আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখোশের বাইরে বেল

এখন আর তিনি গুহাবাসী নন। অন্ধকারের ‘নাইট’ নন। মুখোশের আড়ালে মুখ ঢাকাও আর নয়। সঙ্গে নেই অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। আর সেই চোখ ধাঁধানো গাড়িটাও।

মোদ্দাকথা, এখন আর তিনি সুপারহিরো নন। ব্যাটম্যান এখন ইস্পাত কারখানার শ্রমিক। আগুনের আঁচে ঘেমেনেয়ে কাটে জীবন!
গত বছর ‘ব্যাটম্যান’ সিরিজের শেষ ছবি করার পর এই প্রথম নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে ক্রিস্টিয়ান বেলের। আগামীকাল মুক্তির অপেক্ষায় থাকা আউট অব দ্য ফার্নেস বেলের ব্যাটম্যান-পরবর্তী জীবনের প্রথম ছবি। এই ছবিই বলে দেবে ‘আউট অব দ্য ব্যাটম্যান’-এর জগৎটা তাঁর জন্য এখন কেমন।


ছবিতে রাসেল বেজ নামের চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বেল। মধ্যবয়সে মধ্যবিত্ত জীবন যাপন করছে রাসেল। দিনমান কারখানায় হাড়ভাঙা খাটুনি। রাতে বাসায় ফিরে অসুস্থ বাবার সেবা। এই বৃত্তেই আটকে আছে তাঁর জীবনের সব স্বপ্ন।

যে স্বপ্নগুলো খাঁচা ছেড়ে বের হওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করে। যে স্বপ্নগুলো ডানা মেলে উড়তে চায়। তাদের পরিবারে আর আছে ইরাক-যুদ্ধফেরত ভাই রডনি। যে কিনা অপরাধ জগতে পা বাড়িয়ে হারিয়ে যায়।
আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় রাসেলকে যেতে হয় জেলে।

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাসেলের সামনে খোলা থাকে দুটো পথ। আবার সেই মধ্যবিত্তের ঘানি টেনে চলা একঘেয়ে জীবন কিংবা নিরুদ্দেশ ভাইয়ের রেখে যাওয়া পায়ের ছাপ অনুসরণ করে সেই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। কী করবে রাসেল?
এই হলো ছবির গল্প। ২০০৯ সালে ক্রেজি হার্ট পরিচালনা করে নজরকাড়া স্কট কুপারের নতুন ছবি। নিজের দ্বিতীয় ছবিতেই বেলকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে পেয়ে গেছেন।

কুপার নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন এ কারণেও, ছবিটি প্রযোজনা করতে এগিয়ে এসেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও।
খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্নের মেঘ মনের আকাশে ওড়াউড়ি করছে। ক্রিস্টোফার নোলানের সাম্রাজ্যের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতেই কি খুব সচেতনভাবে নতুন পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছেন বেল? আর ব্যাটম্যানের মুখোশ ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই কি বেছে নিয়েছেন এমন একটা আটপৌরে গল্প? ৩৯ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ অভিনেতা কিন্তু অন্য রকম উত্তরই দিলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ক্যারিয়ারে কখনোই ঠিক কোনো কৌশল অনুসরণ করিনি। আমাকে অদূরদর্শী বলতে পারেন, তবে কখনোই খুব ভেবেচিন্তে কাজ করা আমার ধাতে নেই। সামনে যা পাই, সেটা যদি আমার মনে কৌতূহল জাগায়, আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি।


স্কট যখন তাঁকে কয়েক মিনিটের স্বল্পায়ু একটা বৈঠকে গড়গড় করে চিত্রনাট্যটি শুনিয়েছিলেন, বেলের মনে হয়েছিল ‘ইন্টারেস্টিং’। কিন্তু শুটিংয়ের জন্য সময় বের করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমেরিকান হাসল-এর মতো বড় প্রকল্পে তখন কাজ করছেন। একদিন স্রেফ ভদ্রতার খাতিরেই বেল ফোন করেছিলেন স্কটকে। তাঁর বদলে কাকে নিয়েছেন, কাজ কত দূর এগোল—এসব জানতে।


স্কট জানান, কাজ একদমই এগোয়নি। কারণ, তিনি রাসেল চরিত্রটি লিখেছেনই বেলকে মাথায় রেখে। হয় এই চরিত্রে বেল করবেন, নয়তো ছবিটাই হবে না। স্কটের আবেগ বেলকে ছুঁয়ে গেল। তবে বাস্তবতাও বোঝালেন।

‘আমি ওকে বলেছিলাম, বড়জোর আমি ওকে তিন মাস সময় দিতে পারব। এর মধ্যে কি ও কাজ শেষ করতে পারবে? ও কাজ শেষ করে ফেলল ২৭ দিনেই’ জানালেন বেল।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই স্টিভেন স্পিলবার্গের এম্পায়ার অব দ্য সান-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। আমেরিকান সাইকো, মেশিনিস্ট-এর মতো ছবিগুলো সমালোচকদের সপ্রশংস দৃষ্টি তাঁর দিকে ঘোরাতে বাধ্য করেছে। নোলানের মতো করে দেখা ব্যাটম্যানটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন।

যতই দাবি করুন পরিকল্পনা করে তিনি কিছু করেন না, কেউ বিশ্বাস করবে না।
চরিত্রের পেছনে তাঁর শ্রমও সুখ্যাত। মেশিনিস্ট ছবির জন্য পাক্কা ৬৪ পাউন্ড ওজন কমিয়ে ফেলেছিলেন। পেনসিলভেনিয়ার ব্র্যাডক অঞ্চলের ইস্পাত-শ্রমিক হয়ে উঠতে সেই এলাকায় গিয়ে থেকেছেন। সেখানকার ভাষার ধরন রপ্ত করেছেন।

কথা বলার সহজাত ব্রিটিশ ধরনটাকেও বোবা করে রাখতে হয়েছে। বেল বলেন, ‘আপনি যখন এমনটা করবেন, মনেই হবে না আপনি অভিনয় করছেন। মনে হবে আপনি আগে থেকেই এমনই ছিলেন। আপনি আপনার সেই চেনা জগৎটাতেই আছেন। ’
আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে বেলের আরেকটি ছবি—আমেরিকান হাসল।

সাত দিনের ব্যবধানে দু-দুটো ক্রাইম-থ্রিলারধর্মী ছবি, ব্যাটম্যানের মুখোশ ছেড়ে বেরিয়ে আসার এটাই সম্ভবত সেরা উপায়!
 রাজীব হাসান
এলএ টাইমস অবলম্বনে

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।