আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবরোধে প্রাণ হারালেন আরো আটজন

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের অবরোধের সময় বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২৩ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।    
প্রথমদিনের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় দিনেও সড়ক এবং রেলপথে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে নৌপথে লঞ্চ চলাচল করেছে অনেকটা নির্বিঘ্নেই।   
রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, বগুড়া, যশোর, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।   
দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, বিজিবি ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে সাধারণ পথচারীসহ আহত সংখ্যা দুই শতাধিক।


অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকায় একজন, চট্টগ্রামে দুজন, সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে দুজন, সাতক্ষীরায় দুজন, গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক ইউপি চেয়ারম্যান নিহত হন।
মঙ্গলবার  রাজধানীর খিলগাঁও তিলপাপাড়ায় অবরোধকারীদের ছোড়া হাতবোমায় আহত ব্যাংক কর্মচারী আনোয়ারা বেগম (৪৫) বুধবার ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে  মারা যান।
চট্টগ্রাম নগরীতে দিনভর সংঘাতে একজন নিহত,দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ ও এক ব্যবসায়ী অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
সন্ধ্যায় নগরীর রহমতগঞ্জে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পেট্রলভর্তি বোতলে আগুন ধরিয়ে তা ছুড়ে মারা হয়। এছাড়া কেরানীহাটে অবরোধকারীদের ইটে মারা যান এক যুবক।


গাজীপুরের কালীগঞ্জে সংঘর্ষের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি সদস্যকে কামাল হোসেনকে (৩০) কুপিয়ে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট কর্মীরা।
অবরোধজনিত সহিংসতার জের ধরে সাতক্ষীরায় মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সমর্থক দুজনকে পিটিয়ে হত্যার পর  বুধবার জামায়াতের এক কর্মীসহ নিহত হয়েছেন দুজন। আগরদাড়িতে আসা জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সংঘর্ষে মারা যান এক জামায়াত কর্মী।
এছাড়া সড়ক অবরোধের জন্য ১৮ দলীয় জোট কর্মীদের কেটে রাখা গাছের বাকি অংশ পড়ে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গৃহবধূ আম্বিয়া খাতুনের (৩০) মৃত্যু হয়।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতেও ১৮ দলীয় জোট কর্মীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে জামায়াতকর্মী আব্দুল জলিল (৫৫)ও ছাত্রদলকর্মী মাসুম বিল্লাহ (২২)নিহত হন।


গাজীপুরে ইউপি সদস্যকে হত্যা
কালিগঞ্জে সংঘর্ষের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট কর্মীদের হামলায় নিহত হন জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নিহত কামাল হোসেন (৩০)। তিনি  কালিগঞ্জ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলার  ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে কালিগঞ্জ থানার ওসি নাজমুল হক ভূইঞা জানান, বেলা পৌনে ২টার দিকে চুপাইর এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। ওই সময় আওয়ামী লীগের একটি অবরোধবিরোধী মিছিল ওই এলাকায় পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
“এ সময় অবরোধকারীরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কামালকে এলোপাতাড়ি কোপায়।

আহত অবস্থায় দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ”
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক মাসুদ রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কামালকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ”
চট্টগ্রামে অবরোধকারীদের হামলায় যাত্রী ও চালক নিহত
পটিয়া উপজেলার এ জে চৌধুরী কলেজ বাজারের অদূরে অবরোধকারীদের ধাওয়ায় টেম্পু উল্টে মারা যান চালক মোহাম্মদ এরশাদ আলী (২৫)। নিহত এরশাদ উপজেলার বরিয়া গ্রামের তৈয়ব কোম্পানির ছেলে।

 
নিহত এরশাদের ভাই সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু এলাকা থেকে ফেরার সময় কলেজ বাজার এলাকায় পিকেটারদের ধাওয়ায় টেম্পোটি উল্টে যায়।
এসময় টেম্পো চাপায় গুরুতর আহত হন এরশাদ। পিকেটাররা এরশাদকে মারধরও করে। পরে চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক এরশাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে সাতকানিয়ার হাশমতের দোকান এলাকায় শিবিরকর্মীদের ইটের আঘাতে আহত হন মোহাম্মদ শাহেদ (২০)।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শাহেদের বাড়ি সাতকানিয়ার কেওচিয়া ইউনিয়নের খোন্দকারখিল গ্রামে। তার ভাই মো. শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শাহেদ অসুস্থ বড় বোনকে দেখতে নসিমনে করে কেরানীহাট যাচ্ছিল। পথে হামলার মুখে পড়ে তাদের নসিমন।
স্থানীয়রা জানায়, শিবিরকর্মীরা ইট ছোড়ার পাশাপাশি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটায়।

তখন দ্রুত চলতে গিয়ে নসিমনটি উল্টে যায়। শাহেদের বুকে ইটের আঘাত লাগে।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবুল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুকে গভীর ক্ষত নিয়ে ভর্তি হওয়া শাহেদ রাত ১০টার দিকে মারা যান।
সাতক্ষীরায় জামায়াতি তাণ্ডব, নিহত ২
বুধবার রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার আগরদাঁড়ি এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ চলে। পুলিশ জানায়, এসময় মাইকে ঘোষণা করে আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানো হয়।


এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে এক জামায়াতকর্মী নিহত হওয়ার পর আবাদের হাট বাজারে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক হামলা-লুটপাট চালানো হয়।
সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি ইনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াত প্রভাবিত ওই এলাকায় প্রায় দেড়শ আসামি আস্তান গেড়ে আছে, যাদের বিরুদ্ধে হামলা-নাশকতার বহু মামলা রয়েছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন থানায়।
গত কয়েক মাসে বিভিন্নভঅবে চেষ্টা করেও তাদের ধরতে না পেরে মঙ্গলবার রাতে খুলনা পুলিশের ডিআইজি মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে র‌্যাব ও বিজিবির সহায়তায় এই অভিযান চালানো হয়।    
পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা আগরদাঁড়ি এলাকায় পৌঁছালে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা মাইকিং করে কয়েক হাজার লোক জড়ো করে এবং যৌথ বাহিনীর ওপর হাতবোমা ও ইট নিক্ষেপ করতে থাকে।
এক পর্যায়ে তারা যৌথ বাহিনীর সদস্যদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে।

তারা রাস্তার ওপর গাছ ফেলে অবরোধও সৃষ্টি করে।
ওসি আরো বলেন,  “যৌথবাহিনীর সদস্যরা এ সময় আত্মরক্ষার জন্য টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ভোরের দিকে তাদের উদ্ধার করে সরিয়ে আনে। ”
যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা সদর উপজেলার এলাকার আবাদের হাট বাজারে চড়াও হয় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী কার্তিক সাধু, নূর ইসলাম, শাহ আলমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং তাপস আচার্য ও গোপাল হালদারসহ অন্তত পাঁচজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালিয়ে আগুন দেয়।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল সাংবাদিকদের বলেন, “যৌথ বাহিনীর প্রায় এক হাজার সদস্য ৩৩টি গাড়ি নিয়ে এলাকায় আসে এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়।

এ সময় এলাকাবাসী মাইকিং করলে লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে।
“সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে শামছুর রহমান নামে আমাদের এক কর্মী মারা গেছেন। ”
নিহত শামছু  সদর উপজেলার শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মাজেদের ছেলে। তার লাশ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খালেক মণ্ডল জানান।
সড়ক অবরোধের জন্য বিরোধী দলের কর্মীদের কেটে রাখা গাছের বাকি অংশ পড়ে  জেলার কলারোয়ায় দুপুরে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

নিহত আম্বিয়া খাতুন (৩০) ওই গোপিনাথপুর  গ্রামের হারুন-অর রশিদের স্ত্রী।
কলারোয়া থানার ওসি শাহদারা খান বলেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রাতে একটি গাছের অর্ধেক কেটে রাস্তার উপর ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
বেলা ১২টার দিকে আম্বিয়া ওই গাছের ডাল-পালা কেটে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যান। এ সময় গাছের বাকি অংশ আকস্মিক তার উপর ভেঙে পড়ে। গুরুতর আহত আম্বিয়াকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়।


সিরাজগঞ্জে দুজন নিহত
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির  ১৮ দলীয় জোট কর্মীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হন। মুকুন্দগাতি বাজারে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন।
নিহতরা হলেন- উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া গ্রামের আব্দুল জলিল (৫৫) ও মাসুম বিল্লাহ (২২)। মাসুম ধুকরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক এবং জলিল স্থানীয় জামায়াত কর্মী ছিলেন বলে জোটের নেতারা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন বলেন, জামায়াতের একটি মিছিল দুপুরে মুকুন্দগাতি বাজারে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ও হাতবোমা ছোড়ে।
এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরাও তাতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় গোলাগুলিতে নিহত হন জলিল ও মাসুম।
পরে র‌্যাব ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বেলকুচি ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসক এমএ জি ওসমানী কমল বলেন, মোট পাঁচজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যার মধ্যে জলিল পথেই মারা যান।


নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ৩০, গ্রেপ্তার ১৮
সোনারগাঁও ও রূপগঞ্জে বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। নাশকতার অভিযোগে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুরুজ জামানসহ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত ১৫টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। সিদ্ধিরগঞ্জ ওসি আব্দুল মতিন ১৮ জনকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছেন।


খুলনায় গুলিবিদ্ধ ২, আটক ৭
খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে নগরীর পিটিআই মোড়, মৌলভীপাড়া, টিবি বাউন্ডারি রোড, মডার্ন ফানির্চারের মোড়, বড় মির্জাপুর রোড ও সিটি কলেজ এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে।
পুলিশ বিএনপিকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষে বিএনপির দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।


ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করেছে বলে জানান মহানগর বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহতেশামুল হক শাওন।
খুলনা সদর থানার ওসি শাহাবুদ্দীন আজাদ বলেন, বিএনপিকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশও ৩৯৩ রাউন্ড রাবার বুলেট এবং ৩৯ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
চাঁদপুরে সংঘর্ষে আহত ১০, আটক ১২
চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক রেল লাইনে অবরোধ করেছে ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা।
পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সড়কের মহামায়া, দেবপুর, হাজীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা।
এছাড়া সকালে শহরে রেল লাইনে আগুন দেয় ছাত্রদল কর্মীরা।

জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১২ অবরোধকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
সকাল ১০টায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। এ সময় অন্তত ১০টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা।
বেলা ১১টার দিকে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সময় টিভির সাংবাদিক ফারুক আহমেদ ও এসএ টিভির সাংবাদিক জিএম শাহীনকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোঁড়ে অবরোধকারীরা।

তবে অল্পের জন্য বোমার আঘাত থেকে রক্ষা পান তারা।
মুন্সীগঞ্জে সিইসির কুশপুত্তলিকা দাহ, আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন
সকালে শহরে ঝাড়ু মিছিল ও পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কুশপত্তলিকা দাহ করেছে জেলা মহিলা দলের কর্মীরা।
পরে তারা রাস্তায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। শহরের পিটিআই মোড়, বাসস্ট্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে ছয়টি হাতবোমার বিস্ফেরণ ঘটায় অবরোধকারীরা।
সকালে লৌহজং উপজেলার মাওয়া চৌরাস্তার পাশে কুমারভোগ ইউনিয়ন ও উত্তর কাজির পাগলা ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়।

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের চার কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
লৌহজং থানার ওসি আবুল কালাম জানান, সকালে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জেলা বিএনপি সকালে মিরকাদিম লঞ্চ ঘাট এলাকায় ঘণ্টাকাল অবস্থানের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের মুক্তারপুর ব্রিজের উপরে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা রাস্তার আশপাশে থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফেস্টুন ও তোরণ ভাংচুর এবং টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে তারা।


পরে পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এছাড়া ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-চট্টগাম মহসড়কে কিছু যানবাহন চলাচলের খবর পাওয়া গেছে। তবে দূর পাল্লার যান চলছে না।
ঝিনাইদহে আ. লীগের ওপর জামায়াতের হামলা
মহেশপুর উপজেলার খালিশপুরে জামায়াত-শিবিরের হামলায় অন্তত সাত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে বিশু ও শাহাজাহান আলিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।


পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, সকাল থেকে জামায়াতশিবিরের প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী খালিশপুরে অবস্থান নেয়। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ শফিকুল আজম খান চঞ্চলের একটি সভা উপলক্ষে নেতাকর্মীরা জড়ো হলে জামায়াতশিবির কর্মীরা হামলা চালায়।
পুলিশ তাদের রক্ষা করতে পাঁচ রাউন্ড শটগানের গুলি ও তিন রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।
মহেশপুর থানার ওসি আকরাম হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ আরেকটি অবিস্ফোরিত বোমা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে।


ফেনীতে পুলিশের উপর বোমা হামলা
বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে জেলায় শিবিরের মিছিল থেকে ছোঁড়া হাত বোমার আঘাতে এক পুলিশ সদস্য, স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ তিনজন আহত হয়েছ্ন। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক শিবির নেতাকে আটক করেছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধের সমর্থনে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পাঠানবাড়ী মোড় থেকে জামায়াত-শিবিরের মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল মোড়ে পৌঁছলে মিছিল থেকে শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হাতবোমা ছোঁড়ে।


বোমার আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ শাহাদাত ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক শেখ ফরিদ রতনসহ তিনজন আহত হয় বলে জানান ওসি।
ঘটনাস্থল থেকে শহর শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক আরফান উদ্দিনকে আটক করেছে পুলিশ।
বরিশালে পুলিশ-অবরোধকারী সংঘর্ষ, আটক ১
রোধী দলের অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বরিশালে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। আটক করা হয়েছে একজনকে।   
বরিশাল নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আবু সালেহ মোহাম্মদ রায়হান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের কাশিপুরের ‘সুরভী পেট্রল পম্পের’ সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

 
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সকালে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল মহাসড়কে এসে যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ এসে লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
মিছিলকারীরা কিছুক্ষণ পর আবার একজোট হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছুড়তে শুরু করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে রাবার বুলেট, শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়তে হয় বলে উপ কমিশনার জানান।
এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।  
সংঘর্ষের সময় ওই পাম্পের সামনে থেকে মাসুদ (২৮) নামে এক যুবককে আটক করা হয়।

তিনি ছাত্রদল কর্মী বলে উপকমিশনার রায়হান জানান।  
গোয়ালন্দে বাস-ট্রাকে আগুন
অবরোধের প্রথম দিন গভীর রাতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ও দৌলতদিয়ায় একটি ট্রাক ও একটি বাসে আগুন দিয়ে বিএনপিকর্মীরা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আবুল বাসার জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে এসব ঘটনায় দৌলতদিয়া টার্মিনাল থেকে বিএনপির তিন কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।