আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুটেরা পুজি ও উন্নয়ন (যা কিছু অর্জন তা আওয়ামীলীগ-বিএনপির হাত ধরেই)



বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সুচক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই জায়গাতেই উন্নতি করেছে । সেই সাথে বিশ্ব ব্যাংক অন্যন্য দাতা গোষ্ঠী এই উন্নতিতে বিস্ময় প্রকাশ ও রহস্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে । অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর সাথে সাধারন অর্থনৈতিক বিকাশের যে সুত্র বা ফর্মুলা সেই মোতাবেক উন্নয়নের গতিধারার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো এখানে অনুপস্থিত । এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই , এনার্জি সেক্টর এর উন্নতি নেই , অবকাঠামোর উন্নয়ন নেই , আইনশৃঙ্খলার উন্নতি নেই , বিচার ব্যাবস্থার উন্নতি নেই সর্বপরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতি নেই বরং সকল ক্ষেত্রেই অবনতি। এই সমস্থ বিষয়গুলোর উন্নতির নিরিখে বিশ্বব্যাংক বা দাতা গোষ্ঠী বা অর্থনীতির বিশ্লেষকগণ সার্বিক উন্নয়নের সুচক তৈরি করে ।

কিন্তু উনাদের ফর্মুলার বাইরে বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো অর্থনীতির উন্নতিতে ভুমিকা রাখছে তা নিম্নরূপ ঃ ১। কালো টাকা বা লুটেরা পুঁজি পরিমান এর দিক থেকে মোট বাজেটের তিনগুন । কাজেই প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগের জন্য পুঁজির কোন ঘাটতি নেই । ২। রাজনৈতিক দলগুলোর আভ্যন্তরীণ ( পরস্পরের বিরুদ্ধে ) গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে রাষ্ট্রের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন নেই ।

যে টুকু আছে তা অনেকটা ফ্যাসিবাদী কায়দায় । যে কারনে রাষ্ট্রীয় লুটপাট ব্যাবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনগণের কোন প্রতিরোধ নেই অথবা বলা চলে কোন রাজনৈতিক আন্দোলন কর্মসূচী নেই । এই লুটপাট রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর ফলে যে পুঁজি তৈরি হচ্ছে তা শেষ পর্যন্ত কম আকারে হলেও বিনিয়োগ হচ্ছে , বিনিয়োগ মানেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি । কোন না কোন ভাবে জনগণ এই বিনিয়োগের দ্বারা উপকৃত । এই লুটেরা পুঁজির বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে ।

৩। বেসরকারি ব্যাংকের রাতা রাতি উন্নতি । বেসরকারি ব্যাংকে সহজেই ঋণ পাওয়া যায় । এই ঋণ জনগনের জীবন মান উন্নয়নে ভুমিকা রাখছে । জীবন মান উন্নয়ন করতে গিয়ে ব্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে ।

এই ব্যায় বৃদ্ধিতে আবাসন বানিজ্য , জমির মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে । সেই সাথে আবাসন বানিজ্যের সাথে সম্পর্কিত শিল্পের উন্নতি হয়েছে বিশেষ করে , ইট , সিমেন্ট , রড , লেবার , রঙ , কাচ , পাইপ , এলুমিনিয়াম, ফিটিংস ও যন্ত্র-পাতি । বেসরকারি ব্যাংক ঋণ ব্যাবস্থার উন্নতির ফলে ট্রেডিং এবং সাপ্লাই বানিজ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে । নতুন বেসরকারি ব্যাংক যুক্ত হলে ব্যাংক গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং ঋণ ব্যাবস্থা আরও সহজ হবে । এসএমই খাতে ঋণ খুদ্র পুঁজি বিনিয়োগের একটি ভাল উদ্যেগ ।

এছারা লুটেরা পুঁজির দ্বারাই এই সমস্ত ব্যাংক গড়ে উঠেছে এবং এই পুঁজির লেন দেনই হচ্ছে ব্যাংকের আমানত । ৪। জমির মুল্য বেড়ে যাওয়ায় কৃষি পন্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে , কৃষি পন্য আমদানি বেড়ে গেলেও শিল্প খাতে জমির ব্যবহার বাড়ছে । ফলে অনেক শিল্প পন্য আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । পাঁচ বছর আগেও প্লাস্টিক পন্য চায়না , ভারত থেকে আমদানি হতো যা এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে ।

শিল্পে জমির ব্যবহারও জমির মুল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে । পোশাক শিল্প এখনও শিশু পর্যায়ে , এর ব্যাপক উন্নতির সুযোগ রয়েছে । পোশাক খাতে লাভের পরিমান বেশী এবং এই খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের অনেক আইনের ফাক ফোকর আছে । ৫। অবকাঠামোর উন্নয়ন এর ক্ষেত্রে রাস্তা ঘাট , পুল , ব্রিজ ইত্যাদির উন্নতি ধীর হলেও , টেলি যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে যা আন্তর্জাতিক বানিজ্যের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ।

অভ্যন্তরীণ বানিজ্য প্রসারে মোবাইল নেটওয়ার্ক উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে । এই খাতে খাতে কালো টাকা সাদা করার ব্যাপক সুযোগ আছে । তা না হলে ২০০ কোটি টাকা দিয়ে ইন্টারনেটের লাইসেন্স কিনে বছরে সরকারকে মোটা অংকের ট্যাক্স দিয়ে কিভাবে মুনাফা করে তা রীতিমত গবেষণার বিষয় । বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প খাতে প্রচুর পরিমান বিনিয়োগ হয়েছে এবং বাকি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে । একটি স্পিনিং মিল এর বিনিয়োগ পায় ১০০০ কোটি টাকা , একটি নীট কম্পসিট ফ্যাক্টরির বিনিয়োগ ন্যূনতম ২০০ কোটি টাকা ।

কাচ শিল্পের বিনিয়োগ ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরির বিনিয়োগ আরও বেশী । এগুলো প্রাইভেট ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সিন্ডিকেটের নিরাপদ বিনিয়োগ এবং এই সমস্থ বিনিয়োগের পিছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে । এখানে রাজনীতি , কালো টাকা একাকার হয়ে আছে । এই নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই এবং দেশপ্রেমিক যে কারোরেই আপত্তি থাকার কথা নয় । আপত্তি আছে সামাজ্যবাদের দালাল কিছু বুদ্ধিজীবীদের যারা বিদেশী টাকায় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও দারিদ্র বিমোচনের গবেষণার নামে বিরাজনীতিকরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ।

তারা দুর্নীতি বিরোধী স্লোগান দিয়ে এই কালো টাকাকে বিদেশী ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে । অনেক রাজনৈতিক নেতা না বুঝে এই ষড়যন্ত্রের সাথে সুর মিলায় । এরশাদ পরবর্তী রাজনীতির বর্তমান পর্যায়ে প্রায় সকলেই হতাস গণতন্ত্রের উন্নতি না হওয়ায় কিন্তু গনতন্ত্র পুঁজির বিকাশের সাথে সমান তালে উন্নতি করবে । অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া গনতন্ত্রের উন্নয়ন রাজনৈতিক অর্থনীতির সংজ্ঞার মধ্যে পরে না । বর্তমান এই উন্নয়নের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নামক এই দুই দলের ।

বিশেষ করে বিএনপির কারন তাদের সময় কালো টাকা শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগ হয়েছে । আওয়ামীলীগ ১/১১ এর তৈরি কিছু ফর্মুলা বহাল রাখায় কালো টাকা এখন আর আগের মত সরাসরি বিনিয়োগ হচ্ছে না । ১/১১ এর উদ্যগতাদের বিচার করতে পারলে লুটেরা পুঁজি আরও বেশী মাত্রায় বিনিয়োগ হতো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.