আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরাই ছিল আসল দেশপ্রেমিক !আজকের গাঞ্জা খাওয়া দেশপ্রেমিক না!


ঘড়ি তে সময় সন্ধ্যা ৭:৫৩। তাড়াতাড়ি ব্যাগ গোছাতে লাগলাম, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে । এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছি.। চারিদিকে থমথমে ভাব । চাপা উত্তেজনা।

আজ কাদের মল্লার ফাসি হবে । তড়িঘড়ি অফিস থেকে বেরুলাম এমনিতেই কদিনের অবরোধে নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু আজ রাস্তা কেমন জায়গায় জায়গায় জটলা কিন্তু গলি গুলো একদম ফাকা। হন হন করে হাত তে শুরু করলাম..হঠাত পিছন থেকে একটা কথা শুনে একটু ধীরে হাট তে শুরু করলাম বনানী : ২ জন মহিলা কথা বলতে বলতে যাছে একজন বলছে শেখ হাসিনা হলো সাপ হয়ে কামরায় আর ওঝা হয়ে ঝাড়ে, বোঝার চেষ্টা করলাম কথা টা কেন বলছে,ভাবতে ভাবতে গুলশান ২ এ পৌছে গেলাম গুলশান ২ : কয়েকজন হকার গোছের লোক একসাথে বসে কথা বলছে অপরাধ করছে তো অনেক কিন্তু বুইরাও তো হইয়া গেছে কত দিন আর বাইচ তো! যাবজ্জীবন দিত! আবার ও তো হরতাল দিব ,দেশের অবস্থা আরো খারাপ অইব! হুম ! সত্যি তো দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে, আজ যেন গাড়ি গুলো ও বেশ দ্রুত চলছে , মানুষ গুলো ফিস ফিস করে কথা বলছে, রাস্তায় সাধারণ লোক আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সমান সমান। পুলিশ মোটামুটি অনেক কে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ।

কেমন যেন বাংলাদেশ মনে হছে না! মনে হছে মিশর বা সিরিয়া হবে । গুলশান ২ টপকাপি র সামনে : এক ৮০+ বয়সের চাচা ভিক্ষা করছিলেন , তাকে পার হয়ে কিছুদুর চলে যাওয়ার পর মনে হলো এই লোকটা অনেক কিছুর সাক্ষী , কাছে যেতে চাচা হাত বাড়ালেন আমি বললাম চাচা আজকে কাদের মোল্লার ফাসি ! শুনে চাচা হাত নামিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল , হাহ! ( মাথা নিচু করে একটা অদ্ভূত আওয়াজ করলেন মুখ থেকে ) অনেক ওয়াজ শুনছি ওনার। বললাম চাচা উনি তো রাজাকার ছিল না! " হ ইদানিং শুনতেছি রাজাকার ছিল ! জানি না মা আমি জানি না!! হাহ! " আমি ব্যাগ থেকে একটা ১০ টাকার নোট বের করে ওনার হাতে দিয়ে চলে এলাম! পিঙ্ক সিটি র সামনে থেকে রিক্সা নিলাম! বাসায় এসে দেখি বাবা (রিটাইআর্ড পুলিশ ম্যান ) টিভি দেখছেন। সরাসরি বললাম এখন ফাসি দিলে দেশের অবস্থা যে আরো খারাপ হবে তার কি? বাবা বললেন : "আর সে যে এত মানুষ খুন করছে তার কি ? শোনো তোমাকে একটা ঘটনা বলি -যুদ্ধের সময় আমি ক্লাস ৯ এ পরতাম. যুদ্ধ করিনি কিন্তু তাও মা আমাদের দুরে একটা বাগানে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল অনেক দিন । মাঝে মাঝে বাড়ি আসতাম ।

একদিন ভোরের দিকে ৮/১০ জন মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়ির পিছন দিকে এসে জানালায় নক করলো! আমাদের বাড়ির সামনের নদীটা এপার থেকে অপার বিশাল ছিল প্রায় কয়েক কিলোমিটার। সেই নদী টা ওরা পার হবে তাই নৌকা যোগাড় করে দিতে বলল। .. ময়লা কাপড় চোপড় পরা, সেই রাতে আমরা কয়েকজন ছেলে পেলে মাইল ওদের জন্য একটা নৌকা আনলাম , সেই নৌকায় আমিও গেছিলাম ওদের পার করে দিতে. ওপারে পৌছে একটা ছেলে এই ২৫/২৬ বয়স হবে , শার্ট টা খুলল , ..দেখলাম সারাগায়ে চাকা চাকা মত হয়ে গেছে , জিগ্গেস করলাম কি হইছে ? বলল গ্রামের যুবক ছেলেদের পাক আর্মি র হাতে ধরিয়ে দিছিল রাজাকার রা। পাক আর্মি নিয়ে গিয়ে অনেক অত্যাচার করেছে। ছ্যাকা দিয়েছে সারা গায়ে, সেখান থেকে ঘা হয়ে গেছে, তার পর এক জায়গায় বিলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে লাইন ধরে দাড় করিয়ে গুলি করে ঝাঝরা করে দিয়েছে সবাইকে।

ভাগ্য গুনে বেচে গিয়েছে এই ছেলেটি। পরে অন্য মুক্তি যোদ্ধারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করে। প্রায় দেড় মাস পর সে একটু সুস্থ হয়। সুস্থ হয়ে সে যুদ্ধে যোগদান করে.। আর প্রায় ২ মাস পর এ দেশ স্বাধীন হয়।

এরা ছিল আসল সাহসী, যারা দেশ স্বাধীন করেছে, .। এরাই ছিল আসল দেশপ্রেমিক !আজকের গাঞ্জা খাওয়া দেশপ্রেমিক না! আর এদের উপর এমন অত্যাচার করেছে ওই পাক আর্মিরা আর তাদের সাহায্য করছে এই রাজাকারেরা.! , গ্রামের মধ্যে পথ দেখায়ে নিয়ে গেছে কোন বাড়িতে বড় মেয়ে আছে , কোন বাড়িতে বড় ছেলে আছে যুদ্ধ করার মত! মা বাবা কে সামনে বেধে রেখে মেয়ের উপর অত্যাচার করেছে ওই পাক আর্মিরা আর সাহায্য করছে ঐ রাজাকার রা! ওই আর্মিরা এত অত্যাচার করতে পারত না , যুদ্ধ ও ৯ মাস হত না যদি না এই রাজাকারেরা তাদের সাহায্য করত! তার কোনো বিচার হবে না? মনে পড়লো নানি র কথা ,, আমার বড় খালা কে কিভাবে ধানের গোলার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলো। চিত্রা নদীতে কচুরি পানার মত ভেসে যাওয়া লাশ , রাতের বেলায় পালানোর সময় আমার মা এর পা কাটা মাথার মধ্যে যাওয়া, লাশ ধরে নদী সাতরে পার হওয়া ,...কিছুই দেখিনি আমি .....। তাও যেন স্মৃতি তে সব ভেসে উঠছিলো, যেন আমি ছুটছি ছেলেমেয়েদের হাত ধরে......পিছনে পাক আর্মি । চুপচাপ চলে এলাম নিজের ঘরে ।

পরিবেশ ভেদে মানুষের চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আসে । মনে সন্দেহ জাগে!! যেখান থেকে এলো মেল প্রশ্ন গুলো নিয়ে এগিয়ে গেছিলাম উত্তরের আশায়...আবার ও সেই পথের মধ্যে এসে দাড়িয়ে রইলাম.... নাহ এদের ক্ষমা করা যায় না! ফাসি চাই! রাজাকারের ফাসি চাই! সত্যি রাজাকার দের ফাসি চাই!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.