আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যানহোলে পড়ার পর.... (ছোটগল্প)

সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে... সজীব....সহজ সরল, আলাভোলা ধরণের একটা ছেলে। একটু মোটাসোটা, সুখী সুখী চেহারা। দেখলেই বোঝা যায়, জীবনের কোন জটিলতা তাকে স্পর্শ করেনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স এর লেকচারার। এবছরই পাশ করে জয়েন করেছে।

ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিল। ওর বাসা সেগুনবাগিচা। প্রতিদিন রিকশা নিয়ে প্রেসক্লাব হয়ে ক্যাম্পাস এ যাওয়া, আর ক্লাস শেষ হলে চলে আসা, এই হলো তার জীবন। একদিনের কথা... প্রতিদিনের মত বাসা থেকে বের হয়ে সজীব রিকশা খুঁজছে। কিন্তু ওইদিন কি হলো, কোন রিকশাই যেতে চাইছিলো না।

সজীব পড়লো মহা ঝামেলায়। ক্লাস যে শুরু হয়ে গেল বলে! অগত্যা সে হেঁটেই যাবে বলে মনস্থির করলো। তখন ছিল বর্ষাকাল। রাস্তায় জায়গায় জায়গায় গর্ত, ম্যানহোল এর ঢাকনা খুলে রেখেছে সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা। সজীব এসব খেয়াল না করেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে।

ক্লাস ধরতে হবে। আচমকা....সজীব একটা ম্যানহোলে পড়ে গেলো। ম্যানহোলে পড়েই সজীব চিৎকার শুরু করলো। ম্যানহোলটা অগভীর ছিলো। কিন্তু তা ছিল মানবীয় বর্জ্যে (পায়খানা) পরিপূর্ণ।

আশে পাশে অনেক লোক ছুটে আসলো। দুই/তিনজন ওকে ধরে তুলতে লাগলো। কিন্তু সজীবের সারা শরীর পায়খানা ভরে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিলো। তারপরও সেই দুই/তিনজনের সহায়তায় ওকে ধরে ধরে তোলা হল। আর কেউ দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষছিল না।

সারা শরীরে পায়খানা লাগা ছাড়া ওর আর কোন শারীরিক ক্ষতি হয়নি। ওকে দেখে আশেপাশের সবাই হাসাহাসি করতে লাগলো। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো বারডেম এ ইন্টার্নরত একদল মেয়ে। ওরা আরো বেশি বেশি হাসতে লাগলো। ওকে নিয়ে মজা করতে লাগলো।

বেচারা সজীব লজ্জায় শুধু রাস্তার একপাশে বসে ছিল। ঠিক এমন সময় ওই ইন্টার্ন মেয়েদের দল থেকেই একজন এগিয়ে আসলো সজীবের দিকে। মেয়েটা আগে থেকেই হাসছিল না ওকে দেখে। ওর খারাপ লাগছিল, সবাই ওকে নিয়ে মজা করায়। মেয়েটি এসে সজীব কে জিজ্ঞাসা করলো, "আপনার কি কোন সমস্যা হচ্ছে? কোথাও ব্যাথা পেয়েছেন?" মেয়েটি ছিল পরমাসুন্দরী।

টানা টানা চোখ। টিকালো নাক। এমন সুন্দরী একটা মেয়েকে এই অবস্থায় সামনে দেখে সে আরো লজ্জা পেল। কোন কথাই বলতে পারলো না। শুধু বলল, "একটু পানি খাওয়ান।

" তখন মেয়েটা করলো কি, সজীবের একটা হাত ধরে তাকে নিয়ে পাশের একটা ক্লিনিকে নিয়ে গেলো। ওর বান্ধবীরা তো হা হয়ে গেছে ওকে দেখে। ক্লিনিকের লোকদের সহায়তায় সজীবকে ভালো করে ড্রেসিং করালো। পানি খাওয়ালো। তারপর সজীবকে বলল, "আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে, আমার চেম্বারে একবার আসতে পারেন।

" সজীব লাজুক ধরণের ছেলে। কোনদিন কোন মেয়ে বন্ধু ওর ছিল না। সে একটু একটু লজ্জা পাচ্ছিল। তারপরও সে যেতে রাজী হল। চেম্বারে যাওয়ার পর মেয়েটি ওকে ব্যথার কিছু ওষুধ দিল।

আর দিল ফোন নাম্বার। আর কোন সমস্যা হলে ওকে যেন ফোন করে সজীব। সেদিন আর সজীব ক্লাস নিতে গেলো না। বাসায় এসে মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলো। এত সুন্দর কোন মেয়ে হয়! সারাক্ষণই শুধু তার কথাই সে ভাবল।

জীবনে কোনদিন কোন মেয়ের দিকে সে তাকায়নি, কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেনি, শুধু পড়াশোনাই ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। তার শুধু বারেবারেই মনে হতে লাগলো, মেয়েটি যেন তার বহুদিনের চেনা। সে ঠিক করলো, রাতে ওই মেয়েকে ফোন করবে। রাতে ওকে ফোন দিল সজীব... তারপর....দিন কেটে যেতে লাগলো স্বাভাবিক নিয়মেই..... ৬ মাস পর..... সজীব আর প্রিয়ন্তীর বিয়ে আজকে। প্রিয়ন্তী কে? সেই ডাক্তার মেয়েটা, যার ছোঁয়ায় সজীব বদলে গিয়েছিল।

৬ মাস প্রেমের পরিণতি এই বিয়ে। সজীব আর প্রিয়ন্তীকে কত সুন্দরই না লাগছে! মন্তব্যঃ একটি দুর্ঘটনা থেকেও জন্ম হতে পারে একটি সুন্দর জীবনের। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।