আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় যেখানে খাই যেথা খেতে চাই, যেখানে খাইতে মন করে আঁইঢাঁই - চটপটি আর কাবাব

বুলি বলে শুনতে পাই, রূপ কেমন তা দেখি নাই, ভীষম ঘোর দেখি। । পোষা পাখি চিনলাম না, এ লজ্জা তো যাবে না, উপায় কী করি, আমি উপায় কী করি। ।

খাইবার বিষয়ে অধিক কী বকিবার আছে? চামচ বা হস্তদ্বারা উঠাইয়া রঙতামাশা (আবশ্যকভাবেই শুধুমাত্র খাবারাদির) দেখিতে দেখিতে চক্ষুদ্বয় রুদ্ধ করিয়া মুখে পুরিয়া জিহ্বার শত শহস্র লক্ষ স্বাদকুঁড়ির সৃষ্টি হইবার উদ্দেশ্য সার্থক করিবার নামই ভুঁড়িভোজ- তাহা নিদেনপক্ষে পাঞ্জাবীর নিচে চুড়িদার পায়জামা পরিহিত ভূঁড়িদার ভোজনরসিক ছাড়া কেই বা বুঝিতে পারে? ভাই-বহিনরা, পুষ্ট বড় হৈলে কি সমেস্যা আছে? জ্বে? কী কইলেন? খাওনের কথা রসায়া না কইলে... কী কইলেন? অ! আইচ্ছা তাইলে।

কথাবার্তা ইট্টু বেসামাল হইল সমেস্যা আছে? অ! আইচ্ছা! তাইলে, সামনে খাওন থাকতে কথা কী? হাল্কাপল্কা দিয়াই শুরু হউক? চ ট প টি তো বাংলাদেশে আমার হিসাবে মাত্র একজনই বানায়। হুঁ হুঁ। মাত্র একজন। নিরবের সামনে যাবেন। নিরবে নিভৃতে অভিমানে বলবেন, মামা, ইন্টারনেটে তো আপনের সুনাম গেছেগা! অখন ফুচকা কত? (ধরেন বিশ টাকা) মামা তিরিশ টাকার একটা বানান।

* সাবধানতা: এরপর অবশ্যই চটপটি খাবেন। অবশ্যই এই দুটা খাবার খাওয়ার আগে ক্লোজআপ মাউথওয়াস সমৃদ্ধ ইয়ে দিয়ে ব্রাশ করে আসবেন। এবং মনে ফুরফুরা শর্ষিণা ভাব নিয়ে আসবেন। আর দয়া করে এই মাম্মা যদি দাম না দেয়, আমার বা তার উপর রাগ করবেন না। এই মাম্মার কাছ থিকা অধম ১২ বছর ধইরা চটপটি খায়, বছরে একবার হইলেও।

পিঁয়াজ-টমেটো-টকদই-মসল্লা সবই পাইছে, মাগার দামটা পায়নাইক্কা। * কমপ্লিমেন্ট: এক বন্ধু কৈল, জীবনে এরাম কোন জিন্স আমার জিহ্বায় লাগাই নাই (পোড়া জিহ্বা ) আর এরপরও যদি চটপটি ফুচকা খাইবারলাই তর্পান, তাহলে সেকেন্ড গ্রেডের কিছু হয়ে যাক। ওয়াইজঘাট/বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপারে একজন চটপটি ফুচকা বিক্রি করে দোতলা বাড়ি করেছে। তারটা আমার কাছে মনে হল, মাল দেয়ার প্রতি বেশি টান, ফাইন টিউন নয়। ঠিক একই রকম পেয়েছি তারা মসজিদের সামনের লিজেন্ডারি ফুচকা/চটপটি/চপ এর দোকানে।

তারা মসজিদেরটা মাঝে মাঝে খুবই ভালো লাগে। সন্ধ্যার পর কম্পিউটার সিটির পাশের গল্লিতে মাত্র একটা দোকানে ভাল চটপটি-ফুচকা মেলে। মোহাম্মদপুর জয়েণ্টকোয়ার্টার কমিশনারের বাসার কাছাকাছি সজীব চটপটি হল আমার খাওয়া সেকেন্ড বেস্ট। বহুবার খেয়েছি। বিষয়টা এমন, আমি চিনি গো চিনি তোমারে (এখানে চটপটি গো চটপটি তোমারে হবে...)।

প্লিজ, আল্লার ওয়াস্তে কা বা বে র কথা কৈয়েন না! আমি ছিলিম হইবার চাই ( হা হা হা হা হা সুন্দরম্ ! কাবাব না খেয়ে তুই কুতায় যাবি?) না! কাবাব আমাকে মোটা বানাতে পারবে, ডাইবিটিস বানাতে পারবে, জানে মারতে পারবে না। (উ হু হা হা হা সুন্দরম্! আমি তো ওটাই চাই!)। নিজেই নিজেরে জিগাই, কবেত্থিকা কাবাব খাই? যেইদিনকা প্রথম মানুষ একটা কিছু ধইরা ছিইল্লা গাছের ডালে ব্যাজায়া তলে আগুন জ্বালায় দিসিল সেইদিন থিকা। হাত কচলায়া দুনিয়ার সেরা কাবাব, তালিপড়ে, কোনঠা? স্বভাব লুচ্চাকে জিগ্যেস করেন, দুনিয়ার সেরা সুন্দরী কোনটা? বলতে পারবে না। আমি কোন্ কাবাব খাই? নিজেই নিজেরে বলি, পশ্ন হইল গিয়া, কোন্ কাবাব খাই না? কোন্ কাবাব পছন্দ? এইটা কিন্তু এসপষ্ট।

মাংসের কাবাব। কীসের মাংসের কাবাব? এই বেক্কল! অফ যা! কথা হৈল, এস্টার কাবাবে যাবেন কাবাব খেতে, সাথে ফাস্টফুড লাস্টফুড সব খাবেন তা কিন্তু হবে না। নৈবেদ্যদানের মত করে কাবাব খেতে গেলে শুধু কাবাব ও তার সাথে রুটিমুটি সালাদমালাদ খেতে হবে। টেস্টবাডের ব্যালান্সের একটা বিষয় তো আছে! আল বাইক এবং আল বা-ক এর ডোনার কাবাব ছাইড়েন না কিন্তু! পারলে বিফ ডোনারটা নিয়েন। দূর, কথা জমতাসে না।

আহেন, কাবাবিং জোন এ যাই। জোন-১: মিরপুর। * মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের পাশদিয়া বেড়িবাধের দিকে যাবার পথে রাস্তার সাথে লাগানো ছোট্ট একটা দোকান আছে খান চার পাঁচ টেবিল সহ। দুহাতে অনেকগুলো আঙটি নিয়ে ক্যাশে একটা লোক বসা থাকে। তাকে দেখেই চোখটা উল্টে উপরদিকে চেয়ে মুখে মৃদুমন্দ স্মিতহাস্য দিয়ে বলবেন, ভাই, মালিকের দয়ায় আপনার দোকানটা পেলাম! চাপ খাব।

এই কথায় জাদু আছে। দ্যাখেন না কী হয়! * দশ নম্বর ফায়ার সার্ভিসের অপজিটে গ্যালাক্সি হাসপাতালের সামনে স্ট্রিট কাবাব চেখে দেখতে পারেন। চাপ টাপ টাইপের গুলা। * পল্লবী যাবার রাস্তাটায় দশ নম্বর থেকে সামান্য ভিতরে উৎসব ভাল লাগবে। এ+ গ্রেড।

চাপ। সেইসাথে একটা ব্রেইন চপ নিতে ভুলবেন না। * একই রাস্তায় কী একটা নামি ফাস্টফুডের বিগম্যাক বার্গারটা কাবাবের মধ্যেই পড়ে। স্বাদু, স্বাদু। তবে তাদের যত্নের অভাব আছে।

* আসেন বেনারসী পল্লীতে। (পিলিজ, এইখানে কেউ আমারে মাইরালান, নাইলে এইখানে এইটা অইটা খাইতে খাইতে মইরা যামু!) বেনারসী পল্লীতে ঢালের পাশে একটা মসজিদ আছে না? ওটার আগে আগে বিখ্যাত বিহারী কাবাব ঘর। চাপ, বটি, ব্রেন যা পাওয়া যায়। চিকেন কাবাব কিন্তু খুব বেশি ভাল বানানো যায় না। তারপর মসজিদের দিকে এগিয়েই শরবতের দোকান থেকে সরবত আর পানের দোকান থেকে মসল্লা পান।

তারা মনে হয় বাংলাদেশে সবচে বেশি পান বিক্রি করে পার ডে। তারপর গভীরে যান, বিহারী পল্লির নানা অখ্যাত অলিগলিতে যান। আজব আলুর দমের প্রিপারেশন। আজব পানিপুরি। আর রুচি যদি বেশি নাক উঁচা না হয়, তাহলে ছাপড়া ছোপড়া কাবাবের ঘরগুলিতে ঢুঁ মারেন।

মাংসের কাবাব তো এইসব দোকানে অতি এক্সেপশনাল হয়ই, যদি খিরি গুর্দা বট খেতে আপত্তি না থাকে, তো এমন বটের দেখাও পাননি কোথাও। একটা ওয়াইল্ড, পলিশড ভাব আছে সবখানেই। জোন-২: মোহাম্মদপুর। পিলিজ। এইখানে কেউ খাইয়েন না।

লাস্ট ভাল পরিচ্ছন্ন কাবাব খেয়েছি আট বছর আগে। গত আট বছর যা খেয়েছি তা ধোঁকা। ধোঁকা। অতি বাজে হয়ে গেছে। ক্যাম্পের বাজার এখন ইতিহাস, অতীত।

ঢাকায় কি কাবাবের দোকানের অভাব পড়েছে? জোন-৩: চকবাজার। দরকার নাই। মাত্র একটা দোকানে সত্যিকার ভাল কাবাব বানায়। মসজিদে যাইতে একটু বাকি থাকতে অপজিটে। আল্লার ওয়াস্তে রমজানে চক থেকে কিছু কিনেন না।

রমজানে মজার খাবার খাবেন তো একটা নক দিয়েন ব্লগে। নিরবের নিচতলার শিকও খারাপ না। একটু এগিয়ে চানখারপুলের কাবাবের দোকানগুলোয় ঢোকার দরকার নাই। জোন-৪: পুরান ঢাকা। কিলমি অর ইটমি- খাইতে দে নাইলে মাইরালা! রয়্যালের যাবতীয় কাবাব।

পেস্তার শরবত খেতে ভুলবেন না। রমজানে রয়্যালের আস্ত খাসীর লেগ-টিকিয়া। রয়্যাল এ না গেলেও পারেন। লালবাগ কেল্লার গা লাগানো চৌরাস্তায় কেল্লার দিকে যাবার অপজিট দিয়েই তো রয়্যালে যায়? মোড় থেকে একটু এগিয়ে নামহীন ছোট্ট একটা দোকান। দুই বয়েসি চাচা নিজহাতে হাতপাখার বাতাস করে চিকেন কাবাব বানায়।

সবসময় মান কিন্তু হুবহু এক হবে না। এজন্য আপনার অ্যাফোর্ট/ইমপ্রেশন জরুরি। ছোট্ট ছোট্ট শিক কাবাব বানায়। আন্ডারকাটের মাংস দিয়ে। এটাও হেব্বি।

নাজিরা বাজারের বিসমিল্লার কাবাবে গিয়ে গলা উচিয়ে ডাকবেন, রহমান ভাই! রহমান ভাই কিন্তু তেমন দাম দিবে না। কিন্তু খাবেন আপনি, তাকে মানাতে হবে আপনাকেই! খালি বলবেন, আপনি আপনার মত করে ভেজে এনে দেন, আমি অয়েটিং। সময় লাগলে অসুবিধা নাই। একবার যদি স্বয়ং রহমান ভাইয়ের হাত দিয়ে ভাজিয়ে নিয়ে তারই হাত দিয়ে প্রিমিয়াম সার্ভ নিয়ে খেতে পারেন... চাপ, বটি- এ দুটার কোনটা বাদ নয়। আর যদি খান তো খিরি, গুর্দা, গিলা-কলিজাও অসাম অসাম বানায়।

চিকেন আইটেমটা চলে, দৌড়ায় না। চিকেনের কাবাব নাইন্টি পার্সেন্ট জায়গায় বানাতে পারে না। রায়সা বাজার বা ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠাতা তোহফাতুল মুওয়াহিদীনের রায়সাহেব এর বাজারের আগে যে মহাব্যস্ত মোড়টা, সেখান থেকে বাজারের দিকে এগিয়ে বাজারের অপজিটে একটা সরু গলি গেছে। সেই গলিতে এককালে শাহী কাবাব তৈয়ার হইত। তাহা খাইয়া শাহানশা আকবর মোটা হইয়া গিয়াছিলেন।

পঞ্চম জর্জও উহা খাইতে আসিয়াছিলেন। কিন্তু আজকাল তারা ওই লিজেন্ডারি মসলাটা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে বটি আর চাপে। এত কষ্ট হয়! এত কষ্ট হয়! ওই নাম না জানা শাহানশাহী মসল্লার স্বাদ এই মধ্যবিত্ত জিভ কোথাও কোনদিন কোন খাবারে পায়নাই। তবে তাদের কাবাব এখন চলে আরকী। একদিক দিয়ে সোনারু-বেনিয়ানদের দোকান।

অন্যপ্রান্তে গিয়ে বেরুলে ইসলামপুর- পাটুয়াটুলি। পুরো অঞ্চলটা সনাতনধর্মাবলম্বীদের। সেখানে মাঝখানে একটা ছোট্ট চত্ত্বরমত মোড় আছে। ছোট্ট একটা আইসোলেটেড মন্দির আছে। মন্দিরের পাশে সনাতন এক কাবাবের দোকানে খাসির কাবাব হয়।

গুলদাস্তাঁ, গুলিস্তাঁ, বাহিস্তঁ। বাংলাবাজারে ক্যাফে কর্নারে খাসির ক্রামচপ। এটা খাবার আগেও সমস্ত খাবারের স্বাদ মুখ থেকে বের করে নিতে হবে। মনটা প্রশান্ত করে বসতে হবে। পাঁউরুটিটা ঝলসে দিতে বলতে হবে।

সালাদ আর চপের উপর প্রচুর গুঁড়ামসলা, ভিনিগার আর বিট ছড়িয়ে নিন। সাতরওজার আনন্দ বেকারির সুতি কাবাব এর টেস্ট অ্যাকোয়ার করতে পারতে হয়। প্রথমবার মজা না লাগলে গাইল্লায়েন না। আস্তে আস্তে স্বাদটা অ্যাকোয়ার হইবনে। এ প্লাস মাল।

ফুলবাড়িয়ার ওয়ান স্টারের চিকেন টিকিয়া ভাল বানায়। চিকেন কাবাব খায়া মজা আছে। খাওনের কথা বেশিক্ষণ কইতে পারি না। বেরেনে চাপ পড়ে, পেটে চাপ পড়ে, সবচে বড় চাপটা পড়ে জিহ্বায়। এই কয়টা হজম কইরা লই, তারপর আবার হইবনে ভাই বেরাদাররা।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: মিনা! রাস্তার খাওন ভালা না! খাইলে পেটে অসুখ হয়। (না খাইলে দুনিয়ায় আয়া লাভটা কী... বন্দেগী করনের পাবলিক তো আমি না, খায়া লই!)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।