আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যানজটে স্থবির সারা দেশ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের পর মাত্র ২৪ ঘণ্টার বিরতি ছিল গতকাল।

আজ ভোর থেকেই আবার শুরু হচ্ছে ৮৩ ঘণ্টা টানা অবরোধ। দুই অবরোধের ফাঁকে গতকাল দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে নেমে এসেছিল হাজার হাজার গাড়ি। ফলে হঠাৎই রাজধানীসহ দেশের বহু স্থানে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। অনেকে নিজ প্রয়োজনীয় কাজের তাগিদে ছিলেন অন্য জেলায়।

আবার বহু লোক আছেন, যারা কর্মক্ষেত্র ছেড়ে বাড়িতে এসে আটকা পড়েছিলেন অবরোধের কারণে। অন্যদিকে যানবাহন শ্রমিকরা হরতাল-অবরোধে দিশাহারা। এমনকি বসে থাকতে থাকতে ফুরিয়ে এসেছে সঞ্চয়ের অর্থও। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা বেরিয়েছিলেন গাড়ি নিয়ে। মালিকপক্ষকেও বাদ রাখা যায় না।

অনেক দিন ধরেই তাদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস যানবাহনের ভাড়া পাচ্ছেন না। তাই মাঝে একটি দিন সময় পেয়ে কম-বেশি সবাই রাস্তায় নামিয়েছিলেন গাড়ি। ফলে দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক ছিল যানবাহনে ঠাসা। এর মধ্যে তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। যানজট ছিল ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কগুলোতেও।

অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম রুট মাওয়া-কাউড়াকান্দি রুটে কুয়াশার কারণে ছয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। যানজট ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটেও। এ সময় উভয় পাড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ফলে নাকাল হতে হয় হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহন শ্রমিকদের। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনায় ট্রাক উল্টে যাওয়া, সেনানিবাস এলাকায় ট্রাক বিকল, ঘনকুয়াশা ও দীর্ঘ অবরোধ শেষে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে মহাসড়কে ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভাটের চর পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ যানজটের কারণে হাজার হাজার যাত্রীবাহী গাড়ি, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স এবং আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে। যানজটের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. হাছান জানান, টানা অবরোধের কারণে মহাসড়কে অতিরিক্ত চাপ এবং বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় চান্দিনায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাঝপথে উল্টে যায়। বিকালে এ প্রতিবেদন তৈরির সময় থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছিল।

ফেনী : টানা অবরোধের পর গতকাল ছিল এক দিন বিরতি। এর পর আজ থেকে ফের শুরু হচ্ছে অবরোধ। এ সুযোগে কাজ সারতে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন অনেকে। এটি শুধু জেলার ভেতর সীমাবদ্ধ থাকেনি। যারা ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলোয় এসে আটকা পড়েছিলেন, কিংবা যারা নিজ জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন, কাল এসেছিল তাদের জন্য সুযোগ।

আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে তারা যাত্রা করেছিলেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এ কারণে তীব্র যানজট ছিল দিনভর। ফেনীর ৩১ কিলোমিটার মহাসড়ক, নির্দিষ্ট করে বললে মোহাম্মদ আলী বাজার থেকে মুহুরীগঞ্জ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল যানজটে ঠাসা। ফলে দূর গন্তব্যের যাত্রীদের পড়তে হয় মহাবিপাকে। ঢাকা থেকে ফেনীতে চলাচলরত স্টারলাইন পরিবহন সূত্রে জানা যায়, রাজধানী থেকে প্রথম চেয়ার কোচটি ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে ফেনীর উদ্দেশে ছেড়ে বিকাল ৫টায়ও গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেনি।

অথচ এটুকু রাস্তায় সময় লাগার কথা মাত্র তিন ঘণ্টা। সরেজমিন দেখা যায়, কখনো মহাসড়কে গাড়িগুলো চলছে শম্বুকগতিতে আবার কখনো আছে থমকে। ট্রাকচালক মাজেদ জানান, তিনি ঢাকা থেকে রাত ১২টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। বিকাল ৫টায় আসতে পেরেছেন ফেনী পর্যন্ত। তাই চিন্তিত কতক্ষণে তিনি পেঁৗছবেন।

ফেনী হাইওয়ে থানার পরিদর্শক এ এস এম জাহাঙ্গীর আলম ফোনে জানান, টানা অবরোধের কারণে অতিরিক্ত গাড়ি মহাসড়কে নেমে আসায় এমন যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

রাজবাড়ী : গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে চাপ বেড়ে যাওয়ায় আটকা পড়ে সহস্রাধিক গাড়ি। এতে ফেরিঘাটের জিরোপয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ইউনিয়ন বোর্ড এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালের বিশাল পার্কিং ইয়ার্ড বিভিন্ন যানবাহনে পূর্ণ। অন্যদিকে ফেরিঘাটের জিরোপয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ইউনিয়ন বোর্ড পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তায় দীর্ঘ যানজট।

এতে আটকা পড়ে বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি। সূত্র জানায়, ১৮ দলের ডাকা টানা অবরোধে গতকাল দিনটি ছিল মুক্ত। এ কারণে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী একযোগে ছেড়ে আসে শত শত গাড়ি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ঘাটে বাড়তে থাকে গাড়ির চাপ। এর মধ্যে পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।

এ সময় যানজটে আটকা পড়া চালক ও যাত্রীদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ।

মুন্সীগঞ্জ : মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর সচল হয়েছে ফেরি সার্ভিস। ঘনকুয়াশায় পদ্মায় মাঝনদীতে সহস্রাধিক যাত্রী ও কয়েক শ গাড়ি নিয়ে ছয়টি ফেরি আটকে পড়ে। পরে তারা সকাল ৯টার দিকে গন্তব্যে রওনা হন। এ সময় উভয় পাড়ে আটকা পড়ে শত শত যান।

কনকনে শীতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। এ ছাড়া টানা অবরোধের মাঝে গতকালের দিনটি ছিল মুক্ত। তাই রাস্তায় নামে বহু গাড়ি। আর গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় অসহনীয় আকার ধারণ করে যানজট।

রংপুর : দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক।

বিরোধী দলের টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ গতকাল ভোরে শেষ হওয়ার পর যান চলাচল শুরু হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে নির্ধারিত সময়ের ৮-১০ ঘণ্টা পরও যথাসময়ে গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেনি কোনো যানবাহন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা কোচ ও বাসের যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়ে তীব্র দুর্ভোগের শিকার হন। হাইওয়ে বগুড়া অঞ্চলের পুলিশ সুপার ইসরাইল হাওলাদার জানান, অবরোধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনের সঙ্গে যোগ হয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী গাড়ি। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে রংপুরের পীরগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

যানজট সরাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। যানজটে আটকা পড়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কোচ-বাসের যাত্রীরা। নগরীর সিওবাজার এলাকার কলেজ শিক্ষক তাহমিদুল ইসলাম বলেন, তিনি ভোর ৬টায় ঢাকার কল্যাণপুর থেকে কোচে রওনা দিয়েছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা বাজলেও কোচটি সিরাজগঞ্জ ছাড়াতে পারেনি। অথচ ঢাকা থেকে রংপুরে আসতে সময় লাগে মাত্র সাত ঘণ্টা।

মাদারীপুর : ১৮ দলের টানা অবরোধের বিরতি ছিল কাল। তাই দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে ঢাকামুখী ছিল বিভিন্ন যানবাহন। এর সঙ্গে যোগ হয় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি। ঘনকুয়াশার কারণে ফেরিগুলো চলতে পারেনি। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রীকে পোহাতে হয়েছে চরম ভোগান্তি।

কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকা থেকে পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ছিল তীব্র যানজট। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় দেড় হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়িকে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সকাল পর্যন্ত কয়েক দিনের টানা অবরোধ এবং আজ সকাল থেকে ফের শুরু হওয়া অবরোধের ফাঁকে মানুষ দূরপাল্লার গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ পায় মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময়। ফলে সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন নেমে আসে মহাসড়কে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যানবাহনের চাপও ছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।

ফলে তীব্র যানজটে নাকাল হতে হয়েছে বহু লোককে।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।