আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সহিংস অবরোধে বিজিবি সদস্যসহ নিহত ৭

বিভিন্ন স্থানে রেলপথে নাশকতার পাশাপাশি সংঘর্ষ-হামলায় নিহত হয়েছেন এক বিজিবি সদস্যসহ সাতজন, আহত হয়েছেন বহু। দেশজুড়ে অর্ধশতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, ভাংচুর হয়েছে অসংখ্য। পেট্রোল বোমায় পুড়েছেনও কয়েকজন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে সোমবার তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দলের প্রতিবাদ মিছিল ও বোমাবাজির মধ্যদিয়ে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে সোমবার রাতেই প্রাণ হারান দুজন।


এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট মঙ্গলবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেয়, যার ২৪ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যায় যোগ হয় আরো আটটি প্রাণ।
রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে বিরোধী দলের এর আগের হরতাল কর্মসূচিতে প্রাণহানির ঘটনায় জাতি সংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল, সমঝোতার প্রত্যাশা ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
কিন্তু সমঝোতার পরিবর্তে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে ওঠায় উদ্বেগ থেকে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করেন ছয় বিশিষ্ট জন। তারা রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ প্রত্যাশা করেছেন।
সংঘাতের জন্য সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দায়ী করেছে।

রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য আরো কঠোরভাবে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১৪ দল। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সমঝোতার উদ্যোগ না নিয়ে ক্ষমতাসীনরা পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দুই পক্ষের বিপরীত অবস্থানে অবরোধের প্রথম দিন সংঘাতে প্রাণ হারানো সাতজনের মধ্যে তিনজনই সাধারণ নাগরিক, যাদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সিরাজগঞ্জে নিহত ব্যক্তি একজন পথচারী, কুমিল্লার লাকসামে নিহত হন এক রিকশাচালক এবং ফেনীতে এক অটোরিকশাচালক।
কুমিল্লায় বিরোধী দলের কর্মীদের সহিংসতা থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন বিজিবির এক সদস্য।


জামায়াতে ইসলামীর ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরায় হামলায় নিহত হয়েছেন সরকার সমর্থক যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নেতা। বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন যুবদলের এক কর্মী।
সোমবার তফসিল ঘোষণার পর রাজধানীতে বোমাবাজিতে তাড়াহুড়োর মধ্যে বাসচাপায় প্রাণ হারান এক রিকশাচালক। কুমিল্লায় বোমা বিস্ফোরণে মারা যান ছাত্রদলের এক কর্মী।
কুমিল্লায় বিজিবি সদস্যসহ নিহত ২
অবরোধে দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘাতের মধ্যে সন্ধ্যায় নগরীর চরথা এলাকায় ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিজিবি সদস্য রিপন মিয়া (২৫)।


ওই সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। এর মধ্যে কনস্টেবল মাহমুদুল হাছানকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী জানান, ছাত্রদলকর্মী দেলোয়ার হোসেনকে দুপুরে নগরীর দক্ষিণ চর্থায় দাফন করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ১৮ দলের কর্মীরা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পুলিশকে বহনকারী গাড়িটি তারা পুড়িয়ে দেয়।
দেলোয়ার সোমবার রাতে ১৮ দলের মিছিলের সময় বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন।


সকালের সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় চরথা এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হলে আবার সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় বিজিবি সদস্য রিপনের মাথায় গুলি লাগে। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে সকালে লাকসামের দৌলতগঞ্জের দীঘিরপাড়ে পুলিশ ও ১৮ দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রিকশাচালক বাবুল মিয়া (৪৫)।
স্থানীয় সাংবাদিক জসিমউদ্দিন জানান, সকাল ১১টার দিকে দীঘিরপাড় এলাকায় ১৮ দলের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে।

পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তখন গুলিবিদ্ধ হয়ে লাকসাম অশ্বথতলা গ্রামের রিকশাচালক বাবুল মারা যান।
তবে বাবুলকে নিজেদের কর্মী দাবি করে এবং তার সঙ্গে দেলোয়ারের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায়েআধা বেলা হরতালের ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া।
সাতক্ষীরায় যুব ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
কলারোয়া উপজেলায় পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সরকার সমর্থক যুবলীগের এক নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দুপুরে উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বাবুকে পিটিয়ে হত্যা করে জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা।

সন্ধ্যায় ওই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামও একইভাবে খুন হন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার  মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে কলারোয়া সদরে নিজের দোকানে যাওয়ার সময় মির্জাপুর এলাকায় হামলার শিকার হন বাবু।
বাবুকে হত্যার খবরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা দেয়াড়া বাজারে জামায়াত-বিএনপির মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করে।
এরপর বিকালে বাজারের একটি দোকানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবিউলকে পেয়ে পিটিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।


নিহত বাবুর বাড়ি কলারোয়া উপজেলার ছলিমপুর গ্রামে; বাবার নাম গোলাম রহমান। নিহত রবিউল দেয়াড়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে।
বগুড়ায় যুবদলকর্মী নিহত
শহরতলীর বনানী এলাকায় বিকালে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন যুবদলকর্মী ইউসুফ আলী। আহত হন অন্তত ২০ জন।
শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কর্মী ইউসুফ হত্যার প্রতিবাদে বুধবার বগুড়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।

 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধের সমর্থনে বনানী এলাকায় যুবদল সমর্থকরা ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অবস্থান নেয়। বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ তাদের তুলতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
পুলিশ রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে যুবদলকর্মীরাও হাতবোমা ছুড়তে থাকে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ইউসুফ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
শাহজাহানপুর থানার ওসি মাহমুদুল আলম জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে যুবদলকর্মীরা পুলিশের উপর অসংখ্য ককটেল নিক্ষেপ করে।


ইউসুফের মৃত্যুর কথা স্বীকার করলেও পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে কি না, তা তিনি নিশ্চিত করেননি।
সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে পথচারী নিহত
জেলা শহরের জগাই মোড় এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত হন পথচারী
সাকমান আলী (৪০)। সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের মাছুয়াকান্দি গ্রামের ছমেদ আলীর ছেলে সাকমান রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অবরোধকারীরা সকালে জগাইমোড়ে অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি হাতবোমা ফাটায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অবরোধকারীরা তাদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।


সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছোড়ে।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে বাই সাইকেলে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় সাকমান আলী কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
পুলিশ কর্মকর্তা মোক্তার বলেন, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সাকমানকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
সংঘর্ষের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুর-কায়েম সবুজকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ২০১০ সালের আলোচিত ট্রেন পোড়ানো মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি।


ফেনীতে অবরোধকারীদের ইটে চালক নিহত
দিনভর বিক্ষিপ্ত সংঘাতের পর রাতে জেলা শহরে অবরোধকারীদের ইটের আঘাতে নিহত হন অটোরিকশাচালক মো. দুলাল মিয়া (৪০)।
তিনি দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পূর্ব জয়নারায়ণপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে। তার তিন ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রাত সাড়ে ৭টার দিকে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে যাচ্ছিলেন দুলাল। এসময় অবরোধকারীরা ওই সড়কের উপশম ক্লিনিকের সামনের একটি গলি থেকে অটোরিকশায় ঢিল ছুড়তে থাকে।


গুরুতর আহত দুলালকে স্থানীয়রা ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অসীম সাহা জানান, ইটের আঘাতে দুলালের মাথা ও মুখমণ্ডল থেতলে যায়।
ফেনী সদর হাসপাতাল মোড়ে অবরোধকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে ফারুক নামে এক অটোরিকশাচালক আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.