আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা প্রেমের গল্প- পেট্রোল বোমা।



-অবরোধ হলেই যে পই পই করে বাড়ি চলে যেতে হবে এমন কোন নিয়ম কোথাও আছে? -অবরোধে কলেজে ক্লাস হয়না, কোনো কাজও নাই, তাই বাড়ি চলে এলাম। -আমার কলেজেও যে ক্লাস হয় না এটা কি জানো না? -জানি। তুমিও বাড়ি চলে যাও না কেনো? -আমি যদি তুমি হতাম, তবে ঠিকই বাড়ি চলে যেতাম। আর কারু কথা ভাবতাম না। -মানে? -বলিইই, মানেটা তুমি কি বুঝবে? অবরোধ।

ক্লাস নাই। তাই ভাবলাম এবার ছুটির সময়টা তোমার সাথে কাটাবো। আর তুমি কিনা আমার কথা না ভেবেই চলে গেলে! উফ! তুমি না আমাকে একদম ভালোবাসো না! -কে বললো, ভালবাসি না? দেখতে চাও তোমাকে কতোটা ভালোবাসি? -হু চাই। কি করবে শুনি? -আমি এক্ষুনি রওনা দিচ্ছি। -অবরোধে কিভাবে আসবে? -সিএনজি চলছে দেখলাম।

-থাক। চলে যখন গেছোই, এখন আর এসো না। -না, আমি আসবোই। তোমাকে কতোটা ভালবাসি আমি দেখাবোই। -দেখো নীলা, পাগলামি করো না।

এখন রাস্তাঘাটে বের হওয়া খুব রিস্কি। -হোক রিস্কি। নো রিস্ক নো গেইন। আমি আমার ভালোবাসার জিৎ দেখতে চাই। লাইনটা কেটে দিলে নিজের উপরই নিজের খুব রাগ হলো।

কি দরকার ছিল ওভাবে নীলাকে অভিযুক্ত করার। আমিও যে কি না! দুশ্চিন্তায় ভরে উঠলো মন। সিলেট থেকে এখানে সিএনজিতে আসতে এক ঘন্টা লেগে যাবে। এই এক ঘন্টা যে কিভাবে কাটবে আমার! কায়মোনোবাক্যে প্রার্থনা করলাম, নীলার যেন কিছু না হয়। সে যেন ঠিকঠাক এখানে এসে পৌছাতে পারে।

না। বিধাতা আমার প্রার্থনা শুনলেন না। তিনি বোধহয় বরাবরের মতোই নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছিলেন। এদিকে অবরোধকারীরা পেট্রোল বোমা ফেলে নীলার সিএনজি পুড়িয়ে দিল। কোন এক দয়ালু ব্যক্তি নীলার মোবাইল থেকে আমাকে কল দিয়ে জানালেন, নীলা ভয়াবহ রকমের আহত হয়েছে।

তাকে পাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। নীলার কিছু হলে যে আমি বাঁচবো না। মেয়েটাকে এতো এতো ভালোবাসি, আর সে কিনা আজ আমার জন্য, আজ আমার জন্য এই অবস্থায় পড়লো! আমি গাড়ি নিয়ে ছুটলাম হাসপাতালে। গাড়ি থেকে নামতেই আমার চোখ ছানাবড়া! এ যে দেখি নীলা! তবে আমার নীলার কিছু হয়নি! বিধাতা তবে আমার প্রার্থনা শুনেছেন! শূণ্য বুকটা ভরাট হতে সময় লাগলো না।

গাড়ি থেকে নেমেই জাপটে ধরলাম নীলাকে। হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলাম। নীলা বলল, হয়েছে হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। দেখো আমি ঠিক তোমার কাছে চলে এসেছি। অবরোধও আমাকে আটকাতে পারেনি।

চলো এখন। নীলাকে একেবারে ক্লান্ত লাগছে। কাপড়ে লেগে আছে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। বললাম, কোনো কথা না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো।

তোমার বিশ্রাম প্রয়োজন। তাকে নিয়ে মেসে চলে গেলাম। মেসে কেউ নেই। অবরোধ দেখে সবাই বাড়ি চলে গেছে। আশেপাশের লোকজন দেখলেও আমার কিচ্ছু করার নেই।

এই অবস্থায় নীলাকে একা ছেড়ে দিতে পারি না আমি। নীলাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে বললাম। রাত হয়ে গিয়েছিলো। আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তবু তার পাশে বসে থাকলাম সারারাত।

নীলা শুয়ে আছে। কি যে অদ্ভুত লাগছে ঘুমন্ত নীলাকে। কতোদিন যে কল্পনা করেছি, নীলা শুয়ে আছে, আমি তার পাশে বসে তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি। অপেক্ষা করছিলাম বিয়ের জন্য। দু’মাস পরে বাবা অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে আমাদের বিয়ে ঠিক করবেন, কথা ছিল।

বিয়ের আগেই নীলাকে এভাবে কাছে পেয়ে যাবো স্বপ্নেও ভাবিনি। জয় তু অবরোধ! সকালে তাকে ডেকে তুললাম। নিজ হাতে চা তৈরী করে দিলাম। দুজন চা খাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম, এমন সময় নীলার মায়ের ফোন। নীলার মা- বাবা মনে হয় টেনশন করছেন।

কাল তো তাদের কোন খবর দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। হায় হায়! নিশ্চয়ই খুব বকবেন। ফোনটা রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে নীলার মায়ের কান্না ভেজা কণ্ঠ ভেসে আসলো। - বাবু, নীলা মা-মনি তো নাই।

তোমাকে খবর দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। - নীলা নাই? মানে কি? - কাল তোমাদের ওখানে যাবে বলে রওনা দিলো। কতো করে নিষেধ করলাম। সে তবু সিএনজি নিয়ে... ওর সিএনজিতে একটা পেট্রোল বোমা... পেট্রোল বোমা সব শেষ করে দিল বাবু, সব শেষ। - কি বলেন।

নিশ্চয়ই কিছু ভুল হয়েছে। সে তো আছে। আমি নীলার দিকে তাকালাম। তার চোখে পানি ... নীলা কাঁদছে। তাকে কেমন জানি অনেক দূরের কেউ মনে হচ্ছে।

অন্য জগতের কেউ...। নীলা কোনো কথা না বলতে ইশারা করলো। - বাবু, তুমি পারলে একবার বাসায় এসো। আজ জানাজা হবে। আসরের পর।

আমার হাত থেকে মেবাইল পড়ে গেলো। নীলা, আন্টি এটা কি বললেন? তারা এতো বড় ভুল করছেন কিভাবে? না বাবু, মা ঠিকই বলেছেন। আমার হাতে হাত রাখো। দেখো কিছু বুঝতে পারো কিনা? নীলার হিম শীতল হাতের স্পর্শে আমি অবাক হলাম। ঘোরের মধ্যে থাকায় ব্যাপারটা এতোক্ষণ খেয়ালই করিনি।

নীলা, তুমি তবে মারা গেছো? না এটা হতে পারে না। কিছুতেই তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। হাউমাউ কান্না বুক থেকে বের হয়ে আসলো। না বাবু, দেখো, আমি যাইনি। আমি তোমার কাছে চলে এসেছি।

তোমাকে ফেলে কোথায় যাবো বলোতো? নীলার চোখের দিকে ভালো করে তাকালাম। বর্ণহীন সে চোখে যেন অতল গভীরতা। জড়িয়ে ধরলাম তাকে। হিম শীতলতা আমাকে তীব্র আঘাত করলো। তবু তাকে জড়িয়ে ধরলাম সজোরে।

এভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে কতোক্ষন থাকলাম জানিনা। এক সময় নীলা বলে উঠলো, চলো আমার জানাজায় যাবে না? হু, তাইতো। এখনি রওনা না দিলে পৌছাতে পারবো না। নির্ধারিত সময়েই নীলাকে নিয়ে তার বাড়ি পৌছালাম। সবার সাথে দেখা হলো।

আমাকে দেখে সবাই কান্না শুর করলো। কেউ নীলাকে দেখতে পেলো না। জানাজা শেষে আবার বাড়ি ফিরলাম। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। নীলাকে নিয়ে ছাদে উঠে গেলাম।

আকাশে বিশাল চাঁদ। নীলাকে বললাম আমার কোলে মাথা রাখতে। সে রাখলো। কতোদিন কল্পনা করেছি নীলা, তোমাকে এভাবে কোলে নিয়ে বসে থাকবো চাঁদনি রাতে। তুমি গান গাইবে- আজ জোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে..।

সেই সুযোগ পেলাম যখন তখন তুমি অন্য জগতের বাসিন্দা। নীলা বললো অন্য কোন গল্প করতে। সারা রাত আমরা গল্প করলাম, হাসলাম, কাঁদলাম। তারপর এক সময় নীলা আমাকে তার ঠোঁটে একটা চুমু দিতে বললো। তার ঠোঁট ঠোট রাখলাম।

বরফ শীতল সে ঠোঁটে আমার ঠোঁট দুটো যেন জমে গেল। সে বললো, না হচ্ছে না। তুমি আমাকে বলেছিলে ফরাসি কিস দিবে। আমি সেটাই চাইছি। আমি পারছি না নীলা।

আমি পারছি না। আমার ঠোঁট শক্ত হয়ে যাচ্ছে। নীলা বললো, এভাবে হবে না। তুমি কাল এক কাজ করো। কাল তো আবার অবরোধ।

তুমি তোমার গাড়ি বের করবে। তোমাকে তারা পেট্রোল বোমায় জ্বালিয়ে ফেলবে। তারপর তুমিও আমার মতো হয়ে যাবে। তারপর আমরা দুজন দুজনকে চুমু দেবো। খুব মজা হবে তখন।

পারবে না? অবশ্যই পারবো নীলা। অবশ্যই পারবো। চলো এখন তবে ঘুমোতে যাই? পরদিন গড়ি নিয়ে বের হলাম রাস্তায়। নীলা আমার পাশে। এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় ধীরে ধীরে ছুটে চলেছি।

কোথাও কোনো গাড়ি-ঘোড়া নেই। আমার গাড়ি কি কারু চোখে পড়ছে না? দেখো, তোমরা সবাই। আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তোমরা আসো। আমার গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারো।

প্লিজ, তোমরা আসো। তোমরা আওয়ামীলীগ বা বিএনপি বা শিবির যেই হও, তোমরা আসো। আমাকে জ্বালিয়ে মারো। আমার নীলাকে তোমরা আমার থেকে আলাদা করে দিতে পারো না। সে অধিকার তোমাদের কেউ দেয়নি।

আমার কথা না ভেবেই তোমরা নীলাকে মেরে উল্লাস করেছো আর নেতানেত্রীদের বাহ্বা নিয়েছো। তোমরা এবার আমাকে পোড়াও। আমি নীলার দেশে যাবো। নীলাকে চুম্ দেবো। কোথায় তোমরা বোমাবজেরা সব।

আমাদের দুজনের একজনকে মারলে তো চলবে না। আমাকেও মারো। নীলা ছাড়া আমি তো এমনিতেই মৃত...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.