আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাই হোক অগ্রাধিকার

নেলসন ম্যান্ডেলা—বিশ্বের বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বর্ণবাদ-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন সময় মোট ২৭ বছর কেটেছে কারাগারে। শান্তিতে নোবেল পান ১৯৯৩ সালে। ৫ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে এই মহান নেতার জীবনাবসান ঘটে।

 

নেলসন ম্যান্ডেলা এই বক্তব্য দেন ১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই, লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এক সম্মাননা অনুষ্ঠানে। ব্রিস্টল, ক্যামব্রিজ, ডি মন্টফোর্ট, গ্লাসগো কেলেডোনিয়ান, লন্ডন, নটিংহাম, ওয়ারউইক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিতভাবে এই সম্মাননার আয়োজন করে।

যুক্তরাজ্যের এতগুলো স্বনামখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় আজ এখানে আমার সম্মানে সমবেত হয়েছে—এই অনুষ্ঠানে এত গুণীজনের মধ্যে আমাকে যে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে, এর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই কৃতজ্ঞ। আমি জানি, এই সম্মাননা কোনো একক কৃতিত্বকে অভিবাদন জানানোর জন্য নয়, বরং এই সম্মাননা সেই পথযাত্রাকে মহিমান্বিত করার জন্য, যে পথ ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা বিভেদ ও সংঘাতের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণ সুন্দর আগামীর পথে চলতে শুরু করেছে। আমি সেই অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার সব মানুষের পক্ষ থেকে এই মহতী উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং সম্মাননা গ্রহণ করছি।

আমি আরও আনন্দিত এই কারণে যে আপনাদের এই উদ্যোগ আমার দেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের সুদীর্ঘ সংগ্রামের সময় যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে সমর্থন জুগিয়েছে, তা ছিল আমাদের অনুপ্রেরণার অংশ। আমি নিশ্চিত, এখানে উপস্থিত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারণা পোষণ করে। আমি যদি সময় পেতাম, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই ঘুরে দেখতাম। আপনাদের জানার চেষ্টা করতাম, যাঁরা আমাদের এত সম্মান দিয়েছেন।

এটা হতো আমার জন্য পরম গর্বের বিষয়। উত্তরে গ্লাসগো থেকে দক্ষিণের লন্ডন এবং পশ্চিমের ব্রিস্টল থেকে পূর্বের ক্যামব্রিজ পর্যন্ত সব উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা এবং তাদের স্বপ্ন, লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে পারা, একই সঙ্গে তাদের পরামর্শ নেওয়া, কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা উচ্চশিক্ষার প্রকৃত আধুনিকায়ন ঘটাতে পারে। কিন্তু, আমি খুবই দুঃখবোধ করছি। কারণ, সময়ের স্বল্পতার কারণে আমি আমার ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে পারছি না।

সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সক্ষমতা দিয়ে ব্রিটেন দুই বছর ধরেই উচ্চশিক্ষার প্রসারে আমাদের সঙ্গে আছে।

আমার আজকের এই কথাগুলো তাই তাঁদের জন্য উৎসর্গকৃত, যাঁরা আমাদের সুহূদ, তাঁদের আমি আমার হূদয়ের গভীরতম স্থান থেকে ধন্যবাদ জানাই। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিটি মানুষ আপনাদের অবদান স্মরণ করে এবং আমরা আপনাদের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রত্যাশা করি। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের মতো কর্মসূচিগুলো আমাদের দেশে খুবই প্রশংসিত। আমাদের দেশের অনেক দক্ষ কর্মী এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এসব কর্মসূচি থেকে সহায়তা লাভ করেছেন এবং বর্তমানে তাঁরা দেশের সার্বিক অবস্থান পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।

দীর্ঘদিনের অবরোধ আমাদের দেশের মানুষের কর্মদক্ষতাকে প্রায় ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

এটা শুধু রাজনৈতিকভাবেই একটা অবিচার ছিল না, বরং এটা আমাদের অর্থনৈতিক প্রসারণ এবং আধুনিকায়নকে থমকে দিয়েছিল। এ কারণে, বর্তমানে আমাদের মূল লক্ষ হচ্ছে মানবসম্পদে বিনিয়োগ করা এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা। আপনাদের সহযোগিতা কেবল আমাদের দেশের মানুষের কর্মক্ষমতারই উন্নয়ন ঘটাচ্ছে না, একই সঙ্গে নতুন জ্ঞান ও ধারণারও উন্মেষ ঘটাচ্ছে।

আমরা আমাদের শিক্ষাপদ্ধতির আধুনিকায়নে তৎপর। আমরা চাই, এককালে যে শিক্ষাব্যবস্থা শুধু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর সেবাকে মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছিল, সেটা ভবিষ্যতে সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

এ জন্য আমাদের প্রয়োজন সঠিক কর্মপদ্ধতি ও পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার একটি অংশ হলো, দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্প এবং স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিক্ষার একটি সঠিক সামঞ্জস্য স্থাপন করা। আমরা স্বপ্ন দেখি, দক্ষিণ আফ্রিকা তার উদ্ভাবনী দক্ষতা দিয়ে পৃথিবীর বৈজ্ঞানিক ও সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ জন্য আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূল দায়িত্ব নিতে হবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা চাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের সঙ্গে সংগতি রাখুক এবং বৈশ্বিক উন্নতিতে অবদান রাখুক।

এ বিষয়ে আমাদের উচিত, আপনাদের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং তা কাজে লাগানো। আমাকে ও আমার মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার সব মানুষকে আপনারা যে সম্মান দেখিয়েছেন, তা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে। আমাদের এটা উৎসাহ দেবে পৃথিবীর জ্ঞানভান্ডারে নিজেদের কিছু অর্জন সমর্পণ করতে। আমি আশাবাদী, আমরা উভয় দেশ এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদান এবং পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে সেই স্বপ্নকে সফল করে তুলবে।

পরিশেষে বলি, জ্ঞানের এই সুপ্রাচীন পীঠস্থানগুলো থেকে পাওয়া সম্মান আমাকে বিমুগ্ধ করেছে।

আমি আমার আনন্দকে ভাষা দিয়ে প্রকাশ করতে পারব না। এই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কাছে আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 (ইংরেজি থেকে অনূদিত)

সূত্র: আফ্রিকান ন্যাশনাল

কংগ্রেসের ওয়েবসাইট www.anc.org.za

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.