আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃতিকে কষ্ট দেবেন না

আমরা একটা ছোট দল গিয়েছি সুন্দরবনে। মূলত কয়েকজন প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রী। ফিনফুট দেখব বলে। পৃথিবীর বিরলতম পাখির মধ্যে ফিনফুট একটি। আশ্চর্য সুন্দর একটি পাখি।

রাজহাঁসের মতো। কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর তার গায়ের রং। আর কী সুন্দর তীরের মতো শরীর। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনে লুকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে তার দেখা মেলে।

যদি ভাগ্য প্রসন্ন হয়। সুন্দরবনের জেলেদের খপ্পরে পড়ে ক্রমেই কমে যাচ্ছে তাদের সংখ্যা। তা যা-ই হোক, আমরা একটা হাতে বাওয়া ছোট নৌকা নিয়ে ঘুরছি বর্ণিল সবখানে। এমন সময় দেখা মিলল ফিনফুটের। আপন মনে পানিতে সাঁতরাচ্ছে।

সঙ্গে একটা বাচ্চাও আছে।

আমরা কেউ ছবি তুলছি। কেউ দুরবিন দিয়ে দেখছি। উত্তেজনায় কাঁপছি সবাই। আর ঠিক তখুনি ভটভট শব্দে এবং উচ্চ কোলাহলে একদল ভ্রমণকারী আনন্দফুর্তি করতে করতে এগিয়ে এল।

মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেল পাখিটা।

এ তো গেল একটি অভিজ্ঞতা। এ রকম অসংখ্যবার বিরক্তিকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে আমাকে। একবার সুন্দরবন থেকে লঞ্চ ঘুরিয়ে চলে গেছি; কারণ, কাছেই আরেক লঞ্চ থেকে অবিরাম উচ্চ শব্দে হিন্দি সিনেমার গান বাজছিল। আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয় সাতছড়ি কিংবা লাউয়াছড়ার জঙ্গলে।

ডজন ডজন বাসে করে পিকনিক পার্টি যায় সেখানে। হাজার হাজার মানুষ হল্লা করতে করতে ঢোকে। রীতিমতো ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে তারা। আমরা যারা পশুপাখি দেখতে যাই, হতাশ হতে হয় তাদের। কারণ, ওদের হল্লায় অনেক আগেই পালিয়ে যায় বনের বাসিন্দারা।

সারা দিন তারা আর বের হয় না। তার মানে সারা দিন তাদের খাবার আহরণ বন্ধ!

এ তো গেল শব্দদূষণ। অন্যদিকে রয়েছে বর্জ্যদূষণ। বাংলাদেশের যেখানেই গেছি আমি, দেখেছি কীভাবে বিস্কুটের প্যাকেট, পানির বোতল এবং সিগারেটের টুকরো পড়ে থাকে। কী অবলীলায় সিগারেট খেয়ে তার শেষটুকু ছুড়ে ফেলে পানিতে।

যেই রেমাক্রি একসময় সুন্দর, সমাহিত দেখেছি, সেই দূরাঞ্চলও আজকে দূষণে দূষণে আক্রান্ত।

সেন্ট মার্টিনের তলদেশে একসময় প্রায় বছরই আমরা স্কুবা ডাইভ করে পরিষ্কার করেছি। কী না পেয়েছি সেখানে—কোকের বোতল, প্লাস্টিক, কাপড়, সবই। আর অসংখ্য ভ্রমণকারী জাহাজের আনাগোনায় কোরালের ওপর বালুর আস্তর পড়ছে। মরে যাচ্ছে এই অপূর্ব সুন্দর কোরাল দ্বীপ।



আমি দেখেছি কী অবলীলায় ভ্রমণকারী সেন্ট মার্টিন থেকে কোরাল কেটে নিয়ে যায়। আমি দেখেছি পাহাড়ে গিয়ে একটা বনমোরগ ডিনারে পাওয়ার আকুতি। আমি দেখেছি কালিঙ্গার অসাধারণ গর্জন বনে বসে রাতের আঁধারে রাতজাগা পাখিদের ডাক না শুনে গানের চটুলতায় ভাসতে। আমি দেখেছি ফারোয়ার আদিবাসী গ্রামে গিয়ে ওদের ঐতিহ্যকে নাক সিটকাতে। ...গন্ধে বমি করতে।

এভাবেই আমরা ক্রমাগত নষ্ট করে ফেলছি আমাদের নৈসর্গ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে। ভ্রমণ হয়ে উঠছে কেবলই ঢাকার বাইরে যাওয়া। নিছক একাশিয়া বনে বসে দুপ্লেট বিরিয়ানি খাওয়া। আমরা ঘুরে বেড়াতে চাই। কিন্তু বেড়ানোর সেই ঠুনকো পরিবেশের যত্ন নিতে চাই না।

যদি এভাবেই চলে, তাহলে সব বেড়ানোই হয়ে যাবে শিশুপার্কে যাওয়ার শামিল।  

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.