আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরুষকে বুঝতে হলে - ৩য় এবং শেষ পর্ব

কখগ

পুরুষের মনস্তাত্ত্বিকের একটা বিশেষ দিক হলো প্রতিনিয়ত তার হাতের কাজটিতে পারফেকশনের খোঁজ করা। সেটা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আরো অর্থ জমা করা হতে শুরু করে যে হতে পারে যে কোন কিছু, তার এই পারফেকশনের খোঁজ তার ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন স্পষ্ট তেমন একজন খেলোয়ারের প্রতিনিয়ত নিজের ক্যারিয়ার গড়বার দিকেও এই একই উদ্দেশ্য কাজ করে। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি হতে শুরু করে একজন স্মাগলারের আরো নিখুঁত ভাবে নিজের কাজ সম্পাদনের এই আসক্তি যে কোন সময় তার ওপর কতৃত্ব নিয়ে নিতে সক্ষম। আর এখানেই আসে পুরুষকে নিয়ে নারীর আরেকটি প্রশ্নঃ প্রশ্নঃ কেন পুরুষ পারফেকশন নিয়ে এতটা অবসেশনে ভুগে ? যদিও সময়ে সময়ে নারীও তার কাজের মাঝে পারফেকশন খুঁজতে চায়, তারপরেও অধিকাংশ সময়ে নারী তার কাজ আসক্তিহীনভাবেই উপভোগ করতে সক্ষম। অন্যদিকে পুরুষের মনোনিবেশ করবার রীতিটাই এমন যে সে প্রায়ই তার জীবনের বাকি সবকিছু ভুলে তার লক্ষ্য নিয়ে অবসেশনে ভুগতে শুরু করে।

এই অবসেশন খুব বেশি তীব্র আকার ধারণ করলে তা স্বভাবতই তার সম্পর্কে মন্দ প্রভাব নিয়ে আসে। নারীর জন্য সাধারণত পারফেকশন খোঁজবার এই চাহিদা কাজ করে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে। ধরা যাক প্রেমিকের সাথে আপনার সম্পর্ক এ মুহূর্তে জটিলতার মাঝে দিয়ে যাচ্ছে, খুব সম্ভব নিজের ক্যারিয়ার কিংবা পড়ালেখা চালাতে পারলেও তা নিয়ে এ মুহুর্তে আপনি আসক্ত হতে পারবেন না। অন্যদিকে পুরুষ তার সম্পর্কের জটিলতার মাঝেও যে কোন কিছু নিয়ে আসক্ত হয়ে পড়তে সক্ষম, মজার ব্যপারে হলো বিশেষ করে জীবনের জটিলতার মাঝেই সাধারণত পুরুষের এই আসক্তিতে ভোগার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। কোন একটা কাজ নিয়ে পুর্ণ মনোনিবেশ করে জীবনের কষ্টময় জটিলতা ভুলে থাকার এই পদ্ধতিটি পুরুষের একান্তই নিজের।

তার আসক্তির মাঝে সে এমন একটা সচেতনতা খুঁজে পায় যা পারফেকশনের খুবই কাছাকাছি। পুরুষ এবং নারীর মাঝের মৌলিক পার্থক্যগুলো যে শুধু বায়োলজিকাল তা নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিক গভীরতার ক্ষেত্রেও তাদের পার্থক্য বিশাল। বেশ কিছু মীথলজি এবং আধ্যাত্মিক প্রথা অনুসারে এমনটা বলা হয়ে থাকে যে, প্রথম যা সৃষ্টি হয়েছিল তা হচ্ছে আলো, আর এই আলো হলো গিয়ে নারী বা ফেমিনিন এনার্জির উৎস। আর এই নারীময় দীপ্তি যেই শূন্যস্থানে বিকীর্ণ হয় সেটাই হলো গিয়ে পুরুষোচিত এনার্জির সত্যিকারের উৎস। খেয়াল করলেই দেখবেন, অধিকাংশ নারীকে তার ব্যক্তিগত দীপ্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেখা যায়।

কারণ নারী সচেতন বা অবচেতন ভাবে নিজেকে উজ্জ্বলতার সাথে আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম। এটাই তার উজ্জ্বল কেশ, ঝকঝকে ঠোঁট, গোলাপী গাল কিংবা দীপ্তিময় চোখের অধিকারী হতে চাওয়ার অন্যতম কারণ। তার এই দীপ্তিময়তার চাহিদা তার সম্পূর্ণ সত্তা নিয়ে। অধিক পরিণত নারী বুঝতে সক্ষম যে, শুধু শারীরিক ভাবে নয় বরং তার আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের দীপ্তিও তার সত্তাকে উজ্জ্বল করে তোলে। বলা যায় যে, নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝের ফেমিনিন এনার্জিই তাকে জীবনীশক্তির সাথে সদৃশ করে তোলে।

আমাদের মাঝের পুরুষোচিত এনার্জি সেই শুন্যস্থানটির প্রতি অধিক আগ্রহী যেখানে এই নারীময় দীপ্তি আলো ছড়ায়। অধিকাংশ পুরুষ নিজে নাচে অংশগ্রহণ না করে বরং তার প্রেমিকার নাচ দেখতেই পছন্দ করে। সে নারীময় দীপ্তির সাক্ষী হতে অধিক আগ্রহী, সে সচেতনতা বা চেতনার স্থিরতার সাথেই নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পছন্দ করে। কারণ তার এই চেতনা স্থির, যেখানে নারী এনার্জি সবসময় সচল। আর যেসকল পুরুষ নিজস্ব সত্যের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং বিশ্বস্ত অর্থাৎ স্থির ব্যক্তিত্বের অধিকারী, নারীর কাছে তারা তাই অধিক আকর্ষণীয়।

অন্যদিকে নিজস্ব দীপ্তিময়তা এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে সক্ষম নারী পুরুষের কাছে অধিক আকর্ষণীয়। পুরুষ অধিকাংশ সময় তার জীবনের বাইরে দর্শন, খেলাধুলা কিংবা ক্ষমতার মাঝে পারফেকশনের খোঁজে চলতে থাকে। তবে নিজের অবচেতনের এই গভীর আকাঙ্ক্ষার সাথে পরিচিত না হবার কারণেই সে বুঝতে পারে না যে সচেতনতার স্থিরতা আর জীবনের স্থিরতা আলাদা দুটো বিষয়। সচেতনতা যখন স্থির তখন হয়ত সে নিখুঁত, কিন্তু জীবনে স্থিরতা আসার অর্থ হলো সম্পূর্ণ আলাদা। জীবন হলো সক্রিয়তার খেলা, এজন্যই জীবন ফেমিনিন এনার্জিতে পূর্ণ, আর এই এনার্জি তখনই সবচাইতে সুন্দর যখন সে সচল।

যে কোন কিছু যা জীবিত তা কখনো নিখুঁত হতে পারেনা, তারপরেও পুরুষ সবকিছুকেই নিখুঁত করে নিতে চায়। সে পারফেক্ট ব্যাংক ব্যাল্যান্স নয়ত ক্ষমতার শীর্ষ স্থানটি চায়, সে তার খেলার মাঝে পারফেকশন খোঁজে, নিখুঁত নারীদেহ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগে অথবা নিখুঁত দর্শনের খোঁজে আত্মনিয়োগ করে। পুরুষ এবং নারীর মাঝের অন্যতম ভুল বোঝাবোঝির কারণ হলো এটা। স্থিরতা নারীর জন্য অবান্তর। নারী প্রেম, ভালোবাসা এবং জীবনের প্রতি আগ্রহী, যেখানে জন্ম, মৃত্যু এবং পরিবর্তন থাকবে।

জীবন স্থির এবং নিখুঁত হলেই বরং নারীর কাছে তা বিষিয়ে উঠতে শুরু করবে মনের অবচেতনে। অন্যদিকে পুরুষের জন্য পরিবর্তন অভিশাপের মত। এবং বিশেষ করে যখন ফেমিনিন এনার্জি দ্বারা পুরুষ হুমকির সম্মুখীন হবে তখনই সে বহিরাগত কোন কিছুর মাঝে স্থিরতা এবং পারফেকশনের খোঁজে আত্মনিয়োগ করে সবথেকে বেশি। পুরুষকে জীবনে সবকিছুর মাঝে স্থিরতার খোঁজ না করে বরং পরিবর্তন এবং ভালোবাসাকে আলিঙ্গন করে তবেই পরিপূর্ণতা খুঁজে নিতে হবে। আর তার এই কাজ অনেক সহজ হয়ে ওঠে যখন একজন নারী নিজের নারীময় এনার্জিকে পূর্ণভাবে আলিঙ্গন করতে শেখে।

নারীর এ কাজটি শুরু হয় নিজেকে পূর্ণভাবে গ্রহণ করে নেবার মাধ্যমে, নিজের দেহ, মন, সৌন্দর্য এবং আবেগকে পূর্নমাত্রায় মুক্ত হৃদয়ে স্বীকার করে নেবার মাধ্যমে। আর নারীর এই আত্মবিশ্বাসী দীপ্তিই পুরুষের পারফেকশনের আসক্তির সবচাইতে বড় প্রতিকার। পুরুষের বুঝে নিতে হবে যে, সে যদি জীবনকে তথা নারীকে নারীর মত করে গ্রহণ না করে নিতে পারে তবে তার জন্য জীবন হয়ে পড়ে একমাত্রিক। জীবনে সে যদি আলো, দীপ্তি এবং এনার্জি চায় তবে তাকে জীবনের সকল পরিবর্তনকে প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করা শিখে নিতে হবে। প্রশ্নঃ কেন প্রায়ই সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করছে বলে আমার মনে হয় ? পুরুষ মনস্তাত্ত্বিকের মুখ্য ভয় হলো জীবনে অকৃতকার্য হবার ভয়।

আর নারী মনস্তাত্ত্বিকের ক্ষেত্রে এই ভয়টা হলো সম্পর্ক না টেকার ভয়, ভালবাসা না পাবার ভয়। আর এই দুটো ভীতি পুরুষ এবং নারীকে ভিন্নভাবে চালিত করে। পুরুষের অবসেশন হলো সমস্যা সমাধান নিয়ে। যদি কোন সমস্যা থাকে তো পুরুষের পূর্ণ মনোনিবেশ এই সমস্যার দিকে চলে যায়। ধরা যাক, ব্যাংক থেকে ফোন এসেছে আপনার স্বামীর অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে।

তার জন্য সে মুহুর্তে এই সমস্যাটি অবিলম্বে অগ্রাধিকার পাবে। তার পূর্ণ মনোনিবেশ আপনার দিক থেকে সরে গিয়ে এই সমস্যাটির দিকে ধাবিত হবে। আর এর ফলে ব্যক্তিগতভাবে আহত হয়ে হয়তবা আপনিও নিজেকে সরিয়া নেবেন, সে সচেতনভাবে এ কাজটি করছে ভেবে। অথচ এই প্রতিক্রিয়াগুলো খুবই সহজ এবং সরল, পুরুষ এনার্জি আর নারী এনার্জির মাঝে ভিন্নতা মাত্র। নারী হিসাবে আপনার কাছে সম্পর্কই সবার ওপরে।

আপনার মনে সর্বদাই তার ভালোবাসা হারানোর ভয় কাজ করে। অন্যদিকে সে তার জীবনের সমস্যাগুলো নিয়ে সবথেকে বেশি সংবেদনশীল। সে তার বিশ্লেষণ এবং কার্যসম্পাদনের পুরুষালী মুডে অবস্থান করছে। কারণ তার ভয় ব্যর্থ হবার। নিজেকে আপনার থেকে সরিয়ে সে আপনাকে কোন বার্তা দিচ্ছে না।

সে এমন করছে কারণ এটাই পুরুষালী অস্তিত্বের প্রকৃতি। অন্যদিকে আপনি তাকে আহত করবার জন্য নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন না। বরং আহত হবার ভয়ে তা করছেন, যদিও শেষ পর্যন্ত আপনারা দুইজন্যই একে অন্যকে আহত করছেন। তার সমস্যার দিকে মনোনিবেশ করাটাকে আপনার কাছে মনে হতে পারে আপনাকে প্রত্যাহার করার মত। আর এ সময় যদি আপনি নিজেকে তার কাছ থেকে সরিয়ে নিন তবে সেও ঠিক তাই ভেবে নেবে।

সে হয়ত ভাবতে পারে, “ এইদিকে আমি এতবড় একটা ঝামেলা সামাল দিচ্ছি, আর এসময়ে সে এমনটা করছে। ” সে বুঝতে পারেনি যে আপনি আহত হয়ে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তবে এব্যাপারে সে বেশ সচেতন যে আপনি তাকে সমর্থন করছেন নাকি এড়িয়ে চলছেন। পুরুষালী এনার্জি নারীর কাছ থেকে তার জীবনীশক্তি ও দীপ্তিময় সমর্থন আশা করে। আর এটুকু পৃষ্টপোষকতা তার সবথেকে বেশি দরকার সমস্যা সমাধানের সময়।

তার প্রত্যাহারে আহত হয়ে আপনি যদি নিজেকে তার কাছ থেকে গুটিয়ে নেন, তখন সেও সেটাকে প্রত্যাহার হিসাবে নেবে এবং আহত হবে, ঠিক যেমনটা আপনার মনে হয়েছিল। আপনি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন কারণ তার মনোনিবেশ এখন অন্য জায়গায়। আর সে হয়ত আহত কারণ সে আপনার সমর্থন পাচ্ছে না। হটাত করে আপনাদের দুজনের মাঝেই তৈরি হবে একধরণের টেনশন। দুজনেই ভালোবাসাহীন এবং সমর্থনহীন অবস্থায় নিজেকে আবিস্কার করবেন।

আপনার প্রেমিক যখন একটি সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেকে সরিয়ে নেন, বুঝতে শিখুন যে এটা তার ঐ সময়ের চাহিদা। এমনকি এটাই হয়ত আপনার প্রতি তার ভালোবাসা আর পরিচর্যার অভিব্যক্তি। নিজেকে এসময় আরেকটু সচেতনতার সাথে খেয়াল করুন, আপনি কি আহত হয়ে তার থেকে সরে যাচ্ছেন নাকি তার এই চাহিদাটিকে গ্রহণ করতে পারছেন। অবশ্যই এখানে পুরুষেরও অনেক কিছু শেখবার আছে, তাকে তার ভালোবাসা এবং সময়ের চাহিদা আরো প্রেমময় ভাবে আপনার সাথে কমিউনিকেট করা শিখে নিতে হবে। তার সাথে আপনার হৃদয়ের সংযোগের ব্যপারে তার আরো সচেতন হতে হবে যেন তার সমস্যা সমাধানের চাহিদা আপনার ভালোবাসার চাহিদার জন্য বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।

তবে তার আগে, জীবনে ব্যর্থ হবার তার ভয়কে আরো সংবেদনশীল দৃষ্টিতে দেখতে পারাটা আপনাদের উভয়ের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে আসবে। প্রশ্নঃ পুরুষ কেন আরো আবেগময় হতে পারে না ? আবেগ আর ভালোবাসা এক নয়। পুরুষোচিত ভালবাসা প্রায়ই নীরব, পক্ষপাতমূলক, কিংবা অটল। অন্যদিকে নারীর ভালবাসা প্রায়ই অশ্রুপূর্ণ, উৎফুল্ল অথবা অধীর। এটা বোঝা প্রয়োজন যে ভালবাসার অনের গুলো আকার রয়েছে এবং অনেকভাবে তা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।

বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা থেকে নারী প্রায় প্রতিদিনই খুব শক্তিশালী কিছু আবেগ অনুভব করে থাকে, যার বেশিরভাগই ভালবাসা অথবা তার অভাব থেকে আসে। আর এজন্য তার ধারণা হয় যে, পুরুষেরও এমন আবেগ অনুভব করা উচিৎ। কিছুসংখ্যক পুরুষ তা করেও, অন্যরা করে না। ঠিক যেমন নারীর আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করবার পুরুষালী চাহিদাটি থেকে পুরুষের বেরিয়ে আসতে হবে তেমনি নারীরও বেরিয়ে আসতে হবে পুরুষের নিজেকে আরো আবেগময়তার সাথে প্রকাশের চাহিদা থেকে। সম্পর্কের সবচাইতে বড় দায় যে সবকিছুর ওপরে ভালবাসা দেয়া এবং নেয়ার চর্চা করা সেটা বুঝতে হবে নারী-পুরুষ দুজনকেই।

আপনি যাই চিন্তা করুন, যেই আবেগের মাঝেই থাকুন না কেন, আপনাকে ভালবাসা আদান-প্রদানের চর্চা করে যেতে হবে। নারীময় আবেগ আর পুরুষালী বিশ্লেষণ দুটো ভিন্ন রীতির যোগাযোগ ব্যবস্থা মাত্র। একটা আরেকটা থেকে অধিক ভালবাসাময় – এমনটা চিন্তা করা একেবারেই ভুল। ভালবাসার প্রকাশ পদ্ধতির চাইতে বরং মুক্ত হৃদয়ে ভালোবাসা দেবার অভিলাষটা অধিক মূখ্য। তাই প্রেমিক কেন আরো আবেগময় হতে পারে না এই চিন্তা না করে নারীর নিজের হৃদয়কে সনাক্ত করতে হবে।

হৃদয় থেকে শ্বাস গ্রহণ করে সে অবস্থায় শিথিল হওয়া শিখে নিতে হবে। আর হৃদয়ের গভীরের এ জায়গাটি সকল প্রতিক্রিয়া কিংবা প্রত্যাহারের উর্ধে, এমনকি প্রেমিক যখন ভালোবাসতে ব্যর্থ তাকে শাস্তি দেবার চাহিদারও উর্ধে। আর হৃদয়ের একদম গভীরে ক্ষত থাকলেও তা ভালোবাসা দেয়া এবং নেয়ার মাঝেই পূর্নতা খুঁজে বেড়ায়। আর নারীর মুক্ত হৃদয়ের এই সৌন্দর্যেই ধীরে ধীরে পুরুষ তার নিজের হৃদয়ের গভীরে আরো শিথিল হতে শিখবে, তার ভালবাসা প্রকাশের পদ্ধতি আবেগময় হোক কিংবা অন্যরকম হোক। প্রশ্নঃ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পুরুষ কেন এত ভয় পায় ? পুরুষের মনস্তাত্ত্বিকের সবথেকে বড় লক্ষ্য হলো গিয়ে স্বাধীনতা Click This Link ।

এই স্বাধীনতা হতে পারে অর্থনৈতিক, পেশাদারী, শৈল্পিক কিংবা আধ্যাত্মিক। অন্যদিকে নারী মনস্তাত্ত্বিকের সবথেকে বড় লক্ষ্য আর অগ্রাধিকার সম্পর্ক আর ভালোবাসার। পুরুষের মনোযোগ নারীর ওপর থেকে স্রে গেলেই সে ভাবতে শুরু করে যে, “ নিশ্চয়ই আমি ভুল কিছু করছি, আমি নিশ্চয়ই কোন ভুল করছি, নয়তবা সে আমার সাথে আরো সময় অতিবাহিত করতে চাইতো। ” বেশিরভাগ পুরুষকে যদি ভালোবাসা এবং তার শিল্প/পেশা/গন্তব্যের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নিতে বাধ্য করা হয় তবে সে পরেরটিকেই বেছে নেবে। এমনকি পুরুষালী এনার্জিতে অবস্থান করা একজন নারীও ভালোবাসার ওপরে তার স্বাধিনতাকেই বেছে নেবে।

নারীময় এনার্জিতে পরিপূর্ণ নারীর জন্য ভালোবাসা আর অন্তরঙ্গ সম্পর্কই সবচাইতে মুখ্য। অন্যদিকে পুরুষের জন্য জীবনে সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারাই মূখ্য। এবং তার এই স্বাধীনতার খোঁজ চালু রাখার জন্য সে যে কোন কিছু করতে পারে। কোনভাবে যদি তার ধারণা হয় যে, আপনার সাথে সম্পর্ক তার এই স্বাধীনতার অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে তবে সে কমিটমেন্টে যেতে চাবে না। সে চাবে তার বিকল্প পথগুলো খোলা রাখতে।

একটা সম্পর্কের খুব গভীরে যখন একজন পুরুষ প্রবেশ করে তখন সে তার মনোযোগের একটা বড় অংশ আপনার সাথে ভালোবাসায় দিতে বাধ্য হয়। আর এটা তাকে ভয় পাইয়ে দেয়। তার স্বাধীনতার একটা বড় অংশ কমে যাবার কল্পনা করে সে। ফলশ্রুতিতে সে হয় নিজেকে গুটিয়ে নেয় নয়তবা কমিটমেন্টে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। খুব বেশি সময় ধরে গভীর ভালোবাসার মাঝে অবস্থান করার ফলে এমনটা হয়ে থাকে সবথেকে বেশি।

প্রশ্নঃ পুরুষ কেন আরো উন্মুক্ত কিংবা অরক্ষিত হতে পারে না? নারীর ধারণা যে পুরুষ অরক্ষিত অবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করতেই চায় না। আপনার প্রায়ই মনে হবে যেন সে নিজের চারপাশে অভেদ্য দেয়ালের প্রতিরক্ষাবুহ্য দাঁড় করিয়ে রেখেছে। প্রকৃতপক্ষেই হয়ত সে চায় না এ মুহূর্তে তার জীবনে আপনি অথবা অন্য কেউ প্রবেশ করুক। হতে পারে সে আসলেই খুবই অনমনীয় এবং দৃঢ়। আবার হতে পারে এখানে সম্পূর্ণ আলাদা একটা ব্যপার ঘটে চলেছে।

নারীর দৃষ্টিতে উন্মুক্ত আর পুরুষের দৃষ্টিতে উন্মুক্ত হবার রুপ সম্পূর্ণ আলাদা। আবেগের প্রকাশ করাকে যেখানে নারী অরক্ষিত হবার প্রধাণ প্রতীক হিসাবে বিচার করে সেখানে পুরুষের কাছে তার আবেগের প্রকাশ করাটাই নিজেকে উন্মুক্ত করবার প্রতীক নয়। একজন পুরুষের কাছে সবচাইতে দুর্বলতর মুহুর্ত সেটাই যখন সে দুরদর্শিতার অভাবে ভুগবার কথা স্বীকার করে। অর্থাৎ নারীর মত নিজের আবেগ প্রকাশ নয় বরং জীবনে দুরদর্শিতার অভাব স্বীকার করাটাই পুরুষের জীবনের দুর্বলতম মুহূর্ত। নারীর দুর্বলতম মুহূর্ত হতে তার নিজেকে উন্মুক্ত করবার প্রকাশও তাই ভিন্ন।

তার দুর্বলতা প্রকাশ পায় তখন যখন সে নিজেকে এমন প্রশ্ন করে, “আমি কি নিজের প্রতিভার পূর্ণ ব্যবহার করছি? আমি কি নিজের কল্পনাশক্তির পুরোটা ব্যবহার করছি, নিজের সত্যকে অনুসরণ করছি ? আমি কি সঠিক পথে চলছি, নাকি আমি প্রতিভা অপচয় করছি ?” “এই সম্পর্কটিতে আমি ভাল অনুভব করছি না” এরকম আবেগ পুরুষের জন্য অধিকাংশ সময় গৌণ। সম্পর্কের ব্যপারে তার প্রশ্ন মূলত সার্বিকভাবে তার জীবনের ব্যপারে প্রশ্ন থেকে উদ্বুদ্ধ হয়। পুরুষের জীবনের সবচাইতে দুর্বলতম স্থান সেটাই যেখানে সে নিজের জীবনের গতিপথ নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করবে, প্রশ্ন করবে সে নিজস্ব সত্যের পথে রয়েছে কিনা। সম্পর্কের মধ্যে হয়তবা আপনার প্রেমিক মাঝে মাঝে আসলেই নিজের চারপাশে দেয়াল দিয়ে রাখবে। আবার এমনও হতে পারে যে আপনার দৃষ্টিতে যেটা অরক্ষিত তার দৃষ্টিতে হয়ত সেটা নয়।

এই সম্ভাবনাটিকে তাই মনে গেথে নিন যে, যখন আপনার প্রেমিক তার জীবনের গন্তব্য বা লক্ষ্য নিয়ে কথা বলছে তখনই সে আপনার কাছে নিজের সত্ত্বার সবচাইতে গোপনীয় অংশটি তুলে ধরছে। এটা করতে পারলেই তার নিজেকে আপনার কাছে উন্মুক্ত করবার প্রক্রিয়াটার মর্ম আপনি উপলব্ধি করতে শিখবেন। আর সবচাইতে দুর্বল মুহূর্তে একে অন্যকে ভালোবাসতে পারাটাই না নারীপুরুষের সম্পর্কের পূর্নতার প্রতীক। আগের পর্বঃ Click This Link https://www.facebook.com/DoctorXBD

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.