আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিক্রিয়া: ফারুকীর ‘টেলিভিশন’কে না বলুন।

আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।

===ফয়সল সাইফ=== কাল রাত নয়টায় বন্ধুদের কাছে গিয়েই দেখি, সবাই মিলে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী’র টেলিভিশন সিনেমাটি দেখছে। ইতিপূর্বে পত্রপত্রিকায় সিনেমাটির বেশকিছু আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্তির কথা জেনেছি। তবে, সময়ের অভাবে দেখা হয়ে উঠেনি। কিন্তু আমার বন্ধুরা এ নিয়ে সেটা দুইবার দেখে ফেলেছে।

তো সিনেমাটি দেখে আমার যা উপলব্ধি হল- তাতে মনে হয়েছে, নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবী করা মানুষগুলোর কাছে, ইসলাম ধর্মটা যেন পাশের বাসার প্রতিবন্ধী ছেলেটার মত। যাঁকে যখন ইচ্ছে খুঁিচয়ে বেশ আনন্দ পাওয়া যায়। আর আমার বন্ধুদের দেখে মনে হল- তাঁরা যেন সেই পুকুরের ব্যঙগুলো- যাঁদেরকে ঢিলের নিশানা বানিয়ে দুষ্টু ছেলেরা আনন্দে মাঁতছে। আর সেই ঢিলে কোনো ব্যঙ আহত বা নিহত হলে, অন্য ব্যঙরাও আনন্দে মাঁতছে। এমনকি নিজেদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও! দুটোই আমার কাছে বিরক্তিকর লেগেছে।

প্রতিক্রিয়ায় আমি শুধু একবার বলেছিলাম- সিনেমাটা যেমন ভেবেছিলাম তেমন নয়। সিনেমার বিষয়বস্তু এমন হওয়া উচিত নয়। তাতেই দেখি আমার এক বন্ধু ভারি অসন্তুষ্ট। কারণ ফারুকী দেশের সবচেয়ে নামী নির্মাতা। তাঁর ভূল হতেই পারে না।

ফলে আমি আর কিছু বলার রুচিবোধ করিনি। তবে, সিনেমার বিষয়বস্তু কেন এমন হওয়া উচিত নয়; সেটা ব্যাখ্যা করা দরকার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যা সহিংসতাকে উসকে দেয়- সচেতনভাবেই আমাদের সবাইকে তা পরিহার করা উচিত। এমনকি যা ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাতœক আঘাত করে- তাও পরিহার করা উচিত। কারণ প্রতিটি ভূখন্ডের স্থিতিশীলতার জন্যই, প্রতিটি সচেতন মানুষের কাছে এটাই আমাদের কাম্য।

কারণ ইতিপূর্বে, কতিপয় বিদ্বেষী মানুষের অপকর্মের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে, বিশ্বের নানা প্রান্তে বেশ কয়েকবারের সহিংসতায়- অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। টেলিভিশন সিনেমাটির গল্পও এমনই অদূরদর্শী, উসকানীমূলক এবং অজ্ঞতাপ্রসূত। জনাব ফারুকী যেভাবে চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবেই ইসলামী ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে; অথচ এর সাথে ইসলামের যোগসূত্র একদম নেই বললেই চলে। আর এটা আমাদের মেনে নিতে হবেই, যে একজন মুসলমান যা- ইসলাম তাই নয়। সাধারণ একজন মুসলমানের চালচলনকে ইসলাম বোঝায় না।

বরং ইসলাম হল- একটা বিধান। এর রয়েছে নিজস্ব রীতি। এখন আপনি তা মানতেও পারেন, আবার এড়িয়েও যেতে পারেন। তাই নির্দিষ্ট একজন মুসলমানের অপকর্মের জন্য- কেউ নীতিগতভাবে ইসলামকে আঘাত করতে পারে না। টেলিভিশন সিনেমাটিতে একজন কঠোর মুসলমানকে (চেয়ারম্যান) দেখানো হয়েছে।

সাধারণত প্রগতিশীলরা এরকম মানুষদের ধর্মান্ধ বলে পরিচয় করিয়ে দেন। আমার কাছে ধর্মান্ধর সংজ্ঞাটা অন্যরকম। যাকগে, সে বিষয়ে কথা বাড়াতে চাই না। তবে, আমার প্রশ্ন হল- যেভাবে ধর্মান্ধকে তুলে ধরা হয়েছে, তা কতটা গ্রহণযোগ্য? ইসলামে কোরআন, সুন্নাহ’র পরও ইজমা, কিয়াস নামে দুটি স্তম্ভ রয়েছে। মুসলমানরা এক সময় ফটোগ্রাফ’কে সম্পূর্ণ হারাম বলত।

তবে, মুসলিম উম্মা’র বিশিষ্ট্যজ্ঞানী ব্যক্তিরা ঐক্যমত (ইজমা) হয়েছেন, যে অতি প্রয়োজনে ছবি তোলা যাবে। এটা সুচিন্তিত মত। আর একটা সুচিন্তিত মত খারাপ হতে পারে না? তাই একে দৃষ্টিকটুভাবে দেখানোর মানে নেই। ইসলামী পন্ডিতদের এটা মানতেই হবে, যে সচরাচর প্রচারিত টেলিভিশনের অনুষ্টানগুলো- ইসলামের সাথে যায় না। যন্ত্রটাকে প্রগতিশীলেরা ইসলামী ধারায় পরিচালিত করতেও রাজি নয়।

তাই ইসলামীধারা ব্যতিত পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলগুলো থেকে- নীতিগতভাবে মুসলমানদের দুরত্ব বজায় রাখাই উচিত। যে মুসলমানের ইচ্ছে সে এটা মেনে নিতে পারে; যাঁর ইচ্ছে নয়, সে না মানুক। এখন ইসলামের এই অবস্থানটা কী দৃষ্টিকটু? অবশ্যই নয়। যুক্তিযুক্তভাবেই নয়। যদি বলেন, এটা দৃষ্টিকটু- তাহলে আপনার অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকার থাকা উচিত নয়।

কারণ, আপনি অতি স্বাধীনতা (অপরাধও অন্তর্ভূক্ত) চাইছেন। আর অতি স্বাধীনতা কোনো সুচিন্তিত চাওয়া নয়। এটা আবেগ এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত। ইসলাম কখনোই টেলিভিশনকে হারাম বলে না; হারাম বলে এর অশ্লীল অনুষ্টানমালাকে। আর এটা অসত্যও নয়।

এবং অশ্লীল অনুষ্টানগুলো সমাজের জন্য উপকারীও নয়। এটা মোটামুটি প্রতিষ্টিত সত্য যে, পর্দায় দেখানো পুরুষদের ঠিকে থাকার জন্য লাগে অভিনয় দক্ষতা; আর নারীদের ঠিকে থাকার জন্য লাগে সুন্দর চেহারা। সাধারণত বিশ্বব্যাপী বিনোদন জগতে নারীদের দেহকে বিক্রি করা হয়। বিখ্যাত হলিউডের এমন কোনো অভিনেত্রী পাওয়া যাবে না, যাঁর অভিনয় জীবনে অন্তত একবার নগ্ন হতে হয়নি। শুধু তাই নয়; সাধারণ বডি স্প্রের বিজ্ঞাপনেও অর্ধনগ্ন নারীদের নেওয়া হয় পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য।

এতে করে দিনে দিনে সেইসব নারীরা, নিজেরাই পণ্য হয়ে গেছে। আমরা যদি টেনিসের বিষয়টা দেখি, ছেলেদের যেসব পোষাক পড়তে দেওয়া হয়- মেয়েদের ঠিক সেরকম ঢিলেঢালা পোষাক পড়তে দেওয়া হয় না। বিচ ভলিবলের কথাই ধরুণ, এখানে মেয়েদের বিকিনি পরে খেলতে হয় কেন? রাগবির কথাও বলব- এত হট কেক বানিয়ে মেয়েদের উপস্থাপন করার কী দরকার ছিল? কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজ পর্যন্ত এসবকে দৃষ্টিকটু হিসেবে ধরে নিয়ে কোনো সিনেমা নির্মাণ হতে দেখলাম না। আসলে একসাথে একটা সমাজ যখন বিপথে চলে যায়, তখন কিছু করারও থাকে না। আমাকে এখন আবার সেই কথাটিই বলতে হচ্ছে, প্রগতিবাদীদের কাছে- ইসলাম ধর্মটা যেন পাশের বাসার প্রতিবন্ধী ছেলেটার মত।

যাঁকে যখন ইচ্ছে খুঁিচয়ে বেশ আনন্দ পাওয়া যায়। ইসলামকে খুঁচিয়ে আসতে না পারলে, বড় নির্মাতা হওয়া যায় না, বড় লেখক হওয়া যায় না, প্রগতিশীল হওয়া যায় না, সভ্য মানুষ হওয়া যায় না। এ সবকিছুই আমার কাছে পরিহাস মনে হয়। পৃথিবীর সংকটটাই এই নির্দিষ্ট জায়গায়, যেখানে নিজস্ব মতহীন একদল গর্দভ থাকে; যাঁরা সারা জীবন সর্বোচ্চ শক্তিকে অনুসরণ করে। সেই শক্তিটা অন্ধ হলেও।

সেটা তাঁদের নিয়ে সমূদ্রে ঝাঁপ দিলেও। তাই আজকের দুনিয়ায় সৌদি আরব নামের দেশটি- পৃথিবীতে সবচেয়ে রক্ষণশীল দেশে হিসেবে সমালোচিত। আমি আসলে জানি না, এই রক্ষণশীলতার দোষটা কী? প্রগতিশীলদের কাছে, সৌদি আরবের সাথে তুলনায় আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানী, কানাডা ঠিক উল্টো অবস্থানে। তাই নিচে সেইসব দেশের তথাকথিত উদারবাদের কিছু নমুন দিচ্ছি- (১) ১৮ই জুলাই ২০১৩ পর্যন্ত হিসাব মতে- -পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আমেরিকাতে। এর ৯৯% ঘটনার সাথে পুরুষরা জড়িত।

ধর্ষিতদের মধ্যে ৯১% নারী, এবং ৯% পুরুষ। যার মধ্যে মাত্র ১৬% মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করা হয়। -পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ইংল্যান্ডে। এর মধ্যে নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে ট্যাক্সিতে। এমন কী ইংল্যান্ডে এক সপ্তাহের মধ্যে এক মেয়ের ৯০ বার ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাও আছে।

-পৃথিবীর মধ্যে পঞ্চম সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে কানাডায়। সেখানে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকে। -পৃথিবীর মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে জার্মানীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার নারী ও শিশু ধর্ষিত হয়ে মারা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি প্রযুক্তি দিয়ে যতটা এগিয়েছে, মানবতার দিক দিয়ে ঠিক ততটাই পিছিয়ে গেছে।

(২) ২৭ই অক্টোবর ২০১৩ পর্যন্ত হিসাব মতে- -পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি টিনএজ প্রেগনেন্সির ঘটনা ঘটে আমেরিকাতে। ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে- প্রতি ১০০০ জনে ৫২.১ জন টিনএজ প্রেগন্যান্ট হয়। যার মধ্যে ৭৫% হিসপানিক এবং কালো’রা। আর ৮৯% নারীরা বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়ে। -পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টিনএজ প্রেগনেন্সির ঘটনা ঘটে ইংল্যান্ডে।

১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে- প্রতি ১০০০ জনে ৩৮.৮ জন টিনএজ প্রেগন্যান্ট হয়। -পৃথিবীতে অষ্টম সর্বোচ্চ টিনএজ প্রেগনেন্সির ঘটনা ঘটে কানাডাতে। ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে- প্রতি ১০০০ জনে ২০.২ জন টিনএজ প্রেগন্যান্ট হয়। তা ছাড়া তালিকার অন্যান্য নামগুলোও অযুহাত দেওয়ার মত নয়। তৃতীয় নিউজিল্যান্ড (১০০০ জনে ২৯.৮ জন), চতুর্থ স্লোভাকিয়া (১০০০ জনে ২৬.৯ জন), পঞ্চম হাঙ্গেরি (১০০০ জনে ২৯.৮ জন), ষষ্ঠ আইসল্যান্ড (১০০০ জনে ২৪.৭ জন), সপ্তম পর্তুগাল (১০০০ জনে ২১.২ জন)।

(৩) ২৬শে আগষ্ট ২০১৩ পর্যন্ত হিসবা মতে- -পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অপরাধের ঘটনা ঘটে আমেরিকাতে। প্রতি বছর সেখানে ঘটা অপরাধের সংখ্যা প্রায় ১১৮৭৭২১৮ টি। -পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অপরাধের ঘটনা ঘটে ইংল্যান্ডে। প্রতি বছর সেখানে ঘটা অপরাধের সংখ্যা প্রায় ৬৫২৩৭০ টি। -পৃথিবীতে তৃতীয় সর্বোচ্চ অপরাধের ঘটনা ঘটে জার্মানীতে।

প্রতি বছর সেখানে ঘটা অপরাধের সংখ্যা প্রায় ৬৫০৭৩৯৪ টি। -পৃথিবীতে অষ্টম সর্বোচ্চ অপরাধের ঘটনা ঘটে কানাডাতে। প্রতি বছর সেখানে ঘটা অপরাধের সংখ্যা প্রায় ২৫১৬৯১৮ টি। এখন আসি সৌদি আরবের কথায়। ওপরের তালিকাগুলোর একটিতেও সৌদি আরবের নাম নেই।

এমনকি পৃথিবীতে সবচেয়ে কম ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সৌদি আরবেই। তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণশীল বলে- দৃষ্টিকটু সমালোচনার শিকার হওয়া দেশটি যদি এমন হয়; তাহলে জনাব ফারুকীর টেলিভিশন সিনেমার গল্পটি এমন হওয়া অপ্রত্যাশিত নয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।