আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমানবন্দর যেন সোনার খনি

দেশের বিমানবন্দরগুলো যেন সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে। বিমানবন্দরে প্রায় নিয়মিতই সোনা আটক ও উদ্ধার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের ধরা যাচ্ছে না। বিমানবন্দর কাস্টম ও ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাচারকালে যে পরিমাণ সোনা উদ্ধার হচ্ছে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারত সরকার সোনা আমদানিতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদার সোনা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে যাচ্ছে।

দুই বিমানবন্দরে ২৮ কেজি সোনা উদ্ধার : ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে গতকাল ২৮ কেজির বেশি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব সোনার দাম প্রায় ১৩ কোটি টাকা।

শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার ওয়াজেদ আলী গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কুয়ালালামপুর থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজের টয়লেট থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৬০টি সোনার বার উদ্ধার করেন। এগুলোর ওজন ১৮ কেজির বেশি, যার দাম প্রায় ৮ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নিয়োজিত কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার পারভেজ আল জামান জানান, দোহা-দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামে।

এ সময় যাত্রীদের হাতব্যাগ রাখার স্থানে তল্লাশি চালিয়ে ৬০টি সোনার বার পাওয়া যায়। এসব সোনার ওজন প্রায় ৭ কেজি, যার দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা।

এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দেওয়াননগরের জাহাঙ্গীর আলম ২৬টি সোনার বার নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে নগরীর কোতোয়ালি যাচ্ছিলেন। অক্সিজেন এলাকায় পুলিশ তার ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে ৩ কেজি ওজনের সোনার বার আটক করে, যার দাম ২ কোটি টাকা। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়।

আগের দিন সোমবারও দুবাই থেকে চট্টগ্রামে আসা বাংলাদেশ বিমানের এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে সাড়ে ৪ কেজির ৪০টি সোনার বার আটক করা হয়, যার মূল্য ২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, এটি নিয়ে চলতি মাসে ৯টি চালানে প্রায় ৪৪ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে।

বাড়ছে চোরাচালান : গত কয়েক মাসে দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে সোনার চোরাচালান বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারত সরকারের সোনা আমদানি কড়াকড়িতে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে সোনা পাচারের ঘটনা বেড়েছে। পাচারের একটি বড় অংশ ভারত চলে যাচ্ছে।

১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ১৫ কেজি সোনা আটক হয় দুবাইফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে। ২১ অক্টোবর ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩২ কেজি সোনা আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। বছরের সবচেয়ে বেশি সোনা আটক হয় ২৪ জুলাই শাহজালাল বিমানবন্দরে। এদিন ১ হাজার ৬৫টি সোনার বারে ১২৪ কেজি সোনা আটক করা হয়। ১ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রায় ৩০০ কেজি সোনা আটক করে কাস্টম ও পুলিশ।

গত তিন বছরে ৩ হাজার ৬০০-এর বেশি ব্যক্তিকে সোনা চোরাচালানের অভিযোগে বিমানবন্দর থেকে আটক করে কাস্টম, সিভিল এভিয়েশন, ইমিগ্রেশন, এনএসআই ও পুলিশ সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার গহনার দোকানে প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার কেনাবেচা হয়। পাচার হয়ে আসা সোনার একটি বড় অংশ চলে যায় ভারতে। বাকি অংশ অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মেটায়।

কীভাবে আসছে : সোনা পাচার মামলার এক তদন্ত কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি দুবাই থেকে এ দেশে সোনা পাঠানোর কাজ করেন।

এই পাচারকারী চক্রের লোকজন সিঙ্গাপুর, দোহায়ও সক্রিয়। এসব রুটের যাত্রীকে দিয়ে টাকা অথবা বিমান টিকিটের বিনিময়ে কখনো ফুলদানির ভেতর, কখনো বা জুতার ভেতর কার্বন পেপারে মুড়িয়ে সোনার বার এ দেশে পাচার করা হয়। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির এক কর্মকর্তা বলেন, সোনা পাচারের সঙ্গে আমাদের সদস্যদের কোনো হাত নেই। আমরা পুরনো গহনা, প্রবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলাম থেকে কেনা সোনা বিক্রি করি।

 

 



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.