আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাশের মিছিলের উপরে বাংলাদেশ

স্বপ্নবাজ

টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া , রুপসা থেকে পাথুরিয়াব্যাপী লাশের মিছিল চলছে । প্রতি মূহুর্তে লাশের মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে । নতুন নতুল লাশ । কেউবা গুলি খাওয়া লাশ , আগুনে পোড়া লাশ , চিকিৎসার নামে হত্যা করা লাশ , জবেহ করে মেরে ফেলা লাশ , শ্বাস রোধে হত্যা করা লাশ , গুম করে মেরে ফেলা লাশ , রিমান্ডের নামে মেরে ফেলা লাশ , টর্চার সেলে মেরে ফেলা লাশ , ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা লাশ এবং আরও যে কত শ্রেনীল লাশ । শুধু লাশ আর লাশ ।

এভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে লাশে পরিপূর্ন হয়ে যাবে । গতকয়েক সপ্তাহ ধরে এত পরিমান সুস্থ মানুষ লাশে পরিনত হয়েছে যার প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখ করা সম্ভব নয় । মূহুর্তের ব্যাবধানে লাশ বেড়েই চলছে । লাশের বোঝা পরিবারের কাছে যতটুকুবচ কষ্টের তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি কষ্টের হয়ে গেছে রাষ্ট্রের কাছে । দেশ যেন এ বোঝা বইতে অক্ষম ।

কেন এত লাশ ? অতীতে তো এত লাশ ছিল না । তাহলে কেন লাশের মিছিল শুরু হল ? কে দায়ী এত মানুষ লাশ হওয়ার পিছনে ? কেইবা নিবে এত লাশের দায়ভার ? লাশের প্রতি আত্মীয় স্বজনের শোক প্রকাশের দূ:খে দেশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে । যা দাবানল , সুনামির মত শক্তি নিয়ে যে কোনো সময় আঘাত হানতে পারে জীবিতকে লাশ করার জন্য দায়ীদের উপর । আঘাতটা হবে কোথায় ? কেউতো লাশর দায়ভার নিতে রাজি না । আপাত দৃষ্টিতে যাদের কারনে এত মানুষ লাশ হচ্ছে বলে মনে হয় , তারাও লাশের দায়ভার নিতে রাজি নয় ।

তাদের কারনে কেউ নাকি লাশ হচ্ছে না । তাদের একজন দাবী করছেনি , তিনি গনতন্ত্র রক্ষা করার জন্য স্থির আছেন আর অন্যজন দাবী করছেন তিনি গনতন্ত্র পূনুরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছেন । কার পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান করে লাশের মিছিলের পক্ষে বা বিপক্ষে বলব ? মানবতাবাদীরা কখনো লাশ চাইবেন না , দেশপ্রেমিকারা তো নয়ই । দেশে তো মানবতাবাদী এবং দেশপ্রেমিকের অভাব নেই তবে কেন এত লাশ ? সরকারদলীয় নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন , লাশের ব্যাপারে তিনি দায়ী নন , বিরোধীদলীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তই এর জন্য দায়ী । বিরোধীদলীয় নেত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন , সব কিছুর মূলে সরকারী দলীয় নেত্রী ।

তার খাম-খেয়ালীপনার জন্য আমাকে আন্দোলন করতে হচ্ছে । যার কারনে আমার দলের কর্মীরা শান্তিপূর্ন মিছিল এবং অবস্থান করার পরেও পুলিশ বাহীনি এবং সরকারী দলে ক্যাডাররা আমার দলের নেতা কর্মীদের হত্যা করছে । পুলিশ বাহীনিকে এর কৈফিয়ত দিতে বললে তারা বলে , আমাদের উপর উপরের নির্দেশ আছে । কিন্তু সে উপরটা যে কোন পর‌্যন্ত তা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় । সরকারীদলের নেতা কর্মীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে আমাদের কি দোষ বলূন , আমাদের উপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে আর আমরা বসে বসে আঙুল চুষব সেটা তো হয় না ।

আমাদেরও তো একটা প্রেসটিজ আছে । আমরা সরকার দলীয় লোক । আন্দোলনকারীদের কাছে আন্দোলনে মাঠে নামার কারন জিজ্ঞাসা করলে তারা ইতিহাস শুনায় , আমাদের উপর কেউ কখনো অন্যায় অত্যাচার করলে আমরা তা মাথা পেতে নিতে রাজি না । আমাদের পূর্বসূরীরাও সেটা নেননি । দেখেননা তারা কিভাবে পাকিস্তানের সাথে মরনপণ যুদ্ধ করে সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছে ।

আমরা কখনো মাথা নোয়াবার জাতি নই । তাই তো আমাদের এক কবি বলেছেন “ সাবাস বাংলাদেশ , এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয় ; জ্বলে-পুড়ে-মরে ছাড়খার , তবু মাথা নোয়াবার নয় । আন্দোলন কারীদের মুখের কথা শুনে তাদেরকেই সঠিক মনে হয়েছে । তবে সত্য কথা বলতে কি , আলাদা আলাদা ভাবে যখনই যার কথা শুনেছি তখনই তার কথা সত্য-সঠিক মনে হয় । উপায়ান্তর না দেখ লাশের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোমরা মরতে গেলে কেন ? লাশ উত্তর দিল কেইবা মরতে চায় বলেন ? আপনারা যারা জীবিত আছেন তারা জীবনকে যতটা ভালবাসেন আমরাও তার চেয়ে জীবনকে কম ভালবাসতাম না ।

তবে বাংলাদেশে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেটা আওয়ামীলীগ বনাম বি এন পি এর মধ্যকার যুদ্ধ নয় । এ যুদ্ধ আওয়ামীলীগ বনাম গোটা দেশের , সত্য বনাম মিথ্যার । দেশকে রক্ষা করা তথা দেশের গনতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য আমরা যদি এগিয়ে না আসি তাহলে দেশটাকে কে রক্ষা করবে বলুন ? তাদের পরিবারের পরিনতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বলেন , পরিবারের দু:খ কষ্ট লাঘব করার জন্য বাবা মা আমাদের অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছে তাইতো অত্যন্ত দূ:খ হয় আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না । তবে এই ভেবে সান্ত্বনা পাচ্ছি যে আমরা পরিবারের উপর দেশের স্বার্থকে প্রধান্য দিতে পেরেছি । তবুও সকল কল্পকাহিনীর উর্ধ্বে উঠে বলতে চাই লাশ কোন অবস্থাতেই কাম্য নয় সুতরাং যাদের কারনে লাশের মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাদের অবিলম্বে সামাজিক ভাবে বয়কট করা উচিত ।

সে যে দলের হোক , যে মতাদর্শের হোক ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.