মজার ব্যাপারটা লুকিয়ে আছে। যখনই আপনি বা আমরা হুজুরদেরকে হাদিসের দলিল চাইব তখনই দেখবেন তাদের মুখ কালো হয়ে যাবে নতুবা আপনার প্রতি রাগ করবেন অথবা যদি জানেন তাহলে হাসিমুখে বলে দিবেন। কারণ এদেশে প্রায় হুজুর ও ইমাম সাহেবরা তাদের বড়দের ত্বাকলিদ করতে পছন্দ করেন। আপনি যদি তাকে খুব পীড়াপীড়ি করেন হাদিসের দলিলের ব্যাপারে আর সেটা যদি সত্যিকার অর্থে দলিল না থাকে অথবা দুর্বল দলিলের অথবা জাল দলিলের হয় তবেই সে বললে আমার ওস্তাদ অমুক বড় হুজুর বা অমুক পীর সাহেব বলেছেন অথবা করছেন।

এই হল এদেশের চলমান ইসলাম। যা যুগ যুগ ধরে চলিতেছে। আমাদের সচেনতার অভাবে ইসলামকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। এ ব্যাপারে আপনি আমি যদি উদাসীন থাকি তবে জেনে রাখুন শেষ বিচারে মহান আল্লাহ দরবারে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবো। কোনো সুযোগ নেই পাশ কাটানোর।

এখন কথা হলো এব্যাপারে আপনার আমার সচেতনতাই গুরুত্ত্বপূর্ণ। কেননা এ সমাজে যদি ইমামরা হাদিসের সাথে সাথে তার দলিলটাও বলে দিত তবে তাদেরও যেমন দায়িত্ববোধ প্রকাশ পেত তেমনি মানুষও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি পেত এবং দ্বীন দুনিয়া উভয় জগতে মুক্তি পেত। পাশাপাশি যে সব ইসলামের দুশমনেরা দিন দিন ধর্মকে নতুন আবরণ পড়াচ্ছে তারাও চুপশে যেত। এবং সবচেয়ে বড় কথা বিভিন্ন দল বা ফিরকা মোটেই গজাতে পারতো না। আর সাধারন মানুষ অযথা বিভ্রান্তিতে ভোগত না।

মনে হচ্ছে আমি একথা বলে আপনাকে বেশ অসহায় করে তুললাম। ভাইয়েরা যখন বাজারে সদাইপাতি করতে যান, ধরুন এক কেজি আলু কিনবেন। বিক্রেতাকে বার বার বলেন দরদাম ঠিক বলতে, ভালো ভালো বেছে দিতে, আপনার পুরোপুরি মনোযোগ ঐ ১০ টাকা মূল্যের আলুর দিকে যাতে আপনাকে ঠকিয়ে না দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি যদিও মাঝে মাঝে ঠকে যান তাতে অনেক আফসুস করেন এবং পারলে ঐ বিক্রেতার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্দার করেন। তারপর থেকে আপনি এতো বেশি এলার্ট হয়ে যান যাতে ভবিষ্যতে আপনাকে কেউ আর না ঠকাতে পারে।

কিন্তু ভাই যে কাজ আপনাকে পরকালে নাজাত দিবে বলে হুজুরের কথায় করে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে, একটি বার সজাগ হলেন না যে আসলে আমি কি ঠিক করছি না ভুলের ভিতর আছি? এ প্রশ্ন কেন আপনার মনে উদয় হল না? নাকি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দিয়েছে? ভাই পৃথিবীতে ভুলের সংশোধন আছে, কিন্তু পরকালে কোনো সুযোগ নেই। সময় থাকতে সজাগ হউন। দমটা বন্ধ হলে আর কোনো সুযোগ নেই। ভাই একটু সচেতন হন, আপনি দুনিয়াবি সব কিছুই তো সুচারু রূপে বাছ বিচার করে করেন, কিন্তু পরকালের ব্যাপারে কেন এত উদাসীন, নাকি পরকালের বিশ্বাসটাতে ঘাটতি আছে, নিজেকে একটু প্রশ্ন করুন না! এখন আমাদের দেশের সব জায়গায় কুরআনের বাংলা অনুবাদ, তাফসীরের বাংলা অনুবাদ (বিশেষ করে তাফসির ইবনে কাসীর), ছয় হাদিস গ্রন্থগুলোর বাংলা অনুবাদ পাওয়া যা্য। এখানে আপনি চাইলেই সহীহ ভেজাল খুঁজে পেতে পারেন।

প্রমান করতে পারেন ইমাম বা হুজুরের কথার সত্যতা। এতে দুটো লাভ এক আপনার নিজের অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে এবং ইমাম বা হুজুরের গল্র কিচ্ছা কাহিনী বলার অভ্যাস রহিত হবে, এবং ইমামরা আরো বেশী সচেতন হয়ে দ্বীনের কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা'য়ালার আমাদের প্রত্যেকে সঠিক ধর্ম বোঝার তৌফিক দিন যাতে আমরা ইহজগৎ ও পরজগৎ দুটোতেই কামিয়াব হতে পারি। আমিন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।