আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধানের সংবিধান : অলিখিত যেসব কোড

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই লিখব ভেবেছি, সুযোগ হচ্ছিল না। ইদানিং ‘সংবিধান’ ‘সংবিধান’ খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।

কিন্তু ক’জনের এ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান আছে তা না বললেও চলবে। কারণ বাংলাদেশে এখন সবাই জ্ঞানী। তাছাড়া সংবিধান প্রণেতা?রা যখন জীবিত, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর। তবুও দু’কথা বলি, নিজে শেখার জন্য। সংবিধান রক্ষায়(?) আজকাল বিশেষ একটি দল যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে, মনে হচ্ছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।

ভূতের মুখে রামনাম। সংবিধানের শাব্দিক অর্থ সম-বিধান। এর মূল উৎপত্তি “বিধান” থেকে। পারিভাষিক অর্থ : রাষ্ট্রের গঠন ও পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলী, শাসনতন্ত্র ইত্যাদি। মানবিক ইচ্ছা ও অবাধ স্বাধীনতা প্রত্যাশী কামনা যেকোনো রকম বিধানের বিরোধী।

সুতরাং সেই শ্রেণির মানুষ স্বাভাবিকভাবেই একটি রাষ্ট্রের সংবিধানেরও বিরোধী। কারণ বিধান, জীবনবিধান বা সংবিধান মানবিক প্রবৃত্তি ও স্বার্থে আঘাত প্রদানকারী। আর যদি এ কথা স্বীকার করা হয় যে, মানবিক উন্নয়ন ও জীবন যাপনে কিছু না কিছু বিধান বা নিয়মনীতি আরোপের প্রয়োজন আছে, তাহলে ব্যক্তিস্বার্থ ও “খাহেশ” জলাঞ্জলি দিতে হয়। আর এটা মানবিক জীবনদর্শন, অসীম চাহিদা, কামনা-বাসনার স্বরূপ ইত্যাদির শিক্ষা না পেলে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এবং দেখা যাচ্ছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এ জাতীয় শিক্ষা বা বিষয়ই নেই।

তাই অনেকে স্লোগান তুলছে, “বাঁধ ভেঙ্গে দাও”, “বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ” ইত্যাদি। সুতরাং এরা সংবিধান অমান্য বা সংবিধানের অপব্যাখ্যা বা নিজ স্বার্থে এর প্রয়োগ করবেই, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মূলত প্রবৃত্তি বা অসীম কামনায়-বাসনায় বাঁধ দেয়া ছাড়া, প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া কোনো কালেই মানবসমাজে শান্তি আসেনি, আসবেও না। এখন মূল প্রসঙ্গে আসি, সংবিধানের সংবিধান কি? প্রথা, সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রচলিত আইন-কানুন, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিচারে এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু নিয়ম ইত্যাদি। এসব থেকে যাচাই-বাছাই করেই যেকোনো রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

এখন প্রশ্ন- প্রথা, সংস্কৃতি, প্রচলিত আইন-কানুন ইত্যাদি গড়ে ওঠেছে কীসের ভিত্তিতে? আর এসব গ্রহণ-বর্জনইবা হবে কীসের ভিত্তিতে? আর সংবিধানের মূল লক্ষ্য কি? মূল লক্ষ্য শান্তি, মানবিক উন্নয়ন, পারস্পরিক সমঝোতা-সহযোগিতা-সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠা। এগুলো গড়ে ওঠেছে সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশের বহু আগেই। কিভাবে গড়ে ওঠেছিল? মনীষীদের সেইসব প্রাকৃতিক অলিখিত কোড পাঠের মাধ্যমেই। অবশ্য স্বার্থপররা সময়ে সময়ে এর সঙ্গে অনেক কিছুই যোগ-বিয়োগ করে। এজন্যই পরবর্তীতে সংবিধান প্রণয়নে যাচাই-বাছাই ও রচনার প্রশ্ন।

লক্ষণীয় যে, সংবিধানে সবসময়ই নাগরিকদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কল্যাণ সাধনে সবরকম অধিকার দেয়া থাকে। আর যদি কোনো ক্ষেত্রে উপস্থিত সমাধান না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রেও সমাধান তালাশে সংবিধানে দিক-নির্দেশনা থাকে। কোনো কারণে যদি তাও না পাওয়া যায়, তাহলে সংবিধানের সংবিধান প্রকৃতিতে বর্তমান অলিখিত কোডগুলোর পাঠোদ্ধার করতে হবে। আইন তৈরির আইন আছে, সংবিধান রচনারও সংবিধান আছে। সেগুলো অলিখিত, প্রকৃতিতে “কোড” আকারে বর্তমান।

আমাদের সমাজে, দেশে কি তেমন কোনো মনীষী নেই, যারা সাংবিধানিক সংকটের সময়ে সংবিধানের সংবিধান থেকে উপস্থিত সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান দেবেন?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.