আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতঃপর হাত ধরে চিরকাল...

মন নামের ডাকবাক্সে বদ্ধতালা ঝুলিয়ে, একা পথে হেঁটে চলা মরুভূমির খোঁজে

১. সন্ধ্যা নামবে এক্ষুনি। এই রাস্তা, ল্যাম্প পোষ্ট, ট্রামলাইন, বাসস্টান্ড সব আমার পরিচিত। খুব কাছের। একা ছাঁদে বসে গোধূলির শহর দেখি। আমার মন খারাপ আজ।

খুব বেশি খারাপ। দু'বছর ধরে যে মেয়েটাকে ভালোবেসে এসেছি, সে আজ তার পছন্দের মানুষটাকে পেয়ে গেছে। শুনলাম তাহিন নাকি পুরো ১৫১ টা কদম ফুল দিয়ে অরুকে প্রোপজ করেছে। অরু খুব খুশী। ভালো থাকলেই ভালো।

আমাকে ও জানায়ও নি। জানাবে কিভাবে! কথায় তো বলে না আমার সাথে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিসে দেখলাম। ও জানেনা, টানা দু'বছর যাবত ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যাইহোক।

ও ভালো থাকলেই ভালো। ভালোই হল। আমার অপেক্ষা শেষ হল আজ। আচ্ছা, তাহিন কি অরুর সমস্যাটার কথা জানে? জানে হয়ত। অরু জানিয়েছে নিশ্চয়।

ভালোবাসার কাছে এইগুলা কিছু না। আর এটা তো অলমোস্ট সমায় জানে ওর এই সমস্যার কথা। যাকগে... ওরা ওদের মত ভালো থাকুক তো। আমার কি... ২. অরুর হাত ঘামছে। খুব চিন্তায় হাত ঘামে তার।

তাহিনের মা বাবা এসেছে ওকে দেখতে। অরু শাড়ি, দু'হাত ভড়ে চুড়ি পরে বসে আছে। কপালে টিপ। এত সাজের মানে আছে আবার নেই। সাজটা যাদের জন্য, তারা একটা কঠিন সত্যের মুখোমুখি হবে এক্ষুনি।

জানিনা কি পরিনতি হবে এরপর। তাহিন এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার প্রেমিকা এবং হবু বৌ এর দিকে। বাবা মা আজকেই কথা পাকা করে যাবে। হয়ত সামনের মাসেয় শুভ কাজ সেরে ফেলা হবে। নিরবতা ভেঙ্গে অরু বলে উঠল- " তাহিন, তোমার সাথে একটু কথা ছিল।

এটা এক্ষুনি বলাটা জরুরি। কোন ডিসিশনে যাওয়ার আগে। একটু আলাদা কথা বলার ছিল। " তাহিন প্রেমিকার বাধ্যগত প্রেমিকের মত অরুর সাথে ছাদে চলে গেল। - কি কথা? বল।

- তাহিন, তোমার কাছে এতদিন একটা কথা লুরিয়ে রেখেছি। তুমি যখন আমাদের ছোট্ট একটা ঘড়, দশটা বাচ্চার স্বপ্ন দেখতে, আমিও দেখতাম কিন্তু ভিন্ন ভাবে। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কখনো ঠকায়তে চাইনি। - তাকাও আমার দিকে... আই লাভ ইউ টু।

কি হইসে বল তো? ভয় পাওয়ার কিছু নাই। আমি সবসময় তোমার সাথে আছি। বল। - তাহিন। আমার একটা সমস্যা আছে।

আমি তোমাকে বলিনি। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমাকে হারাতে চাই নি তাই। "আমি কখনো মা হতে পারব না। " এই মুহূর্তে তাহিন কি করবে সে জানেনা। তার মনে একটায় প্রশ্ন , মেয়েটা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

গটগট করে নীচে নেমে গেল। অরু ছাদে দাঁড়িয়ে কাদছে। "জীবনটা এমন কেন? আমার তো কোন দোষ ছিল না! আমি ওকে ছাড়া বাঁচব কিভাবে? " ৩. ১. সন্ধ্যা নামবে এক্ষুনি। এই রাস্তা, ল্যাম্প পোষ্ট, ট্রামলাইন, বাসস্টান্ড সব আমার পরিচিত। খুব কাছের।

পাঁচ বছর পর দেশে এসেছি, বৌ-বাচ্চা নিয়ে। না কিচ্ছুটি বদলায়নি। আমার মেয়ে পৃথিবীর জন্যই আসা দেশে এতদিন পর। পৃথিবীকে যখন আমরা এডোপ্ট করি তখন ও অনেক ছোট। এরপর ওকে আর ওর মা মানে আমার বৌকে নিয়ে পারি জমায় বিদেশে।

এডোপ্ট করা বেবী বলে কখনো মনে হয় না ওকে। কাকতলীয় ভাবে ও দেখতে আমার বৌ অরুর মত। মানে ওর মার মত। আমার পুরো পৃথিবী হুরে শুধু এরা দুটোয়। তাহিন অরুকে ছেড়ে গেলে ও বড্ড ভেঙ্গে পড়েছিল।

পাগলীটা খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে বসে থাকত। আমি কিভাবে ঠিক থাকি আমার পাগলীটার এই অবস্থা দেখে? তাহিন তো এক মাসের মধ্যে বয়ে করে সুখে সংসার শুরু করে দিয়েছিল, আমার পাগলীটার কথা একবারো ভেবে দেখে নাই! নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিলাম বলে বাবা মাকে ছাড়তে হয়েছিল অনেক আগে, কেননা অরু কখনো মা হতে পারবেনা জেনে বাবা মা রাজি হয়নি। আজ পাঁচ বছর পর পরিস্থিতি পালটে গেছে, অরু মাকে রান্নাঘড়ে সাহায্য করছে, পৃথিবী দাদুর সাথে খেলছে। কখনো ভাবিনি সৃষ্টিকর্তা আমাকে এত সুখ দেবে! আমার মেয়েটাও যেন আমার আর ওর মার মত সুখ পায় শেষে এটুকু আশা করি সবসময়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।