আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে সরকারগুলো জনগণের সাথে যত রকম প্রতারণা করেছে শিক্ষাই তার মধ্যে প্রধান

লেখক বাংলাদেশে সরকারগুলো জনগণের সাথে যত রকম প্রতারণা করেছে শিক্ষাই তার মধ্যে প্রধান বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কর্পোরেট মুনাফাকেন্দ্রীক সকল দেশেই যখন শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন অংশ বা প্রতিষ্টান দ্বারা দুর্নীতির বিরূদ্ধে কথা বলা হয় তখন আসলে দুর্নীতির এলোমেলো বিশৃঙ্খল রূপ থেকে সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক রূপে কাঠামোবদ্ধ হওয়ার কথাই বলা হয় । বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে বাইরের বাগাড়ম্বর এবং ভিতরের দুর্দশাচিত্র এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ । বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেক বাগাড়ম্বরে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে । এ শিক্ষানীতিকে বাংলাদেশে এ যাবৎকালে যেসব শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে সেগুলোর সাথে পার্থক্য করতে গেলে আলাদাভাবে একে শিক্ষানীতি না বলে পরীক্ষানীতি বললেই যুক্তিসঙ্গত হবে । নীতি প্রণেতাদের কাছে শিক্ষার অবকাঠামো , শিক্ষার লক্ষ্য ,উদ্দেশ্য , শিক্ষাদান পদ্ধতি এ সবকিছু অপেক্ষা পরীক্ষার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।

এখানে শিক্ষার মান বলতে শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভাল ফলাফলকেই বুঝানো হয়। পাঠের বিষয়বস্ত্তু , পাঠদানের পদ্ধতি ,অবকাঠামোগত দিক এগুলো শিক্ষার মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব পায় না । সে কারণে বহুভাগে বিভক্ত শিক্ষা অনেক বাগাড়ম্বরপূর্ণ এ শিক্ষানীতির মধ্যে অস্পর্শ এবং অক্ষতই থেকে যায়। যে যেখানেই থাকুক , শিখুক বা না শিখুক পরীক্ষায় ভাল ফল লাভ করলেই চূড়ান্ত বিচারে ভাল হিসাবে গণ্য হবে এই হল বর্তমানে শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য এবং চালিকাশক্তি । উদ্ভট এক বেপরোয়া তাড়নাই যেন শিক্ষাকে তেড়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

এমনিতেই প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নানা নামের পরীক্ষার ভিঁড়ে শিক্ষার্থীরা আসলে কি শিখছে তা বুঝেই উঠতে পারে না , তার ওপর আবার বর্তমান শিক্ষানীতিতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দুইটি পাবলিক পরীক্ষা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ওপর দুই দুইটি জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ভার চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষার মান কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা রীতিমত গবেষণার বিষয় হতে পারে । অবাক করার মত বিষয় হলো শিক্ষা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বললেও এ নিয়ে কাউকে কোন কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন এ নিয়ে গবেষণা করেই এ সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । অন্যান্য ব্যর্থতা এবং দায়ীত্বকে পাশ কাটানোর জন্য বরাবরই ভাল বা মন্দ ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিগত কৃতিত্বকেই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে চিণ্হিত করা হয় ।

অথচ একজন শিক্ষার্থীর পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা ,পরিবারের পরিবেশ ,শিক্ষাপ্রিতষ্ঠান , শিক্ষকদের পাঠদানের যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর তার ভাল বা মন্দ ফলাফল নির্ভর করে । অত্যন্ত অসাধারণ কোন কেস ছাড়া সাধারণ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থীর ভাল বা মন্দ ফলাফলের জন্য তার ব্যাক্তিগত কৃতিত্ব গ্রাহ্যের মধ্যেই আসার কথা নয় । উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত কৃতিত্ব যদি কিছু থেকেও থাকে প্রাথমিক স্তরের ক্ষেত্রে তা একেবারেই নেই বললেই চলে । এ কারণে প্রাথমিক স্তরে জাতীয় পর্যায়ে তো দুরের কথা শ্রেণীকক্ষ বা বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সতর্ক থাকা প্রয়োজন । পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অনেকগুলো রাজ্য আছে যেখানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই নেওয়া হয় না ।

এই স্তরে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা কোন্ কোন্ দেশে নেওয়া হয় এবং এখানে কোন্ দেশের মডেল অনুসরণ করা হলো তা নীতি প্রণেতারাই বলতে পারবেন । কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষার জাতীয় অর্জন আমরা কি দেখতে পাচ্ছি ? প্রতিবছর কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী ফেল করছে । পরিস্থিতি চোখে পড়ার মত দেখে সরকারের পক্ষ থেকে রেফার্ড পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে । বিভিন্ন তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে এসব ফেল করা শিক্ষার্থীর সবাই গরীব এবং এখানেই তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে । এসব গরীব শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে একেবারেই প্রান্তিক ।

এই প্রান্তিক অবস্থায় থেকে আর একটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য ঝুলে ঝুলে তাদের লাগাতার সংগ্রাম । এই স্তরে জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার আঘাতে প্রান্তিক অবস্থা থেকে ছিটকে পড়ে তাদের সেই সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটছে । এসব গরীব প্রান্তিক শিক্ষার্থীরাতো আছেই সমস্যা অন্যদেরও হচ্ছে । প্রাথমিক স্তরে জাতীয় পর্যয়ে এই দুই পরীক্ষা মধ্যবিত্ত বিশেষ করে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মধ্যবিত্তদের মধ্যে ব্যাপক সংকট তৈরী করেছে । এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পরীক্ষা মানেই তার সাথে অনিবার্যভাবে যুক্ত হয়ে যায় কোচিং ।

এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে । নানা ধরনের কোচিংয়ের ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের । বিশেষ করে বিদ্যালয়গুলোতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের দেৌরাত্নে ভুক্তভোগীদের অতী প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় সংকোচন করতে হচ্ছে । এসব বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের কারণে অনেক ক্ষেত্রে নির্মম এবং করুণ সব পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে । এসব পরিস্থিতির মধ্য থেকে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে এসব পরীক্ষা কি শিক্ষা সংকোচন নীতির নগ্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নয় ? এসব কি জনগণকে বিশেষ করে গরীব মানুষকে তাঁদের সন্তানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার বাগাড়ম্বরমূলক প্রতারণা নয় ? প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নানা প্রকার পরীক্ষার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলোর অভ্যন্তরে এবং বাইরে প্রতারণা এবং ধাপ্পাবাজির যেসব জাল বিস্তার করা হয়েছে তা রীতিমত ভয়াবহ ।

ফলাফল ভাল বা মন্দের বিষয় নয় এর মধ্যদিয়ে কে কতখানি শিক্ষালাভ করছে এবং কি শিক্ষালাভ করছে বলা মুশকিল । ২২/১০/২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.